গণতদন্ত কমিশনের ১৬ পর্যবেক্ষণ- কর্মকর্তা, ঠিকাদার ও পিআইসি’র দুর্নীতিতে হাওরে বিপর্যয়

হাওর বার্তা ডেস্কঃ  সময়মতো ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণে গাফিলতি, পানি উন্নয়ন বোর্ড, প্রজেক্ট ইমপ্লিমেন্টেশন কমিটি (পিআইসি) ও ঠিকাদারদের দুর্নীতি এবারের হাওরাঞ্চলে ভয়াবহ বিপর্যয়ের অন্যতম কারণ।
‘হাওরের পাশে বাংলাদেশ’- এর উদ্যোগে হাওরে সাম্প্রতিক মহাবিপর্যয়ের কারণ এবং সমস্যা সমাধানের স্থায়ীপথ অনুসন্ধানে গঠিত গণতদন্ত কমিশনের পর্যবেক্ষণে এ মন্তব্য করা হয়েছে। কমিশনের সদস্যরা গত ২৯ জুন থেকে ১ জুলাই পর্যন্ত হাওরাঞ্চল পরিদর্শন  শেষে শুক্রবার আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন ১৬টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন।
রাজধানীর পুরানা পল্টনের মুক্তিভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তুলে ধরা এসব পর্যবেক্ষণের পরিপ্রেক্ষিতে অনেকগুলো সুপারিশও উঠে এসেছে।
পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, হাওর রক্ষার নামে যুগ যুগ ধরে বাঁধ নির্মাণের যে প্রযুক্তি অনুসরণ করা হচ্ছে, স্থানীয়দের দৃষ্টিতে তা ‘লুটপাটের’ প্রযুক্তি হিসেবে চিহ্নিত। হাওরে ২৪ লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছে তিন লাখ পরিবার। মধ্যবিত্তরা  বেশি বিপদগ্রস্ত। তাদের সহায়তার আওতায় আনা দরকার।
পর্যবেক্ষণে ওঠে আসা সুপারিশের মধ্যে রয়েছে চাল ও অর্থ সাহায্যের পাশাপাশি চিকিৎসা এবং শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তি দেওয়া, কৃষিঋণ, এনজিও ঋণ মওকুফ, আগামী ফসল না ওঠা পর্যন্ত ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রাখা এবং ফসল মৌসুমের জন্য  কৃষি উপকরণ ও ঋণ প্রদান, গবাদিপশুর খাদ্যের ব্যবস্থা, হাওরের জলমহালগুলোর অবৈধ ইজারা বাতিল ও ভাসান পানিতে মাছ শিকারের অধিকার উন্মুক্ত করা, প্রতিবছর নির্দিষ্ট সময় (চৈত্র মাসের
১৫ তারিখ থেকে জ্যৈষ্ঠ মাসের ১৫ তারিখ পর্যন্ত) হাওরে মাছ ধরা বন্ধ রাখার ব্যবস্থা এবং সে সময় জেলেদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া, হাওরের বুক চিরে ‘আবুরা’ সড়কের নামে উঁচু বাঁধ নির্মাণ বন্ধ করা, গর্ভবতী নারীদের নিরাপদ প্রসব ও নবজাতকদের প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য সুবিধা নিশ্চিত করা এবং নৌ-যোগাযোগ বাড়ানো প্রভৃতি।
সংবাদ সম্মেলনে গণতদন্ত কমিশনের প্রধান অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘’আপাতদৃষ্টিতে হাওরের সমস্যা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মনে হলেও মানুষই এর জন্য দায়ী। মানুষের তৎপরতা প্রকৃতির সঙ্গে শত্রুতা করছে। হাওর অঞ্চলের প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, ইজারাদার, পানি উন্নয়ন বোর্ড সবার স্বার্থ সেখানে  জড়িত। তারা মুনাফা নিতে অনেক কিছু করেন।’  হাওরে স্বাস্থ্য ও শিক্ষার সমস্যা মূল সমস্যাকে উন্মোচিত করেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, ‘দেশে কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলেই সরকারসহ সংশ্লিষ্টরা শুধু ত্রাণ নিয়ে তৎপরতা  দেখান। এ নিয়ে আবার দুর্নীতিও হয়। অথচ দুর্গত এলাকার মানুষ দীর্ঘমেয়াদে সমস্যার সমাধান চান। হাওর অঞ্চলে এবার সেটাই লক্ষ্য করা গেছে।’ তিনি বলেন, যে উন্নয়ন দর্শনের কারণে সুন্দরবন বিপর্যয়ের সম্মুখীন, সে একই দর্শনের কারণে হাওরেও বিপর্যয় ঘটেছে। এর মূলে রয়েছে মুনাফা, বাণিজ্যিকীকরণ, বেসরকারিকরণ ইত্যাদি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন হাওর অঞ্চল পরিদর্শন করা ১৪ সদস্যের প্রতিনিধি দলের সদস্য আব্দুল্লা আল কাফি রতন। হাসনাত কাইয়ুমের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ডা. শাকিল আখতার, সুব্রত দাস খোকন প্রমুখ।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর