হাওর বার্তা ডেস্কঃ শুধু গায়কী দিয়েই নয়, গান উপস্থাপনায় নিজস্বতা দিয়েও শ্রোতা-দর্শকের মন জয় করে নিয়েছেন কণ্ঠশিল্পী লিজা। তার পুরো নাম সানিয়া সুলতানা লিজা। ছোটবেলা থেকেই গানের সঙ্গে আছেন। দেশাত্মবোধক গান দিয়ে জাতীয় শিশু পুরস্কার পেয়েছেন। তবে ক্লোজআপ ওয়ান-২০০৮ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় আসেন। জাতীয় পর্যায়ের একজন ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড় হিসেবেও আলাদা পরিচিতি আছে। খেলা নয়, মিউজিক ভিডিও, মঞ্চ, টিভি লাইভ ও প্লেব্যাকে এখন বেশি ব্যস্ত এই সংগীতশিল্পী। এসব নিয়েই ঢাকাটাইমস টোয়েন্টিফোর ডটকম কথা বলেছে তার সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন সৈয়দ ঋয়াদ।
গৌরিপুর থেকে ক্লোজআপ ওয়ান, দারুণ সফল। যতদূর জেনেছি আপনার পরিবারে কেউ সেভাবে গানের সঙ্গে যুক্ত নন।
আমাদের পরিবারে কেউ গান করেন না। আমার মায়ের ফ্যামিলি মানে আমাদের নানার বাড়ির দিকের সবাই খুব ধার্মিক। চাচারাও কেউ গান পছন্দ করেন না। শুধু আমার বাবা গান পছন্দ করেন। তিনি খালি গলায় গান করেন। আব্বুর সুরও আছে। আর এই রকম ফ্যামিলি থেকে গানে খুব কম মানুষ আসে।
গানের ক্লাসে সর্বোচ্চ নম্বর পেতেন, এমন কথা শুনেছি?
আমরা গৌরিপুর যে স্কুলে পড়তাম সেখানে গানের জন্য আলাদা মার্ক ছিল। আমি সব সময়ই গানে সর্বোচ্চ নম্বর পেতাম। তখন আমাদের স্কুল শিক্ষক রাবেয়া খানম আমাকে গানে ভর্তি হতে উৎসাহ দেন। আমি তখন টু বা থ্রিতে পড়ি। তিনি আব্বুকে বোঝাতেন আমাকে যেন গান শেখায়। সেভাবেই তার উৎসাহে শুরুটা হয়।
পরিবারের কেউ গান করেন না, এসব ক্ষেত্রে সচরাচর মাঝপথে এসে বাধার সম্মুখীন হতে হয়।
না আমার বেলায় সেটা হয়নি। আমি এই সুযোগটা পেয়েছি। আমি এখনো শিখছি। ওস্তাদের কাছে এখনো নিয়মিত পরামর্শ নিই। কিছু দিন পর পর ময়মনসিংহ যাওয়া হয়, তখন ওস্তাদের কছে গিয়ে তালিম নিয়ে আসি। আগে যেভাবে সামনাসামনি তালিম নেওয়া হতো, সেটা এখন আর নিয়মিত করা হয়ে উঠে না। তবে নিজে নিজে চর্চা করার যে বিষয়, সেটা এখনো আছে।
ব্যাডমিন্টন জাতীয় পর্যায়ে রানারআপ হয়েছিলেন, আরও অনেক খেলায় ভালো করেছেন। জাতীয় পর্যায়ের অ্যাথলেট হওয়ার সুযোগ ছিল।
গানটা যেমন আমি শিখে এসেছি, ব্যাডমিন্টন খেলাটা কিন্তু শিখিনি। বিকেলে খেলার যে অভ্যাস ছিল সেভাবেই কিন্তু হলো। যেই মেয়েটা সব সময় চ্যাম্পিয়ন হতো সেই এবারও গৌরিপুর থেকে যাচ্ছে, তার সঙ্গে আর কোনো কম্পিটিটর নেই। স্কুল শিক্ষকরা বললেন লিজা তুমি যাও। তখন আমি তাকে হারিয়ে দিলাম। সবাই তো অবাক। তারপর আমি কাকতালীয়ভাবে গ্রেটার ময়মনসিংহে চ্যাম্পিয়ন হলাম। তারপর ঢাকা জেলায়ও চ্যাম্পিয়ন হলাম। সেবার জাতীয় পর্যায়ে রানারআপ হলাম। এটা ২০০৩ সালে। আমার গানের চেয়ে খেলায় পুরস্কার বেশি। আমি হাইজাম্পে অনেক ভালো ছিলাম গ্রেটার ময়মনসিংহে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি।
স্পোর্টসে ভালো ছিলেন, আন্তর্জাতিকভাবে দেশকে রিপ্রেজেন্ট করার সুযোগ ছিল।
আমি ক্লাস টেন পর্যন্ত খেলেছি। কলেজে উঠেও খেলেছি। আমি তখন অলরেডি ক্লোজ আপ ওয়ান চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। জাতীয় দলের হয়ে ব্যাডমিন্টন খেলছি। আমি জাতীয় দলে মেয়েদের ব্যাডমিন্টন র্যাংকিংয়ে সাত নম্বরে ছিলাম। ওই সময়টাতে কোচের কাছে প্র্যাকটিস করেছি। একটা সময় এসে ছেড়ে দিলাম। আমার কোচ আমার প্রতি ক্ষুব্ধ, কারণ তার প্রত্যাশা ছিল আর ছয় মাস প্র্যাকটিস করলে আমার পক্ষে জাতীয় পুরস্কার নেওয়া সম্ভব হতো। এটা তিনি মনে করতেন। পড়ে আর কন্টিনিউ করা হলো না।
সুযোগ ছিল তারপরও কন্টিনিউ করলেন না?
আসলে খেলা আর গান দুটো একসঙ্গে করা যায় না। খেলায় যেহেতু প্রচুর ফিজিক্যাল প্রেসার পরে তখন আর ভয়েসটা ঠিক থাকে না। খেলার কারণে গলার স্টেন্ডিংনোট থাকে না, গলাটা কাঁপতে থাকে। আমার ওস্তাদজিও বললেন, যেকোনো একটা করতে হবে। হয়তো খেলা, নয়তো গান। তখন আমি খেলাটাই ছেড়েছি।
নিয়মিত উপস্থাপনায় দেখা যাচ্ছে আপনাকে। অনুষ্ঠান উপস্থাপকদের বড় একটা অংশ এক সময় অভিনয়ে চলে যায়, আপনার বেলায় সেই সম্ভাবনা কতটুকু?
আপনি যেটা বলেছেন সেটা আমি বুঝেছি। আপনি খেয়াল করবেন আমি কিন্তু গানের অনুষ্ঠানেই উপস্থাপনা করি। এছাড়া অন্য কোনো প্রোগ্রাম উপস্থাপনা করি না। আর তাছাড়া অন্য প্রোগ্রাম কিংবা রিয়েলিটি অনেকে রিকোয়েস্ট করেছে। তবে আমার যেটা ক্ষেত্র গান। আমাকে এর বাইরে দেখা যাবে বলে মনে করি না। আমি মনে করি যে যেটা পারে তার সেটাই করা উচিত। আমি ২০১৩ সাল থেকেই নিয়মিত উপস্থাপনা করছি।
অনেক ধরনের গান করেছেন। ক্ল্যাসিকেল, প্লেব্যাক, ব্যাকও করেছেন। স্বাচ্ছন্দ্য কোন ধরনের গানে?
আমি সেমি ক্ল্যাসিকেল গান করতে পছন্দ করি। যে গানগুলো খুব বেশি সুরনির্ভর। যে গানগুলো শুনলে একটু প্রশান্তি লাগে, অস্থিরতা দূর হয়ে যায়। ঠিক এই ধরনের গানে আমার ভালো লাগা বেশি কাজ করে।
নতুনকুঁড়ি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছিলেন। আমাদের অনেক বড় শিল্পীও এসেছে নঁতুনকুড়ি থেকে। এই বিষয়টা শুনব।
আমি অনেকবার নতুনকুঁড়ি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি। কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আমি কোনোবারই প্রথম, দ্বিতীয় কিংবা তৃতীয় এই ধরনের প্লেস অর্জন করতে পারতাম না। তাদের সঙ্গে নম্বরের ব্যবধান হতো ১ কিংবা হাফ। আমার কখনো প্লেস আসত না। এই ধরনের প্রতিযোগিতায় আমি কখনো কেন যেন পারতাম না। গ্রেটার ময়মনসিংহ পার হয়ে যেতে পারতাম। কিন্তু জাতীয় পর্যায়ে গিয়ে আর পুরস্কার জেতা হয়নি।
জাতীয় শিশু প্রতিযোগিতায় দেশাত্মবোধকে একবার গোল্ড মেডেল পেয়েছিলেন। নিশ্চয়ই মনে আছে?
অনেক পুরস্কারের মধ্যে এটা আমার কাছে অন্যতম। সেবার দেশাত্মবোধক গানে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছি। জাতীয় পুরস্কার হিসেবে এই একবারই গোল্ড মেডেল পেয়েছি। জাতীয় ছাড়াও গোল্ড মেডেল পেয়েছি।
একটু ভিন্ন প্রসঙ্গে আসি। গান হচ্ছে প্রচুর, কিন্তু জনপ্রিয় বা শ্রোতাপ্রিয় গানের সংখ্যা বাড়ছে না।
আমার যেটা মনে হয় আমাদের গানের জন্য যে সময়টা দেওয়া প্রয়োজন আমরা যারা গান করছি তারা সেই সময়টা যথাযথভাবে দিচ্ছি না বা একটু বেশি সময় নিয়ে কাজটা করছি না। যত্ন না নিলে যেকোনো জিনিসের ফলাফল যা হওয়ার তাই হবে। এটা শুধু গানের বেলায় না, সব কাজের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। আমার কাছে মনে হয় এটাই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা গান সময় নিয়ে করছি না। নতুন কিছু বানাতে হলে অনেক জানতে হবে বা শুনতে হবে। সেটাও এখন কমে গেছে।
অনেকে বলেন এখনকার গানে মিউজিক ভিডিওর প্রাধান্য বেড়েছে, কিভাবে দেখেন।
আমি মনে করি এখন দর্শক মিউজিক ভিডিও চাচ্ছে, দর্শক জিনিসটা এভাবেই দেখতে পছন্দ করছে। মিউজিক ভিডিওরও চাহিদা তৈরি হয়েছে। মানুষ গানের পাশাপাশি একটা গল্প কল্পনা করে। সে জন্যই মিউজিক ভিডিওগুলোরও চাহিদা বাড়ছে। তবে আমি মনে করি না ভালো গানের ক্ষেত্রে মিউজিক ভিডিওর প্রভাব থাকবে।
মাত্র দুটি অ্যালবাম করেছেন, নতুন কিছু আসছে?
এখন ফিল্মের গানে অনেক কাজ করছি। ৪০টির মতো ছবিতে গান করেছি। এখন তো সেভাবে অ্যালবাম আর চলে না। তবে দুটি বা তিনটি গান দিয়ে সিডি বের করা হয়, সে রকম কাজ করব। ‘ভালোবাসি বলে হয়ে যাক’ নামে নতুন একটি মিউজিক ভিডিওর কাজ করছি ঈদুল আযহার জন্য।