ঢাকা ০৩:৪২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অপার সৌন্দর্যের আঁধার কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৫৮ বার

বিজয় ৭১ ডেস্ক:হাওর বলতেই সাধারণত চোখের সামনে ভেসে উঠে নদী ভাঙন, হত-দরিদ্র-সুবিধা-বঞ্চিত মানুষের মুখ আর সেই মান্ধাতা আমলের যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র।

আবার বোরো মৌসুমে কৃষিকাজে কর্মব্যস্ত মানুষ আর দিগন্তবিস্তৃত মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধু সোনালী ধানের সমারোহ। বর্ষাকালে আবার এ মাঠ-ঘাটই ডুবে গিয়ে সমগ্র হাওর এলাকা যেন মহাসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। তখন হাওরের অপরূপ সৌন্দর্যই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।

কিশোরগঞ্জ জেলার সম্পূর্ণ হাওর অধ্যুষিত উপজেলাগুলো হচ্ছে- নিকলী, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও মিটামইন। তাছাড়াও করিমগঞ্জ, কটিয়াদি, বাজিতপুর, তাড়াইল, ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলার অংশবিশেষ হাওর এলাকায় অবস্থিত।

বর্ষাকালে হাওর এলাকায় অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন হাওরের পানিতে ভাসছে সেইসব গ্রাম। এ সময় হাওরে চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এগুলোই বর্ষাকালে হাওর এলাকার বাসিন্দাদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র বাহন।

শত শত রঙ্গিন পাল তোলা নৌকাও চোখে পড়ে। জাহাজ আকৃতির মালামাল পরিবহনকারী বড় বড় কার্গোও সদা চোখে পড়বে। দাঁড় বেয়ে চলা নৌকা ও মাঝিদের কণ্ঠের সুরেলা গানও শোনা যায়। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা তো নিত্যদিন-কার চিত্র। রাতে নৌকায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখে দূর থেকে মনে হবে যেন গ্রাম্য কুলবধূরা শত শত প্রদীপ জ্বালিয়ে হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে।

হাওরের পানিতে হাঁসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরা সারাদিন সাঁতার কাটায় মেতে থাকে। চাঁদনী রাতে জ্যোৎস্নার আলোর সঙ্গে ঢেউয়ের মাতামাতি দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকালে হাওরে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য তো সত্যিই খুবই নয়নাভিরাম।

হাওরকে ‘উড়াল পঙ্খির দেশ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ধবল বক হাওরে চোখে পড়ে। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মতো সেইসব বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কলকাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব।

তবে হাওর-কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে হলে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। হাওরে পর্যটকদের রাত্রিযাপন, খাবার-দাবার এবং আনন্দ-বিনোদনের সুবন্দোবস্ত থাকতে হবে। এজন্য বিস্তীর্ণ হাওরের বিভিন্ন পয়েন্টে অত্যাধুনিক হোটেল-মোটেল গড়ে তুলতে হবে। নৌ-বিহারের জন্য বড়, মাঝারি, ছোট প্রভৃতি বিভিন্ন আকারের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নৌযান চালু করতে হবে। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পেশাদার শিল্পীদের দ্বারা আমাদের দেশীয় লোকজ সংস্কৃতিকে তাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আর এর জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনই উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে পারে বলে হাওর-বাসীরা মনে করেন। হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতের মতো বর্ষাকালে হাওর এলাকাও একদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে বলে অভিজ্ঞ-মহল মনে করেন।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

অপার সৌন্দর্যের আঁধার কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল

আপডেট টাইম : ১২:০৬:১৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৭ অগাস্ট ২০১৫

বিজয় ৭১ ডেস্ক:হাওর বলতেই সাধারণত চোখের সামনে ভেসে উঠে নদী ভাঙন, হত-দরিদ্র-সুবিধা-বঞ্চিত মানুষের মুখ আর সেই মান্ধাতা আমলের যোগাযোগ ব্যবস্থার চিত্র।

আবার বোরো মৌসুমে কৃষিকাজে কর্মব্যস্ত মানুষ আর দিগন্তবিস্তৃত মাঠের পর মাঠ জুড়ে শুধু সোনালী ধানের সমারোহ। বর্ষাকালে আবার এ মাঠ-ঘাটই ডুবে গিয়ে সমগ্র হাওর এলাকা যেন মহাসমুদ্রের রূপ ধারণ করে। তখন হাওরের অপরূপ সৌন্দর্যই দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হতে পারে।

কিশোরগঞ্জ জেলার সম্পূর্ণ হাওর অধ্যুষিত উপজেলাগুলো হচ্ছে- নিকলী, ইটনা, অষ্টগ্রাম ও মিটামইন। তাছাড়াও করিমগঞ্জ, কটিয়াদি, বাজিতপুর, তাড়াইল, ভৈরব ও কুলিয়ারচর উপজেলার অংশবিশেষ হাওর এলাকায় অবস্থিত।

বর্ষাকালে হাওর এলাকায় অবস্থিত গ্রামগুলোকে দূর থেকে ছোট ছোট দ্বীপের মতো মনে হয়। মনে হয় যেন হাওরের পানিতে ভাসছে সেইসব গ্রাম। এ সময় হাওরে চলাচল করে শত শত ইঞ্জিনচালিত নৌকা। এগুলোই বর্ষাকালে হাওর এলাকার বাসিন্দাদের এক গ্রাম থেকে অন্য গ্রাম, এক উপজেলা থেকে অন্য উপজেলা কিংবা জেলা সদরের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র বাহন।

শত শত রঙ্গিন পাল তোলা নৌকাও চোখে পড়ে। জাহাজ আকৃতির মালামাল পরিবহনকারী বড় বড় কার্গোও সদা চোখে পড়বে। দাঁড় বেয়ে চলা নৌকা ও মাঝিদের কণ্ঠের সুরেলা গানও শোনা যায়। ডিঙ্গি নৌকা দিয়ে জেলেদের জাল দিয়ে মাছ ধরা তো নিত্যদিন-কার চিত্র। রাতে নৌকায় কুপি বাতি জ্বালিয়ে জেলেদের মাছ ধরা দেখে দূর থেকে মনে হবে যেন গ্রাম্য কুলবধূরা শত শত প্রদীপ জ্বালিয়ে হাওরের পানিতে ভাসিয়ে দিয়েছে।

হাওরের পানিতে হাঁসের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে শিশুরা সারাদিন সাঁতার কাটায় মেতে থাকে। চাঁদনী রাতে জ্যোৎস্নার আলোর সঙ্গে ঢেউয়ের মাতামাতি দেখলে নয়ন জুড়িয়ে যায়। বর্ষাকালে হাওরে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্তের দৃশ্য তো সত্যিই খুবই নয়নাভিরাম।

হাওরকে ‘উড়াল পঙ্খির দেশ’ হিসেবেও আখ্যায়িত করা হয়। ধ্যানমগ্ন ঋষির মতো দাঁড়িয়ে থাকা হাজার হাজার ধবল বক হাওরে চোখে পড়ে। শীতকালে সুদূর সাইবেরিয়া থেকে অতিথি পাখির আগমন ঘটে। সাঁঝের বেলায় মুক্তোর মালার মতো সেইসব বিভিন্ন প্রজাতির অতিথি পাখির নিরাপদ আশ্রয়ে ফেরার সময় মুখরিত কলকাকলির কান ফাটানো শব্দ একমাত্র হাওর এলাকাতেই শোনা সম্ভব।

তবে হাওর-কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটাতে হলে ব্যাপক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। হাওরে পর্যটকদের রাত্রিযাপন, খাবার-দাবার এবং আনন্দ-বিনোদনের সুবন্দোবস্ত থাকতে হবে। এজন্য বিস্তীর্ণ হাওরের বিভিন্ন পয়েন্টে অত্যাধুনিক হোটেল-মোটেল গড়ে তুলতে হবে। নৌ-বিহারের জন্য বড়, মাঝারি, ছোট প্রভৃতি বিভিন্ন আকারের শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত নৌযান চালু করতে হবে। পর্যটকদের বিনোদনের জন্য পেশাদার শিল্পীদের দ্বারা আমাদের দেশীয় লোকজ সংস্কৃতিকে তাদের সামনে তুলে ধরার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা থাকতে হবে।

আর এর জন্য বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনই উদ্যোগী ভূমিকা রাখতে পারে বলে হাওর-বাসীরা মনে করেন। হাওরের নৈসর্গিক সৌন্দর্যের ব্যাপারে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালালে কক্সবাজার সমুদ্র-সৈকতের মতো বর্ষাকালে হাওর এলাকাও একদিন দেশি-বিদেশি পর্যটকদের পদভারে মুখরিত হয়ে উঠবে বলে অভিজ্ঞ-মহল মনে করেন।