রফতানি নীতি ২০১৫-১৮ অনুমোদন

বৈশ্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিত ও প্রয়োজনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে দেশের বাণিজ্য ব্যবস্থাকে যুগোপযোগী ও উদারীকরণের পাশাপাশি রফতানি কার্যক্রম আরো সহজীকরণের লক্ষ্যকে সামনে রেখে তিন বছর মেয়াদী নতুন ‘রফতানি নীতি ২০১৫-২০১৮’ অনুমোদন দিয়েছে সরকার।

বুধবার সচিবালয়ে ‘অর্থনৈতিক বিষয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি’র বৈঠকে এটি অনুমোদন দেওয়া হয়। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন।

উল্লেখ্য, বিদ্যমান ‘রফতানি নীতি ২০১২-১৫’-এর মেয়াদ গত ৩০ জুন শেষ হয়েছে। কিন্তু বিধান অনুযায়ী নতুন রফতানি নীতি প্রণীত না হওয়া পর্যন্ত পুরনো রফতানি নীতিই বহাল থাকে।

বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোস্তাফিজুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, ‘নতুন এই রফতানি নীতি চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকেই কার্যকর বলে বিবেচিত হবে।’

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘রফতানি নীতি প্রণয়ণকালে স্টেকহোল্ডারসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মতামত নেওয়া হয়েছে। সুতরাং বৈঠকে প্রস্তাবাকারে যেটি উপস্থাপন করা হয়েছে, অনুমোদকালে সেটির তেমন ব্যত্যয় ঘটানো হয়নি।’

নতুন রফতানি নীতিতে ‘বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা’ ও চার দেশীয় (বাংলাদেশ-ভারত-নেপাল-ভূটান) উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়ানো, আগামী ২০২১ সাল নাগাদ ৬ হাজার কোটি ডলার রফতানি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন, বিদেশস্থ বাংলাদেশ মিশনগুলোকে অধিকতর বাণিজ্য বান্ধব করে তোলা, বাংলাদেশ পণ্যের ব্রান্ডিং করা, আমদানি বিকল্প শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে রফতানি বাণিজ্যের সম্প্রসারণ এবং রফতানি নির্ভর বৈদেশিক বিনিয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে।

এছাড়া রপ্তানিমুখী শিল্পের উৎপাদন ক্ষমতা বৃদ্ধি, রফতানি পণ্যের গুণগতমান ও প্রতিযোগী দাম নিশ্চিত করা, পণ্য বহুমুখীকরণ ও বাজার সম্প্রসারণ, রফতানিতে তথ্যপ্রযুক্তিসহ ও সেবা খাতের অংশ বৃদ্ধি, পণ্য ও সেবা খাত ভিত্তিক ‘বিজনেস প্রমোশন কাউন্সিল’ গঠন এবং ই-কমার্স ও ই-গভর্নেন্সের মাধ্যমে রফতানি বাণিজ্যে গতিশীলতা আনয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।

অন্যান্যের মধ্যে রফতানিমুখী শিল্পে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ, গ্যাসসহ ইউটিলিটি সার্ভিস বা সেবাসমূহ সরবরাহ, উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, পণ্যের গুণগত মানোন্নয়ন ও কমপ্ল্যায়েন্স, বন্দরমুখী যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ সামগ্রিকভাবে রফতানি অবকাঠামো উন্নয়ন, পণ্য খালাস পদ্ধতি সহজীকরণ এবং ওয়ানস্টপ সার্ভিস প্রবর্তন করে ব্যবসা ব্যয় কমিয়ে আনার মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের প্রতিযোগিতামূলক শক্তি বাড়াতে সহায়ক পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলা হয়েছে নতুন রফতানিতে।

নতুন রফতানি নীতিতে ১২টি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত ও ১৪টি বিশেষ উন্নয়মূলক খাত অন্তর্ভূক্তির পাশাপাশি রফতানির বিপরীতে প্রদেয় সাধারণ সুযোগ-সুবিধা, রফতানি পণ্যভিত্তিক সু্বিধা, রফতানি নিষিদ্ধ পণ্য ও শর্তসাপেক্ষে রফতানির পণ্য তালিকা উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বোচ্ চঅগ্রাধিকার খাত : নতুন রফতানি নীতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার খাত হিসেবে ১২টি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- অধিক মূল্য সংযোজিত তৈরি পোশাক ও গার্মেন্টস এক্সসরিজ, সফটওয়্যার ও আইটি এনাবল সার্ভিসেস ও আইসিটি পণ্য, ফার্মাসিউটিক্যাল পণ্য, জাহাজ নির্মাণ, জুতা ও চামড়াজাত পণ্য, পাটজাত পণ্য, প্ল্যাস্টিক পণ্য, এগ্রো প্রোডাক্ট ও এগ্রো প্রসেসড পণ্য, ফার্নিচার, হোম- টেক্সটাইল ও টেরিটাওয়েল, হোম ফার্নিশিং ও লাগেজ।

বিশেষ উন্নয়মূলক খাত : নতুন রফতানি নীতিতে বিশেষ উন্নয়মূলক খাত হিসেবে ১৪টি খাতকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে� বহুমুখী পাটজাত পণ্য, ইলেকট্রিক ও ইলেকট্রনক্স পণ্য, সিরামিক পণ্য, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য (অটো পার্টস ও বাই-সাইকেলসহ), মূল্য সংযোজিত হিমায়িত মৎস্য, পাঁপড়, প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিং, অমসৃণ হীরা ও জুয়েলারি, পেপার ও পেপার প্রোডাক্টস, রাবার, রেশম সামগ্রী, হস্ত ও কারুপণ্য, লুঙ্গিসহ তাঁত শিল্পজাত পণ্য ও নারিকেল ছোবড়া।

রফতানি নিষিদ্ধ পণ্য : নতুন রফতানি নীতিতে ভোজ্য তেল, গম, পেঁয়াজ, রসুন, আদা, প্রক্রিয়াজাত ব্যতীত সকল প্রকার ডাল এবং সরকারি পর্যায় ও সুগন্ধি চাল ছাড়া সাধারণ চালসহ ১৭টি ক্যাটাগরির পণ্য রফতানি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। অন্যান্যের মধ্যে রয়েছে� পাটবীজ ও শনবীজ, আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ ও সংশ্লিষ্ট উপকরণ, তেজস্ক্রীয় পদার্থ, পুরাতাত্ত্বিক দুর্লভ বস্তু, মনুষ্য কঙ্কাল ও রক্তের প্ল্যাজমা কিংবা এগুলোর দ্বারা তৈরি সামগ্রী, চিল্ড, হিমায়িত ও প্রক্রিয়াজাত ব্যতীত অন্যান্য চিংড়ি, ছোট আকারের সামুদ্রিক চিংড়ি, বেত, কাঠ ও কাঠের গুড়ি, জীবিত বা মৃত সকল প্রজাতির ব্যাঙ ও ব্যাঙের পা, কাঁচা ও ওয়েট ব্লু চামড়া ইত্যাদি।

এছাড়া বহিগর্মন শুল্ক বন্দর ব্যতীত অন্য কোন পথে, সাইটিস সার্টিফিকেট ও লাইন্সেস ব্যতীত কোন বন্য প্রাণী বা তার অংশ, ট্রফি; প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্ভুত পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য (যেমন- ন্যাপথা, ফরনেস অয়েল, লুব্রিক্যান্ট অয়েল, বিটুমিন, কনডেনসেট, এমটিটি, এমএস) ছাড়া সকল পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য রফতানি করা যাবে না। তবে পিএসসি’র আওতায় বিদেশী বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান চুক্তি মোতাবেক তাদের অংশের পেট্রোলিয়াম ও এলএনজি রফতানি করতে পারবে।

বাংলাদেশী নাগরিকদের কেউ বিদেশে গমনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত মালামালের বাইরে রফতানি নিষিদ্ধ ও শর্ত সাপেক্ষে রফতানিযোগ্য পণ্য ছাড়া বাংলাদেশের তৈরি ২শ’ ডলারের সমমূল্যের পণ্য সঙ্গে নিতে পারবেন। তবে এজন্য রফতানি সংক্রান্ত কোন সুযোগ-সুবিধা তিনি প্রাপ্য হবেন না।

শর্ত সাপেক্ষের ফতানিযোগ্য পণ্য : কাফকো ছাড়া অন্য কারখানায় প্রস্তুতকৃত ইউরিয়া সার; বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান, গান, নাটক, সিনেমা, অডিও-ভিডিও, প্রাকৃতিক গ্যাস উদ্ভুত পেট্রোলিয়াম ও পেট্রোলিয়ামজাত পণ্য, রাসায়নিক অস্ত্র, চিনি, ইলিশ মাছ, সুগন্ধি চাল, কুমিরের চামড়া ও মাংস ইত্যাদি পণ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি সাপেক্ষে রফতানি করা যাবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর