ঢাকা ১০:৫৬ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

১৪ আগস্ট বিকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব প্রক্রিয়া শুরু হয়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১০:১৪:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অগাস্ট ২০১৫
  • ৪০০ বার

১৪ আগস্ট বিকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে শেষ বৈঠক, নাইট প্যারেডের নামে সেনা সমাবেশ, অস্ত্রাগার খুলে দিয়ে অস্ত্র ও গুলি বিতরণ, রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা, সেনাদের উদ্দেশে ব্রিফিং, ট্যাংকসহ যাত্রা; সবকিছু ঘাতকদের মধ্যে হয়েছে। তারপরও যারা পারতেন তখন তাদের কেউই খুনিদের ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ নেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার একজন সাক্ষী ছিলেন এ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার। ৪৮ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে জানান, ১৫ আগস্ট ভোরবেলা জেনারেল শফিউল্লাহ তাকে ফোন করে বলেন, শুনেছেন বঙ্গবন্ধু অ্যাসাসিনেটেড হয়েছেন? তিনি হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, আরইউ শিওর? উত্তরে শফিউল্লাহ বলেন, হ্যাঁ। খবর আমাদের সময়.কম।

এরপর শুধু প্যান্ট-শার্ট পরে পায়ে হেঁটে তিনি জেনারেল শফিউল্লাহর বাসায় গিয়ে জেনারেল জিয়াকে ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় দেখেন। দুয়েক মিনিটের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ খন্দকারের মতোই ক্যাজুয়াল ড্রেস পরে সেখানে উপস্থিত হন। তাৎক্ষণিক আলোচনায় তারা বুঝতে পারেন, মাত্র কয়েকটি আর্মি অফিসার দ্বারা এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ৪৬ ব্রিগেডের অবস্থা দেখে হতভম্ব অবস্থায় সশস্ত্র মেজর রশিদের চাপের মুখে রডিও স্টেশনে যেতে রাজি হন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ। তার দাবিÑ কোনো কাউন্টার অ্যাকশনে রক্তপাত ও ‘সিভিল ওয়ার’ হতে পারে ধারণা করে তিনি মেজর রশিদ ও মেজর ডালিমের অস্ত্রের মুখে রেডিও স্টেশনে যেতে বাধ্য হন। এ সময়ের মধ্যে এয়ার এবং নেভি চীফও সখানে পৌঁছে যান। ডালিম এবং অস্ত্রধারীরা তাদের স্কট করে।

বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে আরও পাওয়া যায় যে, শফিউল্লাহ বলেছেন, রেডিও সেন্টারে ঢুকেই তিনি খন্দকার মোশতাককে বসা অবস্থায় দেখেন। তার ডান পাশে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর দাঁড়ানো। খন্দকার মুশতাক তখন সাদা প্রিন্সকোট, মাথায় টুপি এবং তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের গায়ে পাজামা-পাঞ্জাবি ও মাথায় সাদা কিস্তি টুপি ছিল।

রুমে ঢোকার পর খন্দকার মোশতাক তাকে বলে : কনগ্র্যাচুলেশন্স। ইওর ট্র-পস হ্যাভ ডান এন এক্সিলেন্ট জব। নাউ ডু দ্য রেস্ট। শফিউল্লাহ তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, হোয়াট দ্য রেস্ট? খন্দকার মোশতাক বলেন, ইউ শোড নো ইট বেটার।

‘ইন দ্যাট কস লিভ ইট টু মি,’ বলে তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসছিলেন দাবি করে বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার সাক্ষী হিসেবে মে. জে. (অব.) শফিউল্লাহ বলেন, ‘তাহেরউদ্দিন ঠাকুর তখন মোশতাককে বলে, স্যার, উনাকে থামান। উনার আরও দরকার আছে।’

ঠাকুরের এ কথার সঙ্গে সঙ্গে ডালিম, রশিদ এবং অপর একজন, সম্ভবত মোসলেম, তাকে আটকে ভিন্ন রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এসে তাকে আনুগত্য স্বীকারের একটি খসড়া লিখে দেন এবং তা শফিউল্লাহর কণ্ঠে রেকর্ড করা হয়। সেখানে মেজর ডালিম ও মেজর রশিদ সম্পূর্ণ সশস্ত্র অবস্থায় ছিল।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

জনপ্রিয় সংবাদ

১৪ আগস্ট বিকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব প্রক্রিয়া শুরু হয়

আপডেট টাইম : ১০:১৪:০১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১০ অগাস্ট ২০১৫

১৪ আগস্ট বিকাল থেকেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সব প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যায়। ষড়যন্ত্রকারীদের মধ্যে শেষ বৈঠক, নাইট প্যারেডের নামে সেনা সমাবেশ, অস্ত্রাগার খুলে দিয়ে অস্ত্র ও গুলি বিতরণ, রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ঘোষণা, সেনাদের উদ্দেশে ব্রিফিং, ট্যাংকসহ যাত্রা; সবকিছু ঘাতকদের মধ্যে হয়েছে। তারপরও যারা পারতেন তখন তাদের কেউই খুনিদের ঠেকাতে কোনো উদ্যোগ নেননি। বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার একজন সাক্ষী ছিলেন এ সরকারের সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকার। ৪৮ নম্বর সাক্ষী হিসেবে তিনি বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল একে খন্দকার সেই প্রেক্ষাপট বর্ণনা করে জানান, ১৫ আগস্ট ভোরবেলা জেনারেল শফিউল্লাহ তাকে ফোন করে বলেন, শুনেছেন বঙ্গবন্ধু অ্যাসাসিনেটেড হয়েছেন? তিনি হতবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, আরইউ শিওর? উত্তরে শফিউল্লাহ বলেন, হ্যাঁ। খবর আমাদের সময়.কম।

এরপর শুধু প্যান্ট-শার্ট পরে পায়ে হেঁটে তিনি জেনারেল শফিউল্লাহর বাসায় গিয়ে জেনারেল জিয়াকে ইউনিফর্ম পরা অবস্থায় দেখেন। দুয়েক মিনিটের মধ্যে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফ খন্দকারের মতোই ক্যাজুয়াল ড্রেস পরে সেখানে উপস্থিত হন। তাৎক্ষণিক আলোচনায় তারা বুঝতে পারেন, মাত্র কয়েকটি আর্মি অফিসার দ্বারা এ হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে।

পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট ৪৬ ব্রিগেডের অবস্থা দেখে হতভম্ব অবস্থায় সশস্ত্র মেজর রশিদের চাপের মুখে রডিও স্টেশনে যেতে রাজি হন তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল শফিউল্লাহ। তার দাবিÑ কোনো কাউন্টার অ্যাকশনে রক্তপাত ও ‘সিভিল ওয়ার’ হতে পারে ধারণা করে তিনি মেজর রশিদ ও মেজর ডালিমের অস্ত্রের মুখে রেডিও স্টেশনে যেতে বাধ্য হন। এ সময়ের মধ্যে এয়ার এবং নেভি চীফও সখানে পৌঁছে যান। ডালিম এবং অস্ত্রধারীরা তাদের স্কট করে।

বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার বিভিন্ন সাক্ষ্য প্রমাণে আরও পাওয়া যায় যে, শফিউল্লাহ বলেছেন, রেডিও সেন্টারে ঢুকেই তিনি খন্দকার মোশতাককে বসা অবস্থায় দেখেন। তার ডান পাশে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর দাঁড়ানো। খন্দকার মুশতাক তখন সাদা প্রিন্সকোট, মাথায় টুপি এবং তাহেরউদ্দিন ঠাকুরের গায়ে পাজামা-পাঞ্জাবি ও মাথায় সাদা কিস্তি টুপি ছিল।

রুমে ঢোকার পর খন্দকার মোশতাক তাকে বলে : কনগ্র্যাচুলেশন্স। ইওর ট্র-পস হ্যাভ ডান এন এক্সিলেন্ট জব। নাউ ডু দ্য রেস্ট। শফিউল্লাহ তখন তাকে জিজ্ঞেস করেন, হোয়াট দ্য রেস্ট? খন্দকার মোশতাক বলেন, ইউ শোড নো ইট বেটার।

‘ইন দ্যাট কস লিভ ইট টু মি,’ বলে তিনি রুম থেকে বের হয়ে আসছিলেন দাবি করে বঙ্গবন্ধু হত্যামামলার সাক্ষী হিসেবে মে. জে. (অব.) শফিউল্লাহ বলেন, ‘তাহেরউদ্দিন ঠাকুর তখন মোশতাককে বলে, স্যার, উনাকে থামান। উনার আরও দরকার আছে।’

ঠাকুরের এ কথার সঙ্গে সঙ্গে ডালিম, রশিদ এবং অপর একজন, সম্ভবত মোসলেম, তাকে আটকে ভিন্ন রুমে নিয়ে যায়। সেখানে তাহেরউদ্দিন ঠাকুর এসে তাকে আনুগত্য স্বীকারের একটি খসড়া লিখে দেন এবং তা শফিউল্লাহর কণ্ঠে রেকর্ড করা হয়। সেখানে মেজর ডালিম ও মেজর রশিদ সম্পূর্ণ সশস্ত্র অবস্থায় ছিল।