ঢাকা ০৭:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২৫, ২৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

‘জেএমবি কমান্ডার’ আবু জিব্রিল ৪ দিনের রিমান্ডে

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৭:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৩৯৪ বার

র‌্যাম্প মডেল থেকে জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’র কমান্ডার হওয়া ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের বিরুদ্ধে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন। এর আগে, বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত শুনানি শেষে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্টসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, র‌্যাম্প মডেল হওয়ার ইচ্ছা ছিল ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশও নেন তিনি। তবে ২০১৫ সালে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সংস্পর্শে পাল্টে যায় তার জীবন। র‌্যাম্প মডেল থেকে হয়ে ওঠেন জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’র কমান্ডার।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে র‌্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয় জেএমবির ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে র‌্যাব ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ ও ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ নামে জেএমবির আরও দুটি ব্রিগেডের তথ্য পায়।

গুলশানের হলি আর্টিসানসহ অন্যান্য হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হলে দুর্বল হয়ে পড়ে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ এর ব্যাকআপ বা রিজার্ভ হিসেবে সক্রিয় হতে শুরু করে ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’।

সম্প্রতি বেশ কয়েকজন উগ্র ও জঙ্গি সদস্য গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা জানতে পারেন এই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। ওই তথ্যের ভিত্তিতে গতরাতে (বুধবার) রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী থেকে এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করা হয়।

লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ আরো বলেন, তার (আবু জিব্রিল) বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল রাজাপুরে। বাবার নাম খোরশেদ আলম। জেএমবিতে যোগ দেয়ার আগে র‌্যাম্প মডেলিং করত মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। সোনারগাঁও-রেডিসনের মতো অভিজাত হোটেলগুলোতে র‌্যাম্প মডেলিং করতেন তিনি।

জেএমবিতে যোগদানের পর তার কাজ ছিল কর্মী সংগ্রহ করা ও ‘হিজরতে’ সহযোগিতা করা। সুন্দর চেহারা ও মোটিভেশন ক্ষমতার কারণে দ্রুত ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ কমান্ডারের পদ পান আবু জিব্রিল।

আবু জিব্রিল কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি ‘আইটি এক্সপার্ট’ হিসেবে ঊর্ধ্বতন জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কাজগুলো অনলাইনে পরিচালনা করতেন। তার বাসা থেকে এ রকম যোগাযোগ স্থাপনের অনেক আলামত জব্দ করা হয়েছে। তার সঙ্গে হলি আর্টিসানে হামলাকারী ও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানার জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে আবু জিব্রিল র‌্যাবকে জানায়, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় বেশ কয়েকজন নতুন কর্মীকে বাইয়্যাত (শপথ) পাঠ করিয়েছেন তিনি। জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’তে আনসার (সাহায্যকারী), মুজাহিদ (যোদ্ধা), সালাফি আলেম বোর্ড ও অর্থ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছে বলে জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বদর ব্রিগেড দুর্বল হওয়ার পর মূলত আবু জিব্রিলের নেতৃত্বেই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’ বিভিন্ন অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন এবং যেকোনো স্থানে নাশকতা করার মতো পরিকল্পনা নেয় জেএমবি। আবু জিব্রিলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য পাওয়ার আশা করছে পুলিশ।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

‘জেএমবি কমান্ডার’ আবু জিব্রিল ৪ দিনের রিমান্ডে

আপডেট টাইম : ১১:৩৭:১৩ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২২ সেপ্টেম্বর ২০১৭

র‌্যাম্প মডেল থেকে জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’র কমান্ডার হওয়া ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের বিরুদ্ধে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর হাকিম সাব্বির ইয়াসির আহসান চৌধুরী এ আদেশ দেন। এর আগে, বনানী থানায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে দায়ের করা মামলায় তার বিরুদ্ধে ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা। আদালত শুনানি শেষে চারদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

বুধবার রাতে রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী এলাকা থেকে নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন জেএমবির এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৩ এর সদস্যরা। এ সময় তার কাছ থেকে দুটি ল্যাপটপ, মোবাইল ও পাসপোর্টসহ বেশকিছু গুরুত্বপূর্ণ জিনিস জব্দ করা হয়।

বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় কারওয়ানবাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৩ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ জানান, র‌্যাম্প মডেল হওয়ার ইচ্ছা ছিল ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিলের। এ লক্ষ্যে বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতায় অংশও নেন তিনি। তবে ২০১৫ সালে সারোয়ার-তামিম গ্রুপের সংস্পর্শে পাল্টে যায় তার জীবন। র‌্যাম্প মডেল থেকে হয়ে ওঠেন জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’র কমান্ডার।

তিনি বলেন, ২০১৫ সালে র‌্যাবের অভিযানে পালাতে গিয়ে গ্রেফতার হয় জেএমবির ‘সারোয়ার-তামিম’ গ্রুপের তৎকালীন আমির সারোয়ার জাহান ওরফে মানিক ওরফে আবু ইব্রাহিম আল হানিফ। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে ও প্রাপ্ত আলামতের ভিত্তিতে র‌্যাব ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ ও ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ নামে জেএমবির আরও দুটি ব্রিগেডের তথ্য পায়।

গুলশানের হলি আর্টিসানসহ অন্যান্য হামলায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। তবে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অভিযানে বেশ কয়েকজন সদস্য গ্রেফতার ও নিহত হলে দুর্বল হয়ে পড়ে ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’। ‘বদর স্কোয়াড ব্রিগেড’ এর ব্যাকআপ বা রিজার্ভ হিসেবে সক্রিয় হতে শুরু করে ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’।

সম্প্রতি বেশ কয়েকজন উগ্র ও জঙ্গি সদস্য গ্রেফতারের পর গোয়েন্দারা জানতে পারেন এই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’র নেতৃত্ব দিচ্ছেন ইমাম মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। ওই তথ্যের ভিত্তিতে গতরাতে (বুধবার) রাজধানীর দক্ষিণ বনশ্রী থেকে এ কমান্ডারকে গ্রেফতার করা হয়।

লে. কর্নেল তুহিন মোহাম্মদ মাসুদ আরো বলেন, তার (আবু জিব্রিল) বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল রাজাপুরে। বাবার নাম খোরশেদ আলম। জেএমবিতে যোগ দেয়ার আগে র‌্যাম্প মডেলিং করত মেহেদী হাসান ওরফে আবু জিব্রিল। সোনারগাঁও-রেডিসনের মতো অভিজাত হোটেলগুলোতে র‌্যাম্প মডেলিং করতেন তিনি।

জেএমবিতে যোগদানের পর তার কাজ ছিল কর্মী সংগ্রহ করা ও ‘হিজরতে’ সহযোগিতা করা। সুন্দর চেহারা ও মোটিভেশন ক্ষমতার কারণে দ্রুত ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই-কুতনী’ কমান্ডারের পদ পান আবু জিব্রিল।

আবু জিব্রিল কর্মী সংগ্রহের পাশাপাশি ‘আইটি এক্সপার্ট’ হিসেবে ঊর্ধ্বতন জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ ও সাংগঠনিক কাজগুলো অনলাইনে পরিচালনা করতেন। তার বাসা থেকে এ রকম যোগাযোগ স্থাপনের অনেক আলামত জব্দ করা হয়েছে। তার সঙ্গে হলি আর্টিসানে হামলাকারী ও কল্যাণপুরের জঙ্গি আস্তানার জঙ্গিদের যোগাযোগ ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে আবু জিব্রিল র‌্যাবকে জানায়, রাজশাহী, টাঙ্গাইল ও ঢাকায় বেশ কয়েকজন নতুন কর্মীকে বাইয়্যাত (শপথ) পাঠ করিয়েছেন তিনি। জেএমবির ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’তে আনসার (সাহায্যকারী), মুজাহিদ (যোদ্ধা), সালাফি আলেম বোর্ড ও অর্থ প্রদানকারী বিভিন্ন ব্যক্তি রয়েছে বলে জানায়।

সংবাদ সম্মেলনে আরো বলা হয়, বদর ব্রিগেড দুর্বল হওয়ার পর মূলত আবু জিব্রিলের নেতৃত্বেই ‘ব্রিগেড আদ-দার-ই কুতনী’ বিভিন্ন অপারেশনাল সক্ষমতা অর্জন এবং যেকোনো স্থানে নাশকতা করার মতো পরিকল্পনা নেয় জেএমবি। আবু জিব্রিলকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে আরও তথ্য পাওয়ার আশা করছে পুলিশ।