ঢাকা ১১:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ১১ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

সেদিন অঝোরে শিশুর মতো কেঁদেছিলেন বঙ্গবন্ধু

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৯:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০১৫
  • ৩৭০ বার

বঙ্গবন্ধু সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন। খুব কাছে থেকে সে কান্না যারা শুনেছেন, জাতির পিতাকে সন্তানের জন্য কান্নায় ব্যাকুল হতে দেখেছেন- তাদের চোখের অশ্রুও সেদিন বাঁধ মানেনি। শুধু বঙ্গমাতার দু’চোখ ছিলো অশ্রুহীন। অসীম বেদনা হৃদয়ের গভীরে চেপে রাখাই যে তাঁর সহজাত। সেদিন তাঁর মুখও ছিলো বড় কিছু হারানোর বেদনায় বিমূঢ়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরর ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বাসস প্রতিনিধিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে সেই দিনের কথা মনে করে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনও অশ্রুসজল হয়ে উঠলেন। ফিরে গেলেন পঁচাত্তরে। খবর বাস’র।

তিনি বলেন, ‘সেদিন ছিলো ৩০ জুলাই ১৯৭৫। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দুই শিশু সন্তান পুতুল ও সজিব এবং ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে বিদায় দিলেন বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা। সেদিন আমিও তাদের সাথে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন! আর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অব্যাক্ত বেদনায় বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন!”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া সেসময় পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। সেদিন শেখ হাসিনা দুই শিশু সন্তান এবং ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বসবাসের জন্য জার্মানি চলে যান।

কন্যাদের বিদায় দিয়ে যে বেদনা ফুটে উঠেছিলো বঙ্গবন্ধুর চোখে-মুখে সেসময় তাঁকে সান্ত¦না দেয়ার ভাষা ছিলো না ফরাসউদ্দিনের। তিনি বলেছিলেন, এতো খুশির খবর। মেয়ে স্বামীর কাছে যাচ্ছে। সন্তানেরা যাচ্ছে তাদের বাবার কাছে। তবু কেন আপনারা এতটা ভেঙ্গে পড়ছেন?

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাবারে, তুমি বুঝবানা, আমার ভেতরটা বেদনায় নীল হয়ে গেছে!’

পিতৃসম বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের সেই আকুল কান্নাকে ফরাসউদ্দিন সিলেটের প্রচলিত প্রবাদের সাথে তুলনা করেন, ‘বিদেশে বিপাকে যদি ব্যাটা মারা যায়, পাড়া পড়শি জানার আগে- আগে জানে মায়।’ তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছে উল্টো। তাই বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা দু’জনই বিষন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইয়ে লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সে সময়কার উপচার্য ড. আবদুল মতিন চৌধুরীর অনুরোধ এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অসুস্থতার কারণে আরো কয়েকটি দিন ঢাকায় থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু জার্মানি থেকে স্বামী ড. ওয়াজেদের ফোনে যাওয়ার সিদ্ধান্তই ঠিক থাকে।

বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন, বঙ্গমাতার কাছে পুত্রসম ফরাসউদ্দিন দুই বোনের এই চলে যাওয়াকে ‘দৈব সৌভাগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘সেদিন বাংলাদেশ থেকে চলে না গেলে তারাও হয়তো এই নির্মমতার শিকার হতেন! আমরাও আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম না! ’

জাতির জনকের কাছ থেকে যে পিতৃস্নেহ তিনি পেয়েছেন সেই স্নেহের স্পর্শ আজো তাকে আবেগ আপ্লুত করে। অশ্রুসিক্ত করে। বঙ্গমাতার স্নেহের কথা উল্লেখ করে ফরাসউদ্দিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, তাঁর স্নেহ কোনদিন ভোলার নয়। তাঁদের হারানোর শোকাবহ সেই দিনগুলির স্মৃতি এতোটা বছর বয়ে বেড়াচ্ছি! এ যে কি কষ্টের বলে বোঝাতে পারবো না!”

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

সেদিন অঝোরে শিশুর মতো কেঁদেছিলেন বঙ্গবন্ধু

আপডেট টাইম : ০৯:৩৬:৪৬ অপরাহ্ন, বুধবার, ১২ অগাস্ট ২০১৫

বঙ্গবন্ধু সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন। খুব কাছে থেকে সে কান্না যারা শুনেছেন, জাতির পিতাকে সন্তানের জন্য কান্নায় ব্যাকুল হতে দেখেছেন- তাদের চোখের অশ্রুও সেদিন বাঁধ মানেনি। শুধু বঙ্গমাতার দু’চোখ ছিলো অশ্রুহীন। অসীম বেদনা হৃদয়ের গভীরে চেপে রাখাই যে তাঁর সহজাত। সেদিন তাঁর মুখও ছিলো বড় কিছু হারানোর বেদনায় বিমূঢ়।

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানেরর ৪০তম শাহাদাৎ বার্ষিকী উপলক্ষে বাসস প্রতিনিধিকে দেয়া বিশেষ সাক্ষাতকারে সেই দিনের কথা মনে করে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিব ড. মোহাম্মদ ফরাসউদ্দিনও অশ্রুসজল হয়ে উঠলেন। ফিরে গেলেন পঁচাত্তরে। খবর বাস’র।

তিনি বলেন, ‘সেদিন ছিলো ৩০ জুলাই ১৯৭৫। বঙ্গবন্ধুর বড় মেয়ে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার দুই শিশু সন্তান পুতুল ও সজিব এবং ছোট মেয়ে শেখ রেহানাকে কুর্মিটোলা বিমানবন্দরে বিদায় দিলেন বঙ্গবন্ধু এবং বঙ্গমাতা। সেদিন আমিও তাদের সাথে ছিলাম। বঙ্গবন্ধু সেদিন শিশুর মতো কেঁদেছিলেন! আর বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব অব্যাক্ত বেদনায় বিমূঢ় হয়ে গিয়েছিলেন!”

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণু বিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়া সেসময় পশ্চিম জার্মানির কার্লসরুয়ে শহরের আণবিক গবেষণা কেন্দ্রে আণবিক রিঅ্যাক্টর বিজ্ঞানে গবেষণায় ব্যস্ত ছিলেন। সেদিন শেখ হাসিনা দুই শিশু সন্তান এবং ছোট বোন রেহানাকে নিয়ে স্বামীর সঙ্গে বসবাসের জন্য জার্মানি চলে যান।

কন্যাদের বিদায় দিয়ে যে বেদনা ফুটে উঠেছিলো বঙ্গবন্ধুর চোখে-মুখে সেসময় তাঁকে সান্ত¦না দেয়ার ভাষা ছিলো না ফরাসউদ্দিনের। তিনি বলেছিলেন, এতো খুশির খবর। মেয়ে স্বামীর কাছে যাচ্ছে। সন্তানেরা যাচ্ছে তাদের বাবার কাছে। তবু কেন আপনারা এতটা ভেঙ্গে পড়ছেন?

বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বাবারে, তুমি বুঝবানা, আমার ভেতরটা বেদনায় নীল হয়ে গেছে!’

পিতৃসম বঙ্গবন্ধুর হৃদয়ের সেই আকুল কান্নাকে ফরাসউদ্দিন সিলেটের প্রচলিত প্রবাদের সাথে তুলনা করেন, ‘বিদেশে বিপাকে যদি ব্যাটা মারা যায়, পাড়া পড়শি জানার আগে- আগে জানে মায়।’ তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যাপারটা হয়েছে উল্টো। তাই বঙ্গবন্ধু ও বঙ্গমাতা দু’জনই বিষন্ন হয়ে পড়েছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ‘শেখ মুজিব আমার পিতা’ বইয়ে লিখেছেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট অনুষ্ঠিতব্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য সে সময়কার উপচার্য ড. আবদুল মতিন চৌধুরীর অনুরোধ এবং ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের অসুস্থতার কারণে আরো কয়েকটি দিন ঢাকায় থেকে যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো। কিন্তু জার্মানি থেকে স্বামী ড. ওয়াজেদের ফোনে যাওয়ার সিদ্ধান্তই ঠিক থাকে।

বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছে থেকে দেখেছেন, বঙ্গমাতার কাছে পুত্রসম ফরাসউদ্দিন দুই বোনের এই চলে যাওয়াকে ‘দৈব সৌভাগ্য’ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘সেদিন বাংলাদেশ থেকে চলে না গেলে তারাও হয়তো এই নির্মমতার শিকার হতেন! আমরাও আজকের এই বাংলাদেশ পেতাম না! ’

জাতির জনকের কাছ থেকে যে পিতৃস্নেহ তিনি পেয়েছেন সেই স্নেহের স্পর্শ আজো তাকে আবেগ আপ্লুত করে। অশ্রুসিক্ত করে। বঙ্গমাতার স্নেহের কথা উল্লেখ করে ফরাসউদ্দিন কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। তিনি বলেন, তাঁর স্নেহ কোনদিন ভোলার নয়। তাঁদের হারানোর শোকাবহ সেই দিনগুলির স্মৃতি এতোটা বছর বয়ে বেড়াচ্ছি! এ যে কি কষ্টের বলে বোঝাতে পারবো না!”