হাওর বার্তা ডেস্কঃ ‘বাড়িঘর না থাইকলে রিলিফ দিয়া কী করুম? আমাগো প্যাটে খাইবার নিগা চাল-ডাল দরকার নাই, রাক্ষসী যমুনার প্যাটে (গর্ভে) বালির বস্তা ও সিমেন্টের বোল্ডার দাও (নিক্ষেপ)। নদীডার ভাঙন ঠেকাও, এলাকা বাঁচাও।’
এমন করেই ক্ষোভ ঝাড়লেন সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রামের যমুনা নদীর ভাঙনের শিকার দিনমজুর মফেজল আলী। গত মঙ্গলবার ভোরে নদীতে বিলীন হয়েছে তাঁর বাড়িঘর। চার সন্তান নিয়ে খোলা আকাশের নিচে না খেয়ে-না দেয়ে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন তিনি।
এলাকাবাসী ও পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, গত তিন সপ্তাহে ভাঙনের কবলে পড়ে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুড়তলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের পাঁচ শতাধিক ঘরবাড়ি ও সহস্রাধিক একর আবাদি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। হাটবয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ব্রাহ্মণগ্রাম ও আড়কান্দি চরের আটটি প্রতিষ্ঠান নদীভাঙনের শিকার হয়েছে। হুমকির মুখে পড়েছে এনায়েতপুর কাপড়ের হাট, এনায়েতপুর-পাচিল সড়কসহ প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি এবং বহু তাঁত কারখানা।
গত বুধবার সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার যমুনা নদীর পশ্চিম তীরবর্তী এনায়েতপুর থানার ব্রাহ্মণগ্রাম থেকে পাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকা পরিদর্শন করে দেখা যায়, এই এলাকায় নদীভাঙন অব্যাহত রয়েছে। ভাঙনের কবল থেকে রক্ষা পেতে অনেকেই বাড়িঘর সরিয়ে নিচ্ছে। বাড়িঘর হারিয়ে লোকজন বাঁধের ওপরে আশ্রয় নিয়েছে, কেউ নদীর তীরেই পলিথিনের কাগজ টাঙিয়ে বসবাস করছে।
আড়কান্দি চরের আবদুল হালিম ও সাহেদুল ইসলাম জানান, চোখের সামনে সব নদীতে যাচ্ছে। তিলে তিলে গড়ে তোলা বসতভিটা মুহূর্তের মধ্যে নদীগর্ভে বিলীন হওয়ার দৃশ্য দেখে চোখের পানি ফেলা ছাড়া কিছু করার নেই। পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী সরেজমিনে এলেও বাঁধ নির্মাণে দীর্ঘমেয়াদি সময়সীমার আশ্বাসের কথা শুনে তাঁরা হতাশ। আর কত ঘরবাড়ি, ফসলি জমি নদীতে গেলে বাঁধ নির্মাণ করা হবে?
ব্রাহ্মণগ্রামের বাসিন্দা মুকুল মুকুল হোসেন, হাসমত আলী ও জাকারিয়া হোসেন বলেন, তাঁরা তো অসহায় ছিলেন না। কিন্তু ভয়ংকর যমুনা নদী তাঁদের সব কেড়ে নিয়ে পথে বসিয়েছে। তাঁরা ত্রাণ চান না। নদীর তীর রক্ষায় স্থায়ী বাঁধ চান।
ব্রাহ্মণগ্রামের আরেক বাসিন্দা মোছা. আনোয়ারা খাতুন আক্ষেপ করে বলেন, ‘বাড়িতে ডাকাতি করলে কিংবা আগুনে পুড়লে কিছু সম্পদ থাকে, কিন্তু যমুনায় বাড়ি ভাঙনে পথের ফকির হতে হয়। গত দুই দিনে ১০ কেজি চাল পাওয়া গেছে, যা দুই দিন খাইলেই ফুরিয়ে যাবে। কোনো কাজ পাচ্ছি না। এরপর কী হবে? কিন্তু শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে এখন কোথায় থাকব।’
এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সাহেলী লায়লা বলেন, ‘উপজেলার ব্রাহ্মণগ্রাম-আড়কান্দি থেকে পাচিল পর্যন্ত যমুনার ভাঙন এলাকা ইতিমধ্যে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী পরিদর্শন করেছেন। এলাকা রক্ষায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। আশা করছি, পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ভাঙনরোধে যত দ্রুত সম্ভব কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করবে।’
সিরাজগঞ্জ পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম জানান, ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এলাকা পরিদর্শনও করা হয়েছে। বরাদ্দ এলে ভাঙন রোধে বালুর বস্তা ফেলা হবে।