মানুষ শুধু উন্নয়ন চায় না, শান্তি চায়, সম্মান চায়

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে ১৭ হাজার সৈন্যের সুবিশাল কাদেরিয়া বাহিনী গঠন ও মহান মুক্তিযুদ্ধে সাহসী ভূমিকা পালন করে পেয়েছেন ‘বঙ্গবীর’ খেতাব। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যার প্রতিবাদে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে ১৬ বছর কাটিয়েছেন ভারতে। ১৯৯০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ফিরেন বাংলাদেশে। দেশে ফিরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সক্রিয় থাকলেও ১৯৯৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠা করেছেন কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ। ২০১৫ সালের ২৮ জানুয়ারি থেকে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য ঘুরছেন দেশের এক জেলা থেকে আরেক জেলায়। ৫ আগস্ট ঢাকার মতিঝিলে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের কার্যালয়ে দ্য রিপোর্টের সঙ্গে দেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন কাদের সিদ্দিকী। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন প্রতিবেদক সাগর আনোয়ার

২০০ দিনের অধিক সময় ধরে ঘরের বাইরে আছেন, দুই নেত্রীর একসঙ্গে বসার সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না, তারপরও আপনার অবস্থান কর্মসূচি কি চলবে?

হ্যাঁ, এটা চলবে। দুই নেত্রীর একসঙ্গে বসা এটা একটা প্রতীকী ব্যাপার। আমি চাই সারাদেশের মানুষ এক মোহনায় মিলিত হোক, এক চিন্তায় তারা আসুক। দুই নেত্রী দুই দিকে থাকলে কোনো অসুবিধা নেই। দেশের মানুষ যদি একদিকে থাকে, তারা যদি ভাবে দেশের কল্যাণ করতে হবে তাহলেই হল। কেউ যদি গর্ববোধ করেন বিরোধী দলের নেতা হিসেবে তা করতে পারেন। সরকারপ্রধান হিসেবেও করতে পারেন। কিন্তু যাদের হাতে কর্তৃত্ব-নেতৃত্ব, তাদের ভাবতে হবে। আজকে মায়ের গর্ভে শিশুসন্তান নিরাপদ নয়। এটা পৃথিবীতে আমাদের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেনি, অনুজ্জ্বল করেছে। সারা পৃথিবীতে আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ স্থান মায়ের গর্ভ। সেখানেও বাংলাদেশে সন্তান মাতৃগর্ভে নিরাপদ না। এটা কেন হচ্ছে, এর অর্থ হল— আল্লাহ আমাদের ওপর খুশি নন। আল্লাহর গজব চলছে। এটা বোঝানোর জন্যই দেশ যখন জ্বলছিল, পুড়ছিল, দেশের একজন সাধারণ মানুষ, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে— কোনো পিতামাতার সামনে যখন তার সন্তান ছটফট করে, নির্যাতিত হয়— তখন পিতা-মাতার বুক ফেটে যায়। আমরা দেশটাকে জন্ম দিয়েছিলাম। আমার দেশের এই জ্বলন-পুড়ন সহ্য হয়নি, সেই জন্য রাস্তায় বসেছিলাম। এটা একটা প্রতিবাদ। মানুষকে জাগ্রত করার জন্য এটা একটা প্রচেষ্টা।

আপনি কি মনে করেন আপনার উদ্যোগ সফল হয়েছে?

আমি মনে করি, আমাদের উদ্যোগ সফল হয়েছে। শতভাগ সফল হয়েছি। বেগম খালেদা জিয়া তার অবরোধ প্রত্যাহারেরও সময়ও পাননি। শেখ হাসিনা বলেছিলেন, আলোচনা করবেন না। তাকেও আলোচনা করতে হবে। এখন কখন করবেন এটা হল ব্যাপার। কিন্তু জানি, শেখ হাসিনা আলোচনা করবেন। এরাই যে নেত্রী-নেতা, এটাই শেষ কথা না। নেতা-নেত্রী হচ্ছে দেশের জনগণ। তারা যদি এক চিন্তা করেন আর খালেদা-শেখ হাসিনা কী চিন্তা করছেন সেটা বড় কথা নয়। রাষ্ট্র চলবে জনগণের মতে।

সারাদেশে মধ্যবর্তী নির্বাচনের গুঞ্জন চলছে, আপনি কী মনে করেন?

বর্তমানে যারা সরকারে আছেন, তারা আগামীকাল যদি নির্বাচন দেন সেটাই তাদের জন্য মঙ্গল হবে। তারা যত দেরি করবে ততই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হবেন। সম্মানজনক বিরোধী দল থাকা একেবারে না থাকার চেয়েই ভাল। রাজনীতিতে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার চেয়ে সম্মানজনকভাবে ক্ষমতা থেকে বেরিয়ে আসা রাজনৈতিক সফলতা। এক্ষেত্রে বর্তমান সরকার সফলতা দেখাবেন না কি ব্যর্থতা দেখাবেন তাদের বিষয়। ৫ জানুয়ারি কোনো নির্বাচন হয়নি। এটা সারা পৃথিবীতে কলঙ্কজনক ঘটনা হয়ে আছে।

এখন আর নির্দলীয় বা মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবি তেমন শোনা যাচ্ছে না, এই দাবি কি তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে?

কথাটা তত্ত্বাবধায়ক না। কথাটা হচ্ছে নিরপেক্ষ। যার বিচার-বিবেচনা আছে, যারা নিজেরা বিবেকবর্জিত কাজ করবেন না তাদের দ্বারা নির্বাচন হওয়া দরকার। এই ধরনের সরকার রাজনীতিবিদদের প্রতি অনাস্থা। রাজনীতিকরা দেশ চালাবেন। নিরপেক্ষ সরকার রাজনৈতিক দলের প্রতি অনাস্থা। যে মানুষ অন্যের আস্থা অর্জন করতে পারে না সে তো মানুষ হতে পারে না। সরকার আস্থাহীনতায় ভুগছে। সরকারের প্রতি জনগণের একদমই আস্থা নেই। এমন দেউলিয়া সরকার আর আসেনি। আজকে সরকার আস্থা হারিয়েছে। সরকারের প্রতিও জনগণের আস্থা নেই।’

আগামী নির্বাচনে বিরোধী দলগুলোর নির্দলীয় সরকারের দাবি যদি আওয়ামী লীগ না মানে, তাহলে সেই নির্বাচনে কি আপনারা অংশগ্রহণ করবেন?

এখন এটা ঘোড়ার আগে গাড়ি জুড়ে দেওয়ার মতো। এখন এটা বলার সময় আসেনি। নির্বাচন হতে হবে সম্মানজনক ও প্রভাবমুক্ত নির্বাচন। মানুষ যাতে অবাধে ভোট দিতে পারে।

নির্বাচনকে সামনে রেখে নানান জোট ও মোর্চা তৈরি হয়। আপনিও অনেকবার বিভিন্ন জোট ও ফ্রন্ট তৈরির চেষ্টা করেছেন। দুই বড় দলের বাইরে বাংলাদেশে তৃতীয় রাজনৈতিক জোটের সফলতার সম্ভাবনা কতটুকু?

আসলে সফলতা-বিফলতা এটা সময়ের ব্যাপার। এ চেষ্টা সব সময় ছিল। এখনও আছে। আজকে হয়নি বলে আগামীতে হবে না এই ধারণা ঠিক না। এটা সময়ই বলে দিবে।

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফকে মন্ত্রিসভা থেকে অব্যাহতি দিয়ে সাত দিনের মধ্যে আবার অন্য মন্ত্রণালয় প্রদানকে কিভাবে দেখছেন?

বর্তমান ভোটবিহীন নির্বাচনহীন সরকারের দুইজন মন্ত্রী অব্যাহতি পেয়েছেন। একজন লতিফ সিদ্দিকী আর একজন সৈয়দ আশরাফ। একজন অব্যাহতি পেয়ে বাইরে আছেন আর একজন মন্ত্রণালয় পেয়েছেন। এটা চড় মেরে চুমো দেওয়ার মতো। এ নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই না। আমি সৈয়দ আশরাফ হলে প্রধানমন্ত্রীর পদও গ্রহণ করতাম না। এটা যার যার ভাবনার ওপর নির্ভর করে।

দীর্ঘদিন আপনি আওয়ামী লীগে ছিলেন, অনেকে বলছেন, আওয়ামী লীগে মন্ত্রিসভা নিয়ে অসন্তোষ চলছে— আপনার অভিজ্ঞতায় কী মনে করেন?

আওয়ামী লীগে ছিলাম বলেই বলব না, অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, মন্ত্রিসভাটা গুণগতভাবে খুব উন্নতমানের না। …

অনেকেই বলছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৈয়দ আশরাফ ইস্যুতে ছোটবোন শেখ রেহেনার মনোমালিন্য সৃষ্টি হয়েছে— আপনি কী মনে করেন?

আমি তো আর এটা তাদের ঘরে গিয়ে দেখি না। মনোমালিন্য হতেই পারে। ভাইবোনেও মনোমালিন্য হয়। এখানে একটা কথা বলব, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে শেখ রেহেনার মনোমালিন্য হতে পারে। কিন্তু বড়বোন শেখ হাসিনার সাথে অর্থাৎ ‘হাসু আপা’র সঙ্গে শেখ রেহেনার মনোমালিন্য হবে না এবং ইদানীংকালে আমি শেখ রেহেনাকে যেটা দেখেছি— মানুষের বয়স হয়, সময় হয়— মানুষ পূর্ণতা লাভ করে। শেখ রেহেনা ধীরে ধীরে যথার্থ পূর্ণতা অর্জন করেছে। এবং সে গত দু’আড়াই বছর আমার সাথে যে কথা বলেছে, সেখানে কোনো কোনো জায়গায়— আমার মনে হয়েছে, সে আমার মায়ের মতো অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। আমার মা ছিলেন একজন সাত্ত্বিক মহিলা, আমার মা নিয়ে আমি পরশু দিন লিখেছিলাম, আমার মা একসময় বলতেন, যার হাতে ক্ষমতা আসে-আল্লাহ দেয়, সে নিজের ক্ষমতা যদি জাহির করে তবে আল্লাহ নারাজ হন। এটা আমি কোরআনে দেখেছি, গীতাতেও দেখেছি কিন্তু আমি শুনেছি প্রথম আমার মায়ের কাছে। আমার মা কোনো লেখাপড়া জানতেন না। অতি সাধারণ লেখাপড়ার মানুষ। কিন্ত আমরা বড় হওয়ার পরে রবীন্দ্রনাথের কোনো জিনিস যখন জিজ্ঞেস করতাম, আমরা জানতাম না মা বলে দিতে পারতেন। আমরা যখন শরৎচন্দ্রের কোনো লেখাকে নিয়ে পেরেশানীতে থাকতাম বের করতে পারতাম না, মাকে বলার সাথে সাথে বলে দিতেন। বঙ্কিমের লেখা উনি বলে দিতেন। কেন পারতেন? উনি স্কুলে পড়েননি কিন্তু বঙ্কিম পড়েছিলেন, শরৎচন্দ্র পড়েছেন, তিনি রবীন্দ্রনাথ পড়েছেন, কাজী নজরুল পড়েছিলেন।… তাই, শেখ রেহেনা নিয়ে যেটা বলব, শেখ রেহেনা বর্তমানে অত্যন্ত ম্যাচিউর একজন মহিলা। মায়ের প্রতিচ্ছবি, বোনের প্রতিচ্ছবি, নারীর প্রতিচ্ছবি। রেহেনা আমাকে ক’দিন আগে ফোন করেছিলেন। গভীর রাতে। সাধারণত এ রকম রাতে আমাকে কেউ ফোন করেও না, আমি ধরিও না। তার প্রত্যেকটি কথা আমাকে নাড়া দিয়েছে। প্রথমে সে ফোনে বলেছে, ‘ভাই আপনার ঘুম ভাঙালাম না তো? আপনার ভাগ্নি এখানে এমপি হয়েছে। আমি ভাবলাম, আপনাকে খবরটা দিলে আপনি খুশি হবেন এবং আমি দিলে খুশি হবেন।’ সাথে সাথে সে বলেছে, ‘দুইটা মা একত্রে হলে মামা হয়। যাকে আপনারা কোলে নিয়েছেন, সে আজকে আপনাদের সম্মানিত করেছে। আপনার দোয়া ওর বড় দরকার। আপনি তারে দোয়া করবেন।’ এই কথা— এটা হাজার কোটি টাকায় পাওয়া যায় না। এই যে আস্থা একজনের প্রতি একটা দরদ, এটা লক্ষ কোটি টাকায়ও হবে না। বাংলাদেশের তিন বছরের বাজেটেও হবে না। সে জন্য আমি বলব, মনোমালিন্য যাই হোক— রেহেনাই বলেছে আমাকে, ‘পানি কাটলে ভাগ হয় না’। ওই আমাকে বলছে, ‘আপনি আমাদের ভুলতে পারবেন? আমরা আপনাকে ভুলতে পারব? আপনার জায়গা আমাদের বুকের মধ্যে। আপনি তো জানেন-ই, আপা একজন একটু জেদি মানুষ।’ এবং সেটা আমি নিজেও জানি। তাই এটা অবান্তর আলোচনা। সৈয়দ আশরাফের জন্য শেখ রেহেনার, তার বোন— মায়ের মতো বোন হাসিনার সঙ্গে বিরোধ হবে— এটা দুনিয়ার সবাই বিশ্বাস করতে পারলেও, পাগলেও করতে পারলেও, আমি করব না।

আপনি যেটা বললেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে…

হতেই পারে প্রধানমন্ত্রীর সাথে তো আমারও মিল নেই। কিন্তু শেখ হাসিনার সাথে আমার কোনো অমিল নেই। শেখ হাসিনাকে কালকে কেউ আঘাত করলে— বাংলাদেশের কোনো মানুষ প্রতিবাদ না করলেও, আমি আবার প্রতিবাদ করব। জানি, আমার বয়স শেষ হয়ে গেছে।…

অনেকে বলছেন, ধীরে ধীরে বঙ্গবন্ধুর কাছ থেকে উনার ঘনিষ্ঠজনদের যেভাবে সরিয়ে ফেলা হয়েছিল, এবারও শেখ হাসিনার কাছ থেকে দলের বিশ্বস্তদের সরিয়ে ফেলা হচ্ছে— আপনি কী মনে করেন?

এটা আর আমার বলার দরকার নেই। এটা বাস্তব দেখা যাচ্ছে। যারা বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ‘ডুগডুগি’ বাজিয়েছে আর ‘জুতা’ বানিয়েছে তারা এখন সবচেয়ে বিশ্বস্ত। যারা স্বাধীনতার পর হাজার হাজার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীকে হত্যা করেছেন, বঙ্গবন্ধুর নামে যারা গালি ছাড়া কিছুই করে নাই, তারা যে কোনোভাবেই হোক তারাই এখন প্রধানমন্ত্রীর কাছের। প্রধানমন্ত্রী পদ এমন একটা ডেঞ্জেরাস জিনিস, যে তার বাইরে যে বলয় সৃষ্টি হয় তা ভাঙ্গা যায় না।

অতি সম্প্রতি মধ্যবর্তী নির্বাচনের পাশাপাশি জাতীয় সরকার নিয়েও নানান কথা হচ্ছে, আপনি কী মনে করেন?

আমি কোনো জাতীয় সরকারে বিশ্বাস করি না। আমি জনগণের আস্থাশীল সরকারে বিশ্বাস করি। দুর্ভাগ্যের সঙ্গে বলতে হবে, বর্তমান রাজনৈতিক সরকার জনগণের আস্থাশীল সরকার নয়। এই রাজনৈতিক সরকারকে জনগণের পরিপূর্ণ আস্থা নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দরকার। জাতীয় সরকার তার প্রতি জনগণের আস্থা আছে কি নেই— সেটা বিবেচনায় আনা যায় না। যে কোনো কাজ করে না, তার তো কোনো ভুল হয় না। যার কোনো কাজ নেই সে তো ভাল মানুষই হবে। যারা মুক্তিযুদ্ধ করেছে তাদের কষ্ট হয়েছে। যারা যুদ্ধ করেনি, যুদ্ধের নামে কবিতা লিখেছে, তারা স্বাধীনতা পুরস্কার পেয়েছে। এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। তাই জাতীয় সরকারের চেয়ে জনসমর্থিত সরকার প্রয়োজন। কিন্তু বর্তমান সরকার— রাজনৈতিক সরকারও না, জনসমর্থিত সরকারও না।

আপনার কথা অনুযায়ী জনসমর্থনহীন সরকার কি তাদের পূর্ণমেয়াদ শেষ করতে পারবে?

আমরা কথা অনুযায়ী না। এটা রাস্তাঘাটের যে কোনো লোক। একজন চামারকে কেউ জিজ্ঞেস করলে সেও তাই বলবে। ৫ বছর পূর্ণ করতে পারবে কি পারবে না সেটা বড় কথা না। ২৫ বছর থাকলেও বড় কথা না।… সাদ্দাম হোসেন ইরাকে ছিলেন, লিবিয়াতে গাদ্দাফি ৪২ বছর ক্ষমতায় ছিলেন। যে লিবিয়ার মানুষ বর্বর ছিল, যাযাবর ছিল। তাদের দুনিয়াতে এমন কোনো সুখ নেই যে সুখের ব্যবস্থা তাদের করা হয়নি। এবং গাদ্দাফি লিবিয়ার যে উন্নয়ন করেছেন, আগামী দুই শ’ বছরে সে উন্নয়ন হবে না।… কেউ যদি মনে করেন, মানুষকে পক্ষে রাখার জন্যে উন্নয়ন চাবিকাঠি। তাহলে বলব, গরু-ছাগল পালা দরকার। মানুষ শুধু উন্নয়ন চায় না, শান্তি চায়, সম্মান চায়, বুকের ভিতরের অব্যক্ত যাতনা অথবা আনন্দ সে ব্যক্ত করতে চায়। মানুষ আর পশুতে পার্থক্য আছে। মানুষকে মানুষের মতো চলতে দিতে হবে। মানুষকে কোনো গরু-ছাগল ভাবলে চলবে না। …

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী যদি আপনাকে ছোটভাই হিসেবে আওয়ামী লীগে আবারও ডাকেন, আপনি কি যাবেন?

বিষয়টা ছোটভাই-বড়বোন কিংবা ছোটবোন-বড়ভাই সে রকম না। কিছু মানুষ এক ফোটা রক্ত হজম করতে পারে না। আবার কোনো মানুষ মানুষকে নিজের স্বার্থের জন্য খুন করে। আমি কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করেছি। আমি আমাদের দলকে সন্তানের মতোই ভালবাসি। আমি সেই দলকে গলাটিপে হত্যা করে সিংহাসন চাই না। আমি যতদিন থাকব আমার দল বিলুপ্ত হবে না। আমি জনগণের রাজনীতি করি। প্রতিষ্ঠিত দল ছেড়ে ছোট্ট দল গঠন করেছি। একজন এম এ পাস করা মানুষ যদি আবার ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয় আমার সে অবস্থা হয়েছে। আমি আমার জীবনের ৪০-৪৫ বছর আওয়ামী লীগে কাটিয়েছি। এখন যারা আওয়ামী লীগ করেন, ‘৭৫-এ আমি প্রতিবাদ না করলে তারা কবরে থাকতেন। এটাও অনেকে মানবেন না। আল্লাহ কোরআনে বলেছেন, ‘মানুষ বড় অকৃতজ্ঞ’। আমার দল বিলুপ্তির সম্ভাবনা নেই। তবে একসাথে কাজ করার সুযোগ আছে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর