হাওর বার্তা ডেস্কঃ ছোটবেলায় আমরা মাটি দূষণের অন্যতম কারণ হিসেবে জেনে এসেছি মাটিতে রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ঔষধের ব্যবহার। অথচ আশ্চর্যজনকভাবে এদুটি উপাদান ব্যবহারে পরামর্শ বা উৎসাহ দিয়ে আসছে আমাদেরকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। উৎসাহ না ঠিক, রীতিমত বাধ্যই করা হয়েছে আমাদের। যেমন আশির দশকে বিশ্বব্যাংকের মত আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো যখন ব্যাঙের মাংস রপ্তানীর টোপ দিল আর টোপে সাড়া দিয়ে সরকার যখন ব্যাঙের মাংস রফতানি আরম্ভ করল ঠিক তার পরের বছরই দেখা গেল যে কৃষিক্ষেত্রে উৎপাদন কমে গেল লক্ষ্যণীয় মাত্রায়। আর তখনই নতুন আরেক মেন্যুফেস্টো নিয়ে হাজির হল সেই আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো, কৃষিক্ষেত্রে যদি উৎপাদন বাড়াতে চাই তাহলে রাসায়নিক সার ও উন্নত কীটনাশকের ব্যবহার বাড়াতে হবে।
তারা যে শুধু পরামর্শ দিয়েই ক্ষান্ত হল তা না বরং এ খাতে অর্থায়ন করাও শুরু করল। এবং কৃষক বেশি ফসলের আশায় এগুলো ব্যবহার করতে থাকলোআর এদের উপর নির্ভরশীলও হয়ে উঠল। এখন দেখা যায় কোন কৃষক যদি অর্থাভাবে এগুলো কিনতে না পারে তবে তার জমিতে ঠিক মত ফসল হয় না। এটাতো গেল পুঁজিবাদের দৃশ্যমান একটি পরিস্থিতি। কিন্তু অদৃশ্যে বা আমাদের দৃষ্টির সামনে থেকেও যে জিনিসটা ঐ একই কাজ করে যাচ্ছে, সেটার কি হবে? আমরা সকলেই একটি স্লোগানের সাথে পরিচিত, “গাছ লাগান পরিবেশ বাঁচান”। ইউক্যালিপটাস, একাশিয়া, শিশু, রেইনট্রি, মেহগনির মত ক্ষতিকর (আমাদের পরিবেশের জন্য) গাছ লাগিয়ে ঘন্টা পরিবেশ বাঁচানো হচ্ছে। যদিও এখানে ঠিক নিজেদেরকে দোষ দেয়া যায় না কিন্তু এ সমস্ত গাছ নাম মাত্র মূল্যে, অনেক সময় তো মাগনাই বিতরন করে যাচ্ছে আমাদের বন বিভাগ।
ফলদ বাংলাদেশ এ গাছগুলোর কিছু বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছে__
ইউক্যালিপটাস- দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ। যার পাতা এন্টিসেপ্টিক গুন সমৃদ্ধ।
একাশিয়া- এটিও দ্রুত বর্ধনশীল একটি গাছ।
মেহগনি- এটি দ্রুত বর্ধনশীল গাছ নয় তবে এর বীজ কীটনাশক হিসেবে কার্যকরী।
এসব বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলে এসব গাছকে লাভজনক বলেই মনে হয় তবে আশংকার বিষয় হচ্ছে একটি পুর্ণ বয়ষ্ক ইউক্যালিপটাস দিনে ৯০ লিটারের বেশি পানি শোষণ করে থাকে।
তাছাড়া এই গাছ বায়ুমণ্ডল থেকে অক্সিজেন গ্রহণ ও কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ করে থাকে।
রেইন্ট্রির পাতা আমাদের মাটির ব্যাকটেরিয়া সহজে পচাতে পারে না। এটা অনেকটা প্লাস্টিকের মতো, তাই পুকুরের মাছ ও জমির উর্বরতা নষ্ট করে থাকে। তাছাড়াও এটি অনেক জায়গা জুড়ে বিস্তৃত হয় বলে এটি একটি রাক্ষুসে প্রজাতির গাছ যা অন্য কোন উদ্ভিদকে বাড়তে দেয় না।
আর যেহেতু এর পাতা এন্টিসেপ্টিক গুন সমৃদ্ধ তার মানে এই পাতা মাটিতে মিশলে মাটিতে বাসবাসকৃত কীটপতঙ্গ ও অণুজীবের ধ্বংস করবে এটাই স্বাভাবিক। এবং যে পরিমানে এরা মাটি থেকে পানি শোষণ করে থাকে তাতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাবে আর দীর্ঘকালীন সময়ে এটাই মরুতার সৃষ্টি করবে। মেহগনি গাছের বীজ থেকে খুব সহজেই ভাল কীটনাশক প্রস্তুত করা যায়।
এ থেকে খুব সহজেই আন্দাজ করা যায় এ গাছের বীজ যখন মাটিতে মিশতে শুরু করে তখন মাটিস্থ অনুজীব বা কীটপতঙ্গের অবস্থা কি হতে পারে। তাছাড়া একাশিয়ার ফুল হতে এক ধরনের রেণু নিঃসরণ হয় যা মানব দেহে এজ্যমার মত রোগের সৃষ্টি করে। এছাড়া এসব গাছ নিজের মত করে বাড়ে অর্থাৎ এদের নিচে অন্য কোন গাছ বেড়ে ওঠে না। এসব গাছে পাখিরা বাসা বাধতে পারে না। এমনকি কোন কোন গাছে এরা বসে না পর্যন্ত।
গাছ লাগানোর আগে ভাবতে হবে আমরা কি পরিবেশ বাঁচাতে গাছ লাগাবো নাকি পরিবেশ ধবংস করতে। আর এ অবস্থার যদি পরিবর্তন না হয় তবে আগামী কয়েক দশকের মধ্যেই যে আমরা উট নিয়ে উত্তর বঙ্গ ভ্রমণে বের হতে পারব এমনটা আশা করা যেতেই পারে। এবং অন্য দিকে দক্ষিণ বঙ্গে আবাদি জমিতে ফসলহীন কৃষকের কতগুলো ভাল ভাল পোট্রেটও বানানো হয়ে যাবে!! আর আমাদের আমদানি নির্ভর অর্থনীতি ঐ সব বিদেশি সাহায্য সংস্থার অনুদান নির্ভর হয়েই থেকে যাবে।