হাওর বার্তা ডেস্কঃ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণে নতুন আইনের খসড়া প্রস্তুত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। খসড়া অনুসারে সিটি করপোরেশন এলাকার আসনের সীমানা কিছুটা পরিবর্তন করা হচ্ছে। এতে গুরুত্ব পাবে ভোটার ও জনসংখ্যা উভয় বিষয়টি। তবে ঠিক থাকবে সিটির বাইরের এলাকার আসনগুলোর সীমানা। নির্বাচন কমিশন সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে।
সূত্র জানায়, ২০০৮ এবং ২০০১ সালে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণের সময় পল্লী অঞ্চলে আসন সংখ্যা কমিয়ে সিটি করপোরেশনে বাড়ানো হয়। এবার পল্লী অঞ্চলে আসন সংখ্যা ঠিক রেখে সিটির আসনগুলোর সীমানা কিছু পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আইনটি প্রথমবারের মতো বাংলায় হচ্ছে। এটি আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। এসব বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানম হাওর বার্তাকে বলেন, জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে ভোটার সংখ্যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়ে যাচ্ছে। আর দিন দিন শিক্ষার জন্য বা কাজের তাগিদে হোক সিটিতে জনসংখ্যা বাড়ছে। সে কারণে আমরা এটিও দেখছি, কীভাবে রেসিওটা (অনুপাত) করা যায়। জনসংখ্যা এবং ভোটার সংখ্যা এক সঙ্গে নেয়ার পরও দেখছি যে, পল্লী অঞ্চলে যে আসন সংখ্যা আছে, সেটা যাতে আর না কমে। সে জন্য খসড়া করার পরও বিষয়টি নিয়ে আরও চিন্তাভাবনা করছি। এটার ওপরও কাজ করা হচ্ছে যে, এ ধরনের সংযোজন হলে কী ধরনের চেঞ্জ আসতে পারে।
আপনারা চাচ্ছেন যে, কোনো ক্রমেই পল্লী এলাকার আসন সংখ্যা কমে না যাক এমন প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, হ্যাঁ, পল্লী অঞ্চলে যেন আসন সংখ্যা কোনোভাবেই কমে না যায়, আমরা এটা ধরে কাজ করছি। জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা, এমনকি আমরা আয়তনকেও বিবেচনায় নিয়ে আসছি। সে ক্ষেত্রে জনসংখ্যা বা ভোটার সংখ্যা যেটাকেই আমরা বিবেচনায় নিই না কেন, জনসংখ্যা বাড়লে ভোটার সংখ্যা বাড়বে, এটাই স্বাভাবিক। এ জন্যই বলছি যে, এ ক্ষেত্রে আর কীভাবে এটা আমরা বিবেচনা করতে পারি, অন্যকোনো হিসাব করে এখানে আমরা কোনো কিছু সমাধান পাই কিনা; যাতে পল্লী অঞ্চলে যেন আসন সংখ্যা না কমে।
সংলাপে কয়েকটি দল আসন সংখ্যা বাড়ানোর সুপারিশ করেছিল। বিষয়টি বিবেচনায় রাখছেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে কবিতা খানম বলেন, সেটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, কমিশনের বিষয় নয়। কারণ সংবিধানে ৩০০ আসন আছে, সেটি চেঞ্জ করা মানে অনেক বিরাট একটি বিষয়। আর কমিশন এটি নিয়ে আর কোনো মন্তব্য করতে চাচ্ছে না। কারণ এটি কমিশনের বিষয় নয়। আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সংসদীয় আসনের সীমানা পনর্নির্ধারণ অধ্যাদেশ, ১৯৭২ বাতিল করে নতুন আইন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন ২০১৭ হবে বাংলায়। এরই মধ্যে আইনটির খসড়াও হয়ে গেছে।
নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে ৪০টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে বিএনপিসহ ৯টি দল ২০০১ সালে আগের সীমানা অনুযায়ী আসন বিন্যাসের দাবি করেছে। সীমানা আইনে কোনো পরিবর্তন না এনে ২০০৮-২০১৪ অনুযায়ী আসন বিন্যাসের দাবি করছে আওয়ামী লীগসহ ১৩টি দল। ১৮টি দল নতুন করে সীমানা নির্ধারণের দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি দলগুলো জনসংখ্যা ও ভোটার সংখ্যায় আসন বিন্যাস করতে ইসির কাছে দাবি জানিয়েছে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, জনসংখ্যা, ভোটার সংখ্যা ও সংসদীয় এলাকার আয়তনের ভিত্তিতে ভৌগোলিক অখ-তা, প্রশাসনিক সুবিধা ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বিবেচনায় রেখে ‘দ্য ডিলিমিটেশন অব কনস্টিটিউয়েন্সিস অর্ডিনেন্স-১৯৭৬’ রহিত করে ‘জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণ আইন-২০১৭’ এর খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। আইনের খসড়া প্রণয়নের পর সীমানা পুনর্নির্ধারণ বিধিমালার খসড়া তৈরি করে তা উপস্থাপন করা হবে।
এ বিষয়ে ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ হাওর বার্তাকে বলেন, ১৯৭৬ সালের অধ্যাদেশটি বাংলায় ভাষান্তর করা হয়েছে। কমিশনারদের চূড়ান্ত অনুমোদন নিয়ে তা আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সর্বশেষ আদমশুমারির ভিত্তিতে প্রতিবেদন প্রকাশের এক বছরের মধ্যে শেষ করতে হবে। প্রকাশের আগে ভোটের তফসিল হলে নির্বাচন পরবর্তী এক বছরের মধ্যে সীমানা নির্ধারণের কাজ শেষ করতে হবে।
সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রকাশের আগের সীমানায় ভোট করার সুযোগ রাখা হয়েছে। সে হিসাবে দশম সংসদ নির্বাচনের আসনের সীমানা বহাল রেখেই একাদশ সংসদ নির্বাচন করার ইচ্ছা রয়েছে ইসির। প্রস্তাবিত আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচনী আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ করতে হবে দুই পর্যায়ে ভোটার সংখ্যা ও জনসংখ্যার সমবিভাজনের ভিত্তিতে।
খসড়ার ৭ ধারায় বলা হয়েছে, সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে সীমানা পুনর্নির্ধারণ হওয়ার পর থেকে পরবর্তী আদমশুমারি প্রতিবেদন প্রাপ্তির মধ্যবর্তী সময়কালে বা ভোটার তালিকা হালনাগাদ করে চূড়ান্তভাবে প্রকাশের পর কোনো নির্বাচন অনুষ্ঠানের প্রয়োজন হলে সর্বশেষ নির্ধারিত সীমানার ভিত্তিতে সেই ভোট হবে। এক্ষেত্রে কমিশন নির্বাচনী এলাকার আয়তন ও অবস্থান হুবহু ঠিক রেখে শুধু প্রশাসনিক এলাকার পরিবর্তন হালনাগাদ করে সরকারি গেজেট প্রকাশ করবে।
২০১১ সালে সর্বশেষ পঞ্চম আদমশুমারি প্রবেদন প্রকাশিত হয়। বিদ্যমান অধ্যাদেশ অনুযায়ী জনসংখ্যার যথাসম্ভব সমতা রেখে দশম সংসদ নির্বাচনে আদমশুমারি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আসন বিন্যাস করা হয়। পরবর্তী আদমশুমারির প্রতিবেদন হবে ২০২১ সালে।
ইসি কর্মকর্তারা জানান, প্রস্তাবিত আইন পাস হলে একাদশ সংসদ নির্বাচন বিদ্যমান সীমানাতেই হতে পারবে। শুধু বিলুপ্ত ছিটমহল ও নতুন উপজেলা বা প্রশাসনিক কিছু এলাকা সংসদীয় আসনের যুক্ত করলেই চলবে। সেক্ষেত্রে বড় ধরনের কোনো পরিবর্তন আনার দরকার পড়বে না। ২০০১ সালের নির্বাচনের সময় ১৯৯৫ সালের সীমানার গেজেট বহাল রাখা হয়েছিল। তবে ১৯৮৪, ১৯৯১ ও ২০০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ১৩৩ সংসদীয় আসনে ব্যাপক পরিবর্তন আনা হয়েছিল।
সর্বশেষ ২০১৪ সালে দশম সংসদে ছয়টি নীতিমালা অনুসরণ করে ৫০টি আসনে ছোটখাটো পরিবর্তন করে আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের যুগ্ম সচিব (আইন) মোঃ শাহজাহান হাওর বার্তাকে বলেন, আমরা সীমানা আইন নিয়ে অনেক কাজ করছি। জানি না শেষে কী হয়। আমি মনে করি, বর্তমান আইনে নির্বাচন হতে পারে। কারণ সময় অনেক কম। এটি অনেক জটিল কাজ। পরিবর্তন হলেও এবার খুব বেশি পরিবর্তন হবে না। একজনের আসন নাই করে দিলে তারা তো ইসিকে ধরবে।