ঢাকা ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সৃজনশীল প্রশ্নপত্র নিয়ে কিছু কথা : অধ্যক্ষ আসাদুল হক

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৭:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৩৮ বার

সদ্য প্রকাশিত এইচএসসির ফলে দেখা যায় ২০০৭ সালের পর এবারই প্রথম পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে, যা যথাক্রমে ৮.৭৩ শতাংশ ও ২৭ হাজার ৭০৭ জন। এ বছরে গড় পাসের হার ৬৯.৬০ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন; যা গত বছর ছিল ৭৮.৩৩ ও জিপিএ ৫ ছিল ৭০ হাজার ৬০১ জন। হঠাৎ করে পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমাকে আমাদের শিক্ষার মানের প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ কম। পাসের হার কমায় যারা কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের জন্য সমবেদনা ও আগামী বছর তারা কৃতকার্য হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি। তবে পাসের হার কমা ও পত্রপত্রিকায় এ-সংক্রান্ত কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে আমাদের কাছে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির আশার বিষয়টি সামনে এসে যায়। ধারণা করা হয়, পাসের হার বাড়ানোর এক ধরনের মনোভাব ও অশুভ প্রতিযোগিতা থেকে পরীক্ষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পিছু হটার কারণে এমনটি হয়েছে। আমরা এটিকে ফল বিপর্যয় বলতে নারাজ, বরং বলা যায়, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক ফল হয়েছে। মোটা দাগে এ ফলকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাই শ্রেয় এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার মান উন্নত হবে- এমনটি আশা করছি।

বর্তমান ফলে অনেকের হতাশ হওয়ার কারণও রয়েছে। দেশে যে হারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজসহ অন্যান্য প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ও ভবিষ্যতে হবে তাতে হতাশার ছাপ লক্ষ করা যেতে পারে। আগের বছরের তুলনায় ৮.৭৩ শতাংশ কম পাস করা এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বড় প্রভাব পড়বে বৈকি। তবে আমাদের বিশ্বাস, বিশ্বমানের শিক্ষার প্রসারের প্রথম সোপান সঠিক খাতা মূল্যায়নের মাধ্যমে পাসের হার কম হওয়া। বিদ্যমান পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে আগামী বছর পাসের হার বাড়লে আমরা খুশিই হব এবং ধরেই নেব, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর কোনো কারণে আমাদের পেছনে যেতে হলে তা হবে আত্মঘাতী। আমরা অতীতের সমালোচনা মুছে ফেলে পরিশীলিত ও পরিচ্ছন্ন হওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত করতে চাই।

এ বছরের ফল খারাপ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে ফল ভালো হবে। এর পেছনের কারণগুলো প্রশাসনিক ও একাডেমিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়। ‘প্রশ্ন ও খাতা কড়াকড়িতে বিপত্তি’ এটি প্রশাসনিক। প্রশ্নপত্র সিলেবাস অনুযায়ী হয়। সারা পৃথিবীতে এটি সত্য। কাজেই এক বোর্ডের জন্য প্রস্তুতকৃত প্রশ্ন দিয়ে অন্য বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না- এমন তো নয়। কেননা আমরা দেখি ডিগ্রি (পাস) ও সম্মান পরীক্ষা একই প্রশ্নপত্রে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়। কাজেই এখানে সমস্যা কোথায়? বরং এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও শিক্ষকদের প্রশ্ন বলে দেওয়ার মনোভাব কমবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন ও পাঠদানে মনোযোগী হবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়ার প্রতি অধিক মনোযোগী হবে। আর খাতা কড়াকড়ির বিষয়টিই সঠিক। কড়াকড়ি না বলে বলা যায় সঠিকভাবে খাতা দেখা। যে যে রকম নম্বর পেতে পারে তাকে তাই দেওয়া। তখন কড়াকড়ি কিংবা ‘কড়াকড়ি না’ এমন প্রশ্ন আসবে না। এত দিন হয়তো মৌখিক নির্দেশনা ছিল পাসের হার বাড়ানোর জন্য। আমাদের বিশ্বাস, এ নির্দেশনা যেহেতু পত্রিকার ভাষ্যমতে উঠে যাচ্ছে সেহেতু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা আরো বাড়বে এবং কড়াকড়ি বা অন্য যাই বলি না কেন, ফল আগের মতোই হবে। একদিন হয়তো শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করবে।

এ বছর ১২টি বিষয়ে ২৩টি পত্রের প্রশ্ন সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নপত্র আন্তর্জাতিকমানের। ফল বিপত্তির অন্যতম একটি কারণ অধিকসংখ্যক পত্র সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা। শিক্ষকদের এ পদ্ধতির সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খাওয়াতে না পারা ও শিক্ষার্থীদের কোচিং ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা অন্যতম। তবে আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি। দ্রুত ও বেশিসংখ্যক শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা খুব জরুরি। গতানুগতিক ধারা থেকে ভিন্ন পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানানসই করাতে একটু সময় লাগবে বটে তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সৎ ও সঠিক হলে সাফল্য আসবেই, আসতেই হবে। কেউ কেউ হয়তো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে ফল বিপত্তির বড় কারণ হিসেবে দেখতে নারাজ। বলবেন পরীক্ষার সময় তো হরতাল-অবরোধ ছিল না। তবে পরীক্ষার আগে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস দেশের রাজনৈতিক অবস্থা যে রকম ছিল, তাতে ক্লাস করা ও পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব ছিল কি? বলতে পারেন সব কিছুর সঙ্গে রাজনীতি জড়ানো হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের আত্মঘাতী কর্মসূচির ফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

প্রতিবছর পরীক্ষার ফলের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বড় টেনশন নিজের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে কি না। জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ও পাসের হার কমেছে তাতে আশান্বিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা বাড়ছে না। আবার আমাদের মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে আসনসংখ্যাও বাড়ছে না। এটি রাতারাতি করাও সম্ভব নয়। একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ করে আসনসংখ্যা বাড়াতে পারে না। কেননা মানের বিষয়টি প্রথম বিবেচনায় আনতে হয়। তবে এ কথাও সত্য, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অবকাঠামো ও বেশিসংখ্যক দক্ষ শিক্ষক রয়েছে তারা প্রতিবছর কিছু আসন বাড়াতে পারে।

প্রকাশিত ফলে ধারণা করা হয় এ বছর উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রতিযোগিতা কিছুটা কম হবে। যারা ভালো ফল করেছে তাদের মনে হতে পারে আগের বছরগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তারা ভালো ফল করেছে। এতে সঠিক মেধাবীদের মূল্যায়ন হয়েছে, অর্থাৎ মূল্যায়ন সঠিক হয়েছে। তবে পত্রপত্রিকার ফল বিশ্লেষণ, শিক্ষাবিদদের বিশ্লেষণ ও সরকারের বক্তব্য আমাদের কাছে সঠিক হবে তখন, যখন আমরা দেখব আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। গতবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে দুজন যেন পাস না করে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। শিক্ষার্থীরা যখন দ্বিতীয়বার তাদের মেধার পরিচয় রাখতে পারবে, তখন আমাদের বিশ্বাস হবে খাতা কড়াকড়ি, প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ধরন ও সৃজনশীলতার দোহাই সঠিক। এবং এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে আরো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে আগামী দিনে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। এ আশাবাদ আমাদের সবার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

সৃজনশীল প্রশ্নপত্র নিয়ে কিছু কথা : অধ্যক্ষ আসাদুল হক

আপডেট টাইম : ১১:৩৭:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ অগাস্ট ২০১৫

সদ্য প্রকাশিত এইচএসসির ফলে দেখা যায় ২০০৭ সালের পর এবারই প্রথম পাসের হার ও জিপিএ ৫ কমেছে, যা যথাক্রমে ৮.৭৩ শতাংশ ও ২৭ হাজার ৭০৭ জন। এ বছরে গড় পাসের হার ৬৯.৬০ শতাংশ এবং জিপিএ ৫ পেয়েছে ৪২ হাজার ৮৯৪ জন; যা গত বছর ছিল ৭৮.৩৩ ও জিপিএ ৫ ছিল ৭০ হাজার ৬০১ জন। হঠাৎ করে পাসের হার ও জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমাকে আমাদের শিক্ষার মানের প্রেক্ষাপটে নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার সুযোগ কম। পাসের হার কমায় যারা কৃতকার্য হতে পারেনি তাদের জন্য সমবেদনা ও আগামী বছর তারা কৃতকার্য হবে এ আশাবাদ ব্যক্ত করছি। তবে পাসের হার কমা ও পত্রপত্রিকায় এ-সংক্রান্ত কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে আমাদের কাছে শিক্ষার গুণগত মান বৃদ্ধির আশার বিষয়টি সামনে এসে যায়। ধারণা করা হয়, পাসের হার বাড়ানোর এক ধরনের মনোভাব ও অশুভ প্রতিযোগিতা থেকে পরীক্ষক ও এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পিছু হটার কারণে এমনটি হয়েছে। আমরা এটিকে ফল বিপর্যয় বলতে নারাজ, বরং বলা যায়, সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ করে সঠিক ফল হয়েছে। মোটা দাগে এ ফলকে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখাই শ্রেয় এবং ভবিষ্যতে শিক্ষার মান উন্নত হবে- এমনটি আশা করছি।

বর্তমান ফলে অনেকের হতাশ হওয়ার কারণও রয়েছে। দেশে যে হারে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজসহ অন্যান্য প্রাইভেট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে ও ভবিষ্যতে হবে তাতে হতাশার ছাপ লক্ষ করা যেতে পারে। আগের বছরের তুলনায় ৮.৭৩ শতাংশ কম পাস করা এ ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে বড় প্রভাব পড়বে বৈকি। তবে আমাদের বিশ্বাস, বিশ্বমানের শিক্ষার প্রসারের প্রথম সোপান সঠিক খাতা মূল্যায়নের মাধ্যমে পাসের হার কম হওয়া। বিদ্যমান পদ্ধতি ও প্রক্রিয়া অনুসরণের মাধ্যমে আগামী বছর পাসের হার বাড়লে আমরা খুশিই হব এবং ধরেই নেব, আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আর কোনো কারণে আমাদের পেছনে যেতে হলে তা হবে আত্মঘাতী। আমরা অতীতের সমালোচনা মুছে ফেলে পরিশীলিত ও পরিচ্ছন্ন হওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার মান উন্নত করতে চাই।

এ বছরের ফল খারাপ হওয়ার পেছনে যে কারণগুলো বিবেচনায় আনা হয়েছে, সেগুলো বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করলে ভবিষ্যতে ফল ভালো হবে। এর পেছনের কারণগুলো প্রশাসনিক ও একাডেমিক প্রেক্ষাপটে দেখা যায়। ‘প্রশ্ন ও খাতা কড়াকড়িতে বিপত্তি’ এটি প্রশাসনিক। প্রশ্নপত্র সিলেবাস অনুযায়ী হয়। সারা পৃথিবীতে এটি সত্য। কাজেই এক বোর্ডের জন্য প্রস্তুতকৃত প্রশ্ন দিয়ে অন্য বোর্ডের পরীক্ষা নেওয়া যাবে না- এমন তো নয়। কেননা আমরা দেখি ডিগ্রি (পাস) ও সম্মান পরীক্ষা একই প্রশ্নপত্রে সারা দেশে অনুষ্ঠিত হয়। কাজেই এখানে সমস্যা কোথায়? বরং এ প্রক্রিয়ায় প্রশ্নপত্র ফাঁস ও শিক্ষকদের প্রশ্ন বলে দেওয়ার মনোভাব কমবে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষকরা দায়িত্বশীল আচরণ করবেন ও পাঠদানে মনোযোগী হবেন। পাশাপাশি শিক্ষার্থীরাও লেখাপড়ার প্রতি অধিক মনোযোগী হবে। আর খাতা কড়াকড়ির বিষয়টিই সঠিক। কড়াকড়ি না বলে বলা যায় সঠিকভাবে খাতা দেখা। যে যে রকম নম্বর পেতে পারে তাকে তাই দেওয়া। তখন কড়াকড়ি কিংবা ‘কড়াকড়ি না’ এমন প্রশ্ন আসবে না। এত দিন হয়তো মৌখিক নির্দেশনা ছিল পাসের হার বাড়ানোর জন্য। আমাদের বিশ্বাস, এ নির্দেশনা যেহেতু পত্রিকার ভাষ্যমতে উঠে যাচ্ছে সেহেতু শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে দায়িত্বশীলতা আরো বাড়বে এবং কড়াকড়ি বা অন্য যাই বলি না কেন, ফল আগের মতোই হবে। একদিন হয়তো শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করবে।

এ বছর ১২টি বিষয়ে ২৩টি পত্রের প্রশ্ন সৃজনশীল পদ্ধতিতে প্রণয়ন করা হয়েছে। সৃজনশীল প্রশ্নপত্র আন্তর্জাতিকমানের। ফল বিপত্তির অন্যতম একটি কারণ অধিকসংখ্যক পত্র সৃজনশীল পদ্ধতির আওতায় আনা। শিক্ষকদের এ পদ্ধতির সঙ্গে পুরোপুরি খাপ খাওয়াতে না পারা ও শিক্ষার্থীদের কোচিং ও গাইড বইয়ের ওপর নির্ভরশীলতা অন্যতম। তবে আমরা এ সমস্যা কাটিয়ে উঠতে পারি। দ্রুত ও বেশিসংখ্যক শিক্ষককে এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া ও শিক্ষার্থীদের এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত করা খুব জরুরি। গতানুগতিক ধারা থেকে ভিন্ন পদ্ধতির সঙ্গে শিক্ষার্থীদের মানানসই করাতে একটু সময় লাগবে বটে তবে হতাশ হওয়ার কারণ নেই। আমাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সৎ ও সঠিক হলে সাফল্য আসবেই, আসতেই হবে। কেউ কেউ হয়তো রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতাকে ফল বিপত্তির বড় কারণ হিসেবে দেখতে নারাজ। বলবেন পরীক্ষার সময় তো হরতাল-অবরোধ ছিল না। তবে পরীক্ষার আগে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাস দেশের রাজনৈতিক অবস্থা যে রকম ছিল, তাতে ক্লাস করা ও পরীক্ষার জন্য ভালো প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব ছিল কি? বলতে পারেন সব কিছুর সঙ্গে রাজনীতি জড়ানো হচ্ছে। দীর্ঘ সময়ের আত্মঘাতী কর্মসূচির ফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

প্রতিবছর পরীক্ষার ফলের পর শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বড় টেনশন নিজের পছন্দমতো বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে কি না। জিপিএ ৫ পাওয়া শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ও পাসের হার কমেছে তাতে আশান্বিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে আসনসংখ্যা বাড়ছে না। আবার আমাদের মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ে আসনসংখ্যাও বাড়ছে না। এটি রাতারাতি করাও সম্ভব নয়। একটি মানসম্মত বিশ্ববিদ্যালয় যেমন বুয়েট কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হঠাৎ করে আসনসংখ্যা বাড়াতে পারে না। কেননা মানের বিষয়টি প্রথম বিবেচনায় আনতে হয়। তবে এ কথাও সত্য, যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভালো অবকাঠামো ও বেশিসংখ্যক দক্ষ শিক্ষক রয়েছে তারা প্রতিবছর কিছু আসন বাড়াতে পারে।

প্রকাশিত ফলে ধারণা করা হয় এ বছর উচ্চশিক্ষায় ভর্তি প্রতিযোগিতা কিছুটা কম হবে। যারা ভালো ফল করেছে তাদের মনে হতে পারে আগের বছরগুলোর চেয়ে একটু ভিন্ন প্রেক্ষাপটে তারা ভালো ফল করেছে। এতে সঠিক মেধাবীদের মূল্যায়ন হয়েছে, অর্থাৎ মূল্যায়ন সঠিক হয়েছে। তবে পত্রপত্রিকার ফল বিশ্লেষণ, শিক্ষাবিদদের বিশ্লেষণ ও সরকারের বক্তব্য আমাদের কাছে সঠিক হবে তখন, যখন আমরা দেখব আসন্ন ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষার্থীরা তাদের মেধার পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছে। গতবারের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিষয়ে দুজন যেন পাস না করে। এটি একটি উদাহরণ মাত্র। শিক্ষার্থীরা যখন দ্বিতীয়বার তাদের মেধার পরিচয় রাখতে পারবে, তখন আমাদের বিশ্বাস হবে খাতা কড়াকড়ি, প্রশ্নপত্র প্রণয়নের ধরন ও সৃজনশীলতার দোহাই সঠিক। এবং এ বিষয়গুলোকে মাথায় রেখে আরো ভালোভাবে বিশ্লেষণ করে আগামী দিনে শিক্ষার মান বাড়ানোর জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষ উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবে। এ আশাবাদ আমাদের সবার।