সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদের একপর্যায়ে ফরহাদ মজহার পুলিশকে দোষারোপ করে বলেন, পুলিশ তাঁর মানসম্মান শেষ করে দিয়েছে। এর জবাবে ডিবি কর্মকর্তারা বলেন, তাঁরা তদন্তের বিষয় গোপন রেখেছেন। পুলিশের পক্ষ থেকে কাউকে কোনো তথ্য দেওয়া হয়নি।
এদিকে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, ফরহাদ মজহার নিরুদ্দেশ হওয়ার ঘটনায় জবানবন্দিতে অপহরণের যে তথ্য দেওয়া হয়েছে তা মিথ্যা হয়ে থাকলে তাঁর বিরুদ্ধে কী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ডিবির পক্ষ থেকে গত সোমবার ফরহাদ মজহারকে নোটিশ দিয়ে বলা হয়েছিল, মঙ্গলবার তাঁর সঙ্গে কথা বলতে চান তদন্তকারীরা। সে অনুযায়ী গতকাল সকাল ১১টায় ফরহাদ মজহার তাঁর স্ত্রীকে নিয়ে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ে যান। পরে আড়াই ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করে তাঁকে বিদায় দেওয়া হয়েছে।
রাজধানীর শ্যামলীর রিং রোডের নিজ বাসা থেকে গত ৩ জুলাই ভোর ৫টা ৫ মিনিটে বেরিয়ে গিয়েছিলেন ফরহাদ মজহার। ওই দিন সকাল ১০টার দিকে তাঁর স্ত্রী ফরিদা আখতার আদাবর থানাকে জানান, ফরহাদ মজহারকে অপহরণ করা হয়েছে। পরে পুলিশ, র্যাবসহ গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা মাঠে নামেন। প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাঁরা জানতে পারেন তিনি খুলনায় রয়েছেন। তাঁকে উদ্ধার করতে ওই দিন সন্ধ্যায় খুলনা শহরের বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হয়। অবশেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে যশোরের অভয়নগর এলাকায় হানিফ পরিবহনের একটি বাস থেকে তাঁকে উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। পরদিন তাঁকে ঢাকায় এনে ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ওই সময় তিনি দাবি করেছিলেন, তিন ব্যক্তি তাঁকে অপহরণ করে মাইক্রোবাসে তুলে চোখ বেঁধে নিয়ে গিয়েছিল। তাঁকে একটি বাসের টিকিট দিয়ে খুলনায় নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেদিন আদালতেও একই ধরনের বক্তব্য দেন ফরহাদ মজহার।
তবে পুলিশ তদন্তে নেমে তাঁর ওই বক্তব্যের সত্যতা পায়নি। বরং ফরহাদ মজহার নিজেই অপহরণ নাটক সাজান বলে মন্তব্য করেন পুলিশের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তারা। এ কারণে দ্বিতীয়বার তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চেষ্টা করা হচ্ছিল। কিন্তু ফরহাদ মজহার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকায় তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করা সম্ভব হয়নি। অবশেষে গত বুধবার তিনি বাসায় ফেরেন। এরপর পুলিশ গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়। ওই অবস্থায় গত সোমবার ফরহাদ মজহারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিশ দেওয়া হয়। সেই নোটিশ পেয়ে তিনি গতকাল তাঁর স্ত্রী এবং তাঁর অফিসের এক কর্মীকে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে যান। তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক মাহবুবুল হক তাঁকে কার্যালয়ের ভেতরে নিয়ে যান। তাঁর স্ত্রী ও অফিসের কর্মী বাইরে অবস্থান করেন।
ডিবি সূত্রে জানা যায়, তদন্ত কর্মকর্তা ছাড়াও ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জিজ্ঞাসাবাদ করেন ফরহাদ মজহারকে। সূত্র মতে, জিজ্ঞাসাবাদের বেশির ভাগ সময় চুপ থাকেন ফরহাদ মজহার। একপর্যায়ে তাঁকে খুলনা এলাকায় ঘোরাফেরা করার সময় ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরায় ধরা পড়া ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়। তিনি কিভাবে বাসা থেকে বেরিয়ে খুলনায় গেলেন সে বিষয়ে সঠিক তথ্য দিতে বলা হলে ফরহাদ মজহার জানান, তিনি আদালতে যে জবানবন্দি দিয়েছেন তাই তাঁর কথা। এর বাইরে কিছু থাকলে পুলিশ তদন্ত করে বের করতে পারে।
ফরহাদ মজহার চলে যাওয়ার পর ডিবির যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন সাংবাদিকদের বলেন, ‘তিনি যদি সত্যিকার অর্থে অপহৃত হয়ে থাকেন, তাহলে একমাত্র সাক্ষী তিনি নিজেই এবং যারা অপহরণ করেছে তারা। এই পর্যন্ত তদন্তে আমাদের মনে হয়েছে, তিনি অপহৃত হননি। ’ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বাতেন বলেন, ‘আমাদের হাতে যে তথ্য এসেছে, তাতে মনে হচ্ছে তিনি অপহৃত হননি। ১৬৪ ধারার জবানবন্দি এবং সেই সঙ্গে উনার কার্যকলাপ ও আমাদের কাছে থাকা তথ্যের মধ্যে কোনো মিল নাই। ’ সে ক্ষেত্রে পুলিশের পরবর্তী করণীয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কেউ মিথ্যা তথ্য দিলে, মিথ্যা অভিযোগে মামলা করলে পেনাল কোডের (দণ্ডবিধি) ২১১ ধারায় তার বিরুদ্ধে মামলা করার বিধান রয়েছে। সব প্রক্রিয়া যাচাই করে দেখে আইনগতভাবে কিভাবে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা দেখা হবে। ’
ফরহাদ মজহার আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেছিলেন, ভোরে তিনি চোখের ড্রপ কেনার জন্য বাসা থেকে বের হন। পরে তাঁকে রাস্তা থেকে তিন লোক জোর করে মাইক্রোবাসে তুলে নেয়। এরপর তিনি তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য ৩৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দিতে রাজি হন এবং টাকা দেওয়ার জন্য তাঁর স্ত্রীকে ফোন করেন।