ঢাকা ১১:৩৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ভবিষ্যৎ যাদের নৌকার বৈঠায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৭৬ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোলার ৭ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ মেঘনা আর তেতুলিয়া নদী পাড়ের শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।  নৌকার বৈঠার মাঝেই যেন তারা খুঁজে নিচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ। অভিভাবকদের অসচেতনতা আর কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ না থাকার কারণে শিশুকাল থেকে এরা মাঠে-ঘাটে কাজ করার পাশাপাশি বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদরের মাঝের চর, ভেলুমিয়া, ভেদুরিয়া, দৌলতখানের মদনপুরা, মেদুয়া, সৈয়দপুর, হাজিপুর, ভবানিপুর, চৌকিঘাটা, বোরহানউদ্দিনের গঙ্গাপুর, দেবির চর, মির্জাকালু, হাকিমুদ্দিনের চরজহির উদ্দিন, চর মোজান্মেল, চিডার চর, লালমোহনের তেলিয়ার চর, চরকচুয়াখালী, চর তোফাজ্জল, চর হাসিনা, চর তাজাম্মুল, ধলিগৌর নগর, চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরী-মুকরী, চর পাতিলা, ভাষাণ চর, মনপুরার চর নিজাম, রাম নেওয়াজসহ অসংখ্যা চরাঞ্চলে বসবাসরত অধিকাংশ শিশু কিশোররা স্কুলে যায় না।

অভিভাবকদের অসচেতনতা আর কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে না এসব পরিবারের শিশুরা।  আর তাদের সচেতনতার জন্য এগিয়েও আসছেনা কেউ। ফলে তারা শিক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে নৌকা নিয়ে উত্তাল মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর তীরে ছুটে যাচ্ছে মাছ ধরতে। তারা তাদের ভবিষ্যৎকে নৌকার বৈঠার মাঝেই খুঁজছে।

এছাড়া এসকল এলাকায় বসবাসকৃত অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত। তারা বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে এখন বসবাস করছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার পাড়সহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে।

তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য একমাত্র আয়ের উৎস্য হচ্ছে মেঘনা আর তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরা ও বিক্রি করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস যেন তাদের সঙ্গে আষ্টে পিষ্টে বাধা রয়েছে।  তাই জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে এ পল্লীর শিশুরাও অভিভাবকদের পাশাপাশি এক একজন সৈনিক। ফলে এসকল শিশুরা ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলে না গিয়ে পরিবারের অভাব অনটন মেটাতে অভিভাবকদের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি আর মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উত্তাল ঢেউকে উপেক্ষা করে মাছ ধরার জন্য ছুটে যাচ্ছে নদীতে।

মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ের পলাশ (১২), শরিফ (১০), খোকন (১৩), কামাল (১৪), শহিদ (১০), ইদ্রিস (১২), ইব্রাহীম (১৩), অমিত (১০), বসু (৯) সহ নাম না জানা একাধিক শিশু-কিশোর বলেন, ‘আমরা স্কুলে যাই না।  বাবার সাথে নদীতে মাছ ধরি। বাবা আমাদের স্কুলে যাইতে কয়না।  এ কারণে আমরা স্কুলে যাই না।’

তারা আরও জানায়, পরিবারের অভাব-অনটন মিটাতে তারা নদীতে মাছ ধরার কাজ করছে। ছোট সময়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে কিছুদিন গেলেও পরবর্তীতে আর যাওয়া হয়নি।

মেঘনার পাড়ে বসবাসরত অভিভাবক জাকির মাঝি বলেন, ‘৬ পোলা-মাইয়া স্ত্রীসহ সংসারে ৮ জন সদস্য। অভাবের সংসারে প্রতিদিন মাছ ধরে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে না।  পোলা-মাইয়ার পড়া-লেহা করামু কেমনে।’

অপর অভিভাবক শাহে আলম মাঝি বলেন, ‘পড়া-লেহা করাইয়া কী হইব ? তার চেয়ে গাঙ্গে মাছ ধরলে প্রতিদিন নগদ টাকা পাওয়া যায়।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

ভবিষ্যৎ যাদের নৌকার বৈঠায়

আপডেট টাইম : ১২:০৮:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভোলার ৭ উপজেলার বিভিন্ন চরাঞ্চলসহ মেঘনা আর তেতুলিয়া নদী পাড়ের শিশুদের স্কুলে যাওয়ার কথা থাকলেও সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।  নৌকার বৈঠার মাঝেই যেন তারা খুঁজে নিচ্ছে তাদের ভবিষ্যৎ। অভিভাবকদের অসচেতনতা আর কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ না থাকার কারণে শিশুকাল থেকে এরা মাঠে-ঘাটে কাজ করার পাশাপাশি বছরের অধিকাংশ সময় নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভোলা সদরের মাঝের চর, ভেলুমিয়া, ভেদুরিয়া, দৌলতখানের মদনপুরা, মেদুয়া, সৈয়দপুর, হাজিপুর, ভবানিপুর, চৌকিঘাটা, বোরহানউদ্দিনের গঙ্গাপুর, দেবির চর, মির্জাকালু, হাকিমুদ্দিনের চরজহির উদ্দিন, চর মোজান্মেল, চিডার চর, লালমোহনের তেলিয়ার চর, চরকচুয়াখালী, চর তোফাজ্জল, চর হাসিনা, চর তাজাম্মুল, ধলিগৌর নগর, চরফ্যাশনের ঢালচর, কুকরী-মুকরী, চর পাতিলা, ভাষাণ চর, মনপুরার চর নিজাম, রাম নেওয়াজসহ অসংখ্যা চরাঞ্চলে বসবাসরত অধিকাংশ শিশু কিশোররা স্কুলে যায় না।

অভিভাবকদের অসচেতনতা আর কর্তৃপক্ষের যথাযথ উদ্যোগ না থাকায় বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করছে না এসব পরিবারের শিশুরা।  আর তাদের সচেতনতার জন্য এগিয়েও আসছেনা কেউ। ফলে তারা শিক্ষিত হওয়ার পরিবর্তে নৌকা নিয়ে উত্তাল মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর তীরে ছুটে যাচ্ছে মাছ ধরতে। তারা তাদের ভবিষ্যৎকে নৌকার বৈঠার মাঝেই খুঁজছে।

এছাড়া এসকল এলাকায় বসবাসকৃত অধিকাংশ মানুষ নিম্নবিত্ত। তারা বার বার নদী ভাঙনের কবলে পড়ে নিঃস্ব হয়ে এখন বসবাস করছে মেঘনা ও তেঁতুলিয়ার পাড়সহ বিভিন্ন চরাঞ্চলে।

তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য একমাত্র আয়ের উৎস্য হচ্ছে মেঘনা আর তেঁতুলিয়া নদীতে মাছ ধরা ও বিক্রি করা। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঝড়, জলোচ্ছ্বাস যেন তাদের সঙ্গে আষ্টে পিষ্টে বাধা রয়েছে।  তাই জীবন সংগ্রামে টিকে থাকতে এ পল্লীর শিশুরাও অভিভাবকদের পাশাপাশি এক একজন সৈনিক। ফলে এসকল শিশুরা ইচ্ছা থাকলেও শিক্ষা গ্রহণের জন্য স্কুলে না গিয়ে পরিবারের অভাব অনটন মেটাতে অভিভাবকদের পাশাপাশি ঝড়-বৃষ্টি আর মেঘনা-তেঁতুলিয়ার উত্তাল ঢেউকে উপেক্ষা করে মাছ ধরার জন্য ছুটে যাচ্ছে নদীতে।

মেঘনা-তেঁতুলিয়া নদীর পাড়ের পলাশ (১২), শরিফ (১০), খোকন (১৩), কামাল (১৪), শহিদ (১০), ইদ্রিস (১২), ইব্রাহীম (১৩), অমিত (১০), বসু (৯) সহ নাম না জানা একাধিক শিশু-কিশোর বলেন, ‘আমরা স্কুলে যাই না।  বাবার সাথে নদীতে মাছ ধরি। বাবা আমাদের স্কুলে যাইতে কয়না।  এ কারণে আমরা স্কুলে যাই না।’

তারা আরও জানায়, পরিবারের অভাব-অনটন মিটাতে তারা নদীতে মাছ ধরার কাজ করছে। ছোট সময়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে কিছুদিন গেলেও পরবর্তীতে আর যাওয়া হয়নি।

মেঘনার পাড়ে বসবাসরত অভিভাবক জাকির মাঝি বলেন, ‘৬ পোলা-মাইয়া স্ত্রীসহ সংসারে ৮ জন সদস্য। অভাবের সংসারে প্রতিদিন মাছ ধরে যে টাকা পাই তা দিয়ে সংসার চলে না।  পোলা-মাইয়ার পড়া-লেহা করামু কেমনে।’

অপর অভিভাবক শাহে আলম মাঝি বলেন, ‘পড়া-লেহা করাইয়া কী হইব ? তার চেয়ে গাঙ্গে মাছ ধরলে প্রতিদিন নগদ টাকা পাওয়া যায়।