ঢাকা ১১:৩৫ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে পাখিরা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৬:৫৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
  • ৩৭৩ বার
সারাবিশ্ব থেকেই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে পাখিরা৷ খোদ ইউরোপ মহাদেশে যত পাখি আছে, তার এক তৃতীয়াংশ অস্তিত্ব হারানোর সম্ভাবনার মুখোমুখি৷ ইউরোপের বন্যপ্রাণ সম্পর্কিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য৷ এক বিশেষ প্রজাতির ঘুঘুর (টার্টল ডাভ) সংখ্যা বিগত তিন দশকে কমে গিয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ৷ শুধু পাখিই নয়, সে মহাদেশে ৮০৪ রকমের বন্যপ্রাণের মধ্যে ৭৭ শতাংশেরই অবস্থা খুব খারাপ৷ আইইউসিএন বা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার’ এই বিপন্ন প্রজাতির পশুপাখিদের নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে৷ এই রেড তালিকায় এবার নাম উঠবে ইউরোপের বহু পাখির৷

আমাদের অবস্থাও আহামরি কিছু নয়৷  এই উপমহাদেশে প্রায় ১২৫০ প্রজাতির পাখির বাস৷ তার মধ্যে ২০০৬ সালের মধ্যেই আইইউসিএন-এর রেড তালিকায় নাম উঠে গিয়েছিল ৮২ টি প্রজাতির পাখির৷ সে সংখ্যা বিগত বছরগুলোয় বেড়েছে বই কমেনি৷ ২০১৩ সালের প্রকাশিত তালিকায় উপমহাদেশের  ১৩ টি পাখি মারাত্মক সংকটের মুখে আছে বলেই জানিয়েছিল সংস্থাটি৷ সাইবেরিয়ান বক, ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড’, নানা প্রজাতির শকুন সহ বিভিন্ন পাখিরা আছে এই অস্তিত্ববিলোপের বিপদের মুখোমুখি৷ অবশ্য তা নিয়ে মানুষের মনে হয় না তেমন কোনো হেলদোল আছে৷

মহাদেশ আলাদা হলেও পাখিদের সত্যি যেমন কোননোদেশ হয় না, তেমনই এ সমস্যার আলাদা দেশকেন্দ্রিক নয়৷ মূল সমস্যার বীজ নিহিত আছে নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মধ্যেই৷ ইউরোপের জিডিপি-র প্রায় ৩ শতাংশ নির্ভর করে এই প্রাকৃতিক সম্পদের উপর৷ তা রক্ষণাবেকক্ষণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের মনোভাব গয়ংগচ্ছ৷

মোটামুটি যে কারণগুলো পাখিদের অস্তিত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলি হলো, কৃষিজমি বা ঘাসজমির অবৈজ্ঞানিক অধিগ্রহণ, কৃষিজমিতে ব্যাপক হারে রাসায়নিকের ব্যবহার৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা একই রকম৷ নির্বিচারে বন উজাড় হওয়ায় পাখিদের বাসস্থানই নেই প্রায়৷ এদেশে পাখি ধরা এবং পাখি শিকারও পাখিদের অবলুপ্তির অন্যতম কারণ৷ কৃষিজমিতে রাসায়নিকের ব্যবহার, মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহারও কমিয়ে দিচ্ছে পাখিদের সংখ্যা৷ ক্রমাগত বাড়তে থাকা দূষণও আরও এক কারণ৷  এবং পরিযায়ী পাখিদের আসা যাওয়াও কমছে এর প্রভাবে৷

কিন্তু এ সমস্যার সমাধান কি? প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও ভারসাম্য নষ্ট হলে সভ্যতাগর্বী মানবজাতিও যে বিপদের সামনাসামনি হবে, সে কথা বোধহয় মানুষ নিজেও ভালো জানে৷ ২০২০ সালকে মাথায় রেখে ইউরোপে বেশ কয়েকটি বায়োডাইভার্সিটি প্রোজেক্ট নেওয়া হয়েছে৷ সে প্রোজেক্টের ফলাফল এখনও পর্যন্ত বেশ আশানুরূপ৷ মনে করা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মহাদেশে পাখিদের অবস্থা আরও ভালো হবে৷ এ দেশে বায়োডাইভার্সিটি প্রোজেক্টে সংকটে থাকা প্রজাতিকে বাঁচাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ‘প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট’, ‘প্রোজেক্ট টাইগার’-এর মতো সে প্রোজেক্টে জায়গা পেয়েছে ‘প্রোজেক্ট ভালচার’৷ কিন্তু অন্যান্য বহু পাখি একই রকম সংকটের মুখোমুখি৷

বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন মোতাবেক পশুপাখিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা বরাদ্দ করার মতো অনেক ব্যবস্থাই আছে বটে, কিন্তু পাখিদের সংখ্যা যেভাবে কমছে, তাতে  সরকারি প্রকল্পগুলি কতটা কার্যকরী হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে৷ পাখিদের যদি বাঁচাতে হয়, তবে ব্যাপক হারে অংশগ্রহণ দরকার সাধারণ মানুষের৷

ভারতে ২০০৯ সালে মুহাম্মদ দিলওয়ার নামে এক পাখিপ্রেমিক ‘নেচার ফরএভার সোসাইটি’ নামে এক ছোট্ট সংস্থা তৈরি করেছিলেন৷ তাদের কাজের জায়গা ছিল মুম্বই শহরে৷ চড়ুই, কাক, অন্যান্য ছোট ঘরোয়া পাখিদের দেখাশোনা করত সে সোসাইটির পাখি-পাগল কিছু মানুষ৷ পাখিদের অবলুপ্তি ঠেকাতে প্রশাসনিক উদ্যেগের পাশে পাশে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের আরও ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা আছে৷ দিলওয়ারের কাজটিকেই মডেল হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ প্রতিটি পাড়া, বা আবাসনের তরফ থেকে যদি এরকম উদ্যোগ নেওয়া যায় তবে পাখিদের পাঠশালার পাঠ বোধহয় এত তাড়াতাড়ি গুটোয় না৷ প্রতিটি মানুষ যদি বিন্দু বিন্দু বিষ প্রকৃতি থেকে সরিয়ে নিতে উদ্যোগী হয় তবে পাখি তথা সমস্ত প্রাণীদের সঙ্গেই মানুষের সহবস্থান সম্ভব৷ নচেৎ, প্রকৃতির খন্ডহরে মানুষকেও বসতি তুলে দিতে হবে৷ এই তো এত গরম পড়েছে৷ নিজেদের জানলায় পাখিদের জন্য একবাটি জল কি আমরা রাখতে পারি না? বিরাট প্রোজেক্টের গুরুভার বইতে না পারলেও এটুকু তো করাই যায়!- ওয়েবসাইট।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে পাখিরা

আপডেট টাইম : ০৬:৫৫:৪২ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৪ মে ২০১৫
সারাবিশ্ব থেকেই ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে পাখিরা৷ খোদ ইউরোপ মহাদেশে যত পাখি আছে, তার এক তৃতীয়াংশ অস্তিত্ব হারানোর সম্ভাবনার মুখোমুখি৷ ইউরোপের বন্যপ্রাণ সম্পর্কিত এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য৷ এক বিশেষ প্রজাতির ঘুঘুর (টার্টল ডাভ) সংখ্যা বিগত তিন দশকে কমে গিয়েছে প্রায় ৯০ শতাংশ৷ শুধু পাখিই নয়, সে মহাদেশে ৮০৪ রকমের বন্যপ্রাণের মধ্যে ৭৭ শতাংশেরই অবস্থা খুব খারাপ৷ আইইউসিএন বা ‘ইন্টারন্যাশনাল ইউনিয়ন ফর দ্য কনজারভেশন অফ নেচার’ এই বিপন্ন প্রজাতির পশুপাখিদের নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করে৷ এই রেড তালিকায় এবার নাম উঠবে ইউরোপের বহু পাখির৷

আমাদের অবস্থাও আহামরি কিছু নয়৷  এই উপমহাদেশে প্রায় ১২৫০ প্রজাতির পাখির বাস৷ তার মধ্যে ২০০৬ সালের মধ্যেই আইইউসিএন-এর রেড তালিকায় নাম উঠে গিয়েছিল ৮২ টি প্রজাতির পাখির৷ সে সংখ্যা বিগত বছরগুলোয় বেড়েছে বই কমেনি৷ ২০১৩ সালের প্রকাশিত তালিকায় উপমহাদেশের  ১৩ টি পাখি মারাত্মক সংকটের মুখে আছে বলেই জানিয়েছিল সংস্থাটি৷ সাইবেরিয়ান বক, ‘গ্রেট ইন্ডিয়ান বাস্টার্ড’, নানা প্রজাতির শকুন সহ বিভিন্ন পাখিরা আছে এই অস্তিত্ববিলোপের বিপদের মুখোমুখি৷ অবশ্য তা নিয়ে মানুষের মনে হয় না তেমন কোনো হেলদোল আছে৷

মহাদেশ আলাদা হলেও পাখিদের সত্যি যেমন কোননোদেশ হয় না, তেমনই এ সমস্যার আলাদা দেশকেন্দ্রিক নয়৷ মূল সমস্যার বীজ নিহিত আছে নির্বিচারে প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংসের মধ্যেই৷ ইউরোপের জিডিপি-র প্রায় ৩ শতাংশ নির্ভর করে এই প্রাকৃতিক সম্পদের উপর৷ তা রক্ষণাবেকক্ষণের ক্ষেত্রে প্রশাসনের মনোভাব গয়ংগচ্ছ৷

মোটামুটি যে কারণগুলো পাখিদের অস্তিত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সেগুলি হলো, কৃষিজমি বা ঘাসজমির অবৈজ্ঞানিক অধিগ্রহণ, কৃষিজমিতে ব্যাপক হারে রাসায়নিকের ব্যবহার৷ বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা একই রকম৷ নির্বিচারে বন উজাড় হওয়ায় পাখিদের বাসস্থানই নেই প্রায়৷ এদেশে পাখি ধরা এবং পাখি শিকারও পাখিদের অবলুপ্তির অন্যতম কারণ৷ কৃষিজমিতে রাসায়নিকের ব্যবহার, মোবাইল প্রযুক্তির ব্যবহারও কমিয়ে দিচ্ছে পাখিদের সংখ্যা৷ ক্রমাগত বাড়তে থাকা দূষণও আরও এক কারণ৷  এবং পরিযায়ী পাখিদের আসা যাওয়াও কমছে এর প্রভাবে৷

কিন্তু এ সমস্যার সমাধান কি? প্রাকৃতিক বৈচিত্র ও ভারসাম্য নষ্ট হলে সভ্যতাগর্বী মানবজাতিও যে বিপদের সামনাসামনি হবে, সে কথা বোধহয় মানুষ নিজেও ভালো জানে৷ ২০২০ সালকে মাথায় রেখে ইউরোপে বেশ কয়েকটি বায়োডাইভার্সিটি প্রোজেক্ট নেওয়া হয়েছে৷ সে প্রোজেক্টের ফলাফল এখনও পর্যন্ত বেশ আশানুরূপ৷ মনে করা হচ্ছে, আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে মহাদেশে পাখিদের অবস্থা আরও ভালো হবে৷ এ দেশে বায়োডাইভার্সিটি প্রোজেক্টে সংকটে থাকা প্রজাতিকে বাঁচাতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে৷ ‘প্রোজেক্ট এলিফ্যান্ট’, ‘প্রোজেক্ট টাইগার’-এর মতো সে প্রোজেক্টে জায়গা পেয়েছে ‘প্রোজেক্ট ভালচার’৷ কিন্তু অন্যান্য বহু পাখি একই রকম সংকটের মুখোমুখি৷

বন্যপ্রাণ সংরক্ষণ আইন মোতাবেক পশুপাখিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকা বরাদ্দ করার মতো অনেক ব্যবস্থাই আছে বটে, কিন্তু পাখিদের সংখ্যা যেভাবে কমছে, তাতে  সরকারি প্রকল্পগুলি কতটা কার্যকরী হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে৷ পাখিদের যদি বাঁচাতে হয়, তবে ব্যাপক হারে অংশগ্রহণ দরকার সাধারণ মানুষের৷

ভারতে ২০০৯ সালে মুহাম্মদ দিলওয়ার নামে এক পাখিপ্রেমিক ‘নেচার ফরএভার সোসাইটি’ নামে এক ছোট্ট সংস্থা তৈরি করেছিলেন৷ তাদের কাজের জায়গা ছিল মুম্বই শহরে৷ চড়ুই, কাক, অন্যান্য ছোট ঘরোয়া পাখিদের দেখাশোনা করত সে সোসাইটির পাখি-পাগল কিছু মানুষ৷ পাখিদের অবলুপ্তি ঠেকাতে প্রশাসনিক উদ্যেগের পাশে পাশে এই ধরনের কর্মকাণ্ডের আরও ব্যাপক প্রয়োজনীয়তা আছে৷ দিলওয়ারের কাজটিকেই মডেল হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে৷ প্রতিটি পাড়া, বা আবাসনের তরফ থেকে যদি এরকম উদ্যোগ নেওয়া যায় তবে পাখিদের পাঠশালার পাঠ বোধহয় এত তাড়াতাড়ি গুটোয় না৷ প্রতিটি মানুষ যদি বিন্দু বিন্দু বিষ প্রকৃতি থেকে সরিয়ে নিতে উদ্যোগী হয় তবে পাখি তথা সমস্ত প্রাণীদের সঙ্গেই মানুষের সহবস্থান সম্ভব৷ নচেৎ, প্রকৃতির খন্ডহরে মানুষকেও বসতি তুলে দিতে হবে৷ এই তো এত গরম পড়েছে৷ নিজেদের জানলায় পাখিদের জন্য একবাটি জল কি আমরা রাখতে পারি না? বিরাট প্রোজেক্টের গুরুভার বইতে না পারলেও এটুকু তো করাই যায়!- ওয়েবসাইট।