ঢাকা ০৭:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

বিএনপির প্রার্থী দেখে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০২:৪৪:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৫৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান ও মনোনয়ন দেখেই প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলের পক্ষে শুরু হয়েছে যাচাই-বাছাই। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ।

বিএনপির ‘জনপ্রিয়’ ও ‘তারকা’ প্রার্থীদের বিপরীতে শক্তিশালী হেভিওয়েটদের বিবেচনায় রেখেছে আওয়ামী লীগ। আবার অনেক আসনে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রয়েছে বেশ কিছু তারকা প্রার্থী।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, নেতা-কর্মীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য, দলে গ্রুপিং সৃষ্টিকারী, বিনা ভোটে জয়ী হয়ে এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, টিআর-কাবিখা বিক্রয়কারী, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িত এমপিরা মনোনয়ন পাবেন না।

বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এমপিদের আমলনামা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই। এ কারণে বিনা ভোটে নির্বাচিত জনবিচ্ছিন্ন অনেক এমপিরই ঘুম হারাম।

জানা গেছে, বিএনপির বর্তমান অবস্থানকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে— এটা ধরে নিয়েই তৈরি করা হচ্ছে কর্মকৌশল।

তবে বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপি তাকিয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। তারা মনে করেন, যে কোনো কৌশল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারও তাদেরই ‘নির্বাচনী তরী’ পার করে দেবেন। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন।

অনেক এমপির কার্যক্রমে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই আলাদা অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ মাঠের অবস্থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে বদলের সঙ্গে সঙ্গে তার সমর্থকদের বের করে দেওয়া নিয়েই এখন ব্যস্ত বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসিসহ তার সমর্থকরা।

আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের ‘লাথি’ বিনিময়ের মতোই অনেক এমপির অবস্থা হতে পারে। তাদের নিয়ে এলাকার কর্মী-সমর্থকরাও পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। এ তথ্যগুলো প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পাঠিয়েছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।

সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়া প্রার্থীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে অপেক্ষাকৃত ‘ক্লিন ইমেজ’ ও জনপ্রিয় নেতাদের।

দলবিচ্ছিন্ন অন্তত ১৪০ জনের মতো বর্তমান এমপি মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তাদের বিষয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট জমা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জানা যায়, বিনা ভোটে জয়ী অনেক এমপি গত কয়েক বছর এলাকায় যাননি।

কেউ কেউ টেন্ডার বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষক থেকে দফতরি নিয়োগ, টিআর-কাবিখা বিক্রি সবই করেছেন। এই এমপিরা মাঠে গেলে সাধারণ মানুষ দূরে থাক, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও গ্রহণ করবেন না।

এমনকি অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রীর এলাকার অবস্থাও ভালো নয়। বিএনপি নির্বাচনে এলে অনেকের দাঁড়ানোর অবস্থা থাকবে না। বিএনপির আগে তারা নিজ দলের কর্মীদের কাছেই প্রতিরোধের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনে অনেক এমপি এলাকা থেকে ঢাকা ফিরেছিলেন র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে। সে সময় র‌্যাবের এডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসান ব্যস্ত থাকতেন আওয়ামী লীগের অনেক এমপি-মন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক ফোন নিয়ে।

এবার পরিবেশ ভিন্ন। সবকিছুই পাল্টেছে। শুধু বিএনপিই নয়, ক্ষমতাসীন দলের অনেক মন্ত্রী-এমপির নিজ দলের নেতা-কর্মীদের হাতেই লাঞ্ছিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

জানা যায়, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের মতো অনেক জনপ্রিয় ও হেভিওয়েট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে আওয়ামী লীগ থেকে। পাশাপাশি বিএনপিকে মোকাবিলায় রাখা হবে বিভিন্ন কৌশল। আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপির অনেক হেভিওয়েট নেতার মামলার রায়ও হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। তবুও বিএনপিকে খাটো করে দেখা হচ্ছে না।

সূত্রমতে, টেনশনে ঘুম হারাম হয়ে গেছে জনবিচ্ছিন্ন এমপি ও মন্ত্রীদের। ভাগ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা তাদেরই বেশি। এ কারণে এরই মধ্যে তারাই বেশি হাইকমান্ডে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিনা ভোটে নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বড় অংশই মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর নিজ সংসদীয় এলাকায় দেখা মেলেনি অনেকের।

সাংগঠনিক কাজের চেয়ে এসব নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরিতেই ব্যস্ত ছিলেন বেশি। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোজন যোজন দূরত্ব বজায় রেখেই বিনা ভোটে নির্বাচিত এমপিরা গত চার বছর নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। এ বিষয়টি দলীয় প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও অবগত রয়েছেন। -বিডি প্রতিদিন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

বিএনপির প্রার্থী দেখে মনোনয়ন দেবে আওয়ামী লীগ

আপডেট টাইম : ০২:৪৪:১১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অবস্থান ও মনোনয়ন দেখেই প্রার্থী দেবে আওয়ামী লীগ। এরই মধ্যে দলের পক্ষে শুরু হয়েছে যাচাই-বাছাই। সম্ভাব্য প্রার্থীদের নিয়ে চলছে নানামুখী বিশ্লেষণ।

বিএনপির ‘জনপ্রিয়’ ও ‘তারকা’ প্রার্থীদের বিপরীতে শক্তিশালী হেভিওয়েটদের বিবেচনায় রেখেছে আওয়ামী লীগ। আবার অনেক আসনে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের রয়েছে বেশ কিছু তারকা প্রার্থী।

আগামী নির্বাচনে বিএনপির হেভিওয়েট প্রার্থীর সঙ্গে তাদের হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত।

আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারা বলছেন, নেতা-কর্মীদের কাছে অগ্রহণযোগ্য, দলে গ্রুপিং সৃষ্টিকারী, বিনা ভোটে জয়ী হয়ে এলাকার সঙ্গে সম্পর্ক না রাখা, টিআর-কাবিখা বিক্রয়কারী, নিয়োগ ও টেন্ডার বাণিজ্যে জড়িত এমপিরা মনোনয়ন পাবেন না।

বিভিন্ন সংস্থার মাধ্যমে এমপিদের আমলনামা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী ও দলের প্রধান শেখ হাসিনা নিজেই। এ কারণে বিনা ভোটে নির্বাচিত জনবিচ্ছিন্ন অনেক এমপিরই ঘুম হারাম।

জানা গেছে, বিএনপির বর্তমান অবস্থানকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে— এটা ধরে নিয়েই তৈরি করা হচ্ছে কর্মকৌশল।

তবে বেশির ভাগ মন্ত্রী-এমপি তাকিয়ে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর দিকে। তারা মনে করেন, যে কোনো কৌশল নিয়ে প্রধানমন্ত্রী আবারও তাদেরই ‘নির্বাচনী তরী’ পার করে দেবেন। কিন্তু মাঠের পরিস্থিতি ভিন্ন।

অনেক এমপির কার্যক্রমে দলের মাঠ পর্যায়ের নেতা-কর্মীরাই আলাদা অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কেউ মাঠের অবস্থাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান অবস্থার সঙ্গে তুলনা করেছেন। তাদের মতে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য বিদায়ী উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিককে বদলের সঙ্গে সঙ্গে তার সমর্থকদের বের করে দেওয়া নিয়েই এখন ব্যস্ত বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত ভিসিসহ তার সমর্থকরা।

আওয়ামী লীগপন্থি শিক্ষকদের ‘লাথি’ বিনিময়ের মতোই অনেক এমপির অবস্থা হতে পারে। তাদের নিয়ে এলাকার কর্মী-সমর্থকরাও পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছেন। কেউ কাউকে সহ্য করতে পারছেন না। এ তথ্যগুলো প্রধানমন্ত্রীর টেবিলে পাঠিয়েছে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা।

সূত্রমতে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে বড় ধরনের রদবদল হতে পারে। বিজয়ী হয়ে আসতে পারবেন এমন চ্যালেঞ্জ নেওয়া প্রার্থীদেরই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেওয়া হবে অপেক্ষাকৃত ‘ক্লিন ইমেজ’ ও জনপ্রিয় নেতাদের।

দলবিচ্ছিন্ন অন্তত ১৪০ জনের মতো বর্তমান এমপি মনোনয়ন নাও পেতে পারেন। তাদের বিষয়ে নেতিবাচক রিপোর্ট জমা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। জানা যায়, বিনা ভোটে জয়ী অনেক এমপি গত কয়েক বছর এলাকায় যাননি।

কেউ কেউ টেন্ডার বাণিজ্য থেকে শুরু করে শিক্ষক থেকে দফতরি নিয়োগ, টিআর-কাবিখা বিক্রি সবই করেছেন। এই এমপিরা মাঠে গেলে সাধারণ মানুষ দূরে থাক, আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকরাও গ্রহণ করবেন না।

এমনকি অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রীর এলাকার অবস্থাও ভালো নয়। বিএনপি নির্বাচনে এলে অনেকের দাঁড়ানোর অবস্থা থাকবে না। বিএনপির আগে তারা নিজ দলের কর্মীদের কাছেই প্রতিরোধের মুখে পড়ার শঙ্কা রয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনে অনেক এমপি এলাকা থেকে ঢাকা ফিরেছিলেন র‌্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তা নিয়ে। সে সময় র‌্যাবের এডিজি কর্নেল জিয়াউল আহসান ব্যস্ত থাকতেন আওয়ামী লীগের অনেক এমপি-মন্ত্রীর নিরাপত্তাবিষয়ক ফোন নিয়ে।

এবার পরিবেশ ভিন্ন। সবকিছুই পাল্টেছে। শুধু বিএনপিই নয়, ক্ষমতাসীন দলের অনেক মন্ত্রী-এমপির নিজ দলের নেতা-কর্মীদের হাতেই লাঞ্ছিত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। এ কারণে প্রার্থী বাছাইয়ে সতর্ক আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা।

জানা যায়, ১৯৯৬ ও ২০০৮ সালের মতো অনেক জনপ্রিয় ও হেভিওয়েট প্রার্থীকে মনোনয়ন দেওয়া হবে আওয়ামী লীগ থেকে। পাশাপাশি বিএনপিকে মোকাবিলায় রাখা হবে বিভিন্ন কৌশল। আওয়ামী লীগ মনে করছে, বিএনপির অনেক হেভিওয়েট নেতার মামলার রায়ও হয়ে যেতে পারে যে কোনো সময়। তবুও বিএনপিকে খাটো করে দেখা হচ্ছে না।

সূত্রমতে, টেনশনে ঘুম হারাম হয়ে গেছে জনবিচ্ছিন্ন এমপি ও মন্ত্রীদের। ভাগ্য বিপর্যয়ের শঙ্কা তাদেরই বেশি। এ কারণে এরই মধ্যে তারাই বেশি হাইকমান্ডে লবিংয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। বিনা ভোটে নির্বাচিত ১৫৪ জন সংসদ সদস্যের মধ্যে বড় অংশই মনোনয়নবঞ্চিত হবেন। অভিযোগ রয়েছে, ২০১৪ সালের নির্বাচনের পর নিজ সংসদীয় এলাকায় দেখা মেলেনি অনেকের।

সাংগঠনিক কাজের চেয়ে এসব নেতা ব্যবসা-বাণিজ্য ও নিজস্ব সিন্ডিকেট তৈরিতেই ব্যস্ত ছিলেন বেশি। তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোজন যোজন দূরত্ব বজায় রেখেই বিনা ভোটে নির্বাচিত এমপিরা গত চার বছর নিজেদের আখের গুছিয়েছেন। এ বিষয়টি দলীয় প্রধান আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনাও অবগত রয়েছেন। -বিডি প্রতিদিন