হাওর বার্তা ডেস্কঃ অকাল বন্যার পানিতে গত বুরো মৌসুমে পুরো ফসল ভেসে গেছে। এবার চলতি বোরো মৌসুমের শুরুতেই নতুন সংকট সৃষ্টি হয়েছে পানির কারণেই। অকাল বন্যার পর অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে নদী ও হাওরের পানি এখনো পুরোপুরি নামেনি। ফলে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা, দিরাই, শাল্লাসহ ১১ উপজেলায় বোরোক্ষেতে চারা রোপণের জন্য এখনো বীজতলা তৈরি হয়নি। হাওরপারের কৃষকরা মৌসুমের শুরুতে বীজতলা তৈরি করতে না পারায় বোরো ধান চাষাবাদ পিছিয়ে যাওয়ায় আগামী বোরো ফসল আবার অকাল বন্যায় না তলিয়ে যায়, সেই আশঙ্কা ঘিরে ধরছে এখনই। তবে বর্ষার আগে আগে হাওরের বাঁধগুলো নির্মাণ করা হলে ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা দূর হবে বলে জানান কৃষকরা।
কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বোরো মৌসুমের এই সময়ে যেসব বীজতলা তৈরি শুরু করেছিলেন তারা, সেই স্থানের পানি এখনো নামেনি। তাই বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না হাওরপাড়ের কৃষকরা। এ ছাড়া জেলার সুরমা নদীসহ অন্যান্য নদীর পানি ৫ মিটারে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন হাওরের পানি ২ মিটারে থাকলেও নদীর পানি ৫ মিটারের বেশি থাকায় হাওরের পানি বের হতে পারছে না। বর্তমানে নদীর পানি প্রতিদিন ১০ সেন্টিমিটার করে কমছে। এভাবে নদীর পানি কমলে চলতি মাসের শেষের দিকে হাওরের পানি দ্রুত হ্রাস পাবে। আর জানুয়ারি মাসের মধ্যে সম্পূর্ণ পানি হাওর থেকে বের হয়ে যাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, গত বছর বোরো জমি চাষাবাদ করা হয়েছিল ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫ হেক্টর। আর বীজতলা তৈরি করা হয়েছিল সাড়ে ১০ হাজার হেক্টর। চলতি বছর বোরো মৌসুমে জেলার বোরো জমির প্রাথমিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর। বীজতলা আর বীজতলার পরিমাণ ১১ হাজার ৩০০ হেক্টর।
এই বছর বীজতলার জন্য বিএডিসি ৫ হাজার ৫৬ মেট্রিক টন বীজধান ডিলারদের মাধ্যমে বিক্রির জন্য বরাদ্দ দিয়েছে। এর মধ্যে ১৮০০ মেট্রিক টন বীজ ব্রি-২৯ জাতের। অন্য সব ব্রি-২৮ জাতের। এসব বীজধানের মধ্যে সরকারিভাবে ৩ লাখ কৃষককে পুনর্বাসনের জন্য প্রত্যেককে ব্রি-২৮ জাতের ৫ কেজি করে ১৫০০ মেট্রিক টন বীজ বিনা মূল্যে সরবরাহ করা হচ্ছে।
হাওরপাড়ের কৃষকরা জানান, হাওরের পানি না কমায় বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না তারা। অথচ সময় চলে যাচ্ছে। গত বছর এই সময় বীজতলা তৈরি করে ফেলেছিলেন তারা।
গত বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের বীজ ও সার দিয়ে সরকার যে সহায়তা করছে, তা একেবারেই কম বলে জানান কুষকরা। তাদের ভাষ্য, ‘আমরা হাওরপাড়ের কৃষকরা এই একমাত্র বোরো ধান চাষাবাদ করেই সংসার চালাই। পানি কমার সাথে সাথেই যেন হাওরের বাঁধগুলো সঠিকভাবে তৈরি করা হয় সেই বিষয়টি সবার মাথায় থাকতে হবে।’
অসময়ে বৃষ্টির কারণে হাওরের পানি ধীরগতিতে কমছে বলে জানান তাহিরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম। ফলে কৃষকরা বীজতলা তৈরি করতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘এ উপজেলায় ২৯ হাজারের বেশি ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের মাঝে আমরা বীজ, সার ও নগদ টাকা দিচ্ছি পুনর্বাসনের জন্য। উপজেলায় অন্যান্য জাতের ধানের সঙ্গে ব্রি ২৮ জাতের ধান চাষাবাদে আমরা কৃষকদের উৎসাহিত করছি।’ চলতি মাসের মধ্যেই হাওরের পানি কমে যাবে আর কৃষকরা বীজতলা তৈরি করা শুরু করতে পারবেন বলে আশা করেন তিনি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের (ওয়ান) নির্বাহী প্রকৌশলী আবু বক্কর সিদ্দিক জানান, এবার প্রলম্বিত বর্ষায় অসময়ে বৃষ্টিপাতের কারণে পানি হাওর থেকে বের হতে পারছে না। ফলে বীজতলা তৈরিতে দেরি হচ্ছে।
সুনামগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ জাহেদুল হক বলেন, বীজতলা তৈরিতে পানি এখন বড় সমস্যা হয়েছে। তবে শিগরিই হাওরের পানি দ্রুত কমতে শুরু করবে বলে আশা করছেন তিনি।