কৃত্রিম উপায়ে কুমির চাষের নিজকুকের

হাওর বার্তা ডেস্কঃ কৃত্রিম উপায়ে কুমির চাষের প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার আভাস নিজকুকের সভাপতি কালিন্দার কণ্ঠে সেদিন টের পেয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা। তাদের ধারণা, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববাজারে যেতে কারোরই আপত্তি থাকার কথা নয়

শিবসা আর পশুর নদীর মোহনাকে কেউ কেউ বলে পশুর পয়েন্ট, কেউ জায়গাটাকে জানে শিবসা পয়েন্ট হিসেবে। যে যা বলুক, বন্দর অধিদফতরের খাতায় এর নাম আকরাম পয়েন্ট। ডিপ সি-পোর্ট হওয়ায় একমসয় একজন পটেনশিয়াল ক্যান্ডিডেট ছিলেন। সোনাদিয়ার সাপোর্টার বেশি হওয়ায় স্থানীয় উন্নয়ন সংগ্রাম কমিটি বড্ড বেশি বাড়িমুখী থাকায় যা হওয়ার তা-ই হয়েছে। আকরাম পয়েন্ট অকর্মণ্যতায় আকীর্ণ হয়ে গেছে। সবাই জানে এবং মানে যে, বড়র বাড়িতে বড়র গলাবাজির কাছে ছোট তরফের কথা টেকে না। যাক সে কথা। দশ কুমিরের এক ডেলিগেশন যাবে বুড়িগোয়ালিনীর নীলডুমুরে অবস্থানরত বন বিভাগের কুমিরবিষয়ক বড় কর্তার কাছে। আকরাম পয়েন্ট থেকে বেশ কয়েক যোজন ভাটিতে কপোতাক্ষ আর আড়পাংশার মোহনায় নীলডুমুর সুন্দরবনের এক বড় সীমান্ত চৌকি।

নিখিল জঙ্গল কুমির কনফেডারেশনের (নিজকুক) সভাপতি কুমিরাতি কালিন্দা ডেলিগেশনের নেতৃত্ব দেবেন। গতকাল আকরাম পয়েন্টে নিজকুকের হেডকোয়ার্টারে উচ্চপর্যায়ের পরিষদে সিদ্ধান্ত হয়েছে, আগামী পূর্ণিমার রাতে ডেলিগেশন নীলডুমুরে যাবে এবং ডেলিগেশন যে স্মারকলিপি নিয়ে যাবে, তা রচনার ভার দেয়া হয়েছে নিজকুকের গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন প্রশাখার প্রধান কুমুরালী কাটাচার্যের নেতৃত্বে তিন সদস্যের কমিটিকে। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে কুমিরাতি কালিন্দা জানান, বিদেশে কুমির রফতানির একটি উদ্যোগের ব্যাপারে তাদের প্রতিক্রিয়া পেশ করা হবে ডেলিগেশনের মুখ্য উদ্দেশ্য; পাশাপাশি পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোকপাত হতে পারে। বছর ২৮ আগে জলজ প্রাণিকুলের কূলকিনারা নিয়ে এক আন্তর্জাতিক সম্মেলনে প্রচন্ড মতদ্বৈধতা দেখা দেয়ার পর বন বিভাগের সঙ্গে সমঝোতা কমিশনের কার্যক্রম মূলত মুখ থুবড়ে পড়ে। খুব সীমিত পরিসরে শুধু নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষার রুটিনকাজটি কোনোরকমে চললেও উচ্চতর পর্যায়ে যোগাযোগ বাহ্যত বন্ধ আছে; সংবাদ কর্মীদের পীড়াপীড়িতে বিষয়টি স্বীকার করেন নিজকুক সভাপতি এবং বলেন, আলোচনার পথে ফেরার পথ খোঁজাও এবারের ডেলিগেশনের একটা লক্ষ্য থাকবে। কুমির রফতানির ব্যাপারে নিজকুকের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক কূটনীতিকদের মতো কালিন্দা বলেন, এ ব্যাপারে এ পর্যায়ে মন্তব্য করার সময় এখনও আসেনি। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কমিটিকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে পরিস্থিতিপত্র তৈরি করতে। তাদের অভিমত ও সুপারিশ উচ্চপরিষদে পেশ করা হবে, কনসেনসাসের ভিত্তিতে নৈতিক অবস্থান নির্ধারিত হবে এবং রোডম্যাপও তৈরি হবে সে অনুযায়ী।

‘আপনারা থাকেন পানিতে, মানে নৌপথে, রোডম্যাপ কেন এবং কীভাবে তৈরি করবেন আপনারা?’ সময়-অসময় জ্ঞান-কা-জ্ঞানহীন একটি পত্রিকার এক নাবালক প্রতিবেদকের এ প্রশ্নে কালিন্দা শুধু নিজে নন, উপস্থিত সংবাদ মাধ্যম প্রতিনিধিরাও বেশ বিব্রত বোধ করেন। প্রশ্নটি এড়িয়ে কালিন্দা জানান, ‘শিক্ষার প্রসারে আমাদের সংগঠন সর্বদা সতর্ক, বিশেষ করে একই শব্দের সরাসরি ও ভাবভাষাগত অর্থব্যঞ্জনার ব্যাপারটি যথাসতর্কতার সঙ্গে শেখার ও প্রয়োগের প্রয়াজনীয়তা শেষ হয়ে যায়নি বরং বেড়েছে।’

দুপুরের আগে বের হয় না অথচ ভোরের সঙ্গে নাম দেয়া এমন একটি পত্রিকার প্রতিনিধি কমুলেশ ঠিকার্জি জানতে চান, ‘শিয়াল পন্ডিত মশাইয়ের সঙ্গে শিক্ষা লেনদেনে আপনাদের সে সমঝোতা স্মারক এখনও বলবৎ আছে কি?’

‘বিষয়ভুক্ত প্রশ্নটি বেশ পুরনো। আমরা এরই মধ্যে নিজেদের শিক্ষা নিজেরা নেয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছি, ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ প্রকৃতির পাঁচটি প্রকল্প গত ২৫ বছরে বাস্তবায়িত হয়েছে। আমাদের ছানাপোনাদের এখন আর অন্যের পাঠশালায় পাঠাতে হয় না।’ কালিন্দার এ জবাব শেষ হওয়ার আগেই সম্পূরক প্রশ্ন করে বসল বেঁটে ধরনের এক রিপোর্টার।

‘তা পন্ডিত মশাইয়ের পাঠশালায় আপনাদের এ পর্যন্ত যতগুলো ছানা খোয়া গেছে, সে ব্যাপারে কোনো ক্ষতিপূরণ মামলা ঠোকা হয়েছে কি? মামলা হয়ে থাকলে সেগুলো এখন কোন পর্যায়ে আছে?’

কালিন্দা একসময়ের ডাকসাইটে আমলার মতো শান্ত সমাহিত স্বরেই বিব্রতকর এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘পৌরাণিক কাহিনীর যুগ আমরা পেরিয়ে এসেছি অনেক আগে। কোনো সম্প্রদায়ের নির্বুদ্ধিতার ওপর কোনো গোত্র বা গোষ্ঠীর চালাকিপনার প্রাধান্য প্রতিপন্ন করতে একসময় স্বার্থান্বেষী মহলের প্ররোচনায় এ ধরনের নকশা করা হতো। আমরা এখন মুক্তবাজার ও বিশ্বে বাস করি। সবার প্রতি বন্ধুত্ব, কারও প্রতি বিদ্বেষ নয় এ নীতিতেই নিয়ত চলছি আমরা। এ মুহূর্তে শিয়াল প-িত মশাইরা বাংলাদেশ বাঘ, হরিণ ও কুমির (বাবাহকু) জোটের একটি গুরুত্বপূর্ণ শরিক দল। আমাদের মধ্যে চমৎকার সম্পর্ক বিদ্যমান। তাছাড়া সামান্য বিষয় নিয়েও মামলা-মোকদ্দমা কোর্টকাচারি করার সংস্কৃতি থেকে আমরা অনেক আগে বেরিয়ে এসেছি।’

উপস্থিত সংবাদকর্মীদের পরে জলপানে আপ্যায়িত করা হয়। আকরাম পয়েন্টে যখন এ প্রেস ব্রিফিং চলছিল, তখন শ্যামনগরের মুন্সীগঞ্জ ও কৈখালীতে, কয়রার দক্ষিণ বেদকাশি এবং দাকোপের সুতারখালিতে কুমিরের সঙ্গে স্থানীয় অধিবাসীদের ধস্তাধস্তির ঘটনার খবর এসে পৌঁছে। প্রচার বিভাগের প্রধান কুমুদাস দসিয়া বিষয়টি কালিন্দাকে অবহিত করেন। পাছে সংবাদ কর্মীরা এ নিয়ে কোয়ারি করতে উৎসাহী না হয়, সেজন্য বিশেষ ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে কালিন্দা প্রেস ব্রিফিংস্থল ত্যাগ করেন। ইদানীং লোকালয়ে বাঘের আনাগোনা নিয়ে মিডিয়ায় যেভাবে রিপোর্ট আসছে, তাতে বাবাহকুর উচ্চপরিষদ বেশ বিব্রত। জনমত বিরূপ বলয়ে যাতে চলে না যায়, সেদিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রাখতে বলা হয়েছে সব শরিক দলের অধিকারিককে। এ পর্যন্ত কুমিরের সঙ্গে লোকালয়ে তেমন কোনো স্পর্শকাতর পরিস্থিতির উদ্ভব হয়নি মর্মে গতকালের উচ্চপর্যায়ের সভায় সন্তোষ প্রকাশের পরের দিনই এ ধরনের খবর আসায় কালিন্দা বেশ বিচলিত হয়ে পড়েন। বিষয়টি সম্পর্কে বর্তমানে শরণখোলার সাউথখালীতে অবকাশযাপনরত বাবাহকু প্রধান সুন্দরমিয়াকে রিপোর্ট করার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন তিনি।

অনেক আগে, যখন বাদা আবাদ করে লোকালয় গড়ে তোলা হয়, তখন কিছুটা নিজেদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সন্দিহান বোধ করে কালিন্দাদের পূর্বপুরুষরা নয়াবাদে বসবাসকারীদের সঙ্গে স্রেফ হিংসার বশে কিংবা কখনও নিজেদের আত্মরক্ষার খাতিরে প্রায়ই বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়ত। তবে সেসব বিবাদ মামুলি আহত হওয়া বা করার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকত। বাচ্চা ছেলেমেয়েরা অসাবধানতাবশে খাল বা গাঙপাড়ে এলে কুমিরদের পড়ে থাকা কাঠ হিসেবে ভুল ঠাউরে তাদের ওপর চড়ে বসলে দুঃখজনক পরিণতি তাদের হতো এ কথা সুন্দরবনের আদি ইতিহাসবেত্তারা বিবরণ দিয়ে গেছেন। এসব ঘটনা নিতান্ত অনিচ্ছা সত্ত্বেও ঘটে থাকত; কিন্তু আজকের দিনে নিজকুকের তরফ থেকে বক্তব্য দেওয়ার যেমন সুযোগ রয়েছে তখনকার দিনে, তেমন সুযোগ না থাকায় একতরফাভাবে সব দোষের ভাগিদার হতে হতো তাদের। তবে হ্যাঁ, মাঝে মধ্যে মনে রাখার মতো মস্ত বিবাদ বা খুনোখুনির ঘটনা দুই-একটা যে ঘটত না, তা কিন্তু নয়। নিজেদের মধ্যেও অনেক বাজে প্রকৃতির সদস্যরা হিংস্রতা ও জংলি মনোভাবের পরিচয় দিতে সে সময় কসুর করত না। নিখিল জঙ্গল ইনস্টিটিউট অব ইমোশনাল স্টাডিজের লাইব্রেরির আর্কাইভ শাখায় সংরক্ষিত ডেসপাচে দেখা যায় মুরব্বিস্থানীয় ঐতিহাসিক এএফএম আবদুল জলিল সাহেব সে সময়ের কুমির সম্প্রদায়ের আচার-আচরণের পরিচয়লিপি দিয়েছেন এভাবে ‘সুন্দরবনের সব নদী ও খালে অসংখ্য কুমির বাস করে। এ জলজন্তু অতিমাত্রায় শক্তিশালী এবং হিংস্র। বড় কুমির লেজসহ ২০ ফুট পর্যন্ত দীর্ঘ হইয়া থাকে। ব্যাঘ্রের ন্যায় এই জন্তু শিকারে বিশেষ কষ্ট স্বীকার করিতে হয় না।… কুমির শিকারি জন্তু। অনেক সময় নৌকার উপর হইতে লম্ফ দিয়া মানুষ শিকার করিয়া নদীর মধ্যে ফেলিয়া ভক্ষণ করে।… কুমির উভচর প্রাণী, তবে স্থলভাগ অপেক্ষা জলস্থলীতে উহার গতি ক্ষীপ্র। কুমিরের চক্ষুদ্বয় মস্তকের উপরিভাগে অবস্থিত। শুধু চক্ষু দুইটি ভাসাইয়া সে দূর হইতে শিকারের সন্ধান করিতে পারে। কুমিরের জিহ্বা নাই। কুমিরের দন্তগুলি অত্যন্ত ধারালো।… একটি স্ত্রী কুমির প্রায় ৫০টি পর্যন্ত ডিম পাড়িয়া থাকে। ইহারা নদী বা সমুদ্রতীরবর্তী স্থানে ডিম পাড়িয়া থাকে। ডিম তা দেওয়ার কয়েকদিন পরে খোসার মধ্য হইতে বাচ্চা বাহির হইয়া নদীতে সাঁতার খেলে। এইসব বাচ্চার আর কোনো প্রকার যত্ন লইতে হয় না। স্ত্রী ও পুরুষ উভয় জাতীয় কুমির স্বীয় বাচ্চা ধরিয়া উদরস্থ করে।… মানুষখেকো কুমির দূর হইতে শিকারের প্রতি লক্ষ করে। বড় বড় নৌকার মাঝিরা চৌকির উপর উচ্চস্থান হইতে হাল চালনা করিয়া নৌকার গতি নিয়ন্ত্রণ করে। শিকারি কুমির দূর হইতে উহা লক্ষ্য করিয়া অতীব সন্তর্পণে হালের নিকট যাইয়া ভীষণ জোরে ধাক্কা দেয়। অকস্মাৎ ধাক্কায় মাঝি নদীতে পড়িয়া গেলে কুমির তাকে উদরস্থ করে।’

নিজকুকের গবেষণা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের প্রধান কুমিরাত কাতাইয়া ইতিহাসের এ বিবরণকে আরও গবেষণার ব্যাপার বলে মন্তব্য করেন সম্প্রতি ঘষিয়াখালীতে অনুষ্ঠিত এক সেমিনারে। নীলডুমুর ডেলিগেশনের স্মারকপত্র রচনার জন্য গঠিত কমিটির একজন প্রভাবশালী সদস্য কাতাইয়া ভারতের কাকদ্বীপের রায়মঙ্গল জলজ প্রাণীর মৌল মুসাবিদা ইনস্টিটিউট থেকে গেল শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গবেষণায় বিশেষ ডিপ্লোমা লাভ করেন। তার ধারণা, কুমির সম্প্রদায়ের হিংস্রতার স্বভাবকে খ-িত অবয়বে দেখার অবকাশ নেই। সম্পদ সংরক্ষণে ডাঙ্গায় বা বনে বাঘের মতো পানিতে কুমিরেরও গঠনমূলক ভূমিকাকে অনেকে একদেশদৃষ্টিতে দেখে থাকেন এটা কারও কাছে স্বাভাবিক মনে হলেও ঐতিহাসিকের কাছে এটি প্রত্যাশা করার সুযোগ নেই। কোনো সম্প্রদায়ের সব কার্যক্রম খারাপ বা নিন্দাযোগ্য এ ধরনের ধারণা পোষণকারীরা মৌলিক অধিকারের সপক্ষ শক্তি হতে পারেন না। মন্দের মধ্যে ভালোর উপাদান আবার কল্যাণের মধ্যে অশুভর সন্ধান করা মুক্তবুদ্ধি চিন্তাচেতনার অপর নাম।

কুমিরাত কাতাইয়া একবার শ্রীলঙ্কায় অনুষ্ঠিত ‘জীবজগতে দর্শন ও চিন্তার সমন্বয়’ শীর্ষক আঞ্চলিক সম্মেলনে প্রবন্ধ পাঠের জন্য আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। সে সম্মেলনের ঘোষণা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি জানান, ‘সব জীবের মধ্যে মূল্যবোধ অনুসন্ধান আত্মিক আবহেরই বহিঃপ্রকাশ। কল্যাণের চিন্তা অশুভ প্রবণতার ওপর জয়ী হলে জীবের মধ্যে মহত্ত্বের প্রাধান্য প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে অশুভ প্রবণতা প্রাধান্য পেলে অকল্যাণ অনিবার্য হয়ে পড়ে।’ অতীতে বনজ প্রাণীর আচার-আচরণকে বর্তমান সময়ের প্রেক্ষাপটে বিচার-বিবেচনার আহ্বান জানান তিনি। সব প্রাণিকুলের মধ্যে পশুত্বের প্রবণতা থাকলেও একমাত্র মানুষের মধ্যেই বুদ্ধি-বিবেচনা বোধ আছে, অন্যদের মধ্যে নেই এ ধারণার ভিত্তি নিয়ে সংশয় আছে বলে মনে করেন কাতাইয়া। উদ্ভিদের প্রাণ আছে কি নেই এ নিয়ে এক সময় যে বিতর্ক ছিল আজ তা তো দিবালোকের মতো স্পষ্ট হয়ে গেছে যে, উদ্ভিদের প্রাণ আছে শুধু তা-ই নয়, অনুভূতিও আছে। অনেক গুল্ম স্পর্শে কাতর হয়। অনেক আধ্যাত্মিক ব্যক্তি গাছের তলে বসে ধ্যানমগ্ন থেকে জীবনের নিত্যতা অনুসন্ধান করেছেন। একজন সাধু ব্যক্তির আরাধনাস্থল ত্যাগ করার পর সাধকের শোকে সেই গাছ মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। পরিবেশবাদীরা বৃক্ষরাজির পেলব প্রশান্তি প্রদায়ক মনোভঙ্গিকে কাজে লাগাতে চাইছেন বৃক্ষনিধনকে ধিক্কার জানানোর প্রচারণায়।

কাতাইয়া তার অর্ধশতাব্দীকালের সাধনা ও গবেষণায় লব্ধ জ্ঞান ও প্রজ্ঞার আলোকে বলতে চান, ‘সব প্রাণিকুলের মধ্যে কমবেশি বিচারবুদ্ধি-বিবেচনার বোধ কাজ করে। অনেকে হয়তো সেটা প্রকাশ করতে পারে না, মানুষ পারে বলে সে-ই একমাত্র বিচারবুদ্ধি-বিবেচনার আধিকারিক এটা চাউর করা এক ধরনের নিম্নমানের নির্বুদ্ধিতা।’ প্রশিক্ষণ গ্রহণের ক্ষমতাকে বুদ্ধিবৃত্তির প্রকৃষ্ট উদাহরণ বলে কাতাইয়া উল্লেখ করে বলেন, ‘পশুপাখির মধ্যে প্রশিক্ষণ গ্রহণের ও অনুসরণের ক্ষমতা রয়েছে এবং বিশ্বস্ততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন আর কৃতজ্ঞতা প্রকাশের পারঙ্গমতা মানুষের চেয়ে কোনো কোনো পশুর মধ্যে অনেক বেশি। বেশি বুদ্ধিমান মানুষই প্রতারণায় পারঙ্গমতা প্রদর্শন করতে পারে, পরমতে অসহিষ্ণুতা তারই বেশি; আর পরশ্রীকাতরতা, ঈর্ষা, জিঘাংসার অনলে বেশি জ্বলে সে। বুদ্ধিকে বুদ্ধিমানরা বুদ্ধির কাজে কল্যাণময় করে তুলতে ব্যর্থ হলে হিতে বিপরীত পরিস্থিতির উদ্ভবই শুধু হয় না, অনেকটা সুদে-আসলে আমছালা সব যাওয়ার মতো অকল্যাণ তাদের তস্য সর্বনাশ সাধন করে থাকে। সুতরাং বুদ্ধিকে অলস পুঁজি ভেবে নয়, পুঁজি করে নয় বুদ্ধিকে ভালো কাজে ব্যবহারের বিষয়টিই বিবেচনার চৌহদ্দিতে আনা দরকার।’

সম্প্রতি নিজকুকের নজরে এসেছে যে, একটি প্রকল্পের আওতায় কুমির চাষ করা হচ্ছে এবং তা বিদেশে রফতানিও করা হবে। কৃত্রিম উপায়ে কুমির চাষের প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়ার আভাস নিজকুকের সভাপতি কালিন্দার কণ্ঠে সেদিন টের পেয়েছিলেন সংবাদ মাধ্যম কর্মীরা। তাদের ধারণা, দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশ্ববাজারে যেতে কারোরই আপত্তি থাকার কথা নয়। তবে কেউ এ উপলক্ষে তাদের গুডউইল বা ঐতিহ্য অসম্মানের পর্যায়ে যাতে না নিয়ে যেতে পারে, সেটা দেখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারক মহলের। নিজকুকের পক্ষ থেকে এ ধরনের বক্তব্য পেশ করতে যাচ্ছে নিজকুকের নীলডুমুর ডেলিগেশন।

মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর