ঢাকা ০৮:৫৪ অপরাহ্ন, রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ৮ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সালমান বলেছিল, আমার জানটাকে দেখে রাইখেন : শাবনূর

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:২৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৩০২ বার

সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উঠেছি মাত্র, তখনও আমি চলচ্চিত্রে আসিনি। তবে এহতেশাম দাদুর সঙ্গে এফডিসিতে যেতাম। একদিন  দাদুর সঙ্গে এফডিসিতে গিয়েছি, সেদিন ঝরনা স্পটে সালমান শাহ শুটিং করছিল। সোহানুর রহমান সোহান ছিলেন পরিচালক। তখন দূর থেকে একটু দেখেছিলাম সালমানকে। তখনও তার কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। নতুন নায়ক এসেছে- এতটুকুই জেনেছি। এর মধ্যে আমি ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমায় কাজ শুরু করি।

এর মধ্যে সালমান শাহের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায় এবং সুপারহিট হয়। তখন আমার সঙ্গে ‘তুমি আমার’ সিনেমার অফার এলো। রাজি হলাম। আমি ও সালমান প্রথম শুটিং করি একটি বাসায়। সেখানে আমাদের প্রথম শট হয়েছিল একটি ঝগড়ার। দৃশ্যটা ছিলো এমন- আংটি পরা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে।

যাই হোক, সালমান অসম্ভব চঞ্চল ছিল। সব সময় সেটের মধ্যে দুষ্টুমি করত। ওর কাছে সব সময় একটা রুমাল থাকত। সারাক্ষণ রুমাল ঘুড়াত। ডন ও ফারুকের সঙ্গে ওর ভালো সম্পর্ক ছিল। সালমান রুমাল ঘুরাত আর সবাইকে রুমাল ব্যবহার করে গুলতির মতো মারত। ডন বা ফারুক ব্যথা পেয়ে বলত, লাগে তো! তারপরও সালমান শুনত না। মজা করেই সে কাজটা করত। এই হলো সালমানের দুষ্টুমি! দেখা গেছে এই কথা বলছে, আবার একটু পরই হাওয়া! জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ সিনেমাটি ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিটিও সুপারহিট হয়। এরপর আমরা এক সঙ্গে ১৪টি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছি। সবগুলো সিনেমাই ছিল ব্যবসা সফল।

সালমান যখন এফডিসিতে গাড়ি নিয়ে ঢুকত তখন সবাই বুঝতে পারত সালমান গাড়ি চালাচ্ছে। ও একটু ভিন্নভাবে গাড়ি চালাত। দেখা গেছে এক জায়গাতে বসেই গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলত। প্রচণ্ড রাফ ড্রাইভ করত কিন্তু ব্যালেন্স ঠিক থাকত। একবার অনেক দূরের পথে যাচ্ছিলাম। বন-জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। রাস্তা খুব খারাপ। তখন ড্রাইভারকে বলল, এই তুমি সিটে বসো। আমি গাড়ি চালাচ্ছি। এরপর ও খুব স্পীডে গাড়ি চালিয়েছে। আমরা তো সবাই কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। গাড়িতে ছিলাম আমি, সালমান, সালমানের স্ত্রী সামিরা, আমার মা। মা ভয় পেয়ে বলেছিল, বাবা একটু আস্তে চালাও। সামিরাও সেদিন তাকে গাড়ি আস্তে চালানোর জন্য বলেছিল। এর উত্তরে সালমান বলেছিল, দেখছ না, রাস্তা খারাপ। আমার তো তারাতারি যেতে হবে। এ রকম অসংখ্য স্মৃতি এখনও আমাকে তাড়া করে।

একবার কক্সবাজারে শুটিং করছিলাম। শুটিং শেষ। পরিচালক ক্যামেরা ক্লোজ করেছেন। সবাই মিলে হইহুল্লোর করছি। তখন অনেক রাত।  সালমানের মনে হলো বারবিকিউ করবে। ইউনিটের সবাইকে নিয়ে বারবিকিউ করতে চলে গেল সৈকতে। রাতে মশাল জ্বালিয়ে আমরা একসঙ্গে বারবিকিউ করলাম। স্মৃতিগুলো এখন জ্বলজ্বল করে মনের ভেতর।

সালমান তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসত। একদিন আমার মাকে শুটিং সেটে বলেছিল, আন্টি, আমার এই জানটাকে দেখে রাইখেন। আম্মা বলেছিল, তুমি নিশ্চিন্তে কাজ করো, আমরা তোমার বউকে দেখে রাখব। সামিরা শুটিং সেটে সব সময় সালমানের পাশেই থাকত। সালমান আমাকে সব সময় ‘পিচ্চি’ বলো ডাকত। বলত, এই পিচ্চি এদিকে আয়। আমাকে বলত, আমার তো কোনো বোন নেই তুই আমার বোন। দেখা গেছে সামিরা তার ড্রেস ম্যাচিং করে দিচ্ছে আর সালমান আমার সঙ্গে কথা বলছে। এমনও হয়েছে আমার দু-একটা ড্রেস সামিরা ঠিক করে দিয়েছে। দেখা গেছে সামিরা আমার কানের দুল ম্যাচিং করে দিল। এভাবে আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। এ ধরনের মজার ঘটনা তখন অনেক ঘটেছে। একবার অনেকগুলো কানের দুল আমি বের করেছি। তখন সামিরা বলল, আমার কাছে দাও আমি বেছে বেছে ম্যাচিং করছি।

সালমান শাহ ভালো মনের মানুষ ছিল। বড় মনের মানুষ ছিল। ব্যক্তি হিসেবে খুবই ভালো ছিল। সেটে কোনো মুরুব্বি ঢুকলে আমি কখনই দেখিনি সে বসে থেকেছে। উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করেছে এবং বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিয়েছে। আরেকটি ব্যাপার, সে যত চঞ্চলই হোক, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে চেঞ্জ হয়ে যেত। আজ সালমান শাহের জন্মদিন। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সালমান বলেছিল, আমার জানটাকে দেখে রাইখেন : শাবনূর

আপডেট টাইম : ০৬:২৫:১৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭

সপ্তম শ্রেণী থেকে অষ্টম শ্রেণীতে উঠেছি মাত্র, তখনও আমি চলচ্চিত্রে আসিনি। তবে এহতেশাম দাদুর সঙ্গে এফডিসিতে যেতাম। একদিন  দাদুর সঙ্গে এফডিসিতে গিয়েছি, সেদিন ঝরনা স্পটে সালমান শাহ শুটিং করছিল। সোহানুর রহমান সোহান ছিলেন পরিচালক। তখন দূর থেকে একটু দেখেছিলাম সালমানকে। তখনও তার কোনো সিনেমা মুক্তি পায়নি। নতুন নায়ক এসেছে- এতটুকুই জেনেছি। এর মধ্যে আমি ‘চাঁদনী রাতে’ সিনেমায় কাজ শুরু করি।

এর মধ্যে সালমান শাহের ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ মুক্তি পায় এবং সুপারহিট হয়। তখন আমার সঙ্গে ‘তুমি আমার’ সিনেমার অফার এলো। রাজি হলাম। আমি ও সালমান প্রথম শুটিং করি একটি বাসায়। সেখানে আমাদের প্রথম শট হয়েছিল একটি ঝগড়ার। দৃশ্যটা ছিলো এমন- আংটি পরা নিয়ে দুজনের মধ্যে ঝগড়া হচ্ছে।

যাই হোক, সালমান অসম্ভব চঞ্চল ছিল। সব সময় সেটের মধ্যে দুষ্টুমি করত। ওর কাছে সব সময় একটা রুমাল থাকত। সারাক্ষণ রুমাল ঘুড়াত। ডন ও ফারুকের সঙ্গে ওর ভালো সম্পর্ক ছিল। সালমান রুমাল ঘুরাত আর সবাইকে রুমাল ব্যবহার করে গুলতির মতো মারত। ডন বা ফারুক ব্যথা পেয়ে বলত, লাগে তো! তারপরও সালমান শুনত না। মজা করেই সে কাজটা করত। এই হলো সালমানের দুষ্টুমি! দেখা গেছে এই কথা বলছে, আবার একটু পরই হাওয়া! জহিরুল হক পরিচালিত ‘তুমি আমার’ সিনেমাটি ১৯৯৪ সালে মুক্তি পায়। এই ছবিটিও সুপারহিট হয়। এরপর আমরা এক সঙ্গে ১৪টি সিনেমায় জুটি বেঁধে অভিনয় করেছি। সবগুলো সিনেমাই ছিল ব্যবসা সফল।

সালমান যখন এফডিসিতে গাড়ি নিয়ে ঢুকত তখন সবাই বুঝতে পারত সালমান গাড়ি চালাচ্ছে। ও একটু ভিন্নভাবে গাড়ি চালাত। দেখা গেছে এক জায়গাতে বসেই গাড়ি ঘুড়িয়ে ফেলত। প্রচণ্ড রাফ ড্রাইভ করত কিন্তু ব্যালেন্স ঠিক থাকত। একবার অনেক দূরের পথে যাচ্ছিলাম। বন-জঙ্গলের মধ্য দিয়ে। রাস্তা খুব খারাপ। তখন ড্রাইভারকে বলল, এই তুমি সিটে বসো। আমি গাড়ি চালাচ্ছি। এরপর ও খুব স্পীডে গাড়ি চালিয়েছে। আমরা তো সবাই কাত হয়ে পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা। গাড়িতে ছিলাম আমি, সালমান, সালমানের স্ত্রী সামিরা, আমার মা। মা ভয় পেয়ে বলেছিল, বাবা একটু আস্তে চালাও। সামিরাও সেদিন তাকে গাড়ি আস্তে চালানোর জন্য বলেছিল। এর উত্তরে সালমান বলেছিল, দেখছ না, রাস্তা খারাপ। আমার তো তারাতারি যেতে হবে। এ রকম অসংখ্য স্মৃতি এখনও আমাকে তাড়া করে।

একবার কক্সবাজারে শুটিং করছিলাম। শুটিং শেষ। পরিচালক ক্যামেরা ক্লোজ করেছেন। সবাই মিলে হইহুল্লোর করছি। তখন অনেক রাত।  সালমানের মনে হলো বারবিকিউ করবে। ইউনিটের সবাইকে নিয়ে বারবিকিউ করতে চলে গেল সৈকতে। রাতে মশাল জ্বালিয়ে আমরা একসঙ্গে বারবিকিউ করলাম। স্মৃতিগুলো এখন জ্বলজ্বল করে মনের ভেতর।

সালমান তার স্ত্রীকে অনেক ভালোবাসত। একদিন আমার মাকে শুটিং সেটে বলেছিল, আন্টি, আমার এই জানটাকে দেখে রাইখেন। আম্মা বলেছিল, তুমি নিশ্চিন্তে কাজ করো, আমরা তোমার বউকে দেখে রাখব। সামিরা শুটিং সেটে সব সময় সালমানের পাশেই থাকত। সালমান আমাকে সব সময় ‘পিচ্চি’ বলো ডাকত। বলত, এই পিচ্চি এদিকে আয়। আমাকে বলত, আমার তো কোনো বোন নেই তুই আমার বোন। দেখা গেছে সামিরা তার ড্রেস ম্যাচিং করে দিচ্ছে আর সালমান আমার সঙ্গে কথা বলছে। এমনও হয়েছে আমার দু-একটা ড্রেস সামিরা ঠিক করে দিয়েছে। দেখা গেছে সামিরা আমার কানের দুল ম্যাচিং করে দিল। এভাবে আমরা এক সঙ্গে কাজ করেছি। এ ধরনের মজার ঘটনা তখন অনেক ঘটেছে। একবার অনেকগুলো কানের দুল আমি বের করেছি। তখন সামিরা বলল, আমার কাছে দাও আমি বেছে বেছে ম্যাচিং করছি।

সালমান শাহ ভালো মনের মানুষ ছিল। বড় মনের মানুষ ছিল। ব্যক্তি হিসেবে খুবই ভালো ছিল। সেটে কোনো মুরুব্বি ঢুকলে আমি কখনই দেখিনি সে বসে থেকেছে। উঠে দাঁড়িয়ে সম্মান করেছে এবং বসার জন্য চেয়ার এগিয়ে দিয়েছে। আরেকটি ব্যাপার, সে যত চঞ্চলই হোক, ক্যামেরার সামনে দাঁড়ালে চেঞ্জ হয়ে যেত। আজ সালমান শাহের জন্মদিন। আমি তার রুহের মাগফিরাত কামনা করছি।