ঢাকা ০৩:১৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

পাহাড়ে তুলা চাষের অপার সম্ভাবনা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৫:১৬:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭
  • ৩০২ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। হাইব্রিড কার্পাস তুলা চাষ খাগড়াছড়ির পরিবেশ অনুকূলে। যার কারণে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তুলা চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। জেলার মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা, মহালছড়িসহ ৮টি উপজেলায় এখন তুলা চাষ হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে আগামীতে তুলা চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ৫৫ লাখ থেকে ৬০ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে।

আর স্থানীয়ভাবে সারা দেশে তুলা উৎপাদন হচ্ছে মাত্র দেড় লাখ বেল। ফলে আমদানি নির্ভর তুলা খাতে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ করে থাকে কটন মিলসহ বিভিন্ন তুলা শিল্প কারখানা। পার্বত্যঞ্চলের ঢালু জমি উঁচু-নিচু হওয়ায় ও পানির সমস্যা থাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত পড়ে থাকে। পতিত জমিতে তুলা উৎপাদনে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে খরচ কম ও পানি কম লাগায় পার্বত্যঞ্চলে তুলা চাষের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পার্বত্যঞ্চলে তুলা চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আদর্শ পাড়ার তুলা চাষি রহুল আমিন সর্দার জানান, ‘কয়েক বছর যাবৎ আমি পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষ করছি। এখানে ১ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে ব্যয় হয় ৯-১০ হাজার টাকা। আর তুলা বিক্রি হয় ২৩-২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি আমার ১২-১৪ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরো বলেন, আমি প্রকৃত একজন তামাকচাষি ছিলাম। তামাক চাষে আমি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ ক্ষতি থেকে বাচতে আমি এখন তুলা চাষ করছি। কৃষকরা তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কারণ তামাক স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তামাক চাষের তুলনায় তুলা চাষে কষ্ট খুবই কম। গত বছর তুলা চাষে ভাল লাভ হওয়ায় এবছর আমি ১৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি’। তুলা চাষি দিগেন্দ্র ত্রিপুরা, জসিম উদ্দিন, আবদুুল হান্নান কোম্পানি, বিকাশ চাকমা, কলই ত্রিপুরা জানান, ‘বিঘাপ্রতি ১২-১৪ মণ করে তুলা উৎপাদন হয়। আর এই তুলা বিচিসহ সরকারি প্রতিনিধি ও আড়ৎদাররা জমিতে এসে কিনে নিয়ে যান। মাঠ থেকেই আমাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি হয়ে যায়’। তারা বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকা অব্যাহত থাকলে আগামীতে তুলা চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় এগারো শ’ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করা হয়েছে। যার অধিকাংশই কার্পাস হাইব্রিড তুলা। এতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কর্তৃপক্ষ। তবে আরো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা বাড়ানো হলে তুলা চাষে কৃষকের সংখ্যা বাড়বে বলে জানান মাঠ পর্যায়ের কটন কর্মকর্তারা। মাটিরাঙ্গা উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড কটন ইউনিট অফিসার মো. আলী হোসেন জানান, ‘তুলা চাষ এ অঞ্চলের পরিবেশ অনুকূলে। পাহাড়ি অঞ্চলে তুলা চাষ খুবই উপযোগী কারণ তুলা গভীর মূলি ফসল, ফলে মাটির ক্ষয় রোধ ও পাহাড় ধস হতে রক্ষা করে। তুলার গাছ থেকে লাকড়ি হয়, তুলার বীজ থেকে খৈল হয় তৈল হয়, এর সবকিছুই পরিবেশ-বান্ধব। এখানকার অধিকাংশ তামাক চাষি এখন তুলা চাষ করছে। তুলা চাষ করে এরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। যার দরুন এখানে তুলা চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। এখানে সরকারি সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি সহযোগিতা পেলে তুলা চাষির সংখ্যা আরো বাড়বে’। খাগড়াছড়ি জেলা প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মোজাফফর হোসেন জানান, ‘তুলা চাষে কম খরচ এবং কম কষ্টে অধিক অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই চাষিরা তুলা চাষে ঝুঁকছেন। এখানকার পরিবেশ তুলা চাষের অনুকূলে।

তুলা চাষিদের বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে । সরকারিভাবে তুলা চাষের জন্য তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে আরো বেশি সহযোগিতা পেলে এখানে তুলা চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। বিশেষ করে এখানে বীজ, সার এবং কীটনাশক আরো বেশি করে সরবরাহ করা প্রয়োজন। আমাদের এ অঞ্চলে মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হেক্টর, এর মধ্যে ২১.৩৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। আগামীতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই আরো সরকারি বরাদ্ধ প্রয়োজন’।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

পাহাড়ে তুলা চাষের অপার সম্ভাবনা

আপডেট টাইম : ০৫:১৬:১৮ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ পার্বত্যাঞ্চলে পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষের অপার সম্ভাবনা রয়েছে। হাইব্রিড কার্পাস তুলা চাষ খাগড়াছড়ির পরিবেশ অনুকূলে। যার কারণে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় তুলা চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। জেলার মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা, মহালছড়িসহ ৮টি উপজেলায় এখন তুলা চাষ হচ্ছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে আগামীতে তুলা চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ৫৫ লাখ থেকে ৬০ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে।

আর স্থানীয়ভাবে সারা দেশে তুলা উৎপাদন হচ্ছে মাত্র দেড় লাখ বেল। ফলে আমদানি নির্ভর তুলা খাতে প্রতিবছর প্রায় দুই হাজার কোটি টাকার ওপর বিনিয়োগ করে থাকে কটন মিলসহ বিভিন্ন তুলা শিল্প কারখানা। পার্বত্যঞ্চলের ঢালু জমি উঁচু-নিচু হওয়ায় ও পানির সমস্যা থাকায় হাজার হাজার হেক্টর জমি পতিত পড়ে থাকে। পতিত জমিতে তুলা উৎপাদনে অন্যান্য ফসল উৎপাদনের চেয়ে খরচ কম ও পানি কম লাগায় পার্বত্যঞ্চলে তুলা চাষের অপার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। পার্বত্যঞ্চলে তুলা চাষ করে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। এ বিষয়ে মাটিরাঙ্গা উপজেলার আদর্শ পাড়ার তুলা চাষি রহুল আমিন সর্দার জানান, ‘কয়েক বছর যাবৎ আমি পাহাড়ের ঢালে তুলা চাষ করছি। এখানে ১ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করতে ব্যয় হয় ৯-১০ হাজার টাকা। আর তুলা বিক্রি হয় ২৩-২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত। এতে সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি আমার ১২-১৪ হাজার টাকা আয় হয়। তিনি আরো বলেন, আমি প্রকৃত একজন তামাকচাষি ছিলাম। তামাক চাষে আমি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। এ ক্ষতি থেকে বাচতে আমি এখন তুলা চাষ করছি। কৃষকরা তামাক চাষ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে কারণ তামাক স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর। তামাক চাষের তুলনায় তুলা চাষে কষ্ট খুবই কম। গত বছর তুলা চাষে ভাল লাভ হওয়ায় এবছর আমি ১৫ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করেছি’। তুলা চাষি দিগেন্দ্র ত্রিপুরা, জসিম উদ্দিন, আবদুুল হান্নান কোম্পানি, বিকাশ চাকমা, কলই ত্রিপুরা জানান, ‘বিঘাপ্রতি ১২-১৪ মণ করে তুলা উৎপাদন হয়। আর এই তুলা বিচিসহ সরকারি প্রতিনিধি ও আড়ৎদাররা জমিতে এসে কিনে নিয়ে যান। মাঠ থেকেই আমাদের উৎপাদিত ফসল বিক্রি হয়ে যায়’। তারা বলেন, সরকারি পৃষ্ঠপোষকা অব্যাহত থাকলে আগামীতে তুলা চাষ আরো বৃদ্ধি পাবে। অফিস সূত্রে জানা যায়, এ বছর খাগড়াছড়ি জেলায় প্রায় এগারো শ’ বিঘা জমিতে তুলা চাষ করা হয়েছে। যার অধিকাংশই কার্পাস হাইব্রিড তুলা। এতে বাম্পার ফলনের আশা করছেন কর্তৃপক্ষ। তবে আরো সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও সহযোগিতা বাড়ানো হলে তুলা চাষে কৃষকের সংখ্যা বাড়বে বলে জানান মাঠ পর্যায়ের কটন কর্মকর্তারা। মাটিরাঙ্গা উপজেলা তুলা উন্নয়ন বোর্ড কটন ইউনিট অফিসার মো. আলী হোসেন জানান, ‘তুলা চাষ এ অঞ্চলের পরিবেশ অনুকূলে। পাহাড়ি অঞ্চলে তুলা চাষ খুবই উপযোগী কারণ তুলা গভীর মূলি ফসল, ফলে মাটির ক্ষয় রোধ ও পাহাড় ধস হতে রক্ষা করে। তুলার গাছ থেকে লাকড়ি হয়, তুলার বীজ থেকে খৈল হয় তৈল হয়, এর সবকিছুই পরিবেশ-বান্ধব। এখানকার অধিকাংশ তামাক চাষি এখন তুলা চাষ করছে। তুলা চাষ করে এরা স্বাবলম্বী হচ্ছে। যার দরুন এখানে তুলা চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। এখানে সরকারি সহযোগিতা আরো বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি সহযোগিতা পেলে তুলা চাষির সংখ্যা আরো বাড়বে’। খাগড়াছড়ি জেলা প্রধান তুলা উন্নয়ন কর্মকর্তা মো. মোজাফফর হোসেন জানান, ‘তুলা চাষে কম খরচ এবং কম কষ্টে অধিক অর্থ উপার্জন করা যায়। তাই চাষিরা তুলা চাষে ঝুঁকছেন। এখানকার পরিবেশ তুলা চাষের অনুকূলে।

তুলা চাষিদের বীজ, সার এবং কীটনাশক বিনামূল্যে প্রদান করা হচ্ছে । সরকারিভাবে তুলা চাষের জন্য তাদের প্রশিক্ষণও দেয়া হচ্ছে। তবে সরকারিভাবে আরো বেশি সহযোগিতা পেলে এখানে তুলা চাষে বিপ্লব ঘটতে পারে। বিশেষ করে এখানে বীজ, সার এবং কীটনাশক আরো বেশি করে সরবরাহ করা প্রয়োজন। আমাদের এ অঞ্চলে মোট লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৫ হেক্টর, এর মধ্যে ২১.৩৩ হেক্টর লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়েছে। আগামীতে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা আরো বৃদ্ধি পাবে। তাই আরো সরকারি বরাদ্ধ প্রয়োজন’।