ঢাকা ০৯:৪৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ৯ পৌষ ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

অমানবিকতার কাছে হার মানছে শিক্ষা

  • Reporter Name
  • আপডেট টাইম : ১১:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭
  • ৩৩৫ বার

হাওর বার্তা ডেস্কঃঅফিস থেকে ফেরার পথে সিটি সার্ভিস বাসগুলো পেতে খুব বেগ পেতে হয়। তার উপর বাসের চেয়ে যখন লোক অধিক হয় তখন তো ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ অবস্থা তৈরি হয়। তো নাবিস্কো মোড়ে অর্ধশতাধিক অপেক্ষমান যাত্রীর সাথে আমিও ছিলাম এমন সময় একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভার দাঁড়িয়ে বললো গুলিস্তান-মতিঝিলের দিকে যাবেন?

এরকম মুহূর্তে কিছু না ভেবেই উঠে পড়লাম। পথে যেতে যেতে ড্রাইভারকে বললাম- এটাতো ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি, তাইলে আপনি এরকম সাধারণ যাত্রী উঠায়ে তো মালিকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।

উত্তরে ড্রাইভার সোজাসাপ্টা ভাবেই জানালো, ভাই আমি যেটা করছি সেটা অন্যায় তবে আপনি একটা কথার উত্তর দিতে পারবেন? আমি বললাম বলেন- সে বললো, ”রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত ডিউটি করায় কিন্তু সন্ধ্যাবেলা বা রাতের বেলা খাবারের জন্য এক টাকাও দেয় না। তারা অনেক সময় বড় বড় রেস্ট্রুরেন্টে যায়। খেয়ে দেয়ে অনেক রাত করে ফিরে আসে। কিন্তু আমি গাড়িতেই থাকি আমার কথা তো তারা ভাবে না। তাদের ভাবা কি উচিত নয়? প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা খরচ করে কিন্তু অামাকে তো ১৫ ঘন্টা ডিউটি করিয়েও এক টাকাও বেশি দেয় না।”

এ কথার উত্তর আমি দিতে পারিনি। তিনি জানালেন, দুই ঈদে এসে বেতনের অর্ধেক বোনাস দেয়। কথায় কথায় তিনি জানালেন, ”আমার মালিক তার মেয়েকে ৬০ হাজার টাকা দামের একটি ড্রেস কিনে দিয়েছেন। কিন্তু আমাকে কখনো বাড়তি এক টাকাও দেন নি। সকাল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত ডিউটি করলে আমি কি সন্ধার বা রাতের খাবারটাও পেতে পারি না?”

অন্য একটি ঘটনা- নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তার বাসায় আরেকজন বাংলাদেশি নাগরিককে তিন বছরের বেশি সময় ধরে সহিংস নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য করেছেন। কুইন্স কাউন্টির অ্যাটর্নির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত বিশদ বিবরণও রয়েছে।

ওই শ্রমিক যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর পরই অভিযুক্ত শাহেদুল ইসলাম তার পাসপোর্ট কেড়ে নেন এবং তাকে দিয়ে দৈনিক আঠারো ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করান বলেও অভিযোগ এসেছে।

আরেকটি ঘটনা- রাজধানীর এক বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসরত এক ভদ্র মহিলা জানিয়েছেন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে দেশে বড় পদে কর্মরত অবস্থায় অবসর নিয়েছেন। তিনি তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ানোর জন্য ঢাকায় তাদের একামাত্র বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ছেলে ঠিকই যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়ালেখা করে বিশাল পয়সাওয়ালা হয়েছে। গাড়ি-বাড়ি সবই হয়েছে তার কিন্তু সেখানে ঠাই হয়নি সহায় সম্বল উজাড় করে দেয়া মায়ের।

এই মা তার পেনশনের টাকা দিয়েই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাই নিয়েছেন। তিনি তার ছেলের নাম জানাতে চাননি- কারণ তিনি চাননা তার ছেলের অমর্যাদা হোক।

গৃহকর্মী নির্যাতন, বেতন কম দেয়া, বেতন আটকে রাখা, কর্মচারীদের ইচ্ছামত ব্যববহার করার এমন ঘটনা খুঁজে দেখলে আপনি অহরহ দেখতে পাবেন। আর দু:খজনক হলেও সত্য যে, এই মহান সব মানুষেরা বেশিরভাগই সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।

ব্যতিক্রম মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। অনেক ব্যক্তিরা তাদের অধীনে কর্মরতদের অনেক বাড়তি সুবিধা দেন। এমন উদাহরণও খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে। তবুও মনে দাগ কেটে যায় কিভাবে অঢেল সম্পত্তির অধিকারী এসব মানুষ অতি নগন্য কর্মচারীকে বঞ্চিত করে?

অধিকার পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। ছোট থেকে বড় সবার মনে মানবিকতার উদয় হোক। জয় হোক মানবতার।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Haor Barta24

অমানবিকতার কাছে হার মানছে শিক্ষা

আপডেট টাইম : ১১:৩৬:১৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৪ জুন ২০১৭

হাওর বার্তা ডেস্কঃঅফিস থেকে ফেরার পথে সিটি সার্ভিস বাসগুলো পেতে খুব বেগ পেতে হয়। তার উপর বাসের চেয়ে যখন লোক অধিক হয় তখন তো ‘মরার উপর খাড়ার ঘা’ অবস্থা তৈরি হয়। তো নাবিস্কো মোড়ে অর্ধশতাধিক অপেক্ষমান যাত্রীর সাথে আমিও ছিলাম এমন সময় একটি প্রাইভেট কারের ড্রাইভার দাঁড়িয়ে বললো গুলিস্তান-মতিঝিলের দিকে যাবেন?

এরকম মুহূর্তে কিছু না ভেবেই উঠে পড়লাম। পথে যেতে যেতে ড্রাইভারকে বললাম- এটাতো ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ি, তাইলে আপনি এরকম সাধারণ যাত্রী উঠায়ে তো মালিকের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন।

উত্তরে ড্রাইভার সোজাসাপ্টা ভাবেই জানালো, ভাই আমি যেটা করছি সেটা অন্যায় তবে আপনি একটা কথার উত্তর দিতে পারবেন? আমি বললাম বলেন- সে বললো, ”রাত ১১টা-১২টা পর্যন্ত ডিউটি করায় কিন্তু সন্ধ্যাবেলা বা রাতের বেলা খাবারের জন্য এক টাকাও দেয় না। তারা অনেক সময় বড় বড় রেস্ট্রুরেন্টে যায়। খেয়ে দেয়ে অনেক রাত করে ফিরে আসে। কিন্তু আমি গাড়িতেই থাকি আমার কথা তো তারা ভাবে না। তাদের ভাবা কি উচিত নয়? প্রতিদিন হাজার হাজার টাকা খরচ করে কিন্তু অামাকে তো ১৫ ঘন্টা ডিউটি করিয়েও এক টাকাও বেশি দেয় না।”

এ কথার উত্তর আমি দিতে পারিনি। তিনি জানালেন, দুই ঈদে এসে বেতনের অর্ধেক বোনাস দেয়। কথায় কথায় তিনি জানালেন, ”আমার মালিক তার মেয়েকে ৬০ হাজার টাকা দামের একটি ড্রেস কিনে দিয়েছেন। কিন্তু আমাকে কখনো বাড়তি এক টাকাও দেন নি। সকাল থেকে রাত বারোটা পর্যন্ত ডিউটি করলে আমি কি সন্ধার বা রাতের খাবারটাও পেতে পারি না?”

অন্য একটি ঘটনা- নিউইয়র্কে বসবাসরত বাংলাদেশের এক কূটনীতিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, তার বাসায় আরেকজন বাংলাদেশি নাগরিককে তিন বছরের বেশি সময় ধরে সহিংস নির্যাতন ও হুমকি দিয়ে বিনা বেতনে কাজ করতে বাধ্য করেছেন। কুইন্স কাউন্টির অ্যাটর্নির অফিশিয়াল ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত বিশদ বিবরণও রয়েছে।

ওই শ্রমিক যুক্তরাষ্ট্রে আসার পর পরই অভিযুক্ত শাহেদুল ইসলাম তার পাসপোর্ট কেড়ে নেন এবং তাকে দিয়ে দৈনিক আঠারো ঘণ্টা কাজ করতে বাধ্য করান বলেও অভিযোগ এসেছে।

আরেকটি ঘটনা- রাজধানীর এক বৃদ্ধাশ্রমে বসবাসরত এক ভদ্র মহিলা জানিয়েছেন এক হৃদয়বিদারক ঘটনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়ালেখা করে দেশে বড় পদে কর্মরত অবস্থায় অবসর নিয়েছেন। তিনি তার ছেলে যুক্তরাষ্ট্রে পড়ানোর জন্য ঢাকায় তাদের একামাত্র বাড়িটিও বিক্রি করে দিয়েছিলেন। ছেলে ঠিকই যুক্তরাষ্ট্র থেকে পড়ালেখা করে বিশাল পয়সাওয়ালা হয়েছে। গাড়ি-বাড়ি সবই হয়েছে তার কিন্তু সেখানে ঠাই হয়নি সহায় সম্বল উজাড় করে দেয়া মায়ের।

এই মা তার পেনশনের টাকা দিয়েই বৃদ্ধাশ্রমে ঠাই নিয়েছেন। তিনি তার ছেলের নাম জানাতে চাননি- কারণ তিনি চাননা তার ছেলের অমর্যাদা হোক।

গৃহকর্মী নির্যাতন, বেতন কম দেয়া, বেতন আটকে রাখা, কর্মচারীদের ইচ্ছামত ব্যববহার করার এমন ঘটনা খুঁজে দেখলে আপনি অহরহ দেখতে পাবেন। আর দু:খজনক হলেও সত্য যে, এই মহান সব মানুষেরা বেশিরভাগই সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী।

ব্যতিক্রম মানুষের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। অনেক ব্যক্তিরা তাদের অধীনে কর্মরতদের অনেক বাড়তি সুবিধা দেন। এমন উদাহরণও খুঁজলে অনেক পাওয়া যাবে। তবুও মনে দাগ কেটে যায় কিভাবে অঢেল সম্পত্তির অধিকারী এসব মানুষ অতি নগন্য কর্মচারীকে বঞ্চিত করে?

অধিকার পাওয়া প্রতিটি মানুষের অধিকার। ছোট থেকে বড় সবার মনে মানবিকতার উদয় হোক। জয় হোক মানবতার।