ঢাকা ০৪:১০ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত হয়েছিল র‌্যাব

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:০৮:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৫
  • ২৮৫ বার

জমি দখলের প্রতিবিধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে গণভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের যুবক আজাদের চাচাত ভাইকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ‘মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত’ হওয়ার স্বীকারোক্তি এসেছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

র‌্যাব-১১ সোমবার রাতে বাপ্পী পোদ্দারসহ তিনজনকে পুলিশে তুলে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে করা এক অভিযোগে দাবি করেছে, এরা প্রতিপক্ষ হিসেবে আজাদের চাচাত ভাই সোহেল মাহমুদকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছিল।

বাপ্পী পোদ্দারের চাচা ব্যবসায়ী অমল পোদ্দারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল আজাদের পরিবারের।

গত ২ অাগস্ট আজাদ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর সোনারগাঁওয়ের সাদিপুর ইউনিয়নে তার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর রাতেই তার চাচাত ভাই সোহেলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তখন আজাদকেও পেটানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আজাদ দাবি করে আসছিলেন, তাদের হয়রানি করতে র‌্যাবকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, একজন সন্ত্রাসী যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায়, তখন তারা অনেক কিছুই বলে।

তবে সোমবার রাতে র‌্যাব-১১ এর উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মাকসুদুর রহমান গ্রেপ্তার বাপ্পী পোদ্দার, সোলায়মান হোসেন ও বিল্লাল হোসেনকে পুলিশে তুলে দিয়ে যে অভিযোগ করেছেন, তা বাহিনীর আগের বক্তব্যের এবং সোহেলের বিরুদ্ধে আগের মামলার পুরো উল্টো।

মেট্রো নিটিং এন্ড ডাইং ফ্যাক্টরির মালিক অমল পোদ্দারের ভাতিজা বাপ্পী চাচার নতুন কারখানা নির্মাণের দেখাশোনা করছিলেন। সোলায়মান মেট্রো কারখানার শ্রমিক, তিনি সোনারগাঁওয়ের নানাক্ষী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। গ্রেপ্তার বিল্লাল নতুন কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, গুলনগর এলাকার হোসেন আলীর ভুঁইয়ার ছেলে।

তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে করা অভিযোগে ডিএডি মাকসুদ বলেছেন, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বাপ্পী পোদ্দার, সোলায়মান ও বিল্লাল পরিকল্পিতভাবে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে র‌্যাবকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোহেলকে ফাঁসিয়েছিল।

র‌্যাবের দাবি অনুযায়ী, ইয়াবা রাখার অভিযোগটি সত্য না হলেও চাচার জমি বিক্রি থেকে কমিশন দাবি করছিলেন গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সোহেল। আর সে কারণেই তাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন সোলায়মান, যিনি নতুন কারখানায় বালু ভরাটের কাজটি পেয়েছিলেন।

ডিএডি মাকসুদের মামলায় বলা হয়েছে, অমল পোদ্দার ১৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বার বার অনুরোধ করলেও সোহেলের ইন্ধনে তার চাচা খালেক তা দিচ্ছিলেন না। সোহেল জমি বিক্রির টাকা থেকে সোলায়মানের কাছে কমিশন চায় এবং আরও জমি কিনতে হলে তার মাধ্যমে কিনতে হবে বলে জানায়। এ নিয়ে সোলায়মানের সঙ্গে সোহেলের বাকবিতণ্ডা ও সালিশও হয়।

তখন সোলায়ামান ঘটনাটি নির্মাণাধীন পানামা নিটেক্স কারখানার পাশের কিংস কনফেকশনারির ব্যবস্থাপক আলমাসকে জানান বলে র‌্যাবের এখনকার অভিযোগে বলা হয়েছে।

সোলায়মান ও আলমাস মিলে সোহেলকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সোলায়মান টাকার বিষয়টি নিয়ে বাপ্পী পোদ্দারের সঙ্গে আলাপ করলে সে গত ৩১ জুলাই ২৮ হাজার টাকা এবং বিকালে তার অফিসে বসে নগদ আরও ১৬ হাজার টাকা প্রদান করে। এর কয়েকদিন পর আলমাস সোহেলকে র‌্যাবের মাধ্যমে শায়েস্তা করার প্রস্তাব দিয়ে সোলায়মানের কাছ থেকে ২৮ হাজার টাকা চাইলে বালু ভরাটের ৪৪ হাজার টাকা থেকে সেই টাকা দেওয়া হয়।

সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর ৩ অাগস্ট সোনারগাঁও থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে যে মামলাটি হয়েছিল, তার বাদী র‌্যাব-১১ ডিএডি মাকসুদুর রহমানই।

ওই মামলার এজাহারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার নেতৃত্বে টহল দেওয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, সোনারগাঁও উপজেলা পঞ্চমীঘাট এলাকায় এক মাদক ব্যবসায়ী কর্তৃক মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। উক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাই ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করলে নির্দেশ মোতাবেক রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসামি সোহেল মাহমুদের বসতঘরের সামনে উপস্থিত হলে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে একজন লোক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে।’

‘আসামি সোহেল মাহমুদের দেহ তল্লাশি করে এবং পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেখানো এবং বাহির করে দেওয়া মতে, তাদের বসতঘর থেকে একটি সাদা ও নীল রঙের জিপার পলিথিন প্যাকেটে মোড়ানো ৩৭০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তা সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল মাদক বিক্রির কথা স্বীকার করে।’

সোহেলকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের দাবি তখন র‌্যাব করলেও তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে স্থানীয়রা দাবি করে।

সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল রশিদ মোল্লা তখন বলেছিলেন, যে ছেলেকে ইয়াবাসহ র‌্যাব দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই ছেলে পড়ালেখা করে। সে জীবনে কোনোদিন বিড়ি সিগারেটও খায়নি, অথচ তাকে ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে!

জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধে জড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক আনোয়ার লতিফ সেদিন বলেছিলেন, আমরা জমি-জমার কোনো সমস্যা সমাধান করতে যাইনি, তা আমাদের কাজও নয়।

ডিএডি মাকসুদ এখন থানায় যে অভিযোগ করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, আলমাসের পরিকল্পনায় ইয়াবা কিনে বিল্লাল ও ওলিউল্লাহর মাধ্যমে সোহেলের পোশাক ও বাড়িতে নিষিদ্ধ এই ট্যাবলেট রেখে র‌্যাবে খবর দেওয়া হয়েছিল।

আলমাস বালু শ্রমিক বিল্লালের মাধ্যমে ৩৭০ পিছ ইয়াবা ক্রয় করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সোলায়মান গত ২ আগস্ট বিকালে ১০০ পিছ ইয়াবা বেনসন সিগারেটের প্যাকেটভর্তি করে বিল্লালের কাছে দিয়ে বলে, এই প্যাকেটটি সন্ধ্যার পর কৌশলে সোহেলের পকেটে ঢুকিয়ে দিবি। ঢুকিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তার কাছে কিছু লোক যাবে, তাদেরকে তুই সোহেলকে চিনিয়ে দিবি।

রাত অনুমান ৯টার দিকে সোলায়মানের তথ্যের ভিত্তিতে দুজন সিভিল লোক এসে বিল্লালের কাছে এসে সোহেলের কথা জিজ্ঞেস করলে সে দেখিয়ে দেয়। তখন উক্ত সিভিল লোক দুইজন নিজেদেরকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে সোহেলকে আটক করে হাঁটতে থাকে। এই সুযোগে বিল্লাল ১০০ পিছ ইয়াবাভর্তি বেনসন সিগারেটের প্যাকেটটি কৌশলে তার পাঞ্জাবির ডান পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ডিএডি মাকসুদ সঙ্গিয় ফোর্সসহ সোহেল মাহমুদের দেহ তল্লাশি চালিয়ে ১০০ পিছ ইয়াবা পাঞ্জাবির পকেট থেকে উদ্ধার করে।

অন্যদিকে বাকি ২৭০ পিছ ইয়াবা কিংস কনফেকশনারির ম্যানেজার আলমাস স্থানীয় ওলিউল্লাহর মাধ্যমে সোহেলের বসতঘরের ভেতরে রেখে আসার ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে আলমাস ওই ২৭০ পিছ ইয়াবা সম্পর্কে র‌্যাবকে সংবাদ দিলে র‌্যাব সদস্যরা সোহেলের ঘর থেকে ২৭০ পিছ ইয়াবা উদ্ধার করে।

র‌্যাবকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোহেলকে হয়রানি করায় জন্য বাপ্পীসহ গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেছেন র‌্যাব-১১ এর ডিএডি মাকসুদ।

আলমাসের কোনো খবর এলাকায় পাওয়া যায়নি। তিনি পলাতক বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন।

বাপ্পীর বিরুদ্ধে র‌্যাবকে দিয়ে হয়রানির অভিযোগ আজাদ তোলার পর গত ৯ অগাস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অমল পোদ্দারের এই ভাতিজা ও সোলায়মানকে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক।

গত ৯ অগাস্ট বাপ্পীর বাবা প্রদীপ কুমার পোদ্দার বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতে বলা হয়, তার বাড়ির সামনে একটি ছাই রঙের মাইক্রোবাস এসে তার বড় ছেলে বাপ্পী ও সোলায়মানকে তুলে নিয়ে যায়।

পরে র‌্যাব ও পুলিশে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য না পাননি প্রদীপ। র‌্যাব ও পুলিশের কোনো কর্মকর্তা তখন তাদের আটকের কথা স্বীকার করেননি।

তবে ডিএডি মাকসুদ পুলিশে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, সোমবার বিকালে বাপ্পীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা।

সোনারগাঁও থানার ওসি মো. মঞ্জুর কাদের জানান, বাপ্পী পোদ্দারসহ তিনজনকে সোমবার রাতে র‌্যাব থানায় সোপর্দ করেছে।

সোলায়মান দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বিচার বিভাগীয় জ্যেষ্ঠ হাকিম চাঁদনী রূপমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিল্লাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়নি।

দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান।

অন্যদিকে হাকিম সাইদুজ্জামান শরীফের আদালতে হাজির করে বাপ্পী পোদ্দারকে হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ। আগামী বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করে তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

আজাদের চাচাত ভাই মাদক মামলায় গ্রেপ্তার সোহেলকেও তিন দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছে পুলিশ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত হয়েছিল র‌্যাব

আপডেট টাইম : ১১:০৮:১০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৫ অগাস্ট ২০১৫

জমি দখলের প্রতিবিধান চেয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণে গণভবনের সামনে অবস্থান নেওয়া নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের যুবক আজাদের চাচাত ভাইকে গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে ‘মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত’ হওয়ার স্বীকারোক্তি এসেছে র‌্যাবের পক্ষ থেকে।

র‌্যাব-১১ সোমবার রাতে বাপ্পী পোদ্দারসহ তিনজনকে পুলিশে তুলে দিয়ে তাদের বিরুদ্ধে করা এক অভিযোগে দাবি করেছে, এরা প্রতিপক্ষ হিসেবে আজাদের চাচাত ভাই সোহেল মাহমুদকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়েছিল।

বাপ্পী পোদ্দারের চাচা ব্যবসায়ী অমল পোদ্দারের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধ ছিল আজাদের পরিবারের।

গত ২ অাগস্ট আজাদ প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে কয়েক ঘণ্টা অবস্থান নেওয়ার পর সোনারগাঁওয়ের সাদিপুর ইউনিয়নে তার বাড়িতে ফিরে যাওয়ার পর রাতেই তার চাচাত ভাই সোহেলকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব। তখন আজাদকেও পেটানো হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

আজাদ দাবি করে আসছিলেন, তাদের হয়রানি করতে র‌্যাবকে ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান সেই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছিলেন, একজন সন্ত্রাসী যখন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে যায়, তখন তারা অনেক কিছুই বলে।

তবে সোমবার রাতে র‌্যাব-১১ এর উপ-সহকারী পরিচালক (ডিএডি) মাকসুদুর রহমান গ্রেপ্তার বাপ্পী পোদ্দার, সোলায়মান হোসেন ও বিল্লাল হোসেনকে পুলিশে তুলে দিয়ে যে অভিযোগ করেছেন, তা বাহিনীর আগের বক্তব্যের এবং সোহেলের বিরুদ্ধে আগের মামলার পুরো উল্টো।

মেট্রো নিটিং এন্ড ডাইং ফ্যাক্টরির মালিক অমল পোদ্দারের ভাতিজা বাপ্পী চাচার নতুন কারখানা নির্মাণের দেখাশোনা করছিলেন। সোলায়মান মেট্রো কারখানার শ্রমিক, তিনি সোনারগাঁওয়ের নানাক্ষী গ্রামের আব্দুল মালেকের ছেলে। গ্রেপ্তার বিল্লাল নতুন কারখানায় শ্রমিক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন, গুলনগর এলাকার হোসেন আলীর ভুঁইয়ার ছেলে।

তাদের বিরুদ্ধে পুলিশে করা অভিযোগে ডিএডি মাকসুদ বলেছেন, জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে বাপ্পী পোদ্দার, সোলায়মান ও বিল্লাল পরিকল্পিতভাবে, ষড়যন্ত্রমূলকভাবে র‌্যাবকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোহেলকে ফাঁসিয়েছিল।

র‌্যাবের দাবি অনুযায়ী, ইয়াবা রাখার অভিযোগটি সত্য না হলেও চাচার জমি বিক্রি থেকে কমিশন দাবি করছিলেন গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সোহেল। আর সে কারণেই তাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেন সোলায়মান, যিনি নতুন কারখানায় বালু ভরাটের কাজটি পেয়েছিলেন।

ডিএডি মাকসুদের মামলায় বলা হয়েছে, অমল পোদ্দার ১৫ শতাংশ জমি রেজিস্ট্রি করে দিতে বার বার অনুরোধ করলেও সোহেলের ইন্ধনে তার চাচা খালেক তা দিচ্ছিলেন না। সোহেল জমি বিক্রির টাকা থেকে সোলায়মানের কাছে কমিশন চায় এবং আরও জমি কিনতে হলে তার মাধ্যমে কিনতে হবে বলে জানায়। এ নিয়ে সোলায়মানের সঙ্গে সোহেলের বাকবিতণ্ডা ও সালিশও হয়।

তখন সোলায়ামান ঘটনাটি নির্মাণাধীন পানামা নিটেক্স কারখানার পাশের কিংস কনফেকশনারির ব্যবস্থাপক আলমাসকে জানান বলে র‌্যাবের এখনকার অভিযোগে বলা হয়েছে।

সোলায়মান ও আলমাস মিলে সোহেলকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সোলায়মান টাকার বিষয়টি নিয়ে বাপ্পী পোদ্দারের সঙ্গে আলাপ করলে সে গত ৩১ জুলাই ২৮ হাজার টাকা এবং বিকালে তার অফিসে বসে নগদ আরও ১৬ হাজার টাকা প্রদান করে। এর কয়েকদিন পর আলমাস সোহেলকে র‌্যাবের মাধ্যমে শায়েস্তা করার প্রস্তাব দিয়ে সোলায়মানের কাছ থেকে ২৮ হাজার টাকা চাইলে বালু ভরাটের ৪৪ হাজার টাকা থেকে সেই টাকা দেওয়া হয়।

সোহেলকে গ্রেপ্তারের পর ৩ অাগস্ট সোনারগাঁও থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে যে মামলাটি হয়েছিল, তার বাদী র‌্যাব-১১ ডিএডি মাকসুদুর রহমানই।

ওই মামলার এজাহারে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার নেতৃত্বে টহল দেওয়ার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পারি, সোনারগাঁও উপজেলা পঞ্চমীঘাট এলাকায় এক মাদক ব্যবসায়ী কর্তৃক মাদকদ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। উক্ত সংবাদের সত্যতা যাচাই ও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করলে নির্দেশ মোতাবেক রাত সাড়ে ৯টার দিকে আসামি সোহেল মাহমুদের বসতঘরের সামনে উপস্থিত হলে র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে একজন লোক দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা তাকে আটক করে।’

‘আসামি সোহেল মাহমুদের দেহ তল্লাশি করে এবং পরবর্তীতে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেখানো এবং বাহির করে দেওয়া মতে, তাদের বসতঘর থেকে একটি সাদা ও নীল রঙের জিপার পলিথিন প্যাকেটে মোড়ানো ৩৭০ পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। পরে তা সাক্ষীদের উপস্থিতিতে জব্দ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে সোহেল মাদক বিক্রির কথা স্বীকার করে।’

সোহেলকে ইয়াবাসহ গ্রেপ্তারের দাবি তখন র‌্যাব করলেও তা বিশ্বাসযোগ্য নয় বলে স্থানীয়রা দাবি করে।

সাদিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল রশিদ মোল্লা তখন বলেছিলেন, যে ছেলেকে ইয়াবাসহ র‌্যাব দিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, সেই ছেলে পড়ালেখা করে। সে জীবনে কোনোদিন বিড়ি সিগারেটও খায়নি, অথচ তাকে ইয়াবা দিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে!

জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধে জড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে র‌্যাব-১১ এর অধিনায়ক আনোয়ার লতিফ সেদিন বলেছিলেন, আমরা জমি-জমার কোনো সমস্যা সমাধান করতে যাইনি, তা আমাদের কাজও নয়।

ডিএডি মাকসুদ এখন থানায় যে অভিযোগ করেছেন, তাতে বলা হয়েছে, আলমাসের পরিকল্পনায় ইয়াবা কিনে বিল্লাল ও ওলিউল্লাহর মাধ্যমে সোহেলের পোশাক ও বাড়িতে নিষিদ্ধ এই ট্যাবলেট রেখে র‌্যাবে খবর দেওয়া হয়েছিল।

আলমাস বালু শ্রমিক বিল্লালের মাধ্যমে ৩৭০ পিছ ইয়াবা ক্রয় করে। পরিকল্পনা মোতাবেক সোলায়মান গত ২ আগস্ট বিকালে ১০০ পিছ ইয়াবা বেনসন সিগারেটের প্যাকেটভর্তি করে বিল্লালের কাছে দিয়ে বলে, এই প্যাকেটটি সন্ধ্যার পর কৌশলে সোহেলের পকেটে ঢুকিয়ে দিবি। ঢুকিয়ে দেওয়ার কিছুক্ষণ পর তার কাছে কিছু লোক যাবে, তাদেরকে তুই সোহেলকে চিনিয়ে দিবি।

রাত অনুমান ৯টার দিকে সোলায়মানের তথ্যের ভিত্তিতে দুজন সিভিল লোক এসে বিল্লালের কাছে এসে সোহেলের কথা জিজ্ঞেস করলে সে দেখিয়ে দেয়। তখন উক্ত সিভিল লোক দুইজন নিজেদেরকে র‌্যাব পরিচয় দিয়ে সোহেলকে আটক করে হাঁটতে থাকে। এই সুযোগে বিল্লাল ১০০ পিছ ইয়াবাভর্তি বেনসন সিগারেটের প্যাকেটটি কৌশলে তার পাঞ্জাবির ডান পকেটে ঢুকিয়ে দেয়। পরবর্তীতে ডিএডি মাকসুদ সঙ্গিয় ফোর্সসহ সোহেল মাহমুদের দেহ তল্লাশি চালিয়ে ১০০ পিছ ইয়াবা পাঞ্জাবির পকেট থেকে উদ্ধার করে।

অন্যদিকে বাকি ২৭০ পিছ ইয়াবা কিংস কনফেকশনারির ম্যানেজার আলমাস স্থানীয় ওলিউল্লাহর মাধ্যমে সোহেলের বসতঘরের ভেতরে রেখে আসার ব্যবস্থা করে। পরবর্তীতে আলমাস ওই ২৭০ পিছ ইয়াবা সম্পর্কে র‌্যাবকে সংবাদ দিলে র‌্যাব সদস্যরা সোহেলের ঘর থেকে ২৭০ পিছ ইয়াবা উদ্ধার করে।

র‌্যাবকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে সোহেলকে হয়রানি করায় জন্য বাপ্পীসহ গ্রেপ্তার তিনজনের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পুলিশকে বলেছেন র‌্যাব-১১ এর ডিএডি মাকসুদ।

আলমাসের কোনো খবর এলাকায় পাওয়া যায়নি। তিনি পলাতক বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন।

বাপ্পীর বিরুদ্ধে র‌্যাবকে দিয়ে হয়রানির অভিযোগ আজাদ তোলার পর গত ৯ অগাস্ট আইনশৃঙ্খলা বাহিনী পরিচয়ে অমল পোদ্দারের এই ভাতিজা ও সোলায়মানকে তুলে নিয়ে যায় একদল লোক।

গত ৯ অগাস্ট বাপ্পীর বাবা প্রদীপ কুমার পোদ্দার বাদী হয়ে সোনারগাঁও থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। তাতে বলা হয়, তার বাড়ির সামনে একটি ছাই রঙের মাইক্রোবাস এসে তার বড় ছেলে বাপ্পী ও সোলায়মানকে তুলে নিয়ে যায়।

পরে র‌্যাব ও পুলিশে যোগাযোগ করেও কোনো তথ্য না পাননি প্রদীপ। র‌্যাব ও পুলিশের কোনো কর্মকর্তা তখন তাদের আটকের কথা স্বীকার করেননি।

তবে ডিএডি মাকসুদ পুলিশে দেওয়া অভিযোগে উল্লেখ করেছেন, সোমবার বিকালে বাপ্পীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছেন তারা।

সোনারগাঁও থানার ওসি মো. মঞ্জুর কাদের জানান, বাপ্পী পোদ্দারসহ তিনজনকে সোমবার রাতে র‌্যাব থানায় সোপর্দ করেছে।

সোলায়মান দুপুরে নারায়ণগঞ্জের বিচার বিভাগীয় জ্যেষ্ঠ হাকিম চাঁদনী রূপমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। বিল্লাল স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হয়নি।

দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ আদালত পুলিশের পরিদর্শক মো. হাবিবুর রহমান।

অন্যদিকে হাকিম সাইদুজ্জামান শরীফের আদালতে হাজির করে বাপ্পী পোদ্দারকে হেফাজতে নিয়ে পাঁচ দিন জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করে পুলিশ। আগামী বৃহস্পতিবার ওই আবেদনের শুনানির দিন ঠিক করে তাকেও কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন বিচারক।

আজাদের চাচাত ভাই মাদক মামলায় গ্রেপ্তার সোহেলকেও তিন দিন হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদের আবেদন করেছে পুলিশ।