ঢাকা ০৯:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

এবার ঢাকার ১৮ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে চিকুনগুনিয়ায়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১২:৫২:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০১৭
  • ২৭৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  এই সময়ে খুব শোনা যাচ্ছে একটি রোগের নাম, চিকুনগুনিয়া। জ্বর হলেই অনেকে আতঙ্কিত হচ্ছেন, চিকুনগুনিয়া নয়তো? চিকুনগুনিয়া আসলে ভাইরাসের নাম। এই ভাইরাস প্রাণঘাতী নয়। তবে যথেষ্ট ভোগান্তির কারণ হতে পারে। লক্ষণ অনেকটা ডেংগু জ্বরের মতো।

তবে এই রোগে জ্বরের সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে। তবে কখনো কখনো গিঁটের ব্যথা কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরের বেশি সময় থাকতে পারে। আর শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজে অনীহা দেখা দেয়। উদ্যম বা শারীরিক-মানসিক শক্তিও কমে যায়।

এ রোগ ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। এখানেও ডেঙ্গুর সঙ্গে মিল। ঢাকা শহরে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর প্রাদুর্ভাব চলবে। এ বছর প্রতি ১০ জনে ১ জনের চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে এবার শহরের কমপক্ষে ১৮ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

২০১১ সাল থেকে চিকুনগুনিয়া নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) করা তিনটি জরিপের ওপর ভিত্তি করে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আইইডিসিআর জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মুঠোফোনে একটি জরিপ করেছিল। ৪ হাজার ৭৭৫ জনের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছিল। তাদের মধ্যে ৩৫৭ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এই হিসাবে আক্রান্তের হার সাড়ে ৭ শতাংশ। এই সংখ্যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় উল্লেখ করেছিল আইইডিসিআর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনো এ ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। এই জরিপ অনুযায়ী, জনসংখ্যার হিসাবে ইতিমধ্যে আক্রান্তর সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার।

আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, ২০১১ সালে ঢাকার দোহার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে চিকুনগুনিয়া নিয়ে দুটি এবং ২০১৩ সালে ঢাকা শহরের চারটি থানায় ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। এসব জরিপের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ বছর ঢাকা শহরের লোকসংখ্যার ১০ শতাংশ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্সের জনসংখ্যা বিভাগ বলছে, ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ১ কোটি ৮২ লাখ ৩৭ হাজার। ওই সংখ্যার ভিত্তিতে বলা যায়, ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ঢাকা শহরে ১৮ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষের চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

তবে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ওই জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘ঢাকা শহরে ১০ জনে ১ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে—এই তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না।’ এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা বেশি থাকার কারণে কেউ দ্রুত সেরে উঠেন আবার কারো সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগে। চিকুনগুনিয়ার প্রতিক্রিয়া কারো দেহে দীর্ঘ দিন থাকে আবার কেউ ১০ বা ১২ দিন পরই সেরে ওঠে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বর্ষা মৌসুমে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এবছর অনেকটা অসময়েই এই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার একেবারেই নেই বলে এনিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আর এই ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেতে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য তাদের।

জানা যায়, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে আইইডিসিআর (জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট) বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনও বাংলাদেশি পাওয়া যায়নি। পরে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড জ্বর, কখনও কখনও সেটা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি কিংবা তারও বেশি হতে পারে। পাশাপাশি সর্দি, হাত ও পায়ের গিঁটে ব্যথা বা ফোসকা পড়ার মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়। এ রোগে অনেক সময় ব্যথায় শরীর বেঁকে যায় বলে স্থানীয়ভাবে এটাকে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলেও অভিহিত করা হয়। এছাড়া, মাথা ব্যথা, গায়ের কোনও কোনও অংশে র‌্যাশ ওঠাও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ। আর চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোনও টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি বলেও জানান তারা।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে স্বীকার করছেন। তিনি ঢাকা শহরে কী পরিমাণ চিকুনগুনিয়ার রোগী আছে এর নির্ণয় করবেন বলে মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা সম্বন্ধে আমাদের কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কী পরিমাণ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। এ জন্য আমাদের প্রত্যেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এলাকাগুলোয় জরিপ শুরু করতে। আমরা আশা করছি খুব শিগগির এ বিষয়ে একটা ফল পাব।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

এবার ঢাকার ১৮ লাখ মানুষ আক্রান্ত হতে পারে চিকুনগুনিয়ায়

আপডেট টাইম : ১২:৫২:১৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  এই সময়ে খুব শোনা যাচ্ছে একটি রোগের নাম, চিকুনগুনিয়া। জ্বর হলেই অনেকে আতঙ্কিত হচ্ছেন, চিকুনগুনিয়া নয়তো? চিকুনগুনিয়া আসলে ভাইরাসের নাম। এই ভাইরাস প্রাণঘাতী নয়। তবে যথেষ্ট ভোগান্তির কারণ হতে পারে। লক্ষণ অনেকটা ডেংগু জ্বরের মতো।

তবে এই রোগে জ্বরের সঙ্গে অস্থিসন্ধিতে ব্যথা থাকে। তবে কখনো কখনো গিঁটের ব্যথা কয়েক মাস এমনকি কয়েক বছরের বেশি সময় থাকতে পারে। আর শরীর প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। কাজে অনীহা দেখা দেয়। উদ্যম বা শারীরিক-মানসিক শক্তিও কমে যায়।

এ রোগ ছড়ায় এডিস মশার মাধ্যমে। এখানেও ডেঙ্গুর সঙ্গে মিল। ঢাকা শহরে চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ বেড়েছে। ইতিমধ্যে বিপুলসংখ্যক মানুষ এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত এর প্রাদুর্ভাব চলবে। এ বছর প্রতি ১০ জনে ১ জনের চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সব মিলিয়ে এবার শহরের কমপক্ষে ১৮ লাখ মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

২০১১ সাল থেকে চিকুনগুনিয়া নিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) করা তিনটি জরিপের ওপর ভিত্তি করে এই আশঙ্কা করা হচ্ছে।

আইইডিসিআর জুনের মাঝামাঝি থেকে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত মুঠোফোনে একটি জরিপ করেছিল। ৪ হাজার ৭৭৫ জনের তথ্য তারা সংগ্রহ করেছিল। তাদের মধ্যে ৩৫৭ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ছিল। এই হিসাবে আক্রান্তের হার সাড়ে ৭ শতাংশ। এই সংখ্যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সভায় উল্লেখ করেছিল আইইডিসিআর। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখনো এ ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেনি। এই জরিপ অনুযায়ী, জনসংখ্যার হিসাবে ইতিমধ্যে আক্রান্তর সংখ্যা ১৩ লাখ ৬৭ হাজার।

আইইডিসিআরের সাবেক পরিচালক মাহমুদুর রহমান এক জাতীয় দৈনিককে বলেন, ২০১১ সালে ঢাকার দোহার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে চিকুনগুনিয়া নিয়ে দুটি এবং ২০১৩ সালে ঢাকা শহরের চারটি থানায় ডেঙ্গুর সঙ্গে চিকুনগুনিয়ার পরিস্থিতি নিয়ে একটি জরিপ করা হয়। এসব জরিপের অভিজ্ঞতা থেকে বলা যায়, এ বছর ঢাকা শহরের লোকসংখ্যার ১০ শতাংশ পর্যন্ত এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল অ্যাফেয়ার্সের জনসংখ্যা বিভাগ বলছে, ঢাকা শহরের জনসংখ্যা ১ কোটি ৮২ লাখ ৩৭ হাজার। ওই সংখ্যার ভিত্তিতে বলা যায়, ১০ শতাংশ, অর্থাৎ ঢাকা শহরে ১৮ লাখ ২৩ হাজারের বেশি মানুষের চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে।

তবে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ওই জাতীয় দৈনিককে বলেন, ‘ঢাকা শহরে ১০ জনে ১ জন চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হতে পারে—এই তথ্যের সঙ্গে আমি একমত না।’ এর বাইরে আর কোনো মন্তব্য করতে তিনি অপারগতা প্রকাশ করেন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, চিকুনগুনিয়া আক্রান্তদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম বা বেশি থাকার কারণে কেউ দ্রুত সেরে উঠেন আবার কারো সেরে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগে। চিকুনগুনিয়ার প্রতিক্রিয়া কারো দেহে দীর্ঘ দিন থাকে আবার কেউ ১০ বা ১২ দিন পরই সেরে ওঠে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাধারণত জুন-জুলাইয়ে বর্ষা মৌসুমে এ রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও এবছর অনেকটা অসময়েই এই রোগ দেখা দিয়েছে। তবে চিকুনগুনিয়াতে আক্রান্ত রোগীদের মৃত্যুর হার একেবারেই নেই বলে এনিয়ে ভয়ের কিছু নেই। আর এই ভাইরাসের হাত থেকে রেহাই পেতে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য তাদের।

জানা যায়, ২০০৫ সালে ভারতে চিকুনগুনিয়া ভয়াবহ রূপ নিলে আইইডিসিআর (জাতীয় রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইন্সটিটিউট) বাংলাদেশে জরিপ চালায়। তখন এ রোগে আক্রান্ত কোনও বাংলাদেশি পাওয়া যায়নি। পরে ২০০৮ সালে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগী পাওয়া গিয়েছিল।

চিকিৎসকরা বলছেন, চিকুনগুনিয়ার উপসর্গের মধ্যে রয়েছে প্রচণ্ড জ্বর, কখনও কখনও সেটা ১০৪ থেকে ১০৫ ডিগ্রি কিংবা তারও বেশি হতে পারে। পাশাপাশি সর্দি, হাত ও পায়ের গিঁটে ব্যথা বা ফোসকা পড়ার মতো লক্ষণগুলোও দেখা যায়। এ রোগে অনেক সময় ব্যথায় শরীর বেঁকে যায় বলে স্থানীয়ভাবে এটাকে ‘ল্যাংড়া জ্বর’ বলেও অভিহিত করা হয়। এছাড়া, মাথা ব্যথা, গায়ের কোনও কোনও অংশে র‌্যাশ ওঠাও চিকুনগুনিয়ার লক্ষণ। আর চিকুনগুনিয়া জ্বরের কোনও টিকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি বলেও জানান তারা।

এদিকে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়রও চিকুনগুনিয়ার প্রকোপ ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বলে স্বীকার করছেন। তিনি ঢাকা শহরে কী পরিমাণ চিকুনগুনিয়ার রোগী আছে এর নির্ণয় করবেন বলে মিডিয়ার সাথে সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, চিকুনগুনিয়া রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা সম্বন্ধে আমাদের কাছে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। তাই ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে কী পরিমাণ মানুষ চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত সে বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। এ জন্য আমাদের প্রত্যেক আঞ্চলিক কর্মকর্তা ও কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে এলাকাগুলোয় জরিপ শুরু করতে। আমরা আশা করছি খুব শিগগির এ বিষয়ে একটা ফল পাব।