হাওর বার্তা ডেস্কঃ ২০০৪ সালের ডিসেম্বর মাস। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর মন্ত্রণালয়ে জরুরি বৈঠকে বসেছেন। স্বরাষ্ট্র সচিব, আইজি, র্যাবের ডিজি সহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত। বৈঠক কেবল শুরু হয়েছে। এমন সময় বেজে উঠল বাবরের ফোন। একটু বিরক্ত হয়ে ফোনের দিকে তাকালেন। ফোন নাম্বার দেখে ভরা মিটিংয়ে লাফিয়ে উঠে ফোনটা ধরলেন। বললেন জ্বী, ভাইয়া’ তারপর শুধু জ্বী জ্বী। আমি এক্ষুনি বেরুচ্ছি। ব্যস। আনুষ্ঠানিকভাবে মিটিং শেষ না করেই প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে বেরুলেন। বাইরে দাঁড়ানো আট-দশজন মিডিয়া কর্মীকে প্রায় ধাক্কা দিয়েই লিফটের কাছে চলে গেলেন। তার পিএস এপিএস সহ ব্যক্তিগত স্টাফরা পড়িমড়ি করে ছুটছেন তাঁর পেছনে। গাড়িতে উঠেই বললেন এয়ারপোর্টে যাও। গাড়িতে উঠেই এয়ারপোর্টে মেসেজ পাঠাতে শুরু করলেন। ভিআইপি আসবে এমিরেটসে… ইত্যাদি ইত্যাদি। এয়ারপোর্ট পৌঁছে শীতের মধ্যেই ঘাম মুছলেন বাবর। ভিআইপি লাউঞ্জ দিয়ে যখন ঢুকছেন, তখনই এমিরেটসের প্লেন ল্যান্ড করল। বাবর প্রায় দৌড়াতে দৌড়াতে বোডিং ব্রিজের কাছে দাঁড়ালেন। ততক্ষণে বোডিং ব্রিজ মোটামুটি ঘিরে ফেলেছে নিরাপত্তা রক্ষীরা। হঠাৎ বাবরের মনে হলো ফুল লাগবে। একজনকে বললেন, একটা ফুলের তোড়া জোগাড় কর। বোডিং ব্রিজ খুলল। প্রথম যাত্রী যিনি বেরিয়ে এলেন তিনি হলেন শিল্পা শেঠী। ভারতের গ্লামারাস নায়িকা। উচ্চতায় বাবরের চেয়ে ভালোই লম্বা। বাবর তাঁর সঙ্গে হাত মেলালেন। কেউ কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাঁকে নিয়ে ছুটলেন ভিআইপি লাউঞ্জের দিকে। ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হলো নিমিষেই। বাবর তাঁকে নিয়ে তাঁর গাড়িতে ওঠালেন। গাড়ি ছুটল টঙ্গীর দিকে, গাজীপুরে গিয়ে গাড়ি ঢুকল এক বিলাসবহুল রাজপ্রাসাদের মতো বাড়িতে। বাড়িটির নাম খোয়াব। বাড়ির ভেতরের গেটে গাড়ি থেকে নামলেন শিল্পা, তাঁকে রিসিভ করলেন তারেক জিয়া, তাঁর সঙ্গী গিয়াসউদ্দিন আল মামুন। শিল্পা শেঠী দুই দিন বাংলাদেশ ছিলেন, তিনি কোনো শো করেন নি, শপিংয়েও না। আসলে ওই দুই দিন ‘খোয়াব’ বাড়ি থেকে তিনিই বেরই হননি। শিল্পা শেঠী যেমন খোয়াবেই ছিলেন, তেমনি ওই দুইদিন খোয়াবেই ছিলেন তারেক এবং মামুন। দুই দিন পর আবার বাবর এসে শিল্পাকে নিয়ে প্লেনে উঠিয়ে দেন।
গাজীপুরের খোয়াব ভবন ছিল এক রহস্যঘেরা বাড়ি। কারো ভেতরে ঢোকা তো দূরের কথা। ওই বাড়ির আশপাশ দিয়ে ঘোরাও যেন ছিল অপরাধ। এটা ছিল তারেক-মামুনের বিনোদন বাড়ি, জলসা মহল। এখানে মাঝে মধ্যে এসে তাঁরা হারিয়ে যেতেন। কেউ জানতো না কি হচ্ছে। শুধু শিল্পা শেঠী নয়, অনুসন্ধানে দেখা যায় ভারতীয় নায়িকা মমতা কুলকার্নিও রাতের অতিথি হয়ে এসেছিলেন ‘খোয়াব’ ভবনে। ‘হাওয়া ভবন’ আলোচনায় থাকলেও খোয়াব ছিল গোপনে। তারেক-মামুনে এই জলসা বাড়িতে ছিল অত্যাধুনিক বার, আধুনিক জিম, ড্রান্স ফ্লোর সহ ৫ তারকা হোটেলের সব সুযোগ সুবিধা। শুধু ভারতীয় নায়িকা নয়, বাংলাদেশেরও অনেক খ্যাতিমান নায়িকা খোয়াব ভবনে গিয়ে ধন্য হতেন। কেউ আসতে না চাইলে তাকে হয়রানি করা হতো। শুধু দেশি তারকা নয়, বিদেশি তারকারাও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ সম্ভবত, ‘মেইড ইন ইন্ডিয়া’ খ্যাত আলিশা। ২০০৫ সালে আলিশা ঢাকায় এসেছিলেন কনসার্ট করতে। ঢাকায় পাঁচ তারকা হোটেলে পৌছানোর পরই আয়োজককে জানানো হয় আলিশাকে খোয়াবে যেতে হবে। ভাইয়া মিট করবেন। আয়োজক বেচারা বুঝতে পারেনি ‘ভাইয়া’ টা কে? পাত্তা দেননি। এক ঘণ্টা পর পুলিশ এসে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় আয়োজককে। অভিযোগ অনুমতি ছাড়া কনসার্টের আয়োজন। এরপর আলিশাকে বলা হয় গাজীপুরে যেতে। এরকম প্রস্তাবে তো আলিশা হতবাক। তিনি শরণাপন্ন হন ভারতীয় দূতাবাসের। ভারতীয় দূতাবাস, খোঁজ খবর নিয়ে ঘটনা বুঝতে পারে। তারা পররাষ্ট্র দপ্তর কে কঠোরভাবে জানিয়ে দেয়, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। পরদিন সকালে আলিশা এবং কনসার্টের অন্য অংশগ্রহনকারীরা ভারতে চলে যান।
তারেক রহমানের বালাখানা খোয়াব ভবন এখন ভুতুড়ে বাড়ির মতো পরে আছে। আর সবার পরিণতি তো সবাই জানে।