হাওর বার্তা ডেস্কঃ পুলিশ ও আদালতের নথিপত্রে আট বছর ধরে তিনি ‘পলাতক’। একটি খুনের মামলায় তাঁর বিরুদ্ধে ২০ বারের বেশি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। পলাতক হিসেবে তাঁর নাম-ঠিকানা দিয়ে সংবাদপত্রে বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশ করেছেন আদালত। মালামাল ক্রোকের পরোয়ানাও জারি হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর ‘অনুপস্থিতিতে’ই মামলার বিচার চলছে। কিন্তু বাস্তবতা উল্টো।
বাস্তবে তিনি পলাতক নন, কখনো পলাতক ছিলেন না বরং পুলিশের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তিনি আমন্ত্রিত অতিথি হয়ে উপস্থিত থেকেছেন, বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে ওঠবস করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ একাধিক মন্ত্রীকে ফুল দিয়ে অভ্যর্থনাও জানিয়েছেন। অথচ পুলিশ দফায় দফায় আদালতে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়ে বলেছে, ‘তাঁকে গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।’
বগুড়া শহরের ‘মহা ক্ষমতাধর’ মানুষটির নাম আবদুল মতিন সরকার। তিনি জেলা ট্রাক মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আর শহর যুবলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক। ছাত্রী ধর্ষণ ও নির্যাতন মামলার মূল আসামি তুফান সরকারের মেজ ভাই তিনি। তাঁর আশ্রয়েই তুফান সরকার বগুড়া শহর দাপিয়ে বেড়ান। এখন ভাই তুফানের অপকর্মের কারণে তাঁর অবৈধ কর্মকাণ্ডও ফাঁস হয়ে পড়ছে। এ জন্য মঙ্গলবার যুবলীগ থেকে মতিন সরকারকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বগুড়া আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতা বলেছেন, সাম্প্রতিক সময়ে বগুড়া শহর এবং এর আশপাশে যেসব চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জমি দখলের ঘটনা ঘটছে, তার সবকিছুর মূলেই এই মতিন সরকার। এসব করেই হঠাৎ শত শত কোটি টাকার মালিক তিনি। মতিন র্যাবের তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। তাঁর বিরুদ্ধে চারটি হত্যাসহ নয়টি মামলা বিচারাধীন। একটি অস্ত্র মামলায় তাঁর ২৭ বছরের সাজা হয়েছিল। উচ্চ আদালতের নির্দেশে তা স্থগিত আছে।
মতিনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, খুন ও মাদক মামলা থাকলেও জেলা পুলিশের বড় কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাঁর ওঠাবসা ছিল অবাধ। জেলা পুলিশের বার্ষিক ক্রীড়া অনুষ্ঠানে তিনি উপস্থিত ছিলেন। কিছুদিন আগে জেলা প্রশাসকের সঙ্গেও বৈঠক করেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান এবং যুবলীগের চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরী বগুড়া সফরের সময় তিনি তাঁদের সঙ্গেই ছিলেন। তাঁর এসব ছবি স্থানীয় পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়েছে।
মতিনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বগুড়া জেলা পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘আমি দুই বছর আগে জেলায় যোগদান করেছি। এই সময়ে কোনো পরোয়ানার কথা আমার জানা নেই। তবে আগে থেকে ছিল কি না, তাও জানি না। তিনি ক্ষমতাসীন দলের নেতা, পরিবহনের নেতা, তিনি তো পুলিশের কাছে আসতেই পারেন। আর তিনি যে অপরাধী সেটা আমার জানা ছিল না।’
আদালত সূত্র জানায়, নয়টি মামলার আটটিতে জামিনে থাকলেও খুনের মামলাটিতে তিনি আট বছর ধরে ‘পলাতক’। এটি হলো বগুড়ার আবু নাছের ওরফে মুন্সি উজ্জ্বল হত্যা মামলা। ২০০১ সালের ২৮ অক্টোবর শহরের চক সূত্রাপুরের কসাইপাড়ায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটে।