আওয়ামী লীগের ঘাঁটিতে চমক দেখাতে চায় বিএনপি

হাওর বার্তা ডেস্কঃ ভাটি এলাকা বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত হবিগঞ্জ-২ আসন। সময়ের পরিবর্তনে ওই এলাকায় লেগেছে আধুনিকতার ছোঁয়া। যোগাযোগ ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এসেছে। এক সময় ওই এলাকায় যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌকা। আর স্বাধীনতা পরবর্তী প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকই বিজয়ী হয়েছে। আগামী নির্বাচন নিয়েও এখনই মাঠে সরব আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। মরণ কামড় দিয়ে এবার বিজয়ের মুকুট ছিনিয়ে নিতে মরিয়া বিএনপি। আওয়ামী লীগে বিদ্রোহের সুযোগ কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে চায় বিএনপি। সিলেট বিভাগীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হোসেন জীবন এবং সৌদি বিএনপির সভাপতি ও আন্তর্জাতিক লবিস্ট হিসেবে খ্যাত আহমদ আলী মুকিব দলীয় মনোনয়ন পেতে জোর তৎপরতা শুরু করেছেন। নির্বাচনী এলাকায় দুজনেরই রয়েছে পরিচ্ছন্ন ইমেজ। ওদিকে বিদ্রোহের দাবানল আওয়ামী লীগের কপালে এখন চিন্তার ভাঁজ। সর্বশেষ বিএনপিবিহীন দশম জাতীয় নির্বাচনে অ্যাডভোকেট মজিদ খান ৬৫ হাজার ৩৬২ ভোট পেয়ে বিজয়ী হন। জাপার শংকর পাল পেয়েছিলেন ২১ হাজার ৫৫৯ ভোট। ওই এলাকায় জামায়াত ও হেফাজতসমর্থিত বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে। গত ইউপি নির্বাচনে ১৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টিতে আওয়ামী লীগ, ৩টিতে বিএনপি, ১টিতে জামায়াত এবং স্বতন্ত্র নির্বাচনে একজন চেয়ারম্যান পদে বিজয়ী হন। উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে বিএনপি এবং জামায়াত সমর্থিতরা জয়ী হন। হবিগঞ্জ-২ নির্বাচনী এলাকায় ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত গোপাল কৃষ্ণ এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের মেজর জেনারেল (অব.) এমএ রব, ১৯৭৯ সালে বিএনপির অ্যাডভোকেট জনাব আলী বিজয়ী হন। ১৯৮৬ ও ’৮৮ সালে জাতীয় পার্টি থেকে বিজয়ী হন সিরাজুল ইসলাম খান। ১৯৯১ ও ’৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হন হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট শরীফ উদ্দিন আহমেদ। তার মৃত্যুতে ১৯৯৭ সালের উপনির্বাচনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত নির্বাচিত হন। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থী শিল্পপতি নাজমুল হাসান জাহেদ। ব্যবসায়ী নেতা ও হবিগঞ্জ জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল নির্বাচনে আগ্রহী। জোটগত সিদ্ধান্তের প্রতীক্ষায় তিনি। আওয়ামী লীগের নিশ্চিত আসন হিসেবে পরিচিত ওই নির্বাচনী এলাকায় বিগত ৭টি জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী হয় আওয়ামী লীগ। বর্তমান সংসদ সদস্য ও হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুল মজিদ খান এলাকার উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করছেন। জেলার রাজনীতির পাশাপাশি নিজের নির্বাচনী এলাকায় তার অবদান স্বীকার করেন ভোটাররা। অবহেলিত জনপদে আশার আলো দেখিয়েছেন তিনি। দলের মনোনয়ন প্রশ্নে তাকে ছাড় দিতে নারাজ বানিয়াচং উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আমির হোসেন মাস্টার। এছাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন খান, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য ডা. মোহাম্মদ শাহনেওয়াজ, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক আইনবিষয়ক সম্পাদক ময়েজউদ্দিন শরীফ রুয়েল নৌকার মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করছেন। আওয়ামী লীগ থেকে সাবেক সচিব ইকবাল খান চৌধুরী চমক দেখাতে পারেন। শোনা যাচ্ছে কোন্দল নিরসনে তাকে মনোনয়ন দেয়া হতে পারে। এছাড়া হেভিওয়েট প্রার্থী হিসেবে এলাকায় সক্রিয় রয়েছেন ব্যারিস্টার এনামুল হক। সংবাদ সম্মেলন করে তিনি প্রার্থিতা ঘোষণা দিয়েছেন। দলের মনোনয়ন নিয়ে শতভাগ আশাবাদ ব্যক্ত করেন অ্যাডভোকেট আব্দুল মজিদ খান। রাজনীতির মাঠে সরব ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন। ২০০৮ সাল থেকে এলাকায় সক্রিয়। ব্যক্তি ও পারিবারিক ইমেজ কাজে লাগিয়ে চমক দেখাতে মরিয়া তিনি। ডা. জীবন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে শঙ্কা রয়েছে। তৃণমূলের মানুষ স্বচ্ছ নির্বাচনের জন্য উন্মুখ। দেশের মানুষ ভোটারবিহীন একদলীয় নির্বাচনের কলঙ্ক দেখতে চায় না। দলীয় মনোনয়ন নিয়ে হাইকমান্ডের ওপর আস্থাশীল তিনি। তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে বিএনপির প্রার্থী অবশ্যই বিজয়ী হবে। ওদিকে, বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জিয়া পরিবারের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত সৌদি আরব বিএনপির সভাপতি আহমদ আলী মুকিবের প্রার্থিতা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা রয়েছে। আন্দোলন সংগ্রামে ক্ষতিগ্রস্ত নেতাকর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে এলাকায় জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। মধ্যপ্রাচ্য বিএনপিকে সংগঠিত করার ক্ষেত্রে তিনি নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জের সর্বমহলের তার রয়েছে গ্রহণযোগ্যতা। সম্প্রতি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে ইউরোপের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। দলের মনোনয়ন পাওয়ার ব্যাপারে তিনি অনেক আশাবাদী। আহমেদ আলী মুকিব বলেন, বানিয়াচং-আজমিরীগঞ্জে হাওর থাকায় এলাকাটি খুবই অবহেলিত। স্বাধীনতার পর উন্নয়ন হয়নি। তাই বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার ঘোষিত ভিশন-২০৩০ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে এলাকার উন্নয়নে কাজ করছি। দলের চেয়ারপারসন যদি আমাকে মনোনয়ন দেন তাহলে আসনটি পুনরুদ্ধার করতে পারবো। মহাজোটের আশ্রয়ে থাকা জাপার তৃণমূল অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। তার পরও স্থানীয় পর্যায়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিতে চান হবিগঞ্জ জেলা জাপার সাধারণ সম্পাদক শংকর পাল। জাপার একক প্রার্থী হিসেবে তিনি মাঠে সক্রিয়।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর