হাওর বার্তা ডেস্কঃ টাকা পাচারের নয়াকৌশল হিসেবে বিটকয়েনকে বেছে নেয়া হচ্ছে। দেশে এটি নিষিদ্ধ হলেও এক শ্রেণির এজেন্ট দ্বারা বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে এ ধরনের তথ্য উঠে এসেছে। এ তথ্যের উপর ভিত্তি করে গোয়েন্দা সংস্থা জানতে পেরেছে দেশীয় কিছু এজেন্ট এ কাজে লিপ্ত রয়েছে। আর এদের গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে গোয়েন্দারা।
ডিএমপির কাউন্টার টেরোরিজমের সাইবার ক্রাইমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলছেন, দেশে বিটকয়েন বা ক্রিপ্টকারেনসি নিষিদ্ধ। আমরা খোঁজ পেয়েছি এর মাধ্যমে অর্থ পাচার হচ্ছে। দেশীয় কিছু এজেন্ট এ কাজে লিপ্ত রয়েছে। আমরা তাদের গ্রেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছি। ইতোমধ্যে কয়েক জায়গায় হানাও দিয়েছি। আমরা দ্রুত এ চক্রের হোতাদের গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হবো।
ক্রিপ্টকারেন্সি কি: ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো এক রকমের ডিজিটাল কারেন্সি। এই কারেন্সি কোনো সরকার বা রাষ্ট্র উৎপাদন বা জোগান দেয় না। এসব বিভিন্ন হার্ডওয়্যারের মাধ্যমে ইন্টারনেট এ যুক্ত থেকে মাইনিং করতে হয়। আর এই মাইনিং প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন জটিল সব এলগোরিদম, ব্লক এবং ক্রিপ্টোগ্রাফি সম্পন্ন করেই একেকটি কয়েন বানাতে হয়। ব্লকচেইন এলগোরিদমের বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় একটি কয়েন জেনারেট হতে প্রথম দিকে টাইম খুব কম (মনে করুন ৫ মিনিট) লাগলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর ডিফিকাল্টি বাড়তে থাকে। এতে করে এক সময় দেখা যায় একটি কয়েন জেনারেট হতে টাইম নেয় ১৫ দিনের বা ৩০ দিনেরও বেশি সময়। আর এই ডিফিকাল্টির সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ে কয়েন রেট।
উদাহরন- Bitcoin, OneCoin, Litecoin, Ripple, Dogecoin ইত্যাদি।
সাধারণ কারেন্সির সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। এই যেমন টাকা, রুপি, ইউরো, ডলার, পাউন্ড ইত্যাদি। এই সব মুদ্রা দেশ ভেদে একেক রকম হয়। এদের উৎপাদন এবং নিয়ন্ত্রণও সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক করে থাকে। এই মুদ্রার সরবরাহ ইচ্ছেমত বাড়াতে কমাতে পারে। কিন্তু প্রতিটি ক্রিপ্টোকারেন্সি একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ কয়েনের বেশি জেনারেট করতে পারবে না। উদাহরন স্বরূপ Onecoin সর্বোচ্চ ২.১ বিলিয়ন কয়েন জেনারেট করতে পারবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা: সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ ধরনের লেনদেন না করা জন্য গণমাধ্যমে এক বিজ্ঞপ্তি পাঠায়। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সম্প্রতি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে দেশে বিটকয়েন নামীয় অনলাইনভিত্তিক কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন হচ্ছে। ইন্টারনেট হতে প্রাপ্ত তথ্য হতে জানা যায় যে, বিটকয়েন বিবিধ বিনিময় প্লাটফর্মে কেনাবেচা হচ্ছে।
কিন্তু ‘বিটকয়েন’কোনো দেশের ইস্যুকৃত বৈধ মুদ্রা নয়। বিটকয়েন বা বিটকয়েনের ন্যায় বা অন্য কোনো কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংস্থা দ্বারা স্বীকৃত নয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন বহির্ভূত এসব লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ এবং মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন-২০১২ এর আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এমতাবস্থায় সম্ভাব্য আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি এড়ানোর লক্ষ্যে বিটকয়েনের মত কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন বা এসব লেনদেনে সহায়তা প্রদান ও প্রচার হতে বিরত থাকার জন্য সর্বসাধারণকে অনুরোধ করা যাচ্ছে।
মূলত এ বিজ্ঞপ্তি প্রচারের পর থেকে নড়েচড়ে বসে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে সহায়তায় যুক্ত হয় গোয়েন্দারাও।
সূত্র জানায়, ২০১৪ সালে বাংলাদেশে প্রকাশ্যে বিটকয়েন সিস্টেম চালু করার জন্য একটি শক্তিশালী চক্র উদ্যোগ নেয়। ওই বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে। এতে উল্লেখ ছিল, দেশে বিটকয়েন নামীয় অনলাইনভিত্তিক কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন হচ্ছে।
ইন্টারনেট থেকে প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বিটকয়েন বিবিধ বিনিময় প্লাটফর্মে কেনাবেচা হচ্ছে। কিন্তু ‘বিটকয়েন’কোনো দেশের বৈধ মুদ্রা নয়। বিটকয়েন বা এর মতো কোনো কৃত্রিম মুদ্রায় লেনদেন বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সরকারের কোনো সংস্থারও স্বীকৃত নয়। অনুমোদনবহির্ভূত এসব লেনদেন বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন ১৯৪৭ ও মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২-এর আওতায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ। ওই বিজ্ঞপ্তিতে এর মাধ্যমে লেনদেন না করা বা এতে সহায়তা না করার জন্যও জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। এরপরও এ ব্যবসা চলছে।
সূত্র জানায়, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পেইজা, পেপাল, মানি বুকার্সের মতো বেশ কিছু প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এদের মতোই ঢাকায় কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিটকয়েন লেনদেন গেটওয়ের তথ্য উদ্ধার করতে পেরেছে আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই বিভিন্ন গেটওয়ে পেমেন্ট প্রসেস হিসেবে অনেক সাইটে বিটকয়েন পদ্ধতি যুক্ত করা হয়েছে। এরা সর্বোচ্চ নিরাপত্তায় পাচারকারীদের সহায়তা করছে। ক্রেডিট কার্ডের মতো গ্রাহক বানিয়ে অবৈধভাবে অর্থ লেনদেন করছে।
তথ্যপ্রযুক্তি নিয়ে কাজ করা গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, বিটকয়েন আন্তর্জাতিকভাবে অর্থ পাচারের একটি ‘হাই এনক্রিপশন কৌশল’। চক্রটির প্রধান টার্গেট প্রবাসী ব্যক্তি, কালো টাকার মালিক ও দুর্নীতিবাজরা। কর্মকর্তারা জানান, বিটকয়েনের মাধ্যমে অর্থ পাচার করে থাকে এমন চারটি সক্রিয় গ্রুপের তথ্য পাওয়া গেছে। যাদের মধ্যে এক ব্যক্তি তিনটি গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে।
সাইবার ক্রাইম ইউনিটের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার নাজমুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশ ভারতসহ অনেক দেশে বিটকয়েন নিষিদ্ধ। কিন্তু টাকা পাচারের হাতিয়ার হিসেবে দেশীয় কিছু এজেন্ট এটিকে ব্যবহার করছে। বাংলাদেশে টাকা দিয়ে বিটকয়েনের মাধ্যমে বিটকয়েন প্রচলিত এমন দেশগুলো থেকে তারা ডলারে এটি উত্তোলন করছেন। গত প্রায় দেড় বছর এ চক্র কাজ করে যাচ্ছে। কিছু লোকজন গ্রেপ্তার হলেও এখনো মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছে। এদের চিহ্নিত করে গেপ্তারে কাজ করে যাচ্ছে সাইবার ক্রাইম ইউনিট।