হাওর বার্তা ডেস্কঃ যশোরের শার্শা উপজেলায় বেতনা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তুলে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণের জন্য জমি ভরাট করা হচ্ছে। বালু সরবরাহের ঠিকাদার যশোর জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদিকা লাইজু জামান। এদিকে বালু উত্তোলনের ফলে নদীর পাড় ভাঙনের আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (পিজিসিবি) সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল পাওয়ার ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক ডেভেলপমেন্ট প্রকল্পের আওতায় শার্শা উপজেলার শ্যামলাগাছিতে ৪ দশমিক ৯৭ একর জমির ওপর বেনাপোল ১৩২/১৩৩ কেভি বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এটি নির্মাণের কাজ পেয়েছে ভারতীয় কোম্পানি কেইসি ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড। জমি অধিগ্রহণের পর গত ১ এপ্রিল থেকে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। আগামী বছরের ৩০ জুন তা শেষ হওয়ার কথা। ভারতীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ওই জায়গা বালু দিয়ে ভরাট করার জন্য ঠিকাদার নিয়োগ করেছে।
গত মঙ্গলবার শ্যামলাগাছি এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, বেতনা নদীতে ভাসছে পাঁচটি পাটাতন (বোর্ড)। কয়েকটি তেলের ড্রামের ওপর তক্তা বিছিয়ে বাঁশের সঙ্গে মোটা দড়ি দিয়ে বেঁধে তৈরি করা হয়েছে পাটাতন। ভাসমান পাটাতনটি সুবিধামতো নদীর বিভিন্ন স্থানে সরানো হচ্ছে। দুটি বালু তোলার যন্ত্র (ডিজেলচালিত অগভীর নলকূপের মোটর) রয়েছে পাটাতনের ওপর। একটি যন্ত্র থেকে পাইপ নদীতে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই পাইপ দিয়ে নদী থেকে বালু কেটে ওপরে তোলা হচ্ছে এবং অপর যন্ত্রটি পানির সঙ্গে সেই বালু প্লাস্টিকের পাইপের মাধ্যমে সামনে ঠেলে দিচ্ছে। প্রায় ২০০ গজ দূরে বালু গিয়ে পড়ছে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি নির্মাণের জায়গায়। বালু পড়ে উঁচু হচ্ছে ওই জায়গা। কয়েকজন শ্রমিক বালু ছড়িয়ে জায়গা সমান করছেন। তবে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণকাজের কোনো সাইনবোর্ড কোথাও চোখে পড়েনি।
নদীর একটি অংশে বালু তোলার শ্রমিকদের কাজ তদারকি করছিলেন অরুণ কুমার মণ্ডল নামের এক ব্যক্তি। তিনি বলেন, ‘বালু তোলার ঠিকাদার লাইজু জামান। ছয় মাস ধরে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। আমি এসেছি তিন মাস আগে। আগে নদীতে মোট ১২টি বোর্ড (পাটাতন) ছিল। এর মধ্যে আমার চারটি। সাড়ে পাঁচ টাকা ফুট দরে বালু তুলছি। এখন নদী থেকে বালু তেমন উঠছে না। বালু তোলার জায়গায় নদী ১৫ থেকে ২০ ফুট গভীর হয়েছে। নদীর তীর যাতে না ভাঙে সে জন্য আমরা নদীর মাঝ থেকে বালু কাটছি। কাজ প্রায় শেষের পথে।’
এ সম্পর্কে লাইজু জামান বলেন, ‘পাউবোর অনুমতি নিয়েই বেতনা নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে। আমাদের কাছে অনুমতিপত্র আছে।’
পাউবোর যশোর জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, উপঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ উপকেন্দ্রটি সংলগ্ন বেতনা নদীর ৫০০ মিটার দৈর্ঘ্য এবং ৩০ মিটার প্রস্থ এলাকা থেকে ২ দশমিক ২৫ মিটার গভীর করে সাড়ে ১২ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। এর একটা সময়সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছিল। সেটা অনেক আগেই শেষ হয়েছে।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের উপপরিচালক এবং যশোর জেলা বালুমহাল কমিটির সদস্য এ কে এম কায়সারুল ইসলাম বলেন, ‘মাটি ও বালু ব্যবস্থাপনা আইন, ২০১০ অনুসারে একক কোনো প্রতিষ্ঠান নদী থেকে এক কণাও বালু উত্তোলনের অনুমতি দিতে পারবে না। তা ছাড়া, যশোর জেলায় কোনো বালুমহাল নেই। পাউবো যদি কাউকে বেতনা নদী থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়ে থাকে, সেটা তাদের সম্পূর্ণ এখতিয়ারবহির্ভূত।’
ভাঙনের আশঙ্কা
শ্যামলাগাছি গ্রামের কৃষক আবু তাহের বলেন, ‘ফসলের মাঠে বিদ্যুৎ উপকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। ওই মাঠে ধান
ছাড়াও বিভিন্ন প্রকার সবজি উৎপাদিত হয়। নদী থেকে পানি নিয়ে মাঠে সেচ দেওয়া হয়। নদীর অল্প জায়গা থেকে গভীর করে বালু তোলা হচ্ছে। এতে নদীর তীর ভাঙছে। যেকোনো সময় ফসলি জমি নদীর মধ্যে চলে যেতে পারে। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। পরে কর্মকর্তারা এসে বললেন, ঠিকাদার ১০ ফুট গভীর করে কাদা তুলবে। কিন্তু তারা শুধুই বালু তুলছে।’
শার্শা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বলেন, ‘আমরা পাওয়ার প্ল্যান্ট চাই, তবে নদী ধ্বংস করে নয়। যেভাবে নদী থেকে বালু তোলা হচ্ছে, তাতে আশপাশের ফসলি জমি ও গাছপালা ভেঙে নদীর মধ্যে পড়বে। আমরা নদী থেকে বালু তোলা বন্ধের জন্য অনেক চেষ্টা করেছি। কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনছে না।