প্রশাসনে হিন্দুতোষণ এবং পাঠ্যপুস্তকে হিন্দু ও নাস্তিক লেখকদের প্রাধান্য প্রদান বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী ওলামা লীগ।
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন হিসেবে পরিচিত ওলামা লীগসহ ১৩টি ইসলামপন্থী সংগঠন এ দাবি জানিয়েছে।
সরকার সমর্থক এসব সংগঠন মোট ১৭ দফা দাবি আদায়ে শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনের আয়োজন করে। পরে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মসূচির একটি প্রেস রিলিজও পাঠানো হয়।
?
প্রশাসনে হিন্দুতোষণ বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বক্তারা বলেন, ‘চাকরির ক্ষেত্রে ৯৮ ভাগ জনগোষ্ঠী মুসলমানদের নিয়োগ আনুপাতিকহারে করতে হবে। হিন্দুদেরকে মুসলমানদের চেয়ে বেশি নিয়োগ দিয়ে বৈষম্য করা যাবে না। প্রশাসনকে হিন্দুকরণ চলবে না।’
তারা দাবি করেন, ‘গত ২০১৩ সালের অক্টোবরে পুলিশের এসআই পদে নিয়োগে ১৫২০ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ দেয়া হয়েছে ৩৩৪ জন যা মোটের ২১.৯৭ শতাংশ। গত ২০১১ সালে জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইতে নিয়োগের ৯৩ জনের মধ্যে হিন্দু নিয়োগ করা হয়েছে ২৩ জন যা মোটের ২৪.৭৩ শতাংশ। সম্প্রতি ষষ্ঠ ব্যাচে সহকারী জজ পদে নিয়োগ দেয়া ১২৪ জনের মধ্যে ২২ জনই হিন্দু যা শতকরা হিসেবে ১৭ শতাংশ।’
সরকার সমর্থক সংগঠনের এ নেতারা মনে করেন, ‘এসব বিতর্কিত সিদ্ধান্তে মুসলমান দেশে মুসলমানদের প্রতি ব্যাপক বৈষম্যের দাবিই দৃঢ় হচ্ছে যাতে হেফাজতসহ বিরোধীরা সুযোগ পাচ্ছে।’
তারা অভিযোগ করেন, ‘বর্তমান পাঠ্যপুস্তকে কট্টর ইসলাম বিরোধী হিন্দু ও নাস্তিক লেখকদের লেখাকে নিরঙ্কুশ প্রাধান্য প্রদান করা হয়েছে। প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা বইয়ে অন্তর্ভুক্ত গল্প, কবিতা ও প্রবন্ধসমূহের মধ্যে মুসলমান লেখকদের তুলনায় বিধর্মী হিন্দু লেখকদের লিখাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।’
বক্তাদের দাবি, ‘প্রথম শ্রেণী থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত গল্প ও কবিতার সংখ্যা ১৯৩টি। এর মধ্যে হিন্দু ও নাস্তিকদের লেখার সংখ্যা হলো ১৩৭টি যা সর্বনিম্ন শতকরা ৫৭ ভাগ থেকে সর্বোচ্চ ৮২ ভাগ প্রাধান্য পেয়েছে।’
তারা বলেন, ‘ইসলামকে কটাক্ষ করে লেখালেখি করে এদেশের জাতীয় পর্যায়ে যেসব চিহ্নিত ইসলাম বিদ্বেষী লেখক রীতিমতো কুখ্যাতি অর্জন করেছে, তাদের লেখা পাঠ্যবইয়ের প্রত্যেক শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।’
‘কুখ্যাত ইসলামবিদ্বেষী ও নাস্তিক হুমায়ূন আজাদ, তসলিমা নাসরিনের স্বামী রুদ্র শহীদুল্লাহ, সেলিনা হোসেন, সনজীদা খাতুন, কবীর চৌধুরী এবং এ রকম আরো অনেকে যা এদেশের মুসলমানদের কাছে কখনোই গ্রহণযোগ্য নয়’ যোগ করেন বক্তারা।
তারা বলেন, ‘আশ্চর্যের বিষয় হলো, বাংলাদেশে বহু ইসলামী ঐতিহ্যবাহী পুরাকীর্তি ও স্থাপত্য নিদর্শন থাকলেও তা নিয়ে কোনো অধ্যায় বা প্রবন্ধ সংযোজন করাতো দূরের কথা, তা নিয়ে কোনো প্রকার বর্ণনা দিতেও চরম কার্পণ্য করা হয়েছে। এসব বই দেখলে বোঝার উপায় নেই যে, এদেশে মুসলমানরা বসবাস করে।’
সরকার সমর্থক ইসলামপন্থী এ সব নেতারা বলেন, কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী বক্তব্য যুক্ত ও ষড়যন্ত্রমূলক এসব পাঠ্যপুস্তক অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত করতে হবে। একই সঙ্গে ইসলাম বিরোধী প্রচলিত শিক্ষানীতি বাতিল করতে হবে এবং ৯৮ ভাগ মুসলমানের এদেশের শিক্ষানীতি সম্পূর্ণ ইসলামিক করতে হবে।’
এছাড়া মানববন্ধনে অবিলম্বে যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি কার্যকর, ভারতের আন্তঃনদী সংযোগ বন্ধ, কোরবানির পশুর হাট স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত বাতিল, সব ভারতীয় টিভি চ্যানেল ও পর্নোসাইট বন্ধ এবং মেয়েদের বিয়ের বয়স নির্দিষ্টকরণ বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।
আওয়ামী ওলামা লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মাওলানা মুহম্মদ আখতার হুসাইন বুখারীর সভাপতিত্বে এতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক কাজী মাওলানা মুহম্মদ আবুল হাসান শেখ শরীয়তপুরী, সম্মিলিত ইসলামী গবেষণা পরিষদের সভাপতি হাফেজ মুহম্মদ আবদুস সাত্তার, জাতীয় কুরআন শিক্ষা মিশনের লায়ন মাওলানা মুহম্মদ আবু বকর ছিদ্দীক্ব, বঙ্গবন্ধু ওলামা ফাউন্ডেশনের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ নাফেয়ী প্রমুখ।