ঢাকা ০৪:৪০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় হাওরপাড়ের বানভাসিদের দুর্ভোগ

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৪:০২:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭
  • ৩৪৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এবছর দুটি ঈদে আনন্দ ছিল না হাওর পাড়ের মানুষের। স্থানীয় বাজারগুলোর ছোট-বড় দোকানগুলোতে ভিড় ছিল না ক্রেতাদের। এবছর বানভাসিদের ঈদ ছিল আমেজহীন নিরানন্দ। কারণ দফায় দফায় বন্যায় তাদের এমন বেহালদশা। এবছর দুর্ভোগ পিছু নিয়েছে। একের পর এক দুর্যোগে আমরা সর্বস্বান্ত। খাবার নেই। বাসস্থান নেই। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান সবই জলমগ্ন। কৃষি জমি আর মৎস্য খামারও গ্রাস করেছে বানের পানি। কিছুতেই এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলছে না আমাদের। এমনটিই জানালেন দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওর তীরের বানভাসি মানুষ। গতকাল সরজমিন দুটি হাওরের কয়েকটি গ্রামে গেলে বানভাসিরা তাদের নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। অনেকেই জানালেন ঈদের দিনও তারা অর্ধাহারে-অনাহারে ছিলেন। সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে ঈদ উপলক্ষে যে ত্রাণ সহায়তা পেয়ে ছিলেন তা অল্প পরিমাণে থাকায় ঈদের আগের দিনই শেষ হয়ে গেছে। তাই অর্ধাহারে আর নতুন জামা কাপড়হীন চোখের জলে আর বানের জলে ঈদের দিনটি অতিবাহিত করেছেন তারা। বানভাসি অসহায় লোকজন জানালেন এবছর বারে বারে বানের পানিতে তাদের এমন চরম দুর্ভোগ। গেল ক’দিন থেকে আবার শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টি। হঠাৎ টানা ভারি বর্ষণে বানের পানি যেই সেই। মাসখানেক আগে কমে যাওয়া পানি এখন আগের মতোই রূপ নিয়েছে। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এমন পরিস্থিতিতে হাওর পাড়ের বানভাসি মানুষের কষ্টের অন্ত নেই। এবছর এ জেলার হাওর ও নদী তীরের মানুষ বন্যায় নাকাল। বন্যা তাদের পিছু নেয়াতে একের পর এক দুর্ভোগ। তৃতীয় ও ৪র্থ দফার বন্যায় এখন দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। হাওর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে এখন নতুন করে আবারো বানের পানির রাজত্ব। তাই কর্ম না থাকা বাসস্থানহীন অসহায় মানুষগুলোর যেমন খাদ্য ঘাটতি। তেমনি নতুন উপদ্রব দূষিত বানের পানিতে নানা রোগবালাই। সরজমিন দেখা গেল হাওর পাড়ের অধিকাংশ বাসিন্দার নিজের বসতভিটায় মাথাগোঁজার যেমন নেই ঠাঁই। তেমনি তাদের গৃহপালিত পশুরও। অসহায় বানভাসি মানুষগুলো কোন রকম ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু সেখানেও নানা প্রতিকূলতা। পর্যাপ্ত খাবার যেমন নেই, তেমনি বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটেরও নেই সু-ব্যবস্থা। গেল ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে হাওর পাড়ের বাসিন্দারা নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছেন। কারণ টানা বৃষ্টিতে আবারো অধিকাংশ রাস্তাঘাট বানের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বোরো ধানের পর এখন আমন ধানও পানিতে তলিয়ে গেছে। আগাম শীতকালীন সবজি ক্ষেতের জমিও নতুন করে পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় হতাশ হচ্ছেন চাষীরা। কৃষকরা জানালেন, ছয় মাস থেকে বয়ে চলা কয়েক দফার বন্যা নিঃস্ব করেছে তাদের। তাই  খাওয়া- বাঁচা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায়। গতকাল সরজমিন হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার কয়েকটি ইউনিয়ন ও কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের রাজনগর ও মৌলভীবাজারের কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম এলাকায় গেলে বন্যার্ত অসহায় লোকজন তাদের নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। তারা জানালেন এবছর মার্চের প্রথমদিকে শুরু হওয়া বন্যায় তলিয়ে দেয় তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল বোরো ধান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বয়ে চলছে নানা দুর্যোগ। হাওর পাড়ের বাসিন্দারা জানালেন মাস দিন আগে বানের পানি কমতে শুরু করেছিল। পানিতে ডুবে থাকা রাস্তাঘাট আর ঘরবাড়ি জেগে উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু এ ক’দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বানের পানি অনেকটাই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। হাওর পাড়ের ছোট-বড় বাজারগুলোর দোকানিরা জানালেন গেল প্রায় ৬ মাস থেকে তাদের ব্যবসায় দুর্দিন যাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অভাবে থাকায় দোকানমুখী হচ্ছেন কম। আয়-রোজগার কমেছে গাড়িচালকদের। স্থানীয় সড়কগুলো ভাঙাচুরা ও পানিমগ্ন থাকায় তাদের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। দৈনিক মজুরির শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় লোকজন পানিবন্দি থাকায় তাদের কাজের চাহিদা না থাকায় আয়-রোজগার নেই তাদের। হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের দুঃখ এই দুর্দিনে তারা পাননি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা। স্থানীয় দুর্ভোগগ্রস্তদের জোরালো দাবি অবিলম্বে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর এবং মনু, ফানাই, ধলাই ও জুড়ী নদীসহ অন্যান্য নদী সংস্কারসহ হাওর উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে হাওর অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

দীর্ঘ জলাবদ্ধতায় হাওরপাড়ের বানভাসিদের দুর্ভোগ

আপডেট টাইম : ০৪:০২:০১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ এবছর দুটি ঈদে আনন্দ ছিল না হাওর পাড়ের মানুষের। স্থানীয় বাজারগুলোর ছোট-বড় দোকানগুলোতে ভিড় ছিল না ক্রেতাদের। এবছর বানভাসিদের ঈদ ছিল আমেজহীন নিরানন্দ। কারণ দফায় দফায় বন্যায় তাদের এমন বেহালদশা। এবছর দুর্ভোগ পিছু নিয়েছে। একের পর এক দুর্যোগে আমরা সর্বস্বান্ত। খাবার নেই। বাসস্থান নেই। রাস্তাঘাট, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় উপাসনালয়, কবরস্থান সবই জলমগ্ন। কৃষি জমি আর মৎস্য খামারও গ্রাস করেছে বানের পানি। কিছুতেই এ দুর্ভোগ থেকে রেহাই মিলছে না আমাদের। এমনটিই জানালেন দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি ও কাউয়াদিঘি হাওর তীরের বানভাসি মানুষ। গতকাল সরজমিন দুটি হাওরের কয়েকটি গ্রামে গেলে বানভাসিরা তাদের নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। অনেকেই জানালেন ঈদের দিনও তারা অর্ধাহারে-অনাহারে ছিলেন। সরকারি ও ব্যক্তি উদ্যোগে ঈদ উপলক্ষে যে ত্রাণ সহায়তা পেয়ে ছিলেন তা অল্প পরিমাণে থাকায় ঈদের আগের দিনই শেষ হয়ে গেছে। তাই অর্ধাহারে আর নতুন জামা কাপড়হীন চোখের জলে আর বানের জলে ঈদের দিনটি অতিবাহিত করেছেন তারা। বানভাসি অসহায় লোকজন জানালেন এবছর বারে বারে বানের পানিতে তাদের এমন চরম দুর্ভোগ। গেল ক’দিন থেকে আবার শুরু হয়েছে অবিরাম বৃষ্টি। হঠাৎ টানা ভারি বর্ষণে বানের পানি যেই সেই। মাসখানেক আগে কমে যাওয়া পানি এখন আগের মতোই রূপ নিয়েছে। ক্রমাগত পানি বাড়তে থাকায় দীর্ঘস্থায়ী হচ্ছে জলাবদ্ধতা। এমন পরিস্থিতিতে হাওর পাড়ের বানভাসি মানুষের কষ্টের অন্ত নেই। এবছর এ জেলার হাওর ও নদী তীরের মানুষ বন্যায় নাকাল। বন্যা তাদের পিছু নেয়াতে একের পর এক দুর্ভোগ। তৃতীয় ও ৪র্থ দফার বন্যায় এখন দীর্ঘস্থায়ী জলাবদ্ধতা। হাওর তীরবর্তী এলাকাগুলোতে এখন নতুন করে আবারো বানের পানির রাজত্ব। তাই কর্ম না থাকা বাসস্থানহীন অসহায় মানুষগুলোর যেমন খাদ্য ঘাটতি। তেমনি নতুন উপদ্রব দূষিত বানের পানিতে নানা রোগবালাই। সরজমিন দেখা গেল হাওর পাড়ের অধিকাংশ বাসিন্দার নিজের বসতভিটায় মাথাগোঁজার যেমন নেই ঠাঁই। তেমনি তাদের গৃহপালিত পশুরও। অসহায় বানভাসি মানুষগুলো কোন রকম ঠাঁই নিয়েছেন আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু সেখানেও নানা প্রতিকূলতা। পর্যাপ্ত খাবার যেমন নেই, তেমনি বিশুদ্ধ পানি ও টয়লেটেরও নেই সু-ব্যবস্থা। গেল ক’দিনের টানা বৃষ্টিতে হাওর পাড়ের বাসিন্দারা নতুন করে দুর্ভোগে পড়েছেন। কারণ টানা বৃষ্টিতে আবারো অধিকাংশ রাস্তাঘাট বানের পানিতে তলিয়ে যাচ্ছে। বোরো ধানের পর এখন আমন ধানও পানিতে তলিয়ে গেছে। আগাম শীতকালীন সবজি ক্ষেতের জমিও নতুন করে পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় হতাশ হচ্ছেন চাষীরা। কৃষকরা জানালেন, ছয় মাস থেকে বয়ে চলা কয়েক দফার বন্যা নিঃস্ব করেছে তাদের। তাই  খাওয়া- বাঁচা নিয়ে তারা দুশ্চিন্তায়। গতকাল সরজমিন হাকালুকি হাওর তীরের কুলাউড়া, জুড়ী ও বড়লেখার কয়েকটি ইউনিয়ন ও কাউয়াদিঘি হাওর পাড়ের রাজনগর ও মৌলভীবাজারের কয়েকটি ইউনিয়নের গ্রাম এলাকায় গেলে বন্যার্ত অসহায় লোকজন তাদের নানা দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। তারা জানালেন এবছর মার্চের প্রথমদিকে শুরু হওয়া বন্যায় তলিয়ে দেয় তাদের স্বপ্নের সোনালী ফসল বোরো ধান। এরপর থেকে এখন পর্যন্ত বয়ে চলছে নানা দুর্যোগ। হাওর পাড়ের বাসিন্দারা জানালেন মাস দিন আগে বানের পানি কমতে শুরু করেছিল। পানিতে ডুবে থাকা রাস্তাঘাট আর ঘরবাড়ি জেগে উঠতে শুরু করেছিল। কিন্তু এ ক’দিনের টানা বৃষ্টি আর উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে বানের পানি অনেকটাই আগের অবস্থায় ফিরে গেছে। হাওর পাড়ের ছোট-বড় বাজারগুলোর দোকানিরা জানালেন গেল প্রায় ৬ মাস থেকে তাদের ব্যবসায় দুর্দিন যাচ্ছে। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ অভাবে থাকায় দোকানমুখী হচ্ছেন কম। আয়-রোজগার কমেছে গাড়িচালকদের। স্থানীয় সড়কগুলো ভাঙাচুরা ও পানিমগ্ন থাকায় তাদের আয়-রোজগার নেই বললেই চলে। দৈনিক মজুরির শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছেন।
স্থানীয় লোকজন পানিবন্দি থাকায় তাদের কাজের চাহিদা না থাকায় আয়-রোজগার নেই তাদের। হাওর পাড়ের বাসিন্দাদের দুঃখ এই দুর্দিনে তারা পাননি পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা। স্থানীয় দুর্ভোগগ্রস্তদের জোরালো দাবি অবিলম্বে দেশের সবচেয়ে বড় হাওর হাকালুকি, কাউয়াদিঘি ও হাইল হাওর এবং মনু, ফানাই, ধলাই ও জুড়ী নদীসহ অন্যান্য নদী সংস্কারসহ হাওর উন্নয়ন বোর্ডের অন্তর্ভুক্ত করে দ্রুত উন্নয়ন মহাপরিকল্পনার আওতায় এনে হাওর অঞ্চলের কৃষি, মৎস্য, জলজ প্রাণী ও উদ্ভিদ রক্ষায় পদক্ষেপ নেয়ার।