হাওর বার্তা ডেস্কঃ অবৈধভাবে ইউরোপে যাওয়া কিংবা বৈধ পথে ইউরোপে গিয়ে ‘অবৈধ’ হয়ে পড়া ৯৩ হাজার বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। তাদের ফেরানোর প্রক্রিয়া সংক্রান্ত ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস’ (এসওপি) সইয়ের সিদ্ধান্তও নিয়েছে ঢাকা।
গতকাল পররাষ্ট্র ভবনে অনুষ্ঠিত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসওপি’র খসড়া নিয়ে বিস্তৃত আলোচনার পর এসব সিদ্ধান্ত হয়। পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক এতে সভাপতিত্ব করেন। সেখানে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন অনুবিভাগ ছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং এর অধীন বিভিন্ন সংস্থা, আইন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ প্রতিনিধিরা অংশ নেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল একাধিক কর্মকর্তা ইউরোপে ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরত আনা এবং এ সংক্রান্ত এসওপি সইয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের বিষয়টি হাওর বার্তাকে নিশ্চিত করেন। তারা জানান, চলতি মাসের প্রথমার্ধে ব্রাসেলসে বাংলাদেশ ও ইইউ যৌথ কমিশনের বৈঠকে ‘অবৈধ’ বাংলাদেশিদের ফেরানোর সংক্রান্ত আইনি কাঠামো ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস বা এসওপি’র দ্রুত চূড়ান্ত করার তাগিদ দেয় ইইউ।
জুলাই’র মধ্যে এসওপি’র আলোচনা শেষ করার সময়সীমাও বেঁধে দেয় ব্রাসেলস। এ নিয়ে ইউরোপের ২৮ রাষ্ট্রের জোট ইইউ প্রচারিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এসওপি’র নেগোসিয়েশন চূড়ান্ত করতে ঢাকাকে অব্যাহতভাবে চাপ দেয়ার ঘোষণা
ছিল। তাছাড়া আগে থেকেই ইইউ’র তরফে বলা হয়েছিল ইউরোপের দেশগুলোতে আনডকুমেন্টড বা অবৈধভাবে যেসব দেশের নাগরিক রয়েছেন তাদের অবশ্যই ফিরিয়ে নিতে হবে। অন্যথায় ওই সব দেশের সাধারণ নাগরিকদের ভিসা প্রক্রিয়া কঠোর করা হবে।
আন্তঃমন্ত্রণালয় সভায় এসবের বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে জানিয়ে ওই কর্মকর্তা বলেন, অবৈধদের ফেরানোর এসওপি সইয়ে আমরা প্রস্তুত। তবে নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইসহ কিছু বিষয়ে আমরা যৌক্তিক সময় চেয়েছি। এটা দিতে হবে। ইইউ জুলাই’র মধ্যে এসওপি’র আলোচনা শেষ করতে চেয়েছে। আমরাও তাই চায়। এজন্য আমাদের প্রস্তাব সংযোজন করে ব্রাসেলসে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন তাদের বলেছি, আসুন এ নিয়ে বসে আলোচনা করি। তারাও তাতে রাজি। চলতি মাসের সমাপনীতে ইইউ’র একটি উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি দল ঢাকা আসবে বলে আভাস দেন ওই কর্মকর্তা।
অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ঢাকার তরফে খোলামনে এসওপি নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব করা হয়েছে। ঢাকায় সেই আলোচনা হবে। অবৈধদের নাগরিকত্ব যাচাই-বাছাইতে ঢাকা যে ‘যৌক্তিক সময়’ চেয়েছে সেই প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, এগুলোর খুঁটিনাটি পরবর্তীকালে বাংলাদেশ-ইইউ বৈঠকে চূড়ান্ত হবে। তবে এটুকু বলা হয়, সেখানে মূলত ৪টি ক্যাটাগরিতে নাগরিত্ব যাছাই করতে হবে। প্রথমত যারা দীর্ঘ সময় ধরে সংশোধনাগার বা পুলিশ কাস্টডিতে রয়েছেন।
দ্বিতীয়: যারা বৈধ ভিসা নিয়ে গেছেন এবং এখন নানা কারণে অবৈধ বা অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন। তৃতীয়ত: যাদের পাসপোর্ট আছে, কিন্তু বৈধ ভিসা ছিল না বা নেই। চতুর্থ এবং সর্বশেষ যাদের হাতে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বা বৈধ কোনো ডকুমেন্টই নেই। ওই কর্মকর্তার মতে, ভিন দেশি কেউ যেন বাংলাদেশে না ফিরে বিশেষ করে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে সরকার সতর্ক। এটি নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত যাছাই বাছাইয়ে যে সময় লাগবে সেটাই চায় ঢাকা।
অন্য এক কর্মকর্তা বলেন, ইইউ’র চাপ তো আছেই। আমাদের জাতীয় স্বার্থেও বিষয়টি নিয়ে ভাবতে হচ্ছে। বিশ্বের কোথাও আন-ডকুমন্টেড বা বৈধ ডকুমেন্টবিহীন কোনো বাংলাদেশি থাকুক- এটা আমরা চাই না। এদের বৈধকরণের প্রচেষ্টা নতুবা যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নাগরিকত্ব যাছাই করে ফেরত নিয়ে আসার বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে। ইইউ’র সঙ্গে আলোচনা বা নেগোসিয়েশনেও আমরা তাই বলেছি এবং সেটাই আমাদের স্ট্যান্ডার্ড। এতে কোনো সময়সীমা বেঁধে দেয়া সমীচীন হবে না।
উল্লেখ্য, ইউরোপে থাকা বাংলাদেশিদের বিষয়ে ঢাকাকে এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো তথ্য বা পরিসংখ্যান শেয়ার করেনি ব্রাসেলস। তবে ইউরোপীয় কমিশনের (ইসি) পরিসংখ্যান অধিদপ্তর ইউরোস্ট্যাট এ নিয়ে কিছু তথ্য প্রকাশ করেছে।
যাতে বলা হয়েছে, ইইউভুক্ত দেশগুলোয় ২০০৮ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত অবৈধভাবে প্রবেশ করেছেন মোট ৯৩ হাজার ৪৩৫ জন বাংলাদেশি। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেন ২০১৫ সালে, ২১ হাজার ৪৬০ জন। ২০১২ সালে ইউরোপে যান ১৫ হাজার ৩৬০ জন বাংলাদেশি। বাংলাদেশ এতদিন এ সংখ্যাকে অবিশ্বাস্য মনে করতো। কিন্তু গতকালের আলোচনায় সেই সংখ্যা ধরেই প্রস্তুতি নেয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এমজমিন