২০ হাজার রোহিঙ্গা আনজুমান সীমান্তে প্রবেশের অপেক্ষায়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ মিয়ানমারের রাখাইনে এখনও চলছে সহিংসতা। ফলে জীবন বাঁচাতে এখনো সীমান্তের কাটাতার ও নাফ নদী অতিক্রম করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসছে হাজার হাজার রোহিঙ্গা।

স্থানীয়রা জানান, আজ বৃহস্পতিবার সকালেও কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালীর আঞ্জুমানপাড়া সীমান্ত দিয়ে তিন হাজারেও বেশি রোহিঙ্গা নাফ নদী পার হয়ে শূন্য রেখায় অবস্থান করছেন।

তারা জানিয়েছেন, মিয়ানমার সেনা ও সশস্ত্র মগ উগ্রপন্থীদের নির্যাতন, নিপীড়ন সহ্য করতে না পেরে গত দুই দিন ধরে সীমান্তের ওপারে মেদি এলাকায় জড়ো হয়েছেন ২০ হাজার রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু। বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় সীমান্তে জড়ো হয়েছেন তারা। তবে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আগের মত কঠোর সতর্কতামূলক অবস্থায় রয়েছেন বিজিবি সদস্যরা। এছাড়া টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিনই রোহিঙ্গা প্রবেশ অব্যাহত আছে।

৩৪ বিজিবি’র উপ-অধিনায়ক মেজর ইকবাল আহমেদ জানিয়েছেন, তিন হাজারের মতো রোহিঙ্গা সীমান্তের নো ম্যানস ল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন। বিজিবি এসব রোহিঙ্গাকে নিরাপত্তার কারণে রাতের বেলায় এগোতে দিচ্ছে না। তবে তাদের মানবিক সাহায্য সহযোগিতা দেয়ার কথা তিনি স্বীকার করেছেন।

পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, বুধবার সন্ধ্যায় রোহিঙ্গারা নাফ নদী পার হয়ে দলে দলে এপারে আসতে শুরু করেন। প্রায় তিন হাজার রোহিঙ্গা আঞ্জুমানপাড়া এলাকায় অবস্থান করছেন।

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে গত ২৫ আগস্ট থেকে দেশ ছাড়তে শুরু করেন রোহিঙ্গারা। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর দেয়া তথ্যমতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে ছয় লাখ সাত হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। তবে স্থানীয়দের দাবি এ সংখ্যা অনেক আগেই ছাড়িয়ে গেছে।

২৭ হাজার এতিম রোহিঙ্গা শিশু সনাক্ত
উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গা এতিম শিশুদের সুরক্ষা দিতে জরিপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় এই জরিপ পরিচালনা করছে কক্সবাজার সমাজসেবা অধিদফতর। চলমান এই জরিপ প্রক্রিয়ায় ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় ২৭ হাজার এতিম শিশুকে শনাক্ত করা হয়েছে। এদের মধ্যে ২৮ শতাংশ শিশুর মা-বাবা নেই। বাকিদের মা থাকলেও নেই বাবা। এসব এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য আলাদা শেল্টার হোম তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে সরকার।

সমাজসেবা অধিদফতর অফিস সূত্র জানায়, আগস্টের শেষ সপ্তাহ থেকে এ পর্যন্ত বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ছয় লাখেরও বেশি। এর মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যাই বেশি। স্বজনহারা এসব রোহিঙ্গার মধ্যে সবচেয়ে দুর্দশাগ্রস্ত অবস্থায় রয়েছে শিশুরা। এদেরও বড় একটি অংশ হলো এতিম শিশু, যাদের মা-বাবা কিংবা কোনো স্বজন নেই। এসব এতিম শিশুদের সুরক্ষা দিতে সরকার বিশেষ কেন্দ্র তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ীই গত ২০ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গা এতিম শিশুদের শনাক্তকরণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী ৫ নভেম্বর এই জরিপ কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।

কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা অধিদফতর কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইমরান খান বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে এতিম শিশুদের শনাক্ত করার চলমান প্রক্রিয়া শেষ পর্যায়ে। আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে এতিম শিশুদের জরিপ শেষ করার জন্য সরকারের নির্দেশনা রয়েছে। সেই অনুযায়ীই আমরা কাজ করছি।

তিনি আরো বলেন, এতিম শিশুদের সুরক্ষায় উখিয়ার কুতুপালং মধুরছড়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে দুশ’ একর জমির বরাদ্দ করা হয়েছে। এই জমিতে তাদের জন্য আলাদা শেল্টার হোম তৈরি করা হবে। এতিম শিশুদের শনাক্ত করার কাজ শেষে তাদের পর্যায়ক্রমে এই বিশেষ শেল্টার হোমে রাখা হবে। ব্যক্তি উদ্যোগে কেউ এতিম শিশুদের ক্যাম্পে লালন-পালন করতে চাইলে সেই সুযোগও থাকছে। এ ক্ষেত্রে সরকার আগ্রহীদের অর্থ সহায়তাও দেবে বলে জানান কক্সবাজার জেলা সমাজসেবা অধিদফতর কার্যালয়ের এই ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

নিবন্ধনে আগ্রহ বেড়েছে রোহিঙ্গা শিশুদের
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের চলমান বায়োমেট্রিক নিবন্ধনে বয়োবৃদ্ধ নারী, পুরুষের পাশাপাশি আগ্রহ বেড়েছে রোহিঙ্গা শিশুদের। পাসপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের নিয়ন্ত্রণে গত ১০ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া রোহিঙ্গা নিবন্ধন কার্যক্রমে বুধবার পর্যন্ত তিন লাখ ৭২ হাজার ৫৭২জন রোহিঙ্গা নারী, পুরুষ ও শিশু নিবন্ধিত হয়েছেন।

পার্সপোর্ট অ্যান্ড ইমিগ্রেশন অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আবু নোমান মুহাম্মদ জাকের হোসেন জানান, উখিয়া-টেকনাফে ছয়টি সেন্টারে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। এর মধ্যে উখিয়ায় চারটি, টেকনাফে দুটি।

তিনি বলেন, বর্তমানে অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে নিবন্ধনের যে আগ্রহ দেখা দিয়েছে তা বজায় থাকলে বেশি দিন সময় লাগবে না সব রোহিঙ্গাকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর