হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। নৌকা চালাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি নিহত হয়েছে। ভাওড়া ইউনিয়ন পরিষদ, মির্জাপুর মহিলা কলেজ, আলহাজ মো. শফি উদ্দিন মিয়া এন্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজ, ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি প্রবেশ করেছে বলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে।
জানা গেছে, মির্জাপুর উপজেলার একটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নে প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের বসবাস। এরমধ্যে উপজেলার প্রধান প্রধান আঞ্চলিক সড়ক পানিতে তলিয়ে গিয়ে অন্তত দুই লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ ঘোষণা না হলেও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি হ্রাস পাওয়ায় অন্তত অর্ধশতাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পাঠদান বন্ধ রয়েছে। অপরদিকে ৪টি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ও ৮টি কমিউনিটি ক্লিনিকে বন্যার পানি প্রবেশ করায় স্বাস্থ্য সেবা বিঘ্নিত হচ্ছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. শাহরিয়ার সাজ্জাত নিশ্চিত করেছেন।
ফতেপুর, বহুরিয়া, ভাদগ্রাম ও বানাইল ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র এবং ডোকলাহাটী, গল্লী, কররা, কড়াইল, কাটরা, আড়াইপাড়া, বাওয়ার কুমারজানি ও গবড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে পানি উঠায় স্বাস্থ্য সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অফিস জানিয়েছেন।
উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়নের ৪৭৮ হেক্টর রোপা আমন ও ৮৫ হেক্টর জমির সবজি ও ১৫ হেক্টর জমির লেবু বাগান পানির নিচে রয়েছে বলে কৃষি কর্মকর্তা মো. আরিফুর রহমান জানিয়েছেন।
তারাকান্দির বাঁধ ভাঙার পর থেকে মির্জাপুরে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ইতিমধ্যে পৌর এলাকার ১, ২, ৪ ও ৫ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক গুলি পানিতে তলিয়ে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানা গেছে।
এছাড়া উপজেলার বহুরিয়া, ভাদগ্রাম, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, উয়ার্শী, লতিফপুর ইউনিয়নের কয়েকটি বাজারসহ অধিকাংশ এলাকাই বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে। উপজেলার ভাওড়া ইউনিয়নের পুরো এলাকা বন্যার পানির নিচে রয়েছে বলে সাবেক ইউপি সদস্য মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ জানিয়েছেন।
উপজেলার মির্জাপুর-কামারপাড়া, কুর্নি-ফতেপুর, কদিমধল্যা-বরাটি, কদিমধল্যা-মহেড়া, মির্জাপুর-গোড়াইল-চাকলেশ্বর, দেওহাটা-গেড়ামাড়া, মির্জাপুর-কামাড়পাড়া, দুল্যা বাজার-বরাটি বাজার, সলিমনগর-বান্দাচালা সড়ক সহ বিভিন্ন আঞ্চলিক সড়ক গুলি পানিতে তলিয়ে জনদুর্ভোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকায় কৃষকেরা তাদের গোলায় মজুত রাখা ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন বলে রোয়াইল গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানিয়েছেন।
উপজেলার ১৬৯টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ৫৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এরমধ্যে গোড়াইল, পাইখার, মুশুরিয়াঘোনা, বন্ধ্যে কাওয়ালজানি, খৈলসিন্দুর, রানাশাল, মধুরটেকি, ইচাইল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। এছাড়া গবড়া দক্ষিণ ও যোগীরকোফা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বৃহস্পতিবার থেকে শ্রেণি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে পড়বে বলে উপজেলা সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মোসাম্মত জান্নাতুল ফেরদৌস নিশ্চিত করেছেন।
অপরদিকে উপজেলার গোড়াকী, গ্রামনাহালী, বাংগুরী মাদরাসা ও বন্দ্যে কাওয়ালজানী, হিলড়া উচ্চ বিদ্যালয় এবং মহিলা কলেজ ও আলহাজ শফি উদ্দিন মিঞা এন্ড একাব্বর হোসেন টেকনিক্যাল কলেজে পানি প্রবেশ করায় বন্ধ রয়েছে বলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন মোল্লা জানিয়েছেন।
কুড়িগ্রাম জেলার রৌমারি উপজেলার সাইফুল ইসলাম (৩৫) মির্জাপুর উপজেলার ভাদগ্রাম ইউনিয়নের গোড়াইল গ্রামের করিব হোসেনের বাড়িতে থেকে দিন মজুরের কাজ করতো। বুধবার সকালে গোড়াইল গ্রাম থেকে নৌকাযোগে সাইফুল ধান নিয়ে মুশুরিয়াগোনা বিলের উপর দিয়ে যাওয়ার পথে হাতে থাকা লগি বিদ্যুতের তারের সঙ্গে স্পর্শ হলে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।