চকলেট-লিচুর লোভ দেখিয়েছিল বাড্ডার ধর্ষণকারী

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  বাংলাদেশের বগুড়া জেলায় এক ছাত্রীকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে তোলপাড়ের মাঝেই রাজধানীর বাড্ডায় মাত্র সাড়ে তিন বছরের শিশুকে ধর্ষণের পর গলা টিপে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে ময়না তদন্তে।মাহজাবিন তানহা নামের শিশুটির মৃতদেহ পাওয়া যায় প্রতিবেশী বাড়ির টয়লেটের ভেতর।

এমন একটি ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা হতবাক ও ক্ষুব্ধ। এ ঘটনায় শিশুটির বাবা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন।পুলিশ প্রতিবেশী বাড়ি থেকে মোহাম্মদ শিপন নামে একজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

শিশু মাহজাবিন তানহার বাবা মেহেদী হাসান যখন মেয়ের খবর পান তখন তিনি রামপুরায় অফিসের কাজে ছিলেন।রোববার সন্ধ্যার দিকে খবর পাওয়ার পরই তিনি রওনা হন বাসার দিকে। কিন্তু পথ যেন তার আর শেষই হচ্ছিল না।

আমার মাইয়া জানি আমার কত কানছে গো…”

“সন্ধ্যা ৬টার দিকে বাসা থেকে ফোন দিছে। বলে তাড়াতাড়ি আসো। আমার মাইয়ারে ও কত কষ্ট দিছে….আমার মাইয়ারে একদিন একটা চড় মারি নাই। আমার মাইয়া জানি আমার কত কানছে গো…”

শিশু তানহার বাবার এই আহাজারি এবং আশেপাশের বাসিন্দাদের বিলাপ – বাড্ডার আদর্শপাড়া এলাকার চার নম্বর সড়কে তৈরি হয়েছে বিষাদময় এক পরিবেশ।

চকলেট, লিচু আর চুইংগাম দেখিয়ে ডাকে ধর্ষণকারী

তানহার মা সুলতানা বেগম বলেন, চকলেট, লিচু দেখিয়ে তার মেয়েকে ডেকে নেয় আততায়ী।

“আমারে বলছে, পাশের আন্টিদের বাসায় যাই। কাছে বইলা যাইতে দিছি। দূরে হইলে তো আমিই নিয়া যাইতাম। আমি তো জানিনা ওই জায়গায় ওর আজরাইল দাঁড়াইয়া রইছে। চকলেট, লিচি আর চুইংগাম দেখাইয়া ওর ঘরে ডাইকা নিছে। বাচ্চা মানুষ মনে করছে দেবে”।

যেখানে তারা থাকেন ওপরে নিচে মিলিয়ে আটটি কক্ষে থাকে আটটি পরিবার। সবাই একটি গোসলখানা, ও টয়লেট এবং রান্নার চুলা ভাগাভাগি করে ব্যবহার করে সেখানে।

আদর্শনগরীর চার নম্বর সড়কের সবগুলো বাসাই একরকম ঘিঞ্জি। তানহাদের বাসার নম্বর ৪০ নম্বর। তার উল্টোদিকের ৩৮ নম্বর বাড়ির ভেতর টয়লেটে পাওয়া যায় রক্তাক্ত তানহার মরদেহ।

শিশু তানহাকে প্রথম টয়লেটের ভেতর পড়ে থাকতে দেখেন একজন নারী । তিনি দেখেন বাথরুমের ভেতর কমোডের ভেতর মাথা আর ওপরের দিকে পা পড়ে আছে।

প্রস্রাবের পথ দিয়ে ব্লিডিং হচ্ছিল

পরিবারটিকে সান্ত্বনা দিতে আসা অনেক লোকজনকে কাঁদতে দেখা যায় শিশুটির জন্য।

বিলাপরত তানহার মায়ের কাছেই বসেছিলেন বাড়ির মালিকের স্ত্রী মেহেরুন্নেসা। তানহাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধারের পরপর যেকজন মিলে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান তাদের একজন মেহেরুন্নেসা।

তিনি বলেন, “ওর ব্লিডিং হচ্ছিল। প্যান্ট পরানো ছিল। যখন আমি ফার্মেসিতে মেয়েটাকে রাখলাম, আমাদের আরেক ভাড়াটিয়া প্যান্টটা সরিয়ে দেখল পেশাবের রাস্তা দিয়ে ব্লিডিং হচ্ছিল। তখনই সবাই বুঝতে পারছে ঘটনা কী…”

মেহেরুন্নেসা বলেন, দশ বছর ধরে তানহার বাবা-মা তাদের বাড়িতে ভাড়া থাকেন। মেহেরুন্নেসাই তানহার জন্মের পর তার নামটি রেখেছিলেন।

“তানহা এখানেই হইছে। আর মাহজাবিন তানহা নামটা আমি রাখছিলাম। খুবই মায়াবী একটা বাচ্চা ছিল। এই বাড়ির দরজার বাইরেও বাচ্চারা নিরাপদ না। আমার প্রশ্ন হচ্ছে এই যে চার বছরের শিশুর মধ্যে ও (ধর্ষণকারী) কী মজা পাইছে?”

ধর্ষণকারী স্বামীর বিচার চান স্ত্রীও

এমনই প্রশ্ন এখন আদর্শনগরেরর বাসিন্দাদের মুখে। নিজের বাসার আশেপাশেই এমন নির্মমভাবে পৌনে চারবছরের একটি শিশুকে হত্যার ঘটনায় হতবাক ও ক্ষুব্ধ তারা।

তাদের মতো এই ঘটনায় অভিযুক্ত মোহাম্মদ শিপনের স্ত্রী মোসাম্মৎ নুরজাহানও তার স্বামীর বিচার চাইছেন। ঘটনার সময় তিনি পোশাক কারখানায় কাজ করছিলেন বলে জানান।

রাত আটটায় ফিরে আসার পর স্বামী তাকে ভাত ও ডাল রান্না করতে বলে স্বাভাবিক মানুষের মতোই। কিছুক্ষণ পরে জানতে পারেন তার স্বামীর জড়িত থাকার খবর।

ময়না তদন্তে ধর্ষণ এবং গলা টিপে হত্যার প্রমাণ

এদিকে রোববার রাত থেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পড়ে থাকা শিশু তানহার মরদেহের ময়না তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে সোমবার বিকেলে।

শিশু তানহাকে ধর্ষণের পর গলাটিপে হত্যার আলামত পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা: সোহেল মাহমুদ।

“প্রাথমিকভাবে ধর্ষণের আলামত পাইছি এবং তাকে গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করছে সেই প্রমাণ পাইছি।”

এদিকে ঢাকার পুলিশ বলছে, তারা অভিযুক্ত মোহাম্মদ শিপনের ঘরে রক্তমাখা টাওয়াল ও ধর্ষণ সংক্রান্ত অন্য আলামত পেয়েছে।এরপর রোববারে রাতেই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে ডাকাতির মামলায় মোহাম্মদ শিপন ৫ বছর কারাভোগের পর দেড় বছর আগে ছাড়া পায় বলে জানিয়েছে পুলিশ।-বিবসি বাংলা

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর