হাওর বার্তা ডেস্কঃ ৩ নভেম্বর জেলহত্যা দিবস। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী পৃথক বাণী দিয়েছেন।
বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ৩ নভেম্বর জাতীয় জীবনে এক শোকাবহ দিন। ১৯৭৫ সালের এই দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম. মনসুর আলী ও এ. এইচ. এম কামারুজ্জামান বন্দি অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্বাধীনতাবিরোধী ঘাতকচক্রের হাতে নির্মমভাবে শাহাদতবরণ করেন।
চার জাতীয় নেতাকে শ্রদ্ধা জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেন, বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু পাকিস্তান কারাগারে বন্দি থাকা অবস্থায় তার অবর্তমানে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন জাতীয় চার নেতা মুজিবনগর সরকার গঠন, রণনীতি ও রণকৌশল প্রণয়ন, প্রশাসনিক কর্মকাণ্ড ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা, কূটনৈতিক তৎপরতা, শরণার্থীদের তদারকিসহ মুক্তিযুদ্ধকে জনযুদ্ধে পরিণত করতে অসামান্য অবদান রাখেন। জাতি তাদের অবদান চিরদিন শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবে।
তিনি বলেন, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে বিপন্ন করার পাশাপাশি জাতিকে নেতৃত্বহীন করার লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি কারাবন্দি অবস্থায় ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় এ চার নেতাকে নির্মমভাবে হত্যা করে। ঘাতকচক্রের উদ্দেশ্য ছিল দেশে অগণতান্ত্রিক স্বৈরশাসনের উত্থান ঘটানোর পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের চেতনা থেকে মুক্তিযুদ্ধের আদর্শকে মুছে ফেলা।
কিন্তু ঘাতকদের সে উদ্দেশ্য বৃথা গেছে জানিয়ে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, যতদিন বাংলাদেশ থাকবে, ততদিন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ও তার আদর্শ চির জাগরূক থাকবে। বঙ্গবন্ধু সুখী-সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলা’ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন। তার অসমাপ্ত কাজ বাস্তবায়নে সবাই নিজ নিজ অবস্থানে থেকে অবদান রাখবেন এটাই হোক জেলহত্যা দিবসে আমাদের অঙ্গীকার।
প্রধানমন্ত্রীর বাণী
৩ নভেম্বর জেল হত্যা দিবসে পৃথক বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতীয় চার নেতা হত্যাকাণ্ড ছিল জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার ধারাবাহিকতা। এ ধরনের বর্বর হত্যাকাণ্ড পৃথিবীর ইতিহাসে নজিরবিহীন। ষড়যন্ত্রকারীরা এই হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলার মাটি থেকে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের নাম চিরতরে মুছে ফেলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস এবং বাঙালি জাতিকে নেতৃত্বশূন্য করার অপচেষ্টা চালিয়েছিল।
পচাঁত্তর সালের পর ২১ বছর স্বাধীনতাবিরোধী সেই সব শক্তি ক্ষমতা কুক্ষিগত রাখে উল্লে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা কখনও সামরিক লেবাসে, কখনও গণতন্ত্রের মুখোশ পরে, অবৈধ ও অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতা আঁকড়ে রাখে। আত্মস্বীকৃত খুনিদের রক্ষা করতে ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারি করে। হত্যাকারীদের পুরস্কৃত করে। তারা খুনিদের রাষ্ট্রীয় সব সুযোগ-সুবিধা প্রদানের পাশাপাশি রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করে।
চক্রান্তকারী এবং গণতন্ত্র ও স্বাধীনতাবিরোধী এই অপশক্তি হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। তারা দেশের স্বাধীনতার সপক্ষ শক্তিকে নিশ্চিহ্ন করে দিতে বারবার হামলা চালিয়েছে। এই ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে আমাকে হত্যা করতে চেয়েছিল। আমাদের নেত্রী আইভি রহমানসহ ২২ নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে এবং উন্নয়ন বিঘ্নিত করতে প্রতিক্রিয়াশীল চক্র সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করার গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে বলেও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি এই অপশক্তির দেশবিরোধী চক্রান্ত নস্যাৎ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানান।