ঢাকা ০৬:৫৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সংকট নেই তবু বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৮৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। কোথাও সংকট নেই। এর পরও কেন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম? এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর নেই বাজার বিশেষজ্ঞদের কাছে। তবে ব্যবসায়ীরা এর উত্তর জানেন। তারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট। বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই। তাই দাম বেড়েছে। এ ছাড়া উৎপাদনকারী দেশ ভারতেও দাম বেড়েছে।

এদিকে উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতির সঙ্গে ব্যবসায়ী, বাজার পর্যবেক্ষক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সরকার থেকে ভোক্তা সবপর্যায়ে এই নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত সোমবার দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। এই মুহূর্তে দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। ওই পেঁয়াজ দিয়ে আরো দুই থেকে তিন মাস চাহিদা মেটানো সম্ভব। এরই মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে চলে আসার সময় হয়েছে বলে তারা জানান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামীমা ইয়াসমিন জানান, দেশে পেঁয়াজের কোথাও কোনো সংকট নেই। তার পরও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি সন্দেহজনক। এ নিয়ে মনিটরিংয়ের প্রয়োজন। বিষয়টি ওপর মহলে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ব্যবসায়ীরা যুক্তি দিচ্ছেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশে বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা মতো পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। এদিকে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও যতটা বলা হয় তা বাড়েনি। দেশটিতে বৃষ্টিতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে সত্য। তবে ভারতে পেঁয়াজের দাম একসপ্তাহ আগে ভারতে প্রতিটন পেঁয়াজ ২৭১ মার্কিন ডলার দরে বিক্রি হলেও ২৭ অক্টোবর সেখানে বিক্রি হয়েছে ৩৪১ মার্কিন ডলার দরে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে তাহেরপুরি, বারি পেঁয়াজ-১ (তাহেরপুরি), বারি পেঁয়াজ-২ (রবি মৌসুম), বারি পেঁয়াজ-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরি জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এ কারণে নির্দিষ্ট কোনো মৌসুমে এসে পেঁয়াজের সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা কম।

সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ টন। সে হিসেবে ঘাটতি থাকার কথা সর্বোচ্চ তিন লাখ টন। কিন্তু বছর শেষ হওয়ার বাকি আর দুই মাস। আর ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে সাত লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ঘাটতি মেটানোর পর নতুন ফসল ওঠার দুই মাস আগে এই মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজ মজুদ থাকার কথা চার লাখ ৭০ হাজার ৮৪৫ টন। অথচ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনই বাজারে পেঁয়াজ নেই।

বাজার পর্যবেক্ষণ ও ভোক্তাদের প্রশ্ন, তাহলে আমদানির বাড়তি চার লাখ ৭০ হাজার টন পেঁয়াজ গেল কোথায়? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে মত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে দেশে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে নতুন পেঁয়াজ ওঠার সময় হয়ে গেছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেই দাম কমে যাবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সংকট নেই তবু বাড়ছে পেঁয়াজের দাম

আপডেট টাইম : ০৫:১৪:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। কোথাও সংকট নেই। এর পরও কেন বাড়ছে পেঁয়াজের দাম? এমন প্রশ্নে কোনো সদুত্তর নেই বাজার বিশেষজ্ঞদের কাছে। তবে ব্যবসায়ীরা এর উত্তর জানেন। তারা বলছেন, বাজারে পেঁয়াজের সংকট। বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ নেই। তাই দাম বেড়েছে। এ ছাড়া উৎপাদনকারী দেশ ভারতেও দাম বেড়েছে।

এদিকে উৎপাদন, আমদানি ও মজুদ পরিস্থিতির সঙ্গে ব্যবসায়ী, বাজার পর্যবেক্ষক ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের মিল খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩৫ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ৯০ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সরকার থেকে ভোক্তা সবপর্যায়ে এই নিয়ে উদ্বেগ বেড়েছে।

এমন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে গত সোমবার দ্রব্যমূল্য পর্যালোচনা-সংক্রান্ত আন্তমন্ত্রণালয় সভা করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন, বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের প্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠকে উপস্থিত সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিদের পর্যবেক্ষণে দেশের বাজারে পেঁয়াজের ঘাটতি নেই। এই মুহূর্তে দেশে পর্যাপ্ত পেঁয়াজ মজুদ আছে। ওই পেঁয়াজ দিয়ে আরো দুই থেকে তিন মাস চাহিদা মেটানো সম্ভব। এরই মধ্যে নতুন পেঁয়াজ বাজারে চলে আসার সময় হয়েছে বলে তারা জানান। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শামীমা ইয়াসমিন জানান, দেশে পেঁয়াজের কোথাও কোনো সংকট নেই। তার পরও পেঁয়াজের মূল্যবৃদ্ধি সন্দেহজনক। এ নিয়ে মনিটরিংয়ের প্রয়োজন। বিষয়টি ওপর মহলে জানানো হয়েছে বলেও তিনি জানান।

ব্যবসায়ীরা যুক্তি দিচ্ছেন, ভারতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশে বৃষ্টিতে পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। চাহিদা মতো পেঁয়াজের সরবরাহ নেই। এদিকে পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ভারতে পেঁয়াজের দাম বাড়লেও যতটা বলা হয় তা বাড়েনি। দেশটিতে বৃষ্টিতে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে সত্য। তবে ভারতে পেঁয়াজের দাম একসপ্তাহ আগে ভারতে প্রতিটন পেঁয়াজ ২৭১ মার্কিন ডলার দরে বিক্রি হলেও ২৭ অক্টোবর সেখানে বিক্রি হয়েছে ৩৪১ মার্কিন ডলার দরে।

কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে তাহেরপুরি, বারি পেঁয়াজ-১ (তাহেরপুরি), বারি পেঁয়াজ-২ (রবি মৌসুম), বারি পেঁয়াজ-৩ (খরিপ মৌসুম), স্থানীয় জাত ও ফরিদপুরি জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন করা হয়। ফলে বছরজুড়েই কোনো না কোনো জাতের পেঁয়াজ উৎপাদন হয়। এ কারণে নির্দিষ্ট কোনো মৌসুমে এসে পেঁয়াজের সরবরাহ হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা কম।

সূত্র জানায়, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের চাহিদা ২০ থেকে ২২ লাখ টন। এ বছর দেশে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে ১৯ লাখ টন। সে হিসেবে ঘাটতি থাকার কথা সর্বোচ্চ তিন লাখ টন। কিন্তু বছর শেষ হওয়ার বাকি আর দুই মাস। আর ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ অক্টোবর পর্যন্ত পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে সাত লাখ ৭০ হাজার ৮৭৫ টন। এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব মতে, ঘাটতি মেটানোর পর নতুন ফসল ওঠার দুই মাস আগে এই মুহূর্তে দেশে পেঁয়াজ মজুদ থাকার কথা চার লাখ ৭০ হাজার ৮৪৫ টন। অথচ ব্যবসায়ীরা বলছেন, এখনই বাজারে পেঁয়াজ নেই।

বাজার পর্যবেক্ষণ ও ভোক্তাদের প্রশ্ন, তাহলে আমদানির বাড়তি চার লাখ ৭০ হাজার টন পেঁয়াজ গেল কোথায়? বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মুন্সী শফিউল হক দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই বলে মত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, বৃষ্টিতে দেশে অনেক পেঁয়াজ নষ্ট হয়েছে। তাই দাম কিছুটা বেড়েছে। তবে নতুন পেঁয়াজ ওঠার সময় হয়ে গেছে। নতুন পেঁয়াজ বাজারে এলেই দাম কমে যাবে।