হাওর বার্তা ডেস্কঃ শিশুদের জন্য আমরা : পৃথিবীতে একজন মানব শিশু যখন জন্মগ্রহণ করে তখন তার পুরো পরিবারে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। শিশু সবার আদরযত্নে আস্তে আস্তে বেড়ে উঠে। মায়ের কোলে শিশুর হাসি চাঁদের হাসিকেও হার মানায়। মনে রাখতে হবে আজকের যে শিশু আগামী দিনের পিতা মাতা। তাকে আদর্শভাবে গড়ে তুলতে হবে। কবির ভাষায় “ঘুমিয়ে আছে শিশুর পিতা, সব শিশুরই অন্তরে”। প্রত্যেকটি সৃষ্টির পেছনে রয়েছে মমতা আর ভালবাসা। যে শিশুর জন্ম পিতা মাতা সহ সবাইকে আনন্দ দান করে, সে শিশুই আমাদের আগামী দিনের প্রজন্ম। সে শিশুই পরিবার, সমাজ, দেশ তথা পৃথিবীকে দেবে নেতৃত্ব। তাই এ শিশুকে স্নেহ দিয়ে, মমতা দিয়ে, ভালবাসা দিয়ে গড়ে তুলতে হবে, জাগিয়ে তুলতে হবে তার প্রচ্ছন্ন শক্তিকে এবং মেধাকে। যোগ্য করে তুলতে হবে আগামী পৃথিবীকে সুশাসন দিতে এবং নেতৃত্ব দিতে। আমরা লায়ন, আমরা সামাজিক, আমরা সংঘবদ্ধভাবে কাজ করি, আমরা অসাম্প্রদায়িক, আমরা বৈশ্বিক, আমরা শিশুর মতই অকপট। আমাদের আছে একটা সংবেদনশীল মন, আমরা সেবা দেই একত্রে, আমাদের শক্তি প্রভুত–ধনে এবং দানে। আমরা লায়নবৃন্দ দেশীয় কর্মসূচী অনুসারে আর্ন্তজাতিক সহযোগীতায় শিশু অধিকার সংরক্ষণে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিম্নোক্ত কর্মসূচী গ্রহণ করতে পারি।
১. শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমাতে সহযোগিতা।
২. নিরক্ষরতা ও অপুষ্টি নিরসনে সহযোগিতা
৩. প্রাথমিক শিক্ষা ও নিরাপদ বিশুদ্ধ পানীয় জলের ব্যবস্থা।
৪. প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মোকাবেলায়, যুদ্ধকালীন সময়ে শিশুদের রক্ষা এবং চরম দারিদ্রতায় মা ও শিশুদের রক্ষায় রাষ্ট্রীয় আহবানের সহযোগিতায়।
৫. শিশু নির্যাতন (শারীরিক, মানসিক ও যৌন) কন্যাশিশুভ্রুণ হত্যা, ক্ষতিকর শিশুশ্রম, শিশুর শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ বিক্রয়, শিশু পাচার, শিশু বিক্রয়, শিশু বৈশ্যালয় এবং শিশু পর্ণোগ্রাফী ইত্যাদির বিরুদ্ধে দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ ।
৬. প্রতিবন্ধী (শারীরিক ও মানসিক) শিশুদের পুনর্বাসনে সহযোগিতা।
লিও দিবস–২০১৭ : ২৩শে আগস্ট ২০১৭ “৪৪তম বাংলাদেশ লিও দিবস”। আমাদের প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালের ২৩শে আগস্ট লিও ইজমের শুভ সূচনা হয়। ঢাকা ধানমন্ডি লায়ন্স ক্লাবের অভিভাবকত্বে “কমলাপুর লিও ক্লাব” প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশে লিও আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে। এই আন্দোলনের জনক এক মহান ব্যক্তিত্ব যিনি প্রথম বাংলা সবাক চলচিত্র “মুখ ও মুখোশ” এর সফল নির্মাতা ও প্রাক্তন জেলা গভর্নর লায়ন আব্দুল জব্বার খান। তিনি লিওদের মাঝে বাংলাদেশের লিওইজমের জনক নামে খ্যাত। ১৯৭১ পরবর্তী জাতির উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ যুব সমাজকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে ও সেবার জগতে তাদের অনুপ্রানিত করতে মনস্থ করলেন মরহুম লায়ন আব্দুল জব্বার খান। মূলত তাঁরই ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক সেবা সংগঠন লায়ন্স ক্লাবের মাধ্যমে আর্ন্তজাতিক যুব সেবা সংগঠন “লিও ক্নাব” আত্মপ্রকাশ করে। লিও শব্দের আভিধানিক অর্থ সিংহ শাবক হলেও সাংগঠনিক ক্ষেত্রে এর পরিচয় ভিন্নরূপ। লিও মনোগ্রামে দেখা যায় দুইটি সিংহ দুই দিকে তাকিয়ে আছে। এর অর্থ হচ্ছে একটির মাধ্যমে লিওরা তাকিয়ে থাকবে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে যেখানে তারা প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে অন্যের দিকে। অন্যটির মাধ্যমে লিওরা স্ব–স্ব পেশায় আত্মনিয়োগ করে সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলবে।
লিও হওয়ার যোগ্যতা : আপনি যদি একজন সমাজ সচেতন তরুণ কিংবা তরুণী হন এবং বয়স যদি ১২ বৎসর থেকে ৩০ বৎসরের মধ্যে থাকে অবশ্যই আপনি লিও সদস্য হবার যোগ্যতা রাখেন। আন্তর্জাতিক ভাবে লিও সদস্য দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথমটি হচ্ছে আলফা বা নিয়মিত সদস্য, যাদের বয়স ১২ থেকে ১৭ বৎসর। ওমেগা বা সিনিয়র সদস্য যাদের বয়স ১৮ থেকে ৩০ বৎসর। আপনাকে এই কথা অবশ্যই স্মরণ রাখতে হবে যে, লিও সদস্য পদ পেতে হলে আপনাকে সৎ চরিত্রবান ও সেবার মনোভাব সম্পন্ন হতে হবে এবং সমাজ রাষ্ট্রবিরোধী কোন কার্যকলাপে জড়িত থাকা যাবে না।
লিও ক্লাবের মূল উদ্দেশ্য : ১৯৫৭ সালে গঠিত এভিংটন হাইস্কুল লিও ক্লাবের অভিভাবক গ্লেন সাইড লায়ন্স ক্লাব চারটি মহৎ উদ্দেশ্য সাধন করার দায়িত্ব দেন। দায়িত্বগুলো হল– স্কুলের প্রশাসন ও অনুষদের সহযোগিতায় ছাত্রদের নেতৃত্বদান, পান্ডিত্য অর্জন, পৃথক দায়িত্ব, সততা ও অন্যের প্রতি শ্রদ্ধা অর্জনে উপযুক্ত করে গড়ে তোলার জন্য স্কুলের সেবা করা। সমাজের অভাব গ্র’দের প্রতি সাড়া দিয়ে সমাজের সেবা করা। গণতন্ত্রের আদর্শ এবং সরকার ও নাগরিকদের উন্নয়নে দেশের জন্য সেবা করা। লিও সদস্যদের বন্ধুত্ব ও পারস্পরিক সমঝোতার বন্ধনে আবদ্ধ করা।
লিও সংগঠনের নীতিমালা : আমরা পেশাগত কাজে উৎকর্ষের জন্য সুনাম অর্জনে সচেষ্ট থাকতো। আমি মনে রাখবো বন্ধুত্বই বন্ধুত্বের লক্ষ্য, বন্ধুত্ব কখনো কার্যসিদ্ধির মাধ্যম নয়। আমি বিশ্বাস রাখবো প্রকৃত বন্ধুত্বের মূল্য একজনের প্রতি আর একজনের উপকার বা সাহায্যর দ্বারা নিরূপিত হয় না। বরং সত্যিকার বন্ধুত্ব কিছুই দাবী করে না এবং উপকার গ্রহণ করে শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ। একজন নাগরিক হিসাবে আমরা জাতি, রাষ্ট্র ও সমাজের প্রতি আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য আমি সর্বদা স্মরণ রাখবো। কথায়, কাজে ও আচরণে তাদের প্রতি আনুগত্যে আমি অটল ও অবিচল থাকবো। দুঃস্থকে সহানুভূতি, দুর্বলকে সহায়তা ও নিঃস্বকে দান করে আমি তৃপ্ত হবো। সমালোচনার ক্ষেত্রে আমি সতর্ক ও সংযত থাকবো কিন্তু প্রশংসাই হবো উদার ও অকৃপণ, আমি গড়ে তুলবো কখনোও ভাঙবো না।
যুব সমাজের অগ্রযাত্রা : আমরা লিওরা জীবনের অর্ঘ্য সাজাই আশার কুসুমে, স্বপ্নের বুননিতে গড়ি অনাগত জীবনের নকশীকাঁথা।
বিগত দিনের জীর্নতার নাগপাশ ছিন্ন করে অনাগত দিনের রক্তিম সূর্য্যের উষ্ণ আলিঙ্গনে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। প্র্র্র্রতিকূলতা অক্টোপাসের মত সহস্র বেষ্টনীতে ঘিরে আছে আমাদের যুব সমাজকে। আমাদের দৃঢ় প্রত্যয় হউক মাদকমুক্ত ও সন্ত্রাসমুক্ত যুব সমাজ প্রতিষ্ঠা করে ফুলের মত সুভাসিত জীবন গড়ি। গভীর ধ্বংসস্তূপের মাঝে দাঁড়িয়ে ও আমরা নির্মাণের কঠিন শপথে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সকল আধাঁর সরিয়ে আলোকিত ঝর্নাধারার ধুঁইয়ে দিয়ে শান্তির নীলাকাশ প্রতিষ্ঠা করার অঙ্গীকার গ্রহণ করতে হবে লিওদের। সকল ভালোর প্রতি উদাত্ত আহ্বান আর অসুন্দরের প্রতি ক্ষমাহীন সংগ্রাম আমাদের। মনে রাখতে হবে এই বিশ্বে যা কিছু ভালো তা বিশ্বের সকল মানুষের অধিকার। আমরা এমন একটি দিনের অপেক্ষায় আছি যেদিন স্বপ্নের পাখীরা নীড় খুঁজে পাবে, চিকিৎসাহীন মৃত্যু করবেনা যখন উপহাস, দুঃখীর মুখে হাসি আর অন্ধের চোখে আলো সেদিন থাকবে নিশ্চিত। আত্মসচেতন ব্যক্তি ও জাতিই পারে বিশ্বের মাঝে সম্মানের সাথে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে। এই জন্য যে উপকরণের সবচেয়ে বেশী প্রয়োজন তা হচ্ছে নেতৃত্ব, অভিজ্ঞতা, মহতী উদ্যোগ ও সুষ্ট পরিকল্পনা। আমাদের একান্ত বিশ্বাস বাংলাদেশের সোনার ছেলে মেয়ে বলে খ্যাত প্রিয় লিও ভাই বোনেরা প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের সাফল্য বিশ্বের মানচিত্রে স্থায়ীরূপ দিতে সক্ষম হবেন। আমাদের লিও ভাই– বোনেরা সুশিক্ষা গ্রহণ, সৎচরিত্র গঠন ও আত্ম মানবতার সেবায় অংশ গ্রহণ করে আগামী দিনের আলোকিত মানুষ হিসাবে নিজেদের গড়ে তুলতে সচেষ্ট হবেন।
আসুন, আমরা সম্মানিত জেলা গভর্নর লায়ন মোঃ মনজুর আলম মনজু –পি.এম.জে,এফ এর যুগপোযোগী ডাক “শিশুদের জন্য আমরা” সার্থক বাস্তবায়নের জন্য একযোগে কাজ করি এবং সমাজের অবহেলিত মানুষের জন্য আত্মত্যাগ করে সুপ্রিয় লিও জেলা সভাপতি লিও মোঃ সাইফুল করিম আরিফ এর নেতৃত্বে “ওদের মুখে হাসি ফোটাই”।