শ্রীলেখা মিত্র অপর বাংলায় খুবই জনপ্রিয় একজন অভিনেত্রী। এক ফ্ল্যাটে একাই থাকেন! নেই স্বামী। জল-কাদা-বৃষ্টি পেরিয়ে পৌঁছনো গেল কামালগাজীর ফ্ল্যাট। কফিশপ বা হ্যাং আউটে যে স্বচ্ছন্দ নন শ্রীলেখা মিত্র। ভরদুপুরে বিস্ফোরক তিনি।
প্রশ্ন : এই ফ্ল্যাটে একাই থাকেন?
উত্তর : একা কেন? মেয়ে আছে।
প্রশ্ন : আর মেয়ে যখন বাবার কাছে যায় তখন?
উত্তর : তখন আমার সঙ্গে আরো কয়েকজন থাকে।
প্রশ্ন : কয়েকজন মানে?
উত্তর : কী ভাবে বলি বলুন তো? এই বাড়িতে দু’তিন জন অশরীরী থাকেন আমার সঙ্গে।
প্রশ্ন : অশরীরী? এটা একটু বাড়াবাড়ি হয়ে গেল না?
উত্তর : আমি তো অনুভব করি। আমার বাড়িতে ভূত বা স্পিরিট আছে।
প্রশ্ন : আর শরীরী?
উত্তর : হ্যাঁ, বন্ধুবান্ধবেরা আসে। আড্ডা মারি। কোনো মহিলা একা ফ্ল্যাটে থাকলে ধরেই নেওয়া হয় বিশেষ পুরুষবন্ধুর সঙ্গে তিনি থাকেন। প্লিজ… আজকের দিনে ভাবনাটা বড্ড ক্লিশে হয়ে যাচ্ছে না?
প্রশ্ন : বেশ। সকলে বলছে ‘চৌকাঠ’-এ শ্রীলেখা অসাধারণ। ‘চৌকাঠ’-এই শ্রীলেখার কামব্যাক?
উত্তর : কামব্যাকের কী আছে? আমি তো বহু দিন ইন্ডাস্ট্রিতে আছি।
প্রশ্ন : কোথায়? যে শ্রীলেখা আমির খানের সঙ্গে কোকা কোলা’র বিজ্ঞাপন করেছিল, প্রদীপ সরকার যাকে মুম্বাইতে বিজ্ঞাপনের কাজ দেবেন বলে থেকে যেতে বলেছিলেন, সেই শ্রীলেখা টিভি শো-এর বিচারক হয়ে থেকে যাবেন, এটা ভাবতে অসুবিধে হয়…
উত্তর : আমার পিআর খুব খারাপ। মাঝে বিয়ে, ডিভোর্স, বাচ্চা… এক সময় ইংরেজি কাগজে আপনার প্রচুর ছবি বেরোত। তখন তো ভালই পিআর ছিল। সিনেমার জন্যই ইংরেজি কাগজে ছবি বেরোত। এখন কেউ ডাকে না, ছবিও বেরোয় না।
প্রশ্ন :সাক্ষাৎকারের জন্য তো আপনি বাড়ি থেকেও বেরোতে পারলেন না। সন্ধ্যাবেলা কথা বলতে চাইলেন না মেয়েকে পড়াবেন বলে…
উত্তর : একটা উদাহরণ দিই। এক নামী সংস্থার চিপসের বিজ্ঞাপনের জন্য আমি মুম্বাইতে মোটা টাকার একটা কনট্র্যাক্ট সই করি। কিন্তু তখনই আমি কনসিভ করি। অন্য কেউ হলে কাজটাই করত। আমি মা হতে চাইলাম। পরে শুনেছি ওই বিজ্ঞাপনটা জুহি চাওলা করেছেন। এটার জন্য কোনও দিন রিগ্রেট করিনি। প্ল্যান করে বিয়ে, বাচ্চা, কেরিয়ার কোনও কিছুই আমার পক্ষে করা সম্ভব নয়। এই বেশ আছি।
প্রশ্ন : কখনও সৃজিত মুখোপাধ্যায়, কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়দের বলেছেন ওদের সঙ্গে কাজ করতে চান?
উত্তর : সৃজিত যখন নামী পরিচালক হয়নি, তখন থেকে বন্ধু। ফোনে কথা হয়। কৌশিকদা তো আমাকে নিয়ে টিভিতে কাজ করিয়েছেন। সিনেমায় কেন ডাকেন না কে জানে! সুজিত আর সুজয়ও আমার বন্ধু। ‘অহল্যা’ দেখে ভোরবেলা সুজয়কে ফোন করেছিলাম। কিন্তু কাউকেই বলতে পারব না আমাকে একটা চরিত্র দাও।
প্রশ্ন : একটু রোগা হলে তো বেশি কাজ পেতেন?
উত্তর : আই লাভ মাই কার্ভস। পুরুষরা তার জন্যই আজও আমায় ফ্যান্টাসাইজ করে। হঠাৎ কোনও পরিচালক এসে যদি বলে অভিনয়ের জন্য এক মাসে ১০ কেজি কমাতে হবে, আমি ‘না’ বলে দিই।
প্রশ্ন : সে কী? এটাই তো চ্যালেঞ্জ!
উত্তর : ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-এ একজন গৃহবধূর চরিত্রে পেটে চর্বি নিয়েও আমি ব্লাউজ আর পেটিকোট পরে শাড়ি পরার দৃশ্য করেছি।
প্রশ্ন : কিন্তু সারা জীবন গৃহবধূর চরিত্রই করবেন?
উত্তর : তা কেন? তবে আমি একেবারেই ফিগার সচেতন নই। ‘মীরাক্কেল’-এ শর্ট ড্রেস, স্প্যাগেটি ক্যারি করেছি। অনীকদা বলতেন নো মেক আপ লুক যেমন আমাকে মানায়, তেমনই গ্ল্যামারাস লুক। সম্প্রতি মোটা মেয়ের রোগা হওয়া নিয়ে যে ছবি হল, সেখানে তো আমাকে নেওয়া উচিত ছিল। গ্ল্যামারাস কোনও নায়িকাকে ডি-গ্ল্যাম করার কী দরকার ছিল?
প্রশ্ন : এখন বাণিজ্যিক ছবির চেয়ে ‘ওপেন টি বায়োস্কোপ’-এর মতো ছবি হয়। অভিনয়ের সুযোগ বেশি। আপনি সেখানে কোথায়?
উত্তর : ‘ওপেন টি…’ অসাধারণ। অরিন্দম শীলের ‘স্বাদে আহ্লাদে’ করলাম। পরিচালক হিসেবে দারুণ কাজ করছেন উনি। ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথম পরিচালনা করেছেন এমন অনেক পরিচালকই তাদের প্রথম ছবিতেই আমাকে নিয়েছেন।
প্রশ্ন : তারা কারা?
উত্তর : অনীক দত্ত, অর্জুন চক্রবর্তী, কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সৌকর্য ঘোষাল, মলয় ভট্টাচার্য। ইন্ডাস্ট্রি আমাদের মতো অভিনেতাদের ঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারেনি।
প্রশ্ন : আমাদের বলতে?
উত্তর : রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনন্যা চট্টোপাধ্যায়। বিদীপ্তার মতো অভিনেত্রী শুধু সিরিয়াল করে যাচ্ছে। সুদীপ্তা? চান্দ্রেয়ীকেও তো মেগাসিরিয়ালে ‘কটকটি’ হয়ে থেকে যেতে হচ্ছে। রূপাঞ্জনা, দেবলীনাও দারুণ। প্রচুর পোটেনশিয়াল আছে। কিন্তু ক্লিক করার ফর্মুলাটা যে কী, আমি জানি না। জানলে কি আর শুধু ‘চৌকাঠ’-এই আটকে থাকতাম? আমার তো এটাও মনে হয় ঋতুপর্ণার মতো ভার্সাটাইল অভিনেত্রীকেও ইন্ডাস্ট্রি ঠিক মতো কাজে লাগায়নি। ওর মতো কাজ পাগল অভিনেত্রী খুব একটা পাওয়া যায় না। ঋতুপর্ণা আর কোয়েল দু’জনের কেউই কিন্তু প্রকাশ্যে কাউকে নিয়ে গসিপ করে না। এটাও কিন্তু শেখার মতো।
প্রশ্ন : শ্রীলেখা মানেই হ়ট আর সেনসুয়াস।
উত্তর : দারুণ এনজয় করি। কত রকম যে ফোন পাই!
প্রশ্ন : মনের মতো ফোন?
উত্তর : আমার চার পাশে পুরুষ দরকার। দু’তিন জন পুরুষ বন্ধু আছে যাদের সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগে।
প্রশ্ন : প্রাক্তন স্বামীর সঙ্গে যোগাযোগ আছে?
উত্তর : আছে।
প্রশ্ন : বিয়ের প্ল্যান?
উত্তর : এখন শুধু অভিনয়। পরিচালনার ইচ্ছে আছে। ইন্ডাস্ট্রিতে নায়িকাদের কাছে প্রযোজক থাকলে তাদের ছবি করার জন্য ভাবতে হয় না। আমার হাতে, গায়ে, মাথায় কোত্থাও প্রযোজকরা নেই। তবে আমি জানি আমি যদি পরিচালনার কথা ভাবি, নতুন কিছু প্রযোজক আছেন তারা নিশ্চয়ই সাহায্য করবেন। এই তো কৌশিক মিত্র-কে (‘চৌকাঠ’-এর প্রযোজক) রাজাদার ( দাশগুপ্ত) কাছে আমিই নিয়ে গিয়েছিলাম। তবে কৌশিক আমার হাতে ছিল না।
প্রশ্ন : কোন নায়িকাদের হাতে, গায়ে, মাথায় প্রযোজকরা আছেন?
উত্তর : বলব না। কাদা ছোড়াছুড়ি করব না প্লিজ।
প্রশ্ন : চল্লিশে ঢুকলেন শ্রীলেখা। কী বলতে ইচ্ছা হয়?
উত্তর : হ্যারি পটারে হারমিওনির সংলাপটা আছে না? ‘নেভার বেটার’ (প্রচণ্ড ন্যাকামি করে) মেয়েকে বলেছি ষাট হলে রাস্তায় যখন পাশাপাশি হাঁটব, তখনও ছেলেরা আমাকেই দেখবে…
প্রশ্ন : ‘চৌকাঠ’-এর প্রিমিয়ারে তো সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় এসেছিলেন।
উত্তর : আমি সৌরভের কাছে খুবই কৃতজ্ঞ। ‘দাদাগিরি’তে গিয়ে ওর সঙ্গে যোগাযোগ।
প্রশ্ন : উত্তমকুমার পুরস্কারও পেলেন। রাজনীতিতে আসছেন?
উত্তর : না, না। সরকারি পুরস্কার নেওয়া মানেই রাজনীতিতে আসা নয়। রাজনীতি না করেই সমাজসেবা করা যায়। আমি অনেক দিন ধরেই এক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার সঙ্গে যুক্ত। অল্পবয়সি মেয়েদের নিয়ে কাজ করছি।
প্রশ্ন : একটু অন্য প্রসঙ্গে আসি। ‘আশ্চর্য প্রদীপ’-এর পর সি থ্রু কালো শাড়ি আর ব্লাউজ পরা আপনার একটি ছবি ভাইরাল হয়ে গিয়েছিল…
উত্তর : ছবিটায় দেখবেন সি থ্রু ব্লাউজ আর শাড়ি পরে আমি হাঁটছি। আমার চারপাশের লোকেরা ছবিতে একেবারে নির্লিপ্ত! এটা কখনও সম্ভব? সি থ্রু শাড়ি পরতে পারি। ব্লাউজ পরার সাহস এখনও হয়নি। চমকে দেওয়ার জন্য কিছু করব না। সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা