ঢাকা ০৮:১৭ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

হাওরপাড়ের দুর্যোগের মোকাবেলা নারী ও শিশুর চালচিত্র

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৭
  • ৪৫৭ বার

জাকির হোসাইনঃ ধারণা করা হয়ে থাকে যে আদিকাল হতেই নারীরাই দুর্যোগে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল তথা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট এবং বিশেষত সুনামগঞ্জের হাওরগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নিঃসন্দেহে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কৃষকগণ এবং কৃষিনির্ভর অন্যান্য সকল কর্মজীবি শ্রেণী। কিন্তু এটা ভাবার অবকাশ নেই যে, এ দুর্যোগ অন্যদেরকে প্রভাবিত করবে না। উপরস্তু, সকল শ্রেণীর কর্মজীবি এবং পেশাজীবিদের উপরেই এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যদি সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সঠিক প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়ন করা না হয়, তবে হাওরঞ্চলের সকল শ্রেণীপেশার মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর বিশেষত, নারী ও শিশুদের উপর এ দূর্যোগের প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষভাবে সমকালীন, অন্তরবর্তীকালীন এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।

Related image
হাওরে ফসল ফলানোর পেছনে পুরুষের চেয়ে নারীর ভূমিকা অনেকাংশে বেশী। হাওরঞ্চলে এলাকাভেদে তার তারতম্য হতে পারে। আমরা দেখি বৈশাখ মাসে পুরুষরা ধানকাটা ও ধান মারাইর কাজ নিয়ে বেশী ব্যস্থ থাকেন, কিন্তু হাওর এলাকার নারীরা ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কঠিন কাজ গুলো করে থাকেন ।

দুর্যোগকালীন সময়ে নারীরা আমাদের দেশে সবথেকে বেশি যে সমস্যার সন্মুখীন হয়ে থাকেন তা হল, ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা। সামাজিক, ভৌগলিক ও ধর্মীয় পড়াশোনা সংস্কারের কারনে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আমাদের বেশিরভাগ পরিবারের সকলের খাবার পর অবশিষ্ট কিছু থাকলে তবেই আমাদের নারীরা আহার করে থাকেন, নতুবা অভূক্ত থাকেন। এটা শুধু সামাজিক রীতিনয়, মায়ের দরদী মনের প্রফিলনও। স্বামী ও সন্তারের খাওয়া শেষে নিজে না খেয়েও আত্মতৃপ্তি পান নারী। এভাবেই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতার অভাবে তারা নানান রকমের অসুখে আক্রাত প্রবলিত হয়। যেহেতু পরিবারের রান্না বান্নার বিষয়টি নারীদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত (!), সেহেতু অন্যান্য ঋতুর ন্যায় বন্যা বা বর্ষায়ও এই দূরহ দায়িত্বটি তাদেরকেই পালন করতে হয়। যাতায়াতের ক্ষেত্রে সামাজিক বিধি-নিষেধ ও শ্রেণী-বিভাজনের বিষয়টিও সবথেকে বেশি আঘাত করে নারীদেরকেই। যা দুর্যোগের সময়ে আরও প্রকটাকার ধারন করে থাকে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব এবং দূর-দূরান্ত হতে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহেরমত কঠিন দায়িত্বটিও সামাজিকভাবে আমাদের নারী ও শিশুরাই পালন করে থাকেন। এসময়ে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধি মানুষের নিরাপত্তা ও দেখভালের বিষয়টিও থাকে উপেক্ষিত এবং অনেক সময়ে জীবন নাশের মত ঘটনাও ঘটে থাকে।

Image result for হাওরের ছবি
সম্পদের অপ্রতুলতা, অসম বন্ঠন এবং দুর্যোগ পরবর্তীকালিন সময়ে ত্রাণ ও সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এ অঞ্চলের নারী-পুরুষসহ সকল শ্রেণীর, সকল ধর্মের, সকল বয়সের মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। সরকারী প্রণোদনা এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের দেশে অদ্যাবদি কৃষিবীমার প্রচলন করা সম্ভব হয়নি, যা দেশের অন্যান্য এলাকা মতই হাওরঞ্চলের দুর্যোগ কবলিত মানুষ ও কৃষকদেরজীবন ও জীবিকার জন্য একটি অনন্য সমাধান হতে পারে বলে বিভিন্ন কৃষিবিদগণ ধারণা করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

হাওরপাড়ের দুর্যোগের মোকাবেলা নারী ও শিশুর চালচিত্র

আপডেট টাইম : ১১:০৭:১২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৯ নভেম্বর ২০১৭

জাকির হোসাইনঃ ধারণা করা হয়ে থাকে যে আদিকাল হতেই নারীরাই দুর্যোগে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে থাকেন। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের হাওরাঞ্চল তথা কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট এবং বিশেষত সুনামগঞ্জের হাওরগুলো বৃষ্টির পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ঘটনায় নিঃসন্দেহে সব থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন কৃষকগণ এবং কৃষিনির্ভর অন্যান্য সকল কর্মজীবি শ্রেণী। কিন্তু এটা ভাবার অবকাশ নেই যে, এ দুর্যোগ অন্যদেরকে প্রভাবিত করবে না। উপরস্তু, সকল শ্রেণীর কর্মজীবি এবং পেশাজীবিদের উপরেই এর সুদূরপ্রসারী প্রভাব রয়েছে। যদি সঠিক সময়ে সঠিক পরিকল্পনা প্রণয়ন ও সঠিক প্রকল্প নিয়ে বাস্তবায়ন করা না হয়, তবে হাওরঞ্চলের সকল শ্রেণীপেশার মানুষের জীবন ও জীবিকার উপর বিশেষত, নারী ও শিশুদের উপর এ দূর্যোগের প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষভাবে সমকালীন, অন্তরবর্তীকালীন এবং দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব বিস্তারের সম্ভাবনা রয়েছে।

Related image
হাওরে ফসল ফলানোর পেছনে পুরুষের চেয়ে নারীর ভূমিকা অনেকাংশে বেশী। হাওরঞ্চলে এলাকাভেদে তার তারতম্য হতে পারে। আমরা দেখি বৈশাখ মাসে পুরুষরা ধানকাটা ও ধান মারাইর কাজ নিয়ে বেশী ব্যস্থ থাকেন, কিন্তু হাওর এলাকার নারীরা ধান শুকিয়ে গোলায় তোলার কঠিন কাজ গুলো করে থাকেন ।

দুর্যোগকালীন সময়ে নারীরা আমাদের দেশে সবথেকে বেশি যে সমস্যার সন্মুখীন হয়ে থাকেন তা হল, ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতা। সামাজিক, ভৌগলিক ও ধর্মীয় পড়াশোনা সংস্কারের কারনে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে আমাদের বেশিরভাগ পরিবারের সকলের খাবার পর অবশিষ্ট কিছু থাকলে তবেই আমাদের নারীরা আহার করে থাকেন, নতুবা অভূক্ত থাকেন। এটা শুধু সামাজিক রীতিনয়, মায়ের দরদী মনের প্রফিলনও। স্বামী ও সন্তারের খাওয়া শেষে নিজে না খেয়েও আত্মতৃপ্তি পান নারী। এভাবেই দীর্ঘমেয়াদে ক্ষুধা ও পুষ্টিহীনতার অভাবে তারা নানান রকমের অসুখে আক্রাত প্রবলিত হয়। যেহেতু পরিবারের রান্না বান্নার বিষয়টি নারীদের উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত (!), সেহেতু অন্যান্য ঋতুর ন্যায় বন্যা বা বর্ষায়ও এই দূরহ দায়িত্বটি তাদেরকেই পালন করতে হয়। যাতায়াতের ক্ষেত্রে সামাজিক বিধি-নিষেধ ও শ্রেণী-বিভাজনের বিষয়টিও সবথেকে বেশি আঘাত করে নারীদেরকেই। যা দুর্যোগের সময়ে আরও প্রকটাকার ধারন করে থাকে। বিশুদ্ধ খাবার পানির অভাব এবং দূর-দূরান্ত হতে বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহেরমত কঠিন দায়িত্বটিও সামাজিকভাবে আমাদের নারী ও শিশুরাই পালন করে থাকেন। এসময়ে নারী, শিশু, বৃদ্ধ ও প্রতিবন্ধি মানুষের নিরাপত্তা ও দেখভালের বিষয়টিও থাকে উপেক্ষিত এবং অনেক সময়ে জীবন নাশের মত ঘটনাও ঘটে থাকে।

Image result for হাওরের ছবি
সম্পদের অপ্রতুলতা, অসম বন্ঠন এবং দুর্যোগ পরবর্তীকালিন সময়ে ত্রাণ ও সরকারী-বেসরকারী পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এ অঞ্চলের নারী-পুরুষসহ সকল শ্রেণীর, সকল ধর্মের, সকল বয়সের মানুষের দৈনন্দিন জীবনকে বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। সরকারী প্রণোদনা এবং পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের দেশে অদ্যাবদি কৃষিবীমার প্রচলন করা সম্ভব হয়নি, যা দেশের অন্যান্য এলাকা মতই হাওরঞ্চলের দুর্যোগ কবলিত মানুষ ও কৃষকদেরজীবন ও জীবিকার জন্য একটি অনন্য সমাধান হতে পারে বলে বিভিন্ন কৃষিবিদগণ ধারণা করেন।