হাওর বার্তা ডেস্কঃ বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কারণে পরিবর্তন হচ্ছে জলবায়ু। বাড়ছে সমুদ্রপৃষ্ঠের উষ্ণতা। বিঘিত হচ্ছে আবহাওয়ার মৌসুমি ধারাবাহিকতা। ফলে বর্ষার মৌসুম শুরুর আগেই বৃষ্টি শুরু হয়। একই সঙ্গে শরতেও বৃষ্টি দেখা পাচ্ছে প্রকৃতি। সঙ্গে অসহ্য গরম। আবহাওয়া এমন বৈরী আচরণ অব্যাহত থাকলে বিরূপ প্রভাব পড়বে অর্থনীতিতে এমনটিই ধারণা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, বিশেষ করে অবকাঠামো, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, কৃষি উৎপাদন, প্রাকৃতিক পরিবেশ ও খাদ্য নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সারাবিশ্বেরই আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটেছে। তার রেশ পড়েছে বাংলাদেশেও। গত বছর শীতে ঠা কম অনুভূত হলেও চলতি বছর শীতের অনুভূতি আগের চেয়ে বেশি হবে বলে ধারণা করছেন তারা। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, গত সেপ্টেম্বর মাসে দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মাসজুড়েই দেশের বিভিন্ন এলাকাভেদে বৃষ্টির ক্ষেত্রে ব্যাপক অসঙ্গতি ও বৈপরীত্য ছিল। যেমন সেপ্টেম্বরে দেশের বিভাগওয়ারি হিসেবে চট্টগ্রামে স্বাভাবিকের চেয়ে ৭১ দশমিক ২ শতাংশ বেশিই বৃষ্টি হয়েছে। ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ বেশি, ময়মনসিংহে ৪৮ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি, সিলেটে ২৪ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়। অন্যদিকে উত্তরাঞ্চলে এমনকি দক্ষিণাঞ্চলেও স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক কম বৃষ্টি হয়েছে। গত মাসে রাজশাহী বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ কম, রংপুর বিভাগে ৩৬ দশমিক ৪ শতাংশ কম, খুলনা বিভাগে ২৭ দশমিক ৮ শতাংশ কম এবং বরিশালে ৮ দশমিক ৪ শতাংশ কম পরিমাণে বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে গত জুনে হাওর অঞ্চলের ৬টি জেলায় আকস্মিক ও নজিরবিহীন বন্যা, রাঙ্গামাটি, বান্দরবান ও চট্টগ্রামের পাহাড়ধস, উপকূলীয় অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড় মোরা ও উত্তর অঞ্চলসহ দেশের ৩৫টি জেলায় দুই দফায় ব্যাপক বন্যা দেখা দিয়েছে। চলতি নভেম্বরে বঙ্গোপসাগরে একাধিক নিম্নচাপ থেকে ঘূর্ণিঝড় সৃষ্টি হতে পারে। যার মধ্যে একটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়ার আশঙ্কা আছে। একই শঙ্কা রয়েছে পরবর্তী ডিসেম্বর মাসেও। এমাসে সাগরে দুটি নিম্নচাপ তৈরি হতে পারে, যার কমপক্ষে একটি ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হওয়ার শঙ্কা করেছে। যা গত কয়েক বছরের আবহাওয়ার সঙ্গে মিলছে না। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, আবহাওয়া-জলবায়ুর তথ্য-উপাত্ত, ঊর্ধ্বাকাশের আবহাওয়ার বিন্যাস, বায়ুম-লের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়া মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, এল-নিনো এবং লা-নিনা অবস্থা ইত্যাদি উপাদান আলোচনা-পর্যালোচনা করে এই পূর্বাভাস দেয়া হচ্ছে। এমন অবস্থায় প্রতিনিয়ত অতি বৃষ্টি, অনাবৃষ্টি, আকস্মিক বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের কারণে প্রতি বছর নষ্ট হচ্ছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। এর প্রভাবে সবচেয়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে কৃষি খাতে। অতি বৃষ্টির কারণে যে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে আবার খরার কারণে প্রতিবছর নষ্ট হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ লাখ হেক্টর জমির ফসল। বেশিরভাগ রবি ফসলেরই স্বাভাবিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়ে ফলনের ওপর তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়ছে। এছাড়া শীত মৌসুমে উষ্ণ প্রবাহ দেখা দিলে বেশি সংবেদনশীল ফসল যেমন গমের ফলন খুব কমে যায় এবং গম উৎপাদন অলাভজনক হয়। এব্যাপারে জানতে চাইলে জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ড. হাফিজুর রহমান হাওর বার্তাকে বলেন, উন্নত বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তন রোধের লাগাম এখনই টেনে না ধরলে আবহাওয়ার বৈরী আচরণে ক্ষতিগ্রস্ত হবে স্বল্পোন্নত দেশগুলো। ইতোমধ্যে আমাদের দেশের এর প্রভাব পড়তে শুরু করছে। আবহাওয়া বিশ্লেষকরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়ছে বেশি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোয়। এতে কোনো কোনো বছর কৃষি মৌসুমে তীব্র খরা হচ্ছে। আবার কোনো কোনো মৌসুমে অতিবৃষ্টি বা ঘন ঘন বন্যা হচ্ছে। আবহাওয়ার এ বৈরী আচরণের প্রভাব কৃষির ওপর সরাসরি পড়ছে। দেশের বরেন্দ্র অঞ্চল ও দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির সংকটও দিনকে দিন বাড়ছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে বর্তমান কৃষি ব্যবস্থায়ও বিপর্যয় নেমে আসবে।
সংবাদ শিরোনাম
হাওর অঞ্চলের অতি বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি হচ্ছে
- Reporter Name
- আপডেট টাইম : ০৬:২৪:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ নভেম্বর ২০১৭
- ৩৫৬ বার
Tag :
জনপ্রিয় সংবাদ