হাওর বার্তা ডেস্কঃ শাপলা-শালুকেই তাদের জীবকা,এযেন রূপসী বাংলার আরেক অপরূপ দৃশ্য,ওরা শালুক কুঁড়ানির দল। এই শালুকই তাদের বেঁচে থাকার স্বপ্ন দীর্ঘ করে তুলেছে। শালুক কুড়িয়ে অভাব লাঘবের চেষ্টা করছেন মানিকগঞ্জের প্রায় তিন শতাধিক দরিদ্র ও ক্ষুদ্র আদিবাসী পরিবারের সদস্য। বর্তমানে শালু কুঁড়ানোকে অনেকেই পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন।
খাল-ক্ষেত-বিলে শালু কুড়োনোর দৃশ্যপটে দেখা মেলে ছুটে চলা বুনো-বাগদির দল। ওরা শালুক কুড়িয়ে কেজি দরে বিক্রি করেন। কেউ কেউ শালুক তুলে বিক্রি করছে শহরাঞ্চলে,প্রতি কেজি শালুক বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৭০ টাকা করে। ঘিওর-দৌলতপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশের জমিতে শালুক তুলতে আসা বৈলট গ্রামের জড়িনা বেগম(৬০) সাথে সখি-ভাতিজিরা, ডুবিয়ে ডুবিয়ে শালুক তোলায় ব্যস্ত ওরা। যেন শালুক তোলার উৎসবে মেতেছে ওরা। কৃষক তার কাজের অবসরে নৌকা নিয়ে অথৈ পানিতে ডুবিয়ে ডুবিয়ে তুলছে শালুক। ওরা দল বেঁধে আসে শালুক তুলতে। ভিন্ন স্বাদের মজাদার খাবারের আরেক নাম শালুক। তাই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে আজও রয়েছে শালুকের ব্যাপক কদর। বর্ষা থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত নদী-নালা, খাল-বিল, জলাশয়ের নিচু জমিতে জন্মায় শাপলা। শাপলা গাছের গোড়া থেকে সংগ্রহ করা হয় শালুক। শালুক শাপলা গাছের গেড়ায় জন্মানো এক ধরনের সবজি জাতীয় খাদ্য। শাপলা গাছের গোড়ায় একাধিক গুটির জন্ম হয়, যা ধীরে ধীরে বড় হয়ে শালুকে পরিনত হয়। শাপলা সাধারণত লাল ও সাদা রঙের হয়। একেকটি শালুকের ওজন সাধারণত ৪০ থেকে ৬০ গ্রাম হয়ে থাকে। এটি সিদ্ধ করে বা আগুনে পুড়িয়ে খাওয়া যায়। শালুক হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। দ্রুত ক্ষুধা নিবারণ করে এবং শরীরে পর্যাপ্ত শক্তি জোগায়। সবজি হিসেবে সমাদৃত হওয়ার পাশাপাশি চুলকানি ও রক্ত আমাশয় নিরাময়ের জন্য ঔষধ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। বাংলায় নীল শাপলা ফুলকে শালুক বা নীলকমল, লাল শাপলা ফুলকে রক্তকমল বলা হয়।
শালুককে গ্রাম্য ভাষায় বলা হয় শালু। শালুক কুঁড়োনো এ দেশে যুগযুগান্তরের ঐতিহ্যগাঁথা। বর্ষা মৌসুমে শরত মাস শালুক তোলার উপযুক্ত সময়। তবে অনেক নীচু জমির জলে বছরের প্রায় সময়ই শালুক দেখা যায়। ঘিওর-দৌলতপুর-নাগরপুর আঞ্চলিক মহাসড়কের দু’পাশ জুড়ে বিস্তীর্ন স্বচ্ছ পানিতে দেখা মেলে শাপলা-শালুকের।