ঢাকা ০৫:৫৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সাংবাদিক উৎপলের বাবার কাছে মুক্তিপণ চাইছে কারা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭
  • ২০৪ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাংবাদিক উৎপল দাসের বাবার কাছে মুক্তিপণ চাইছে কারা? স্বজন, সহকর্মী ও পুলিশ কেউই এ নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি। সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ও মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে দু’দফায় তার বাবা চিত্তরঞ্জন দাসের মোবাইল ফোনে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। দু’বারই কল এসেছে উৎপলের নম্বর থেকেই। কিন্তু তার সঙ্গে বাবা কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলেই অন্য প্রান্ত থেকে লাইন কেটে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আবারও ওই মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক উৎপল দাস ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ। গত ১০ অক্টোবর ঢাকার মতিঝিলের অফিস থেকে বের হওয়ার পর তার আর খোঁজ মেলেনি। তরুণ এই সাংবাদিকের দুটি মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে ও মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার একটি ফোন থেকে বাবার মোবাইলে কল আসে। কিন্তু পরমুহূর্তেই সেটি আবারও বন্ধ পাওয়া যায়। মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি নিজেদের এলাকার পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি সোহরাব হোসেন কিরণ ও মতিঝিল থানা পুলিশকে অবহিত করেছেন তিনি।

উৎপলের নিখোঁজের ঘটনায় গত ২২ অক্টোবর পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের সম্পাদক খুজিস্তা নূর ই নাহরীন মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন— গত ১০ অক্টোবর দুপুর ১টা পর্যন্ত অফিস করেছেন উৎপল দাস। তারপর থেকে তিনি আর অফিসে আসেননি। ১১ অক্টোবর সকাল ৮টার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসেও আর আসেননি। বিষয়টি তার পরিবারকে জানানো হয়। পরিবার, সহকর্মী ও বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়েও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।

র পরদিন উৎপল দাসের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস মতিঝিল থানায় আরেকটি সাধারণ জিডি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মতিঝিলের স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে অনলাইন পত্রিকা পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে চাকরি করেন। গত ১০ অক্টোবর থেকে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ওইদিন দুপুরে তার মা বিমলা রানী দাসকে ফোন করে উৎপল জানিয়েছেন, তিনি অফিসেই আছেন। এরপর তার আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। ওইদিন বিকাল থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফকিরাপুলের এক নম্বর গলির ভাড়াবাড়িতেও ফেরেননি। তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী কেউই তার খবর জানেন না।
জিডিতে চিত্তরঞ্জন দাস আরও উল্লেখ করেন— ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে পুরো পরিবারের দিন কাটছে উৎকণ্ঠায়। তার দাবি, কারও সঙ্গে কোনও বিরোধ কিংবা শত্রুতাও নেই উৎপলের। তিনি বলেন, ‘কেউ আমার ছেলেকে ধরে বা তুলে নিয়ে গেছে, এমন সন্দেহ করতে পারছি না। কিন্তু ১৩ দিনেও কোনও খবর না পেয়ে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা হচ্ছে এখন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের বার্তা সম্পাদক শাহনেওয়াজ খান সুমন  জানান, ১০ অক্টোবরের পর থেকে তারা উৎপলের কোনও খোঁজ পাচ্ছেন না। ওইদিন ১টা ৪৩ মিনিটে তিনি পাবনার এক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন বলে পুলিশ আমাদের জানিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তখন তার অবস্থান ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এলাকায়। এর কিছুক্ষণ পর ১টা ৪৭ মিনিট থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে বলে ট্র্যাকিং করে জেনেছে পুলিশ। এরপর আর তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার অবস্থান কোথায় তাও জানা যাচ্ছে না।
উৎপলের নম্বর জালিয়াতি করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন শাহনেওয়াজ খান সুমন। কারণ তার বাবা উৎপলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেই লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য চিত্তরঞ্জন দাসেরও ধারণা, উৎপলের মোবাইল ফোন নম্বর জালিয়াতি করে তার কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে।  বলেন, ‘মুক্তিপণ নেওয়ার সময় উৎপলকে নিয়ে আসতে হবে এবং তাকে দেখলেই কেবল মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি আছি জানালে অন্য প্রান্ত থেকে কল কেটে দেওয়া হয়।’

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক  জানান, তারা উৎপল দাসের নিখোঁজ হওয়ার সব বিষয়ে অবহিত আছেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া ছাড়াও তারা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও খোঁজ পাননি। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান কোথায় তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। তবে চিত্তরঞ্জন দাসের ফোনে যে মোবাইল নম্বর থেকে কল এসেছে সেটা স্ফুপিং (অবিকল একই নম্বর) করা বলেও ধারণা করছেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সাংবাদিক উৎপলের বাবার কাছে মুক্তিপণ চাইছে কারা

আপডেট টাইম : ১২:০১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সাংবাদিক উৎপল দাসের বাবার কাছে মুক্তিপণ চাইছে কারা? স্বজন, সহকর্মী ও পুলিশ কেউই এ নিয়ে কিছু জানাতে পারেননি। সোমবার (২৩ অক্টোবর) রাতে ও মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সকালে দু’দফায় তার বাবা চিত্তরঞ্জন দাসের মোবাইল ফোনে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়েছে। দু’বারই কল এসেছে উৎপলের নম্বর থেকেই। কিন্তু তার সঙ্গে বাবা কথা বলার আগ্রহ প্রকাশ করলেই অন্য প্রান্ত থেকে লাইন কেটে দেওয়া হয়। তারপর থেকে আবারও ওই মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।

অনলাইন নিউজ পোর্টাল পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের নিজস্ব প্রতিবেদক উৎপল দাস ১৫ দিন ধরে নিখোঁজ। গত ১০ অক্টোবর ঢাকার মতিঝিলের অফিস থেকে বের হওয়ার পর তার আর খোঁজ মেলেনি। তরুণ এই সাংবাদিকের দুটি মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। তবে সোমবার সন্ধ্যা ৭টা ২২ মিনিটে ও মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টায় তার একটি ফোন থেকে বাবার মোবাইলে কল আসে। কিন্তু পরমুহূর্তেই সেটি আবারও বন্ধ পাওয়া যায়। মুক্তিপণ চাওয়ার বিষয়টি নিজেদের এলাকার পুলিশ কর্মকর্তা এএসপি সোহরাব হোসেন কিরণ ও মতিঝিল থানা পুলিশকে অবহিত করেছেন তিনি।

উৎপলের নিখোঁজের ঘটনায় গত ২২ অক্টোবর পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের সম্পাদক খুজিস্তা নূর ই নাহরীন মতিঝিল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন— গত ১০ অক্টোবর দুপুর ১টা পর্যন্ত অফিস করেছেন উৎপল দাস। তারপর থেকে তিনি আর অফিসে আসেননি। ১১ অক্টোবর সকাল ৮টার পর থেকে তাকে আর পাওয়া যাচ্ছে না। অফিসেও আর আসেননি। বিষয়টি তার পরিবারকে জানানো হয়। পরিবার, সহকর্মী ও বন্ধুদের কাছে খোঁজ নিয়েও কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়।

র পরদিন উৎপল দাসের বাবা চিত্তরঞ্জন দাস মতিঝিল থানায় আরেকটি সাধারণ জিডি করেন। এতে তিনি উল্লেখ করেন, মতিঝিলের স্টক এক্সচেঞ্জ ভবনে অনলাইন পত্রিকা পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে চাকরি করেন। গত ১০ অক্টোবর থেকে তার কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। ওইদিন দুপুরে তার মা বিমলা রানী দাসকে ফোন করে উৎপল জানিয়েছেন, তিনি অফিসেই আছেন। এরপর তার আর কোনও খবর পাওয়া যায়নি। ওইদিন বিকাল থেকে তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। ফকিরাপুলের এক নম্বর গলির ভাড়াবাড়িতেও ফেরেননি। তার আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব, সহকর্মী কেউই তার খবর জানেন না।
জিডিতে চিত্তরঞ্জন দাস আরও উল্লেখ করেন— ছেলেকে খুঁজে না পেয়ে পুরো পরিবারের দিন কাটছে উৎকণ্ঠায়। তার দাবি, কারও সঙ্গে কোনও বিরোধ কিংবা শত্রুতাও নেই উৎপলের। তিনি বলেন, ‘কেউ আমার ছেলেকে ধরে বা তুলে নিয়ে গেছে, এমন সন্দেহ করতে পারছি না। কিন্তু ১৩ দিনেও কোনও খবর না পেয়ে তার প্রাণনাশের আশঙ্কা হচ্ছে এখন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় পূর্বপশ্চিমবিডি ডট নিউজের বার্তা সম্পাদক শাহনেওয়াজ খান সুমন  জানান, ১০ অক্টোবরের পর থেকে তারা উৎপলের কোনও খোঁজ পাচ্ছেন না। ওইদিন ১টা ৪৩ মিনিটে তিনি পাবনার এক ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছেন বলে পুলিশ আমাদের জানিয়েছে। তাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, তখন তার অবস্থান ছিল ধানমন্ডির ৩২ নম্বর এলাকায়। এর কিছুক্ষণ পর ১টা ৪৭ মিনিট থেকে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে বলে ট্র্যাকিং করে জেনেছে পুলিশ। এরপর আর তার আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। তার অবস্থান কোথায় তাও জানা যাচ্ছে না।
উৎপলের নম্বর জালিয়াতি করে এক লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছে বলে ধারণা করছেন শাহনেওয়াজ খান সুমন। কারণ তার বাবা উৎপলের সঙ্গে কথা বলতে চাইলেই লাইন কেটে দেওয়া হয়েছে। সেজন্য চিত্তরঞ্জন দাসেরও ধারণা, উৎপলের মোবাইল ফোন নম্বর জালিয়াতি করে তার কাছে টাকা চাওয়া হয়েছে।  বলেন, ‘মুক্তিপণ নেওয়ার সময় উৎপলকে নিয়ে আসতে হবে এবং তাকে দেখলেই কেবল মুক্তিপণের টাকা দিতে রাজি আছি জানালে অন্য প্রান্ত থেকে কল কেটে দেওয়া হয়।’

মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ওমর ফারুক  জানান, তারা উৎপল দাসের নিখোঁজ হওয়ার সব বিষয়ে অবহিত আছেন। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তা নেওয়া ছাড়াও তারা সব ধরনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু এখনও খোঁজ পাননি। মোবাইল ফোন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে তার অবস্থান কোথায় তা এখনও জানতে পারেনি পুলিশ। তবে চিত্তরঞ্জন দাসের ফোনে যে মোবাইল নম্বর থেকে কল এসেছে সেটা স্ফুপিং (অবিকল একই নম্বর) করা বলেও ধারণা করছেন তিনি।

বাংলা ট্রিবিউন