হাওর বার্তা ডেস্কঃ হাঁটি হাঁটি পা পা করে মায়ের হাত ধরে স্কুলে যেতাম। বগুড়ার এসওএস হারম্যান মেইনার স্কুলে আমাকে শিশু শ্রেণিতে ভর্তি করানো হয়। সেখানে আমি বৃষ্টি পোদ্দার নামে এক বান্ধবীকে পেয়েছিলাম। ক্লাস ওয়ানে উঠে আলোর মেলা স্কুলে আমরা দুজনে একসঙ্গে ভর্তি হই। এরপর তৃতীয় শ্রেণিতে ওঠার পর ইয়াকুবিয়া বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েও দুজন একসঙ্গে ভর্তি হই। সেখান থেকেই আমরা এসএসসি পাস করি।
আমাদের সেশন এক হতে হবে, আবার পরীক্ষার সময় আমাদের সিট একই রুমে হতে হবে- এটাই ছিল লক্ষ্য। এ নিয়ে স্যারদের কাছে বায়না ধরতাম। আমাদের দুজন দুজনকে দেখতে হবে- বিষয়টা স্যারেরাও জানতেন।
একদিন সাধারণ একটি কারণে বৃষ্টির সঙ্গে আমার প্রচণ্ড ঝগড়া হয়। বিষয়টা এমন ছিল- তুই এটা কেন করলি? কিন্তু ওকে মারতে পারছি না। বৃষ্টিও আমাকে মারতে পারছে না। পরে রাগে মেরি বিস্কুট দাঁত দিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে গুঁড়া করে ওর সামনে গিয়ে ফু দিয়ে ওর শরীরে ছিটিয়ে দেই। এতে ও রেগে যায়। আমাকে বলে, ‘তুই আমাকে নোংরা করে দিয়েছিস। দাঁড়া কাল তোকে কি করি! আমি বিস্কুট নিয়ে আসব।’ বলাবাহুল্য এই ভয়ে আমি পরবর্তী তিনদিন স্কুলে যাইনি। এমন অনেক মধুর স্মৃতি আমাদের রয়েছে।
এসএসসি পাসের পর আমি সিনেমায় চলে আসি। আমার ব্যস্ততার কারণে সরকারি মুজিবুর রহমান মহিলা কলেজে ভর্তি হলাম। আর বৃষ্টি অন্য একটি কলেজে ভর্তি হয়। এরপর আমাদের আর দেখা হতো না। দীর্ঘ সাত বছর আমাদের দেখা ও কথা হয়নি।
এই দীর্ঘ বিরতির পর ফেসবুকের কল্যাণে আমি আমার বন্ধুকে খুঁজে পাই। এ জন্য ফেসবুককে ধন্যবাদ। এক বছর আগে আমি ফেসবুক ব্যবহার করছি হঠাৎ একদিন বৃষ্টির ছবি আমার চোখে পড়ে। এরপর বৃষ্টির মোবাইল নম্বর খুঁজি এবং নম্বরটা পেয়ে যাই। আমি ওর মোবাইল নম্বরে ফোন করতেই ওপাশ থেকে কণ্ঠ ভেসে এলো- ‘হ্যালো।’
আমি বললাম, ‘তুমি কি বৃষ্টি?’
‘হ্যাঁ।’
আমি বললাম, ‘আমি অপু।’
বৃষ্টি এ কথা শোনার পর প্রায় মিনিটখানেক চুপ ছিল। আমিও চুপ ছিলাম। এরপর ‘তুই’ বলেই বৃষ্টির সে কি কান্না। আমিও তখন কেঁদে ফেলি। তারপর দুজনে অনেক কথা বলি।
বৃষ্টিকে আমার বিয়ে, সন্তানের জন্ম ও ধর্ম পরিবর্তন করার কথা বলেছি। বৃষ্টি শুনে যেন আকাশ থেকে পড়ল! আমরা দুজন একই ধর্মের ছিলাম। এখন আমি মুসলিম ও হিন্দু। ওর বিয়ে হয়েছে। ওরা উত্তরা থাকে। এরপর আমরা দেখা করলাম। এখন মাঝে মাঝেই আমরা দেখা করি। গত শুক্রবার আমি ওকে বাসায় দাওয়াত করেছিলাম। তখন ও বাসায় এলো, অনেক মজা করেছি।
আমার আরো একজন বাল্যবন্ধু রয়েছে। ওর নাম সিমিম। সিমিম আর আমি দেখতে প্রায় একই রকম। সিমিম এখন দক্ষিণ কোরিয়া থাকে। ওর সঙ্গে আমার দীর্ঘ সময় কথা হয় না। ছেলেবেলার কথাগুলো আমার মনে আছে। আমার বাসায় কমিটমেন্ট করা ছিল আমি এসএসসিতে ভালো রেজাল্ট করলে আমাকে একটা মোবাইল ফোন কিনে দেবে। আমি ভালো রেজাল্ট করি। এরপর বাসা থেকে আমাকে মোবাইল ফোন কিনে দেয়। আর আমার মোবাইলটা ছিল সিটিসেল। তখন তো আমাদের নম্বর কেউ জানত না। তখন আমরা দুই বান্ধবী মিলে রিংটোন বাজিয়ে বাজিয়ে ঘুরতাম। সবাইকে জানাতাম আমাদের মোবাইল আছে। পেপারে নম্বর, ক্যালেন্ডারে নম্বর দেখে ফোন করতাম। তারা আবার ফোন ব্যাক করত। তখন রিংটোন বাজলেই ভালো লাগত। ফোন রিসিভ করতাম না। এই রকম চলত।
তখন আমি ‘কোটি টাকার কাবিন’ সিনেমার কাজ করেছি। আমার আর শাকিবের প্রেমের বিষয়টা সিমিমকে শেয়ার করলাম। তখন সিমিম বলেছিল, শাকিব খান কেমন রে? দে একটু কথা বলি। কলেজের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে, বাসের ছাদে উঠে আমরা দুজন শাকিবের জন্য অপেক্ষা করতাম- শাকিব কখন ফোন করবে।
এতটা এক্সসাইটেড ছিলাম যে, ফোন রিসিভ করে ‘হ্যালো’ বলা এটা আমার আসত না। ফোন রিসিভ করে সিমিমকে দিয়ে বলতাম, তুই বল তুই বল.. এভাবে সিমিম হ্যালো বলে দিত তারপর আমি কথা বলতাম। জীবনে বন্ধু কী জিনিস তা বলে বোঝানো যাবে না।