হাওর বার্তা ডেস্কঃ আকাশে সাদা মেঘ। পাশে বর্ষার পানিতে টইটম্বুর মিরপুরের তুরাগ নদ। দুইয়ের মাঝে বয়ে যাচ্ছে প্রবল বাতাস। পশ্চিমা সেই বাতাস আছড়ে পড়ছে পুব দিকে, যেখানে রয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানার মায়াহরিণের বেষ্টনী। বেষ্টনীর ভেতর প্রচুর ঘাস। বাতাসে ঘাসগুলো নদীর ঢেউয়ের মতো দোলা দিচ্ছে। তার মধ্যে শরীরটাকে দুলিয়ে দুলিয়ে কচি কচি সবুজ ঘাস মুখে নিচ্ছে আর চাবাচ্ছে মায়াহরিণের একটি শাবক। গত ২৫ জুলাই ওর জন্ম। বয়স মাত্র ১৫ দিন হলেও হাবভাব ওর বেশ বড় বড়। বেষ্টনীতে হরিণশাবকের সঙ্গে আছে ওর মা আর বাবা।
আজ বুধবার দুপুরে মায়াহরিণের বেষ্টনীর সামনে দেখা গেল, হরিণশাবকটির মা ইটের ছোট ঘরে চুপটি করে শুয়ে ছিল। আর ওর বাবা একবারে বেষ্টনীর সামনে শুয়ে আছে। বাবার নজর ছেলেসন্তানের দিকে। চঞ্চল ছেলেটি এদিকে-সেদিক ঘোরাঘুরি করছে। না জানি কখন কী ঘটে! তাই মায়া-শাবকের বাবা ঘাড় বাঁকিয়ে তাকিয়ে আছে ফুটফুটে ছেলেটির দিকে। উৎসুক আগন্তুকদের দেখে মায়ের মন ছটফট করে ওঠে। ঘর থেকে বের হয়ে মায়াহরিণী চলে আসে দুষ্টু সন্তানের কাছে। এই হলো মায়াহরিণের মায়াবী সংসার।
বাবা-মা কিংবা সন্তান, যেমনই হোক না কেন, মায়াহরিণকে দেখলে বেশ ভিতু ভিতু মনে হবে। শরীরজুড়ে থাকা খয়েরি লোম উজ্জ্বল হওয়ায় মায়াহরিণ বেশ নজর কাড়ে। বনের ভেতর বাঘ-সিংহের, আর চিড়িয়াখানার মতো আবদ্ধ পরিবেশে দর্শনার্থীদের। কিন্তু ওরা চলাফেরা করে লাফিয়ে লাফিয়ে। বদ্ধ বেষ্টনীতেও মায়াহরিণ লাফ দেওয়ার চেষ্টা করে। মা-বাবার দেখাদেখি শাবকটিও সেই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
তবে খেপে গেলে আক্রমণ চালাতে পিছপা হয় না মায়াহরিণের দলটি। ওদের তত্ত্বাবধায়ক মো. জাহাঙ্গীর বলেন, মুখের ভেতর ঘাস চিবোয় ওরা দাঁত দিয়ে। এর মধ্যে কয়েক দাঁত বেশ ধারালো। তাই খেপে গেলে অনেক সময় কামড় দিতে আসে।
মায়াহরিণের মুখ যেন এক সেকেন্ডের জন্যও বন্ধ হয় না। চোয়াল নড়ছে তো নড়ছেই। সারা দিনই ওরা খায়। শুধু খাওয়াদাওয়া নয়; হাঁটা-বসা, সব সময় মায়াহরিণ তাদের বাঁকানো শরীর দোলাতে থাকে অনবরত। ওদের সামনের পা দুটো পেছনের পা দুটোর চেয়ে কিছুটা খাটো। মায়াহরিণের মুখটা অনেকটা ক্যাঙারুর মতো। তবে মেয়েদের শিং নেই। ছেলে মায়াহরিণের চোখা চোখা শিং রয়েছে। শক্রর কাছ থেকে রক্ষা পাওয়ার এটি অন্যতম অস্ত্র।
মায়াহরিণ ডাক দেয় অনেকটা কুকুরের মতো করে। দিনে কম আলোতে বিশ্রাম নেয়, আর রাতের বেলা বেশ সজাগ থাকে। প্রায় ১৫ বছর এরা বেঁচে থাকে। একটা সময় বাংলাদেশের বনাঞ্চলে মায়াহরিণের বেশ দেখা মিলত। কিন্তু শিকারিদের থাবা আর বন কমে যাওয়ায় এখন অল্পস্বল্প মায়াহরিণ পাওয়া যায় সিলেটের পাহাড়ি এলাকায়। কিছু আবার পাশের ভারতের বন থেকে চলে আসে বাংলাদেশে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনিরুল খান জানালেন, একটা সময় মায়াহরিণের বসতি ঢাকা ও গাজীপুরের শালবনেও ছিল। মায়াহরিণের শাবককে যতটা নিরাপদে রাখা যায়, ততই ভালো। মায়ের দুধই এখন ওদের প্রধান খাবার।
জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর নজরুল ইসলাম জানালেন, এই শাবকসহ এখানে ১২টি মায়াহরিণ আছে।