ঢাকা ১১:৪৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দিন, যুক্তরাষ্ট্রকে প্রধানমন্ত্রী

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:৫৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৭
  • ৩৫৪ বার

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধে দেশটিকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস দেখা করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এই অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত বুধবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। আর এরপর দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। তাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ওপর গুলি করছে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর আগেও বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায় মিয়ানমার বাহিনী। নির্যাতনের মুখে বরাবরই রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে বসবাস করছে।

বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় আমরা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি এবং এটি আমাদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। এজন্য মিয়ানমারের প্রতি প্রবল চাপ বাড়ানোর জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রেস সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে কি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ রয়েছে।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এলিস ওয়েলস সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমি ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেব না।’

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রত্যাবাসনে তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিভিন্ন খাতে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের চমৎকার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সকল খাত বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

দেশের গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম খোলাখুলিভাবে সরকারের সমালোচনা করছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে ৭৫০টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসরকারি খাতে ৪৪টি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি। এর মধ্যে ২৪টির কার্যক্রম চলছে।’

নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো সকল ক্ষেত্রে দেশের নারী সমাজ উচ্চ পদে রয়েছে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের মাত্র ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে দুই দেশের বাণিজ্য এখন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের আরএমজি পণ্যের বৃহত্তম বাজার।

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে ৭.২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং ঢাকাস্থ মার্কিন চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপ দিন, যুক্তরাষ্ট্রকে প্রধানমন্ত্রী

আপডেট টাইম : ১০:৫৬:৪৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৭

মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ বন্ধে দেশটিকে চাপ দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও সেন্ট্রাল এশিয়ার ভারপ্রাপ্ত সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী এলিস ওয়েলস দেখা করতে এলে প্রধানমন্ত্রী এই অনুরোধ জানান।

প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন।

গত বুধবার মিয়ানমারে রোহিঙ্গা অধ্যুষিত রাখাইন রাজ্যে নিরাপত্তাকর্মীদের ওপর সশস্ত্র গোষ্ঠীর হামলার পর রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে নতুন করে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনাবাহিনী। আর এরপর দলে দলে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের দিকে ছুটে আসছে। তাদেরকে বাংলাদেশে ঠেলে দিতে দেশটির সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীদের ওপর গুলি করছে বলেও জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। এর আগেও বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের ওপর অকথ্য নির্যাতন চালায় মিয়ানমার বাহিনী। নির্যাতনের মুখে বরাবরই রোহিঙ্গা নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আশ্রয় নেয়। ইতোমধ্যে লক্ষাধিক রোহিঙ্গা কক্সবাজারে এসে বসবাস করছে।

বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য উদ্ধৃত করে বলেন, ‘মানবিক বিবেচনায় আমরা বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়েছি এবং এটি আমাদের জন্য একটি বিরাট সমস্যা। এজন্য মিয়ানমারের প্রতি প্রবল চাপ বাড়ানোর জন্য আপনাদের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।’

প্রেস সচিব বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রীর কাছে জানতে চান রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কোনো রাজনৈতিক সংলাপ হয়েছে কি না।

জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের যোগাযোগ রয়েছে।

আফগানিস্তান ও পাকিস্তানে বিশেষ প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী এলিস ওয়েলস সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সঙ্গে একত্রে কাজ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রহের কথা ব্যক্ত করেন এবং সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশ সরকারের উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন।

এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির কথা পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমরা আমাদের ভূমি ব্যবহার করে অন্যান্য দেশে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ দেব না।’

প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানরত মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত বঙ্গবন্ধুর খুনিদের প্রত্যাবাসনে তাঁর আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন।

বিভিন্ন খাতে তাঁর নেতৃত্বে বাংলাদেশের চমৎকার উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকারের মূল লক্ষ্য হচ্ছে গ্রামীণ অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা। বেসরকারি খাতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার সকল খাত বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত করে দিয়েছে।

দেশের গণমাধ্যম পুরোপুরি স্বাধীনতা ভোগ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গণমাধ্যম খোলাখুলিভাবে সরকারের সমালোচনা করছে এবং সরকারের পক্ষ থেকে কোনো হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে ৭৫০টি দৈনিক পত্রিকা রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা বেসরকারি খাতে ৪৪টি টিভি চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি। এর মধ্যে ২৪টির কার্যক্রম চলছে।’

নারীর ক্ষমতায়নে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বর্ণনা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর সরকার রাষ্ট্রের সব পর্যায়ে নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করেছে। তিনি বলেন, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, শিক্ষা, সশস্ত্র বাহিনী এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মতো সকল ক্ষেত্রে দেশের নারী সমাজ উচ্চ পদে রয়েছে।

বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালের মাত্র ২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার থেকে দুই দেশের বাণিজ্য এখন বহু গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক তাৎপর্যপূর্ণ বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র হচ্ছে বাংলাদেশের আরএমজি পণ্যের বৃহত্তম বাজার।

মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিশেষ করে ৭.২৪ শতাংশ জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, মুখ্য সচিব ড. কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী এবং ঢাকাস্থ মার্কিন চার্জ দ্য এ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন।