ঢাকা ০৮:০৭ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ৩ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

যমুনায় ভয়াবহ ভাঙন

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭
  • ২০৩ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা সদরের ব্রাহ্মণ গ্রাম থেকে পাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে যমুনার তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নদীগর্ভে চলে গেছে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, তাঁত কারখানাসহ বির্স্তীণ ফসলি জমি। এখনই ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট, ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসাসহ প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি ও বহু তাঁত কারখানা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে এনায়েতপুর পাচিল সড়ক ও থানা কমপ্লেক্স হুমকিতে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। ভাঙনরোধে এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, এনায়েতপুর থানার পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সময় নদীভাঙনে বহু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এরপর বন্যায় সময় নদীভাঙন কিছুটা কমলেও পানি নেমে যাওয়ায় সাথে সাথেই যমুনার পশ্চিমপাড়ে শুরু হয়েছে প্রচন্ড ভাঙন। আর ভাঙনের কবলে পরে গত এক সপ্তাহে বিলীন হয়েছে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক শ’ একর আবাদি জমি। এ ছাড়া হাট বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ব্রাহ্মণ গ্রাম ও আড়কান্দি চরের বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে গেছে নদীতে। স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম সরকার অভিযোগ করে বলেন, যমুনা নদী থেকে এলাকার কিছু প্রভাবশালী অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পাল্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীতে চলে গেছে বহু স্থাপনা। এর পরও ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা। তবে, স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব আলী বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভাঙনের তীব্রতা এতই বেশি যে, মুহূর্তের মধ্যেই দেবে যাচ্ছে বাড়িঘর। দুদিন আগেও দুটি টিউবওয়েল, ঘরের টিভি ও আসবাবপত্রসহ নদীতে দেবে গেছে। তাই এখনই নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করলে বিলীন হয়ে যাবে থানা সদরের দক্ষিণ জনপদ।
এদিকে, নদীভাঙনের কবলে পড়ে এক সময়ের পাকা বসতভিটা ও জমিজমাসহ বিপুল বিত্তের মালিকরা এখন হয়েছে পরের বাড়িতে উথুলি। অনেকে আবার বৃদ্ধ ও শিশু সন্তান নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। নদীভাঙনে বসতবাড়ি হারানো ব্রাহ্মণ গ্রামের দিনমজুর মোফাজ্জলের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৪১) জানান, গতরাতে চোখের সামনে সব কিছু নদীতে চলে গেছে। এখন চারটা ছেলেমেয়ে নিয়ে কি খাবো, কোথায় যাবো এ চিন্তায় অস্থির। ভোটের সময় অনেক নেতাই আসেন, এখন আর কেউ খবর নিতে আসেন না। এদিকে, ঘরবাড়ি ও জমি হারানো নিঃস্ব পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তাসহ চিকিৎসা, শিক্ষা ও তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এনায়েতপুর থানা এলাকা যমুনার করাল গ্রাস থেকে রক্ষায় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এনায়েতপুরের গোপিনাথপুরের সাইদুল ইসলাম রাজ ও ব্রাহ্মণ গ্রামের আকতার সরকার।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের স্থানীয় এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন দৈনিক হাওর বার্তাকে জানিয়েছেন, নদীভাঙনের ব্যাপকতার বিষয়ে অবগত হয়েছি। ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে বলা হয়েছে। তবে, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

যমুনায় ভয়াবহ ভাঙন

আপডেট টাইম : ১০:৪৭:৩৫ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ অক্টোবর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানা সদরের ব্রাহ্মণ গ্রাম থেকে পাচিল পর্যন্ত প্রায় সাড়ে পাঁচ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে চলছে যমুনার তীব্র ভাঙন। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে নদীগর্ভে চলে গেছে তিন শতাধিক ঘরবাড়ি, দুটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, পাঁচটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, তাঁত কারখানাসহ বির্স্তীণ ফসলি জমি। এখনই ভাঙনরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া না হলে দেশের সর্ববৃহৎ কাপড়ের হাট, ছয়টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, মসজিদ-মাদরাসাসহ প্রায় ২০ হাজার ঘরবাড়ি ও বহু তাঁত কারখানা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যেতে পারে। ভাঙন অব্যাহত থাকলে এনায়েতপুর পাচিল সড়ক ও থানা কমপ্লেক্স হুমকিতে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন। ভাঙনরোধে এখনো কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি বলে ক্ষতিগ্রস্তদের অভিযোগ।
সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, এনায়েতপুর থানার পূর্বদিক দিয়ে প্রবাহিত যমুনা নদীতে পানি বৃদ্ধির সময় নদীভাঙনে বহু ঘরবাড়ি নদীগর্ভে চলে গেছে। এরপর বন্যায় সময় নদীভাঙন কিছুটা কমলেও পানি নেমে যাওয়ায় সাথে সাথেই যমুনার পশ্চিমপাড়ে শুরু হয়েছে প্রচন্ড ভাঙন। আর ভাঙনের কবলে পরে গত এক সপ্তাহে বিলীন হয়েছে ব্রাহ্মণগ্রাম, আড়কান্দি, ঘাটাবাড়ি, পাকুরতলা, কুঠিপাড়া, ভেকা ও পাচিল গ্রামের প্রায় তিন শতাধিক ঘরবাড়ি ও কয়েক শ’ একর আবাদি জমি। এ ছাড়া হাট বয়ড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও বসন্তপুর নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ ব্রাহ্মণ গ্রাম ও আড়কান্দি চরের বেশ কয়েকটি ধর্মীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চলে গেছে নদীতে। স্থানীয় বাসিন্দা নজরুল ইসলাম সরকার অভিযোগ করে বলেন, যমুনা নদী থেকে এলাকার কিছু প্রভাবশালী অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর গতিপথ পাল্টে ভাঙন শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে নদীতে চলে গেছে বহু স্থাপনা। এর পরও ভাঙনরোধে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত জনপ্রতিনিধিরা। তবে, স্থানীয় ইউপি সদস্য সোহরাব আলী বলেন, নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের পাশে থাকার চেষ্টা করছি। কিন্তু ভাঙনের তীব্রতা এতই বেশি যে, মুহূর্তের মধ্যেই দেবে যাচ্ছে বাড়িঘর। দুদিন আগেও দুটি টিউবওয়েল, ঘরের টিভি ও আসবাবপত্রসহ নদীতে দেবে গেছে। তাই এখনই নদী তীর রক্ষা বাঁধ নির্মাণ না করলে বিলীন হয়ে যাবে থানা সদরের দক্ষিণ জনপদ।
এদিকে, নদীভাঙনের কবলে পড়ে এক সময়ের পাকা বসতভিটা ও জমিজমাসহ বিপুল বিত্তের মালিকরা এখন হয়েছে পরের বাড়িতে উথুলি। অনেকে আবার বৃদ্ধ ও শিশু সন্তান নিয়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দিশেহারা হয়ে আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে। নদীভাঙনে বসতবাড়ি হারানো ব্রাহ্মণ গ্রামের দিনমজুর মোফাজ্জলের স্ত্রী আনোয়ারা খাতুন (৪১) জানান, গতরাতে চোখের সামনে সব কিছু নদীতে চলে গেছে। এখন চারটা ছেলেমেয়ে নিয়ে কি খাবো, কোথায় যাবো এ চিন্তায় অস্থির। ভোটের সময় অনেক নেতাই আসেন, এখন আর কেউ খবর নিতে আসেন না। এদিকে, ঘরবাড়ি ও জমি হারানো নিঃস্ব পরিবারগুলোকে সরকারি সহায়তাসহ চিকিৎসা, শিক্ষা ও তাঁতশিল্প সমৃদ্ধ এনায়েতপুর থানা এলাকা যমুনার করাল গ্রাস থেকে রক্ষায় দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছেন এনায়েতপুরের গোপিনাথপুরের সাইদুল ইসলাম রাজ ও ব্রাহ্মণ গ্রামের আকতার সরকার।
এ ব্যাপারে সিরাজগঞ্জ-৬ আসনের স্থানীয় এমপি হাসিবুর রহমান স্বপন দৈনিক হাওর বার্তাকে জানিয়েছেন, নদীভাঙনের ব্যাপকতার বিষয়ে অবগত হয়েছি। ভাঙনরোধে দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য পাউবোসহ সংশ্লিষ্ট মহলকে বলা হয়েছে। তবে, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে জিও ব্যাগ নিক্ষেপ কাজ দ্রুতই শুরু করা হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।