ঢাকা ০৭:১০ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মাল্টা চাষে সাফল্য কৃষক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০১৭
  • ২৯৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাড়ি বাড়ি গান শেখাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ির আঙিনায় থোকা থোকা গাছভর্তি মাল্টা দেখে নিজের শখ জাগে মাল্টা চাষের। তাই শখের বসে মাল্টা চাষে এসেই অভাবনীয় সাফল্য এনেছে নেছারাবাদের গুয়ারেখা ইউনিয়নের গাববাড়ির অচিন্ত কুমার মিস্ত্রি। উপজেলার রাজবাড়ি কলেজের অধ্যাপক প্রতিবেশী শ্যামলের পরামর্শ আর নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে চার বছর আগে বাবার দেয়া ৮ কাঠা জমির মধ্যে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেন অচিন্ত মিস্ত্রি। শুরুতে ২২৫টি মাল্টা চারা রোপণ করে বছরের প্রথমেই গাড় সবুজ রঙের মধ্যে হলদেভাবের টসটসে মিষ্টি স্বাদের পাকা মাল্টায় ক্ষেত ভরে যায় তার। উপজেলার কৃষি বিভাগের কোনো রকম পরামর্শ ছাড়াই ওই বছর তার বাগানে মাল্টার বাম্পার ফলন মিলে। এ বছর ৩৬৫টি গাছে অচিন্তের ক্ষেতে ৮৫-৯০টির মতো সুমিষ্ট মাল্টার ফলনে তিনি এখন এ উপজেলার মাল্টা চাষের রোলমডেল। তার ক্ষেতভর্তি সুমিষ্ট মাল্টা দেখে যে কারোরই নজর কাড়ে। এ জন্য প্রতিনিয়ত ফলপ্রেমী ৩০-৩৫ জনের মতো দর্শনার্থী আসে তার মাল্টা বাগানে। চাষের শুরুতেই ক্ষেতে কাক্সিক্ষত পরিমাণে মাল্টা হওয়ায় বর্তমানে অচিন্তের বেড়েছে মাল্টা বাগানের পরিধি ও ফলের পরিমাণ। অচিন্তের সেই ৮ কাঠা জমি থেকে এক কুড়ো জমিতে রয়েছে ৬০০টি মাল্টা গাছ। এ ছাড়াও ক্ষেতে রয়েছে চাইনিজ কমলা, বাতাবি ও আরো বাহারি জাতের মাল্টার চারা ও ফলভর্তি গাছ। প্রতিদিনই উৎসুক মানুষেরা আসেন তার ‘শান্তি ছায়া নার্সারি ও ফলজ বাগান’ দেখার জন্য।
মাল্টাচাষি অচিন্ত কুমার মিস্ত্রি বলেন, একসময় গানই ছিল তার নেশাপেশা। তিনি বরিশাল বেতারে গান করেন পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের গান শেখাতেন। এই গান শেখানোর জন্যই বিভিন্ন জায়গায় পদচারণায় নানা জায়গায় দেখা হয় ফলভর্তি মাল্টা গাছ। এতে আগ্রহ জাগে মাল্টা চাষের। পরবর্তীতে তার প্রতিবেশী এক কলেজ শিক্ষকের পরামর্শে পৈতৃক ৮ কাঠা সম্পত্তিতে ২০০টি চারা দিয়ে শুরু করেন বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ। চাষের শুরুতেই মিলে কাক্সিক্ষত ফলন। সে বছর প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে তার ফলিত মাল্টা বিতরণ করেও তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতি বছরই বাড়ে বাগানের পরিধি ও ফল। আর এসব ফলিত মাল্টা তিনি পার্শ্ববর্তী কাউখালি, নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠির বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। অচিন্ত বলেন, এ বছর তার ৩৬৫টি গাছে ৯০টির মতো মাল্টাগাছে ফলন মিলেছে। পাঁচহাজার টাকা মণ হিসাবে মাল্টা বিক্রি করে তার উপার্জন হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। মাল্টাচাষি অচিন্তের দুই ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হার্ট ফাউন্ডেশনের নার্স এবং ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী পিকি মিস্ত্রি সর্বদা থাকেন বাগান দেখাশোনার কাজে। অচিন্ত বলেন, তার দেখাদেখি এলাকায় অনেক লোক মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা কেউ কেউ ইতোমধ্যে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। যদি স্থানীয় কৃষি বিভাগ সর্বদা তাদের একটু পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে, তাহলে এ পেশায় স্বাবলম্বী হওয়া সহজ বলে আমি মনে করি। গাছের সঠিক পরিচর্যা ও পাশে জন্মানো আগাছা নিড়ানোর জন্য তার রয়েছে একজন শ্রমিক। এ ছাড়া ফলের মৌসুমে তিন-চারজন শ্রমিক ক্ষেতে কাজ করে থাকেন। মাল্টা চাষের জন্য বড় ধরনের খরচ ও পরিচর্যার দরকার হয় না।
মাল্টাগাছে ফুল ও ফল আসার সময়
সফল এই মাল্টাচাষি বলেন, বারি-১ জাতের এই মাল্টা গাছে বাংলা মাঘ মাসে ফুল আসে। তারপর ফুল টেকানোর জন্য হরমোন জাতীয় স্প্রে দিতে হয়। এরপরে ফাল্গুনে ফুল থেকে গুঁটি আসে। এরপরে গাছে বেড়ে উঠে গাড় সবুজ রঙের থোকায় থোকায় মাল্টা। বাংলা আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত বাজারে পুরোপুরি মাল্টা বিক্রির উপযুক্ত সময় হয়ে যায়। অচিন্ত বলেন, তার বাগানের মাল্টা একদম বিষমুক্ত বলে বাজারে বিক্রির আগেই স্থানীয়রা স্বাদ নেয়ার জন্য এসে কিনি নিয়ে যান।
মাল্টা চাষের পদ্ধতি
স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, সারাদিন রোদ থাকে এবং বৃষ্টির পানি জমে থাকে না প্রথমে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত জায়গাটি কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে সমান করতে হবে। জমি থেকে সর্বদা আগাছা পরিস্কার করে রাখতে হবে। সমতল ভ‚মিতে বর্গাকার পদ্ধতিতে চারা রোপণ করতে হবে। সাধারণত বৈশাখের শেষ থেকে ভাদ্র মাসের মধ্যে মাল্টা চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের জন্য গর্তে আকার ৭৫ বাই ৭৫ সেন্টিমিটার হওয়া ভালো। একটি চারা থেকে অন্য চারার দূরুত্ব তিন মিটার হওয়া ভালো। গর্তের মধ্যে গোবর সার, ছাই, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপিও ও ২৫০ গ্রাম চুন ওপরের মাটির সাথে মেশাতে হবে। গর্তগুলো ১৫-২০ দিন ভরাট করে রেখে তারপর চারা লাগাতে হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

মাল্টা চাষে সাফল্য কৃষক

আপডেট টাইম : ০৪:৩৯:০৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১ নভেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ বাড়ি বাড়ি গান শেখাতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের বাড়ির আঙিনায় থোকা থোকা গাছভর্তি মাল্টা দেখে নিজের শখ জাগে মাল্টা চাষের। তাই শখের বসে মাল্টা চাষে এসেই অভাবনীয় সাফল্য এনেছে নেছারাবাদের গুয়ারেখা ইউনিয়নের গাববাড়ির অচিন্ত কুমার মিস্ত্রি। উপজেলার রাজবাড়ি কলেজের অধ্যাপক প্রতিবেশী শ্যামলের পরামর্শ আর নিজের মেধা ও শ্রম দিয়ে চার বছর আগে বাবার দেয়া ৮ কাঠা জমির মধ্যে বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ শুরু করেন অচিন্ত মিস্ত্রি। শুরুতে ২২৫টি মাল্টা চারা রোপণ করে বছরের প্রথমেই গাড় সবুজ রঙের মধ্যে হলদেভাবের টসটসে মিষ্টি স্বাদের পাকা মাল্টায় ক্ষেত ভরে যায় তার। উপজেলার কৃষি বিভাগের কোনো রকম পরামর্শ ছাড়াই ওই বছর তার বাগানে মাল্টার বাম্পার ফলন মিলে। এ বছর ৩৬৫টি গাছে অচিন্তের ক্ষেতে ৮৫-৯০টির মতো সুমিষ্ট মাল্টার ফলনে তিনি এখন এ উপজেলার মাল্টা চাষের রোলমডেল। তার ক্ষেতভর্তি সুমিষ্ট মাল্টা দেখে যে কারোরই নজর কাড়ে। এ জন্য প্রতিনিয়ত ফলপ্রেমী ৩০-৩৫ জনের মতো দর্শনার্থী আসে তার মাল্টা বাগানে। চাষের শুরুতেই ক্ষেতে কাক্সিক্ষত পরিমাণে মাল্টা হওয়ায় বর্তমানে অচিন্তের বেড়েছে মাল্টা বাগানের পরিধি ও ফলের পরিমাণ। অচিন্তের সেই ৮ কাঠা জমি থেকে এক কুড়ো জমিতে রয়েছে ৬০০টি মাল্টা গাছ। এ ছাড়াও ক্ষেতে রয়েছে চাইনিজ কমলা, বাতাবি ও আরো বাহারি জাতের মাল্টার চারা ও ফলভর্তি গাছ। প্রতিদিনই উৎসুক মানুষেরা আসেন তার ‘শান্তি ছায়া নার্সারি ও ফলজ বাগান’ দেখার জন্য।
মাল্টাচাষি অচিন্ত কুমার মিস্ত্রি বলেন, একসময় গানই ছিল তার নেশাপেশা। তিনি বরিশাল বেতারে গান করেন পাশাপাশি বাড়ি বাড়ি গিয়ে শিক্ষার্থীদের গান শেখাতেন। এই গান শেখানোর জন্যই বিভিন্ন জায়গায় পদচারণায় নানা জায়গায় দেখা হয় ফলভর্তি মাল্টা গাছ। এতে আগ্রহ জাগে মাল্টা চাষের। পরবর্তীতে তার প্রতিবেশী এক কলেজ শিক্ষকের পরামর্শে পৈতৃক ৮ কাঠা সম্পত্তিতে ২০০টি চারা দিয়ে শুরু করেন বারি-১ জাতের মাল্টা চাষ। চাষের শুরুতেই মিলে কাক্সিক্ষত ফলন। সে বছর প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে তার ফলিত মাল্টা বিতরণ করেও তিনি প্রায় ২০ হাজার টাকার মাল্টা বিক্রি করেন। এরপর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। প্রতি বছরই বাড়ে বাগানের পরিধি ও ফল। আর এসব ফলিত মাল্টা তিনি পার্শ্ববর্তী কাউখালি, নাজিরপুর ও স্বরূপকাঠির বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেন। অচিন্ত বলেন, এ বছর তার ৩৬৫টি গাছে ৯০টির মতো মাল্টাগাছে ফলন মিলেছে। পাঁচহাজার টাকা মণ হিসাবে মাল্টা বিক্রি করে তার উপার্জন হয়েছে সাড়ে চার লাখ টাকা থেকে প্রায় পাঁচ লাখ টাকা। মাল্টাচাষি অচিন্তের দুই ছেলেমেয়ে। বড় মেয়ে ঢাকার সোহরাওয়ার্দী হার্ট ফাউন্ডেশনের নার্স এবং ছেলে এ বছর এসএসসি পরীক্ষার্থী। স্ত্রী পিকি মিস্ত্রি সর্বদা থাকেন বাগান দেখাশোনার কাজে। অচিন্ত বলেন, তার দেখাদেখি এলাকায় অনেক লোক মাল্টা চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। তারা কেউ কেউ ইতোমধ্যে মাল্টা চাষ শুরু করেছেন। যদি স্থানীয় কৃষি বিভাগ সর্বদা তাদের একটু পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করে, তাহলে এ পেশায় স্বাবলম্বী হওয়া সহজ বলে আমি মনে করি। গাছের সঠিক পরিচর্যা ও পাশে জন্মানো আগাছা নিড়ানোর জন্য তার রয়েছে একজন শ্রমিক। এ ছাড়া ফলের মৌসুমে তিন-চারজন শ্রমিক ক্ষেতে কাজ করে থাকেন। মাল্টা চাষের জন্য বড় ধরনের খরচ ও পরিচর্যার দরকার হয় না।
মাল্টাগাছে ফুল ও ফল আসার সময়
সফল এই মাল্টাচাষি বলেন, বারি-১ জাতের এই মাল্টা গাছে বাংলা মাঘ মাসে ফুল আসে। তারপর ফুল টেকানোর জন্য হরমোন জাতীয় স্প্রে দিতে হয়। এরপরে ফাল্গুনে ফুল থেকে গুঁটি আসে। এরপরে গাছে বেড়ে উঠে গাড় সবুজ রঙের থোকায় থোকায় মাল্টা। বাংলা আশ্বিন থেকে অগ্রহায়ণ মাস পর্যন্ত বাজারে পুরোপুরি মাল্টা বিক্রির উপযুক্ত সময় হয়ে যায়। অচিন্ত বলেন, তার বাগানের মাল্টা একদম বিষমুক্ত বলে বাজারে বিক্রির আগেই স্থানীয়রা স্বাদ নেয়ার জন্য এসে কিনি নিয়ে যান।
মাল্টা চাষের পদ্ধতি
স্থানীয় কৃষি বিভাগ থেকে জানা যায়, সারাদিন রোদ থাকে এবং বৃষ্টির পানি জমে থাকে না প্রথমে এমন জায়গা নির্বাচন করতে হবে। নির্বাচিত জায়গাটি কয়েকবার চাষ ও মই দিয়ে সমান করতে হবে। জমি থেকে সর্বদা আগাছা পরিস্কার করে রাখতে হবে। সমতল ভ‚মিতে বর্গাকার পদ্ধতিতে চারা রোপণ করতে হবে। সাধারণত বৈশাখের শেষ থেকে ভাদ্র মাসের মধ্যে মাল্টা চারা রোপণের উপযুক্ত সময়। চারা রোপণের জন্য গর্তে আকার ৭৫ বাই ৭৫ সেন্টিমিটার হওয়া ভালো। একটি চারা থেকে অন্য চারার দূরুত্ব তিন মিটার হওয়া ভালো। গর্তের মধ্যে গোবর সার, ছাই, ২৫০ গ্রাম টিএসপি, ২৫০ গ্রাম এমপিও ও ২৫০ গ্রাম চুন ওপরের মাটির সাথে মেশাতে হবে। গর্তগুলো ১৫-২০ দিন ভরাট করে রেখে তারপর চারা লাগাতে হবে।