রোহিঙ্গা শিশু ২০ হাজার ছাড়াবে এতিমরা

হাওর বার্তা ডেস্কঃ উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে গতকাল শনিবার (১৪ অক্টোবর) পর‌্যন্ত ১৩ হাজার ৭৫১ জন এতিম রোহিঙ্গা শিশু শনাক্ত করা হয়েছে। শনাক্তকরণ জরিপ শেষ হলে এতিম রোহিঙ্গার শিশুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

২৫ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে সে দেশের সেনাবাহিনী ও মগ সন্ত্রাসীদের চলমান সহিংসতায় খুন হয়েছে অসংখ্য রোহিঙ্গা দম্পতি। তাদের বেঁচে যাওয়া সন্তানরা প্রতিবেশী কিংবা স্বজনদের সঙ্গে পালিয়ে আশ্রয় নেয় বাংলাদেশে। পিতৃ-মাতৃহীন এসব শিশু ভবঘুরে ছিন্নমূল পরিবেশে প্রতিবেশীর আশ্রয়ে খেয়ে-না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে।

তবে তাদের সুরক্ষা দেয়ার জন্য কাজ শুরু হয়েছে। সরকার ও বিভিন্ন এনজিও সংস্থা এসব এতিম শিশুর আলাদাভাবে পুনর্বাসনের পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠপর্যায়ে জরিপ কাজ করছে।

সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সমাজসেবা অধিদপ্তর গত ২০ সেপ্টেম্বর উখিয়া ও টেকনাফে অস্থায়ীভাবে গড়ে ওঠা শরণার্থী বস্তিগুলোতে এতিম শিশু শনাক্ত করার কার্যক্রম শুরু করে। ৪০ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ক্যাম্পের প্রতিটি ঝুপড়িতে খোঁজ নিয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন তৈরি করেছেন।

উখিয়া উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. হাসান বলেন, উখিয়ার বালুখালী এলাকায় রোহিঙ্গা শরণার্থী আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ৪ হাজার একর প্রস্তাবিত জমি থেকে জায়গা নিয়ে এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের জন্য একটি আলাদা নিবাস গড়ে তোলা হবে। এসব শিশু যাতে বিপদগামী হতে না পারে সে জন্য নিরাপত্তার সঙ্গে যাবতীয় সুযোগ-সুবিধা দিয়ে তাদের লালন-পালন করা হবে।

মো. হাসান বলেন, ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ১৪ অক্টোবর পর্যন্ত ২৪ দিন জরিপ কাজ চালিয়ে ১৩ হাজার ৭৫১ জন এতিম শিশুকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।

রোহিঙ্গা এতিম শিশু তালিকাভুক্ত কার্যক্রমের সমন্বয়কারী প্রিতম কুমার চৌধুরী বলেন, এতিম শিশুর সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। তালিকায় অন্তর্ভুক্ত সব এতিম শিশুকে সমাজসেবা অধিপ্তরের পরিচয়পত্র দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

প্রিতম কুমার বলেন, শিশুদের আলাদাভাবে পুনর্বাসনের জন্য জেলা প্রশাসনের কাছে ২০০ একর জমি বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে।

জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন জানান, রোহিঙ্গা এতিম শিশুদের সুরক্ষায় সব পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাদের জন্য ২০০ একর জমি বরাদ্দসহ প্রয়োজনীয় আবাসস্থল নির্মাণের প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত এক সরকারি সমন্বয় সভায় বলা হয়, পিতা-মাতাহীন এসব শিশুর বেড়ে ওঠা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে একটি বিশেষ সুরক্ষা অঞ্চল করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সেই বিশেষ অঞ্চলে বিশেষ যত্নে দেখভাল করা হবে এসব শিশুকে।

জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সমন্বয় সভায় রোহিঙ্গা বিষয়ক সমন্বয় কমিটির সদস্য সচিব ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক কবির বিন আনোয়ার বলেন, ‘এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের বিশেষ সুরক্ষার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে সমাজসেবা অধিদপ্তর।’

গত ২৫ আগস্ট থেকে এখন পর‌্যন্ত ছয় লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এখনো মিয়ানমারের রাখাইন থেকে পালিয়ে আসছে রোহিঙ্গারা।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর