ঢাকা ০৮:৩৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

কৃষকরা হাওর অঞ্চলে বীজতলা তৈরী করতে পারছে না

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:৩০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭
  • ৫১৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের ভাটি অঞ্চল হিসাবে পরচিতি জেলার খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওর গুলো এখনও জলাবদ্ধ থাকায় এক মাত্র ফসল বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না কৃষকরা। কবে নাগাদ বোরো ফসল রোপণ সম্ভব হবে তাও অনিশ্চিত। সঠিক সময়ে বোরো আবাদ শুরু করতে না পারলে দেরিতে ফসল উঠবে বলে কৃষকরা মনে করছেন। ফলে গত বছরের মতো আবার আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষকরা।

খালিয়াজুরীর এলাকার কৃষকরা বলেন, এবার দেরিতে জমি রোপণ করতে হবে। তাই ফসল ভালো হওয়ার আশা করে লাভ নেই। আরো ১০-১২দিন পরে ‘জালা’ (ধানের বীজ) ফেললে শীতের কারণে ভালো চারা পাওয়া যাবে না। ভালো চারা না হলে ভালো ফসলও হবেনা। তা ছাড়া দেরিতে ধান উঠবে বলে আবারও আগাম বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।

কাদিরপুরের প্রবীণ কৃষক শ্রীচরণ সরকার বলেন, ধনু নদীর উৎস এবং সুরমার মোহনা থেকে উত্তরাঞ্চল খানিকটা উঁচু। আবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ধনু নদী থেকে কিশোরগঞ্জের ইটনা পর্যন্ত হাওর এলাকাটি তুলনামূলক নিচু। ইটনা থেকে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যবতীর্ মেঘনার মোহনা পর্যন্ত এলাকাটি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মেঘনার মোহনা থেকে উত্তর দিকে নদী খনন অত্যন্ত জরুরি। না হয় প্রতি বছর অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কৃষক আবুল কাসেম আবাদী জানান , হাওরে তাঁদের প্রায় ৬০ একর জমি আছে। জমির চাষাবাদ ও পত্তন থেকে আসা আয় দিয়েই তার সংসার চলে। এবারের আগাম বন্যায় ফসল বিনিষ্ট হওয়ার কারণেএখন তার আর জমি চাষ করতে আগ্রহ নেই। আবুল কাসেম, জানান বন্যায় ফসল মার খেয়ে বর্গচাষীরা জমি পত্তন নিতে চাইছে না। এবার হাওর থেকে পানি না সরায় কেউই বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। এসব কারণেএবার মাত্র ১৬ একর জমি ৪০ হাজার টাকায় পত্তন দিতে পেরেছেন। বাদ বাকি জমি পতিত থাকার আশঙ্কা করছেন তিনি। হাওরঞ্চল জুড়েই এখন কৃষকের আহাজারি চলছে। এ সমস্যা কেবল খালিয়াজুরীর নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, কলমাকান্দার বিভিন্ন হাওর এখন পানিতে ডুবে থাকায় কৃষকরা বীজতলা তৈরী করতে পারছেন না।

ওই সমস্ত এলাকার একাধিক কৃষক জানান, তারা খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছেন। সময়মত বীজতলা তৈরী করতে না পারলে ঠিকমত ফসল উৎপাদন হবে না। আগাম কন্যায় ফসল তালিয়ে যাবে। কলমাকান্দার যাত্রবাড়ি গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, গতবারও ফসল ঠিকমত ঘরে উঠাতে পারিনি। অন্যের কাছ থেকে টাকা হওলাত নিয়ে চলতে হচ্ছে। এবারও যদি ফসল খারাপ হয় আমাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও হাওরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাওরের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বেড়ি বাঁধ নিমাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বোরো মৌসুমসহ অসময়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে হাওরের নদীগুলো খনন না করায় সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে মেঘনা নদীতে তিনটি ব্রীজ হয়েছে। এ সব কারনেই পানি সরতে দেরি হচ্ছে।

নেত্রকোনা কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পাল বলেছেন এবার চলতি বোর মৌসুমে মোহনগঞ্জও খালিয়াজুরী অঞ্চলে ৪০হাজার দুইশত ৮৫ হেক্টর জমিতে বোর আবাদ হবে অতি বৃষ্টির কারনে, হাওরের পানি একটু ধীরগতিতে কমছে। কৃষকরা বীজতলা তৈরী করছে উচ্চু ভুমিতে । বীজতলা তৈরী করতে খুব সমস্যা হবে না । ব্রি ধান ২৯ বপনের সময় পার হয়ে গেলেও ব্রি-২৮ জাতের ধান বীজ বপনের সময় এখনও আছে।তিনি আসা প্রকাশ করেন এবছর ব্রি ২৮ জাতের ধান এ বছর বেশী করে আবাদ করা হবে । ফসলও ভাল হবে যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকে ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষকরা হাওর অঞ্চলে বীজতলা তৈরী করতে পারছে না

আপডেট টাইম : ০৮:৩০:২১ অপরাহ্ন, রবিবার, ২৬ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশের ভাটি অঞ্চল হিসাবে পরচিতি জেলার খালিয়াজুরী ও মোহনগঞ্জ উপজেলার হাওর গুলো এখনও জলাবদ্ধ থাকায় এক মাত্র ফসল বোরো ধানের বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না কৃষকরা। কবে নাগাদ বোরো ফসল রোপণ সম্ভব হবে তাও অনিশ্চিত। সঠিক সময়ে বোরো আবাদ শুরু করতে না পারলে দেরিতে ফসল উঠবে বলে কৃষকরা মনে করছেন। ফলে গত বছরের মতো আবার আগাম বন্যায় ফসল তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা করছে কৃষকরা।

খালিয়াজুরীর এলাকার কৃষকরা বলেন, এবার দেরিতে জমি রোপণ করতে হবে। তাই ফসল ভালো হওয়ার আশা করে লাভ নেই। আরো ১০-১২দিন পরে ‘জালা’ (ধানের বীজ) ফেললে শীতের কারণে ভালো চারা পাওয়া যাবে না। ভালো চারা না হলে ভালো ফসলও হবেনা। তা ছাড়া দেরিতে ধান উঠবে বলে আবারও আগাম বন্যায় ফসলহানির আশঙ্কা রয়েছে।

কাদিরপুরের প্রবীণ কৃষক শ্রীচরণ সরকার বলেন, ধনু নদীর উৎস এবং সুরমার মোহনা থেকে উত্তরাঞ্চল খানিকটা উঁচু। আবার নেত্রকোনার খালিয়াজুরীর ধনু নদী থেকে কিশোরগঞ্জের ইটনা পর্যন্ত হাওর এলাকাটি তুলনামূলক নিচু। ইটনা থেকে কিশোরগঞ্জ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যবতীর্ মেঘনার মোহনা পর্যন্ত এলাকাটি ভরাট হয়ে উঁচু হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে মেঘনার মোহনা থেকে উত্তর দিকে নদী খনন অত্যন্ত জরুরি। না হয় প্রতি বছর অকাল বন্যার হাত থেকে ফসল রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

খালিয়াজুরী উপজেলা সদরের কৃষক আবুল কাসেম আবাদী জানান , হাওরে তাঁদের প্রায় ৬০ একর জমি আছে। জমির চাষাবাদ ও পত্তন থেকে আসা আয় দিয়েই তার সংসার চলে। এবারের আগাম বন্যায় ফসল বিনিষ্ট হওয়ার কারণেএখন তার আর জমি চাষ করতে আগ্রহ নেই। আবুল কাসেম, জানান বন্যায় ফসল মার খেয়ে বর্গচাষীরা জমি পত্তন নিতে চাইছে না। এবার হাওর থেকে পানি না সরায় কেউই বীজতলা তৈরি করতে পারছে না। এসব কারণেএবার মাত্র ১৬ একর জমি ৪০ হাজার টাকায় পত্তন দিতে পেরেছেন। বাদ বাকি জমি পতিত থাকার আশঙ্কা করছেন তিনি। হাওরঞ্চল জুড়েই এখন কৃষকের আহাজারি চলছে। এ সমস্যা কেবল খালিয়াজুরীর নয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জেলার মোহনগঞ্জ, মদন, কলমাকান্দার বিভিন্ন হাওর এখন পানিতে ডুবে থাকায় কৃষকরা বীজতলা তৈরী করতে পারছেন না।

ওই সমস্ত এলাকার একাধিক কৃষক জানান, তারা খুবই উদ্বেগের মধ্যে আছেন। সময়মত বীজতলা তৈরী করতে না পারলে ঠিকমত ফসল উৎপাদন হবে না। আগাম কন্যায় ফসল তালিয়ে যাবে। কলমাকান্দার যাত্রবাড়ি গ্রামের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, গতবারও ফসল ঠিকমত ঘরে উঠাতে পারিনি। অন্যের কাছ থেকে টাকা হওলাত নিয়ে চলতে হচ্ছে। এবারও যদি ফসল খারাপ হয় আমাদেরকে না খেয়ে থাকতে হবে।

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও হাওরের বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, হাওরের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিত বেড়ি বাঁধ নিমাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া গত বোরো মৌসুমসহ অসময়ে ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে। বছরের পর বছর ধরে হাওরের নদীগুলো খনন না করায় সেগুলো ভরাট হয়ে গেছে। অন্যদিকে মেঘনা নদীতে তিনটি ব্রীজ হয়েছে। এ সব কারনেই পানি সরতে দেরি হচ্ছে।

নেত্রকোনা কৃষিসম্প্রসারন অধিদপ্তরের উপ পরিচালক বিলাশ চন্দ্র পাল বলেছেন এবার চলতি বোর মৌসুমে মোহনগঞ্জও খালিয়াজুরী অঞ্চলে ৪০হাজার দুইশত ৮৫ হেক্টর জমিতে বোর আবাদ হবে অতি বৃষ্টির কারনে, হাওরের পানি একটু ধীরগতিতে কমছে। কৃষকরা বীজতলা তৈরী করছে উচ্চু ভুমিতে । বীজতলা তৈরী করতে খুব সমস্যা হবে না । ব্রি ধান ২৯ বপনের সময় পার হয়ে গেলেও ব্রি-২৮ জাতের ধান বীজ বপনের সময় এখনও আছে।তিনি আসা প্রকাশ করেন এবছর ব্রি ২৮ জাতের ধান এ বছর বেশী করে আবাদ করা হবে । ফসলও ভাল হবে যদি আবহাওয়া অনুকুলে থাকে ।