ঢাকা ০৭:৫৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ২ মাঘ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

গৃহহীন মানুষের স্বপ্নের নীড়

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ০৮:২০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭
  • ৪৫৭ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  পিয়ারা বেগম। বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে। বিশ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানসহ আলাদা করে দেয়া হয় পিয়ারাকে। অভাবের সংসারে স্ত্রী সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেননি পিয়ারার স্বামী। তাই নিজের বলতে পিয়ারার ছিল কাবিনের সাত শতক জমিই মাত্র। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য তখন আর ওই জমিতে ঘর তুলতে পারেননি পিয়ারা। স্বামীর বাড়িতেই আলাদা একটি খুপরি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন পিয়ারার  দেবর। স্বপ্ন ছিল কাবিনের ওই জমিতে একটি ঘর করবেন। কিন্তু নুন আনতে পানতা ফুরানোর সংসারে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছিল না পিয়ারার। গত চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পিয়ারাকে সরকারি খরচে কাবিনের জমিতে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
পিয়ারার মতো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে একই গ্রামের ৬৫ বছর বয়সের আয়াতুননেছার। জীবনের ৩০টি বছর মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়েছেন আয়াতুননেছা। নিজের বলতে ছিল তিন শতক জমিতে একটি টিনের ঘর। সেই ঘরের চাল দিয়ে বর্ষায় অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়তো। আবার শীতের সময় টিনের ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকতো কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। দিন কেটে যেত এভাবেই। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় ১০ বছর ধরে আর আয়াতুননেছা কাজে যেতে পারেন না। একটু একটু করে একদিন  পুরো ঘরটাই ভেঙ্গে পড়লো। এদিকে কাজে যেতে না পারায় ভাঙা ঘরটি আর মেরামত করাতে পারেননি তিনি। তাই সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ অসুস্থ স্বামী জাহিদ মিয়াকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আয়াতুননেছা। নিজের ভিটেতে আবারো নতুন করে ঘর তুলবেন, এটা ছিল নিকট স্বপ্নের মতো।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় এ উপজেলায় সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের দশটি পরিবারকে  সরকারি খরচে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোশশেরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চলতি বছরের (২২ মার্চ) প্রেরিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সবার জন্য বাসস্থান’ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নামে প্রকল্পের এক পত্রে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে কোনো লোক গৃহহীন থাকবে না। সেটির অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে এ পাইলট প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮টি বিভাগের ৮টি উপজেলাকে এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র উপজেলা হিসেবে শ্রীমঙ্গলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় তিনটি ক্যাটাগরিতে ৯ হাজার ১২০ জনের গৃহহীনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। ক, খ ও গ এই তিনটা ক্যাটাগরি আছে। যেমন: যার জমিও নাই ঘর নাই এরা ক ক্যাটাগরী, যার জমি আছে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কিন্তু ঘর নাই তার হচ্ছে খ ক্যাটাগরি আর গ ক্যাটাগরি হলো যার জমিও নাই ঘর নাই কিন্তু একটি ঘর তোলার জন্য কমপক্ষে ১ শতাংশ জমি ব্যবস্থা করতে পারবে।
নিয়ম হলো যে, যার জমিও নাই ঘর নাই তার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিল্ডিং তৈরি করে ব্যারাকে ডেকে পাঠানো হবে। আর যার ১ শতক জমি আছে কিন্তু ঘর নাই তাকে সরকার ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ঘর তৈরি করে দেবে। এরকম আছে ২ হাজার ৮৫০ জন শ্রীমঙ্গলে। আর যার জমিও নাই ঘর নাই কিন্তু একটি ঘর তোলার জন্য কমপক্ষে ১ শতাংশ জমি ব্যবস্থা করতে পারবে এরকম গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা আছে ২১৫টি। আর ২-৩ শতক জমি যাদের রয়েছে তাদেরকে প্রথম পর্যায়ে ও খাসজমি যাদের আছে তাদের ২য় পর্যায়ে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হবে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

গৃহহীন মানুষের স্বপ্নের নীড়

আপডেট টাইম : ০৮:২০:৪১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ জুলাই ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  পিয়ারা বেগম। বাড়ি শ্রীমঙ্গল উপজেলার সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামে। বিশ বছর আগে স্বামী মারা যাওয়ার পর দুই সন্তানসহ আলাদা করে দেয়া হয় পিয়ারাকে। অভাবের সংসারে স্ত্রী সন্তানদের জন্য কিছুই রেখে যেতে পারেননি পিয়ারার স্বামী। তাই নিজের বলতে পিয়ারার ছিল কাবিনের সাত শতক জমিই মাত্র। আর্থিক অসচ্ছলতার জন্য তখন আর ওই জমিতে ঘর তুলতে পারেননি পিয়ারা। স্বামীর বাড়িতেই আলাদা একটি খুপরি ঘরে থাকার ব্যবস্থা করে দেন পিয়ারার  দেবর। স্বপ্ন ছিল কাবিনের ওই জমিতে একটি ঘর করবেন। কিন্তু নুন আনতে পানতা ফুরানোর সংসারে সেই স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছিল না পিয়ারার। গত চলতি বছরের এপ্রিল মাসে পিয়ারাকে সরকারি খরচে কাবিনের জমিতে একটি সেমিপাকা ঘর নির্মাণ করে দেয়া হয়েছে।
পিয়ারার মতো স্বপ্ন পূরণ হয়েছে একই গ্রামের ৬৫ বছর বয়সের আয়াতুননেছার। জীবনের ৩০টি বছর মানুষের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালিয়েছেন আয়াতুননেছা। নিজের বলতে ছিল তিন শতক জমিতে একটি টিনের ঘর। সেই ঘরের চাল দিয়ে বর্ষায় অঝর ধারায় বৃষ্টি পড়তো। আবার শীতের সময় টিনের ফাঁক দিয়ে ঘরে ঢুকতো কনকনে ঠাণ্ডা হাওয়া। দিন কেটে যেত এভাবেই। কিন্তু বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে পড়ায় ১০ বছর ধরে আর আয়াতুননেছা কাজে যেতে পারেন না। একটু একটু করে একদিন  পুরো ঘরটাই ভেঙ্গে পড়লো। এদিকে কাজে যেতে না পারায় ভাঙা ঘরটি আর মেরামত করাতে পারেননি তিনি। তাই সত্তর বছর বয়সের বৃদ্ধ অসুস্থ স্বামী জাহিদ মিয়াকে নিয়ে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন আয়াতুননেছা। নিজের ভিটেতে আবারো নতুন করে ঘর তুলবেন, এটা ছিল নিকট স্বপ্নের মতো।
শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ‘যার জমি আছে ঘর নেই তার নিজ জমিতে গৃহ নির্মাণ প্রকল্পের’ আওতায় এ উপজেলায় সদর ইউনিয়নের পশ্চিম ভাড়াউড়া গ্রামের দশটি পরিবারকে  সরকারি খরচে ঘর বানিয়ে দেয়া হয়েছে। শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মোশশেরুল ইসলাম জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে চলতি বছরের (২২ মার্চ) প্রেরিত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সবার জন্য বাসস্থান’ আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ নামে প্রকল্পের এক পত্রে এ ঘোষণা দেওয়া হয়েছে বাংলাদেশে কোনো লোক গৃহহীন থাকবে না। সেটির অংশ হিসেবে প্রাথমিকভাবে এ পাইলট প্রকল্পের আওতায় দেশের ৮টি বিভাগের ৮টি উপজেলাকে এ প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এর মধ্যে সিলেট বিভাগের মধ্যে একমাত্র উপজেলা হিসেবে শ্রীমঙ্গলকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে শ্রীমঙ্গল উপজেলায় তিনটি ক্যাটাগরিতে ৯ হাজার ১২০ জনের গৃহহীনের তালিকা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়েছি। ক, খ ও গ এই তিনটা ক্যাটাগরি আছে। যেমন: যার জমিও নাই ঘর নাই এরা ক ক্যাটাগরী, যার জমি আছে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ কিন্তু ঘর নাই তার হচ্ছে খ ক্যাটাগরি আর গ ক্যাটাগরি হলো যার জমিও নাই ঘর নাই কিন্তু একটি ঘর তোলার জন্য কমপক্ষে ১ শতাংশ জমি ব্যবস্থা করতে পারবে।
নিয়ম হলো যে, যার জমিও নাই ঘর নাই তার জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের বিল্ডিং তৈরি করে ব্যারাকে ডেকে পাঠানো হবে। আর যার ১ শতক জমি আছে কিন্তু ঘর নাই তাকে সরকার ৭৫ হাজার টাকা দিয়ে ঘর তৈরি করে দেবে। এরকম আছে ২ হাজার ৮৫০ জন শ্রীমঙ্গলে। আর যার জমিও নাই ঘর নাই কিন্তু একটি ঘর তোলার জন্য কমপক্ষে ১ শতাংশ জমি ব্যবস্থা করতে পারবে এরকম গৃহহীন পরিবারের সংখ্যা আছে ২১৫টি। আর ২-৩ শতক জমি যাদের রয়েছে তাদেরকে প্রথম পর্যায়ে ও খাসজমি যাদের আছে তাদের ২য় পর্যায়ে গৃহনির্মাণ করে দেওয়া হবে।